১৯৭১ -বাজারমূল্য: অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতিবিম্ব

 

১৯৭১ -বাজারমূল্য: অর্থনৈতিক প্রেক্ষাপটের প্রতিবিম্ব

মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সংবাদিক ও কলামিস্ট

 

১৯৭১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি বিশেষ অধ্যায়। স্বাধীনতার সংগ্রামের সময় অর্থনীতি তুলনামূলকভাবে স্থিতিশীল ছিল। খাদ্যদ্রব্যের দাম, পশু ও দুধ-দাল সহ দৈনন্দিন পণ্যের মূল্য ছিল সাধারণ মানুষের ক্রয় ক্ষমতার মধ্যে। এক মণ চাল প্রায় ৪০–৫০ টাকা, একটি ডিম মাত্র ২০–৩০ পয়সা, আর মুরগি বা গরুর মাংসের দামও সহজে বহনযোগ্য ছিল। তেলের দাম, যেমন কেরোসিন ও সরিষার তেল, ছিল মাত্র কয়েক টাকা। সেই সময়ের সরকারী ও বেসরকারি স্কুল, কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকের বেতনও সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে তুলনামূলকভাবে ভারসাম্যপূর্ণ ছিল।

 

সেদিন মানুষ তুলনামূলকভাবে অর্থনৈতিকভাবে সচল ছিল। ছোট-মাঝারি আয়ের মানুষও দৈনন্দিন খাদ্যদ্রব্য, কিছু নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস এবং শিক্ষাগত খরচ নির্বিঘ্নে বহন করতে পারত। মসজিদ ইমাম, মাহফিল বক্তা এবং শিক্ষার্থীদের খরচও সামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন সাধারণ মানুষের দৃষ্টিকোণ থেকে যথেষ্ট বেশি হলেও তা সেই সময়ের সামাজিক ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের সঙ্গে সমঞ্জস্যপূর্ণ ছিল।

 

তবে বর্তমান সময়ে পরিস্থিতি সম্পূর্ণ বিপরীত। ১৯৭১ সালের তুলনায় দ্রব্যমূল্য এতটাই বেড়ে গেছে যে সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনযাত্রা চালাতে হিমশিম খাচ্ছে। এক মণ চালের দাম আজকে শতকরা কয়েকশ গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। মুরগি, ডিম, দুধ, দাল, আলু এবং অন্যান্য খাদ্যদ্রব্যের দামও পূর্বের তুলনায় অসহনীয়ভাবে বেড়ে গেছে। তেলের দাম থেকে শুরু করে নারীদের কাপড় ও সোনার মূল্য—সবই সেই তুলনামূলক ভারসাম্য হারিয়েছে। শহরে বাড়ি ভাড়া, শিক্ষার্থীর মাসিক খরচ, শিক্ষক ও সরকারি কর্মকর্তাদের বেতন—সবকিছুতেই পূর্বের তুলনায় অভ্যন্তরীণ চাপ বৃদ্ধি পেয়েছে।

 

এই বাস্তবতা নির্দেশ করে যে, ১৯৭১ সালের সাধারণ মানুষ অর্থনৈতিকভাবে তুলনামূলকভাবে সচল থাকলেও বর্তমানে বাজারমূল্যের উচ্চতা তাদের দৈনন্দিন জীবনে চাপ তৈরি করছে। বর্তমান অর্থনৈতিক নীতি, আন্তর্জাতিক বাজারের প্রভাব, এবং দেশীয় সরবরাহ ও চাহিদার ভারসাম্যহীনতা মূল কারণ হিসেবে বিবেচনা করা যায়। তাই এই তুলনামূলক পর্যালোচনা আমাদেরকে শিক্ষা দেয় যে, একসময়কার বাজার ও মানুষের অর্থনৈতিক সক্ষমতার মধ্যে সমন্বয় কতটা গুরুত্বপূর্ণ ছিল।

 

১৯৭১ সালের তুলনায় বর্তমান সময়ে দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় বৃদ্ধি এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার অনুপাতে অবনতির প্রেক্ষাপটে সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। আমাদের দায়িত্ব হলো বাজারের স্থিতিশীলতা, ন্যায্য মূল্য এবং মানুষের ক্রয়ক্ষমতার ভারসাম্য বজায় রাখা, যেন কোনো সাধারণ মানুষ দৈনন্দিন জীবনে অস্বস্তি অনুভব না করে।

 

লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সংবাদিক ও কলামিস্ট

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.