মানসিক স্বাস্থ্য সকলের জন্য জরুরী
মানসিক স্বাস্থ্য সকলের জন্য জরুরী
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট
প্রতিবছর ১০ অক্টোবর বিশ্বব্যাপী বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস পালন করা হয়। এই দিবসের মূল লক্ষ্য হল মানুষের মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা এবং মানসিক রোগ ও সমস্যার প্রতি সামাজিক কলঙ্ক দূর করা। মানসিক স্বাস্থ্য শুধুমাত্র মানসিক রোগের অনুপস্থিতি নয়; এটি একটি সম্পূর্ণ সুস্থতার অবস্থা, যেখানে ব্যক্তি তার জ্ঞান, আবেগ এবং আচরণ নিয়ন্ত্রণ করতে সক্ষম এবং জীবনকে সমৃদ্ধভাবে উপভোগ করতে পারে।
আজকের দ্রুত পরিবর্তনশীল সমাজে মানসিক চাপ ও উদ্বেগ একটি সাধারণ সমস্যা। চাকরি, শিক্ষা, পারিবারিক ও সামাজিক চাপ, আর্থিক অনিশ্চয়তা—all এগুলো মানসিক স্বাস্থ্যকে প্রভাবিত করে। তবে আমাদের মধ্যে অনেকেই এখনও মানসিক সমস্যাকে অবহেলা করি বা লুকিয়ে রাখি। পরিবার বা সমাজে “পাগল” বা “দুষ্টু” বলে কটূ মন্তব্যের ভয় মানুষকে সহায়তা চাইতে বাধা দেয়। এই অবস্থায়, সচেতনতা এবং সহানুভূতিশীল পরিবেশ তৈরি করা অপরিহার্য।
মানসিক স্বাস্থ্য শুধুমাত্র ব্যক্তিগত নয়; এটি সামাজিক এবং জাতীয় উন্নয়নেরও একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুস্থ মানসিকতার মাধ্যমে মানুষ উৎপাদনশীল হতে পারে, সৃজনশীলতা প্রকাশ করতে পারে এবং সমৃদ্ধ সমাজ গঠনে অবদান রাখতে পারে। তাই পরিবার, স্কুল, কর্মক্ষেত্র এবং সমাজের প্রতিটি স্তরে মানসিক স্বাস্থ্যকে গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) অনুসারে, মানসিক রোগ কোনো ব্যক্তির দুর্বলতার পরিচায়ক নয়। এটি চিকিৎসাযোগ্য এবং সঠিক সময়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ, ডাক্তার বা মনোবিজ্ঞানীর মাধ্যমে সঠিক থেরাপি এবং ওষুধ গ্রহণ করলে রোগীর জীবন মান উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়ে পরিবার এবং নিকটজনদের সহায়তা মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে এবং রোগের উন্নতি করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবস উপলক্ষে আমাদের প্রতিটি নাগরিককে সচেতন হতে হবে। মানসিক স্বাস্থ্যকে অবহেলা করা চলবে না। ছোট-খাট সমস্যা দেখা দিলে তা উপেক্ষা না করে পর্যবেক্ষণ করা, প্রয়োজনে পেশাদারের সঙ্গে পরামর্শ নেওয়া উচিত। পাশাপাশি, মানসিক রোগকে কলঙ্ক বা লজ্জার বিষয় হিসেবে না দেখানোও জরুরি। মানসিক রোগীদের প্রতি সহানুভূতি, সমর্থন এবং বিশ্বাস প্রদর্শন করলে সমাজে সুস্থতা ও নিরাপত্তার পরিবেশ গড়ে উঠতে পারে।
আমরা সবাই চাই একটি সমাজ যেখানে মানসিক সুস্থতা স্বাভাবিক এবং সম্মানজনক বিষয় হিসেবে বিবেচিত হবে। পরিবার, স্কুল, কর্মক্ষেত্র ও সামাজিক পরিবেশে সচেতনতা বৃদ্ধির মাধ্যমে মানসিক সমস্যা ও আত্মহত্যার ঝুঁকি কমানো সম্ভব। এই বিশ্ব মানসিক স্বাস্থ্য দিবসটি আমাদের মনে করিয়ে দেয় যে, মানসিক স্বাস্থ্যও শারীরিক স্বাস্থ্যের মতোই গুরুত্বপূর্ণ এবং আমাদের সকলে মিলে এটি রক্ষা করতে হবে।
আমাদের লক্ষ্য হওয়া উচিত, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা যেখানে কেউ মানসিক সমস্যার জন্য লজ্জা বা কলঙ্ক বোধ করবে না, এবং প্রত্যেকেই সহানুভূতিশীল পরিবেশে সহায়তা পাবে। মানসিক স্বাস্থ্য সুস্থ থাকলে ব্যক্তি, পরিবার ও সমাজ—সবাই উপকৃত হয়। এই দিনে আমরা সকলকে আহ্বান জানাই, মানসিক সুস্থতার গুরুত্ব বুঝে সচেতন হই এবং আমাদের চারপাশের মানুষদের সহযোগিতা করি।
লেখক পরিচিতি: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক ও শিক্ষক ও স্বাস্থ্য বিষয়ক লেকক, কুমিল্লা ।।
No comments