অতিরিক্ত ওজন কমাতে রাতের খাবার
🥗 অতিরিক্ত ওজন কমাতে রাতের খাবার
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, শিক্ষক ও পুষ্টি বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।
ওজন কমানোর যাত্রায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে দিনের শেষ খাবার—রাতের খাবার। অনেকেই মনে করেন রাতের খাবার না খেলেই ওজন কমে যাবে, কিন্তু বাস্তবে এটি শরীরের বিপাক প্রক্রিয়াকে ধীর করে দেয়। সঠিক ক্যালরি, সুষম প্রোটিন ও ফাইবারযুক্ত খাবার বেছে নিলেই ওজন কমানো সম্ভব হয় স্বাস্থ্যকরভাবে।
রাতের খাবারে প্রথমেই বাদ দিতে হবে উচ্চমাত্রার শর্করা—যেমন ভাত, রুটি, আলু, নুডলস বা বিস্কুট। এসব খাবারে ক্যালরির পরিমাণ বেশি এবং ঘুমের আগে শরীর তা ব্যবহার করতে পারে না; ফলে তা জমে যায় চর্বি হিসেবে। এর পরিবর্তে বেছে নেওয়া যেতে পারে প্রোটিনসমৃদ্ধ ও সবজিভিত্তিক হালকা খাবার। যেমন, গ্রিলড চিকেন বা মাছ, সিদ্ধ সবজি, সালাদ ও টক দই। এগুলো শরীরে পুষ্টি সরবরাহের পাশাপাশি বিপাক ক্রিয়াকে সচল রাখে।
প্রতিদিন রাতের খাবার হওয়া উচিত প্রায় ৫০০ ক্যালরির মধ্যে। সপ্তাহজুড়ে খাবারের বৈচিত্র্য রাখতে পারেন—
একদিন গ্রিলড ইলিশ বা রুই মাছ, অন্যদিন ডিমের ওমলেট ও শাকসবজি, আবার কোনোদিন চর্বিহীন মাংস বা টুনা স্যালাড। এভাবে খাবারের স্বাদ ও পুষ্টি বজায় থাকবে, আবার শরীরে বাড়তি চর্বি জমবে না।
এছাড়া, খাবার গ্রহণের সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। ঘুমানোর অন্তত দুই ঘণ্টা আগে খাবার শেষ করা উচিত, যাতে হজমের জন্য পর্যাপ্ত সময় পাওয়া যায়। অনেকেই রাতের খাবারের পরপরই শুয়ে পড়েন, যা ওজন বাড়ার অন্যতম কারণ। খাবারের পর কিছুক্ষণ হালকা হাঁটাহাঁটি করলে ক্যালরি পোড়াতে সাহায্য করে।
লবণ ও তেলের ব্যবহার কমানোও জরুরি। প্রতিদিন এক চা চামচের বেশি তেল ব্যবহার না করাই ভালো। অতিরিক্ত লবণ শরীরে পানি ধরে রাখে, ফলে ফোলাভাব ও ওজন বৃদ্ধি ঘটে।
রাতের খাবারে চিনি ও প্রক্রিয়াজাত পানীয় পরিহার করা উচিত। তার পরিবর্তে লেবু-পুদিনা পানি, টক দই বা হারবাল চা রাখা যেতে পারে। চাইলে অল্প পরিমাণে পেঁপে, আপেল বা অন্য কম-মিষ্টি ফল খাওয়া যায়।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো ধারাবাহিকতা। একদিন কম খেয়ে পরদিন বেশি খাওয়া চলবে না। নির্দিষ্ট ক্যালরির সীমা মেনে চলা, পর্যাপ্ত পানি পান করা এবং নিয়মিত ঘুম শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখে।
সর্বোপরি, রাতের খাবারকে হালকা, স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলিত রাখাই হচ্ছে ওজন কমানোর সবচেয়ে কার্যকর পদ্ধতি। নিয়মিত এই অভ্যাস গড়ে তুললে শুধু ওজনই কমবে না, ঘুমের মানও বাড়বে, শরীর থাকবে সতেজ ও প্রাণবন্ত।
লেখক পরিচিতি: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, শিক্ষক ও পুষ্টি বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।
No comments