দেশের সর্ব প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির মন্দির
দেশের সর্ব প্রাচীন অষ্টকোণাকৃতির মন্দির
মমিনুল ইসলাম মোল্লা; কলামিস্ট ,শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক। কুমিল্লা একটি প্রশিকা ফিচার।।।
অষ্টকোণাকৃতির মন্দিরগুলোর মধ্যে কুমিল্লার দেবিদ্বারের ধামতী। গ্রামের শিব মন্দিরটি বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরাতন। এ মন্দিরের বয়স পৌনে চারশ বছর। বর্তমানে অষ্টকোণাকৃতির মন্দির খুব কমই দেখা যায়। কুমিল্লার জগন্নাথ মন্দির, দিনাজপুরের মহিষমর্দিনী, উল্লাপাড়ার শিব মন্দির, গােপাল গঞ্জের মঠ মন্দির, ঝিনাইদহের গণেশ ও নাটোরের শিব মন্দিরের সাথে এ মন্দিরের সাদৃশ্য লক্ষ্য
করা যায়।
| বাংলা একাডেমী থেকে প্রকাশিত রতন লাল চক্রবর্তী সম্পাদিত 'বাংলাদেশের মন্দির নামক গ্রন্থে অষ্টকোণাকৃতির মন্দিরগুলোর মধ্যে মোহাম্মদপুরের লক্ষ্মীনারায়ণ মন্দিরকে সবচেয়ে প্রাচীন বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এটি ১৭০৩ সালে সীতারাম রায় নির্মাণ করেন। দেবিদ্বারের মন্দিরটি এর চেয়েও প্রাচীন বলে জানা যায়। | মন্দিরটিতে কোন শিলালিপি নেই। তবে একমাত্র দরজার উপরের অংশে পোড়ামাটির ফলকে নির্মাণকাল লেখা ছিল। কিছুকাল পূর্বে তা বিলীন হয়ে যায়। এ মন্দিরের সম্পত্তির উত্তরাধিকারী শ্রী বীরেন্দ্র পাল জানান এ মন্দিরটি বাংলা ১০৩৮ বা ইংরেজি ১৬৩১ সালে নির্মাণ করা হয়েছে।। র মন্দিরটি দেবিদ্বার থেকে ১০ র কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। শিব মন্দিরটি শুধু হিন্দুদের উপাসনালয় নয়। একটি জাতীয় ঐতিহ্য ও বহন করছে। পৌনে চারশ বছর পূর্বে স প্রতিষ্ঠিত মন্দিরটি দেখার জন্য বহু দূর থেকে দর্শনার্থীরা আসছেন। মন্দিরটির ব্যাপক সংস্কার না হওয়ায় এটি যে কোন সময় ভেঙে যেতে পারে। | মন্দিরের ভেতরে একটি চর শিবলিঙ্গ রয়েছে। এটি পাথরের তৈরি। অষ্টকোণাকার মন্দিরটির ব্যাস ৬২ ফুট ৮ ইঞ্চি ! প্রার্থনা কোঠার আয়তন ১০৬ ফুট, এ মন্দিরের দেয়ালের পুরুত্ব ৪ ফুট, মেঝে পাকা, মন্দিরের ছাদের উচ্চতা ২০ ফুট। এরপর থেকে ঢালাই করে চূড়া পর্যন্ত নেয়া হয়েছে। চূড়ায় রয়েছে ত্রিশূল ভিত্তি।ভূমি থেকে ত্রিশূল পর্যন্ত উচ্চতা প্রায় ৮০ ফুট। এ মন্দিরটি নির্মাণ করেন রঘুনাথ পাল। তিনি মোঘল আমলে জমিদার ছিলেন। তার জমিদারী ধামতী, রাধানগর, মধ্যনগরসহ বিভিন্ন এলাকায় বিস্তৃত ছিল। মোঘল আমলের পর বৃটিশ শাসনাধীনেও তাদের জমিদারী ছিল অক্ষুন্ন ছিল।
১৯৬৫ সালের পাক-ভারত পদ যুদ্ধের পর জমিদার পরিবারের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিগণ কলকাতা ও আসামে চলে যান। ফলে ৫২ বিঘা সম্পত্তি শত্রু সম্পত্তিতে পরিণত হয়। মন্দিরের জায়গা উদ্ধারের জন্য বিগত ১০ বছর ধরে মামলা চলছে বলে মন্দিরের সেক্রেটারী মহোদয় জানান। | ধামতীর প্রবীণ ব্যক্তি যতীন্দ্র চন্দ্র শীল (৭০) এবং শ্রী রমেশ চন্দ্র সরকার (৮৫) জানান, এ মন্দিরকে কেন্দ্র করে অতীতে শিব চতুর্দশী মেলা হতো। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে লোক আসত এখনও বৈশাখী মেলা হয়। তবে আগের মতো লোক সমাবেশ হয় না।
দীর্ঘ দিন এই মন্দিরে উপাসনা বন্ধ ছিল। ১০-১২ বছর ধরে নিয়মিত পূজা হচ্ছে। বর্তমানে পুরোহিতের দায়িত্ব পালন করছেন বিনোদ বিহারী আচার্য। প্রতিদিন দুপুর ১২টা এবং সন্ধ্যা ৭টায় পূজা দেয়া হয়। এছাড়া মাঘ মাসের অমাবশ্যায় বিশেষ পূজা হয়। | মন্দিরটিতে বিভিন্ন ধরনের অলংকার পরিলক্ষিত হয়। একমাত্র দরজাটির উপরে একটি দেবমূর্তি ছিল। এখনও এর ভগ্নাবশেষ লক্ষ্য করা যায়। এছাড়া প্রতিটি বােমায় পদ্মফুল অঙ্কিত রয়েছে। মন্দিরের ভেতরে ও বাইরে হাতি, ঘোড়া, ময়ুরসহ বিভিন্ন প্রাণীর চিত্র রয়েছে। ১৯৯৮ সালে ৬৫০০ ; ২০০১ সালে ৫০০০ টাকা ব্যয় করে সংস্কার কাজ করা হয়। তবে এটি খুবই সামান্য। বর্তমানে ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটির ব্যাপক সংস্কার প্রয়োজন। এছাড়া ধামতীর পাশে আরেকটি প্রাচীন দেব মন্দির রয়েছে। এটিও কয়েকশ বছরের পুরানো। বর্তমানে এখানে কোন পূজা হয় না। এই পরিত্যক্ত মন্দিরটিরও সংস্কার করা প্রয়োজন। অযত্ন-অবহেলায় আমাদের দেশের অনেক ঐতিহ্যবাহী মন্দির ধ্বংস হয়ে গেছে। দেবিদ্বারের ধামতীর শিব মন্দিরটি আমরা হারাতে চাই না । সরকারের প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ সংরক্ষণের দায়িত্ব নিলে মন্দিরটি ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা; কলামিস্ট ,শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক। কুমিল্লা একটি প্রশিকা ফিচার।
No comments