বাঙলা নববর্ষ ও বাঙ্গালীর নতুন জীবন
বাঙলা নববর্ষ ও বাঙ্গালীর নতুন জীবন
তারিখ-রোববার ১৩ এপ্রিল ২০০৮, ৩০ চৈত্র ১৪১৪ // দৈনিক রূপসী বাংলা-৩
মমিনুল ইসলাম মোল্লা।
মূলতঃ- রাজস্ব আদায়ের সুবিধার্থে মোঘল আমলে একটি নতুন সাল সৃষ্টি করা হয়। প্রথম দিকে এটি ফসলী সাল নামে পরিচিত ছিল। হিজরী নববর্ষ থেকে বাংলা সাল শুরু। এ হিসেবে ১ হিজরী থেকে ৯৬৩ হিজরী পর্যন্ত বাংলা সালের প্রথম স্তর। এ সময়ে চন্দ্রবর্ষ হিসেবে সাল গণনা করা হয়। দ্বিতীয় স্তরে সেটি রূপান্তরিত হয় সৌরবর্ষে।
দীর্ঘদিন আগে থেকেই নববর্ষকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের উৎসব পালন করা হচ্ছে। এ সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে মেলা বসে এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয়। গ্রামিন কৃষক ও ব্যবসায়িরা হালখাতা পালন করেন। তারা ৩১ চৈত্রে পুরাতন বছরের হিসেব চুকাতে চান এবং ক্রেতাদের আনন্দের সাথে মিষ্টি মুখ করান। মুঘল শাসনামল থেকে নতুন বছর পালনের রীতি শুরু হয়। স¤্রাট আকবরের সময়কার পন্ডিত ইউসুফ আলীর মতে, বছরের শুরুতে বাংলার রাজস্ব সংগ্রহে ‘পূন্যা’ নামে একটি বার্ষিক উৎসব হতো। হিন্দু পঞ্জিকার ভিত্তিতে চৈত্র মাসে অথবা বৈশাখের শুরুতে নববর্ষ উৎসব পালিত হতো। এ সময়ে বিগত বছরের খাজনা প্রায় ৬/৭ লক্ষ টাকা কোষাগারে জমা হতো।
আদায়কৃত রাজস্ব রাখা হতো নবাবের সামনে। যদি আমির ও জমিদারদের রাজস্বের কিছু অংশ আনাদায়ী থাকতো তাহলে প্রজাদের জন্যে কেউ সুপারিশ করতেন এবং নিদিষ্ট সময়ের মধ্যে খাজনা পরিশোদ করবেন এই মর্মে লিখিত প্রতিশ্রুতি দিতেন। প্রচুর আনন্দ ও উৎসবের মধ্য দিয়ে নববর্ষ পালন করা হতো। (সূত্রঃ আওয়ালই মহচৎজঙ্গা। পৃষ্ঠাঃ ১৫৪
বর্তমানে হিজরী সাল বাদেও বিভিন্ন দেশের নিজস্ব দিনপঞ্জী চান্দ্র মাসের হিসেবে চলে। মিশরের আসাবিয়ানরাই সর্বপ্রথম চান্দ্র বর্ষের হিসেবে ক্যালেন্ডার তৈরী করে। বাংলা সালের হিসেব প্রথম দিকে চাঁদের হিসেব অনুযায়ী হতো। পরে হিজরী সালকে সৌর বর্ষের সাথে মেলানো হয়। চাঁদ নিজের অক্ষে ঘুরে আসতে সময় লাগে সাড়ে ২৯ দিন। ফলে চান্দ্র বছর হয় ৩৫৪ দিনে। সৌর বৎরের হিসেবে ১১ দিন এগিয়ে আসতো। ফলে খাজনা দেয়ার দিনটি চলে এলেও কৃষকের ফসল ঘরে উঠতো না। এতে খাজনা দিতে সমস্যা হতো। এ সমস্যা সমাধানের জন্যই ফসলী মাস হিসেবে বাংলা সনের আবির্ভাব ঘ্েট।
বঙ্গাব্দের সাথে বাংলা নামটি জড়িত। বাংলা নামটি বিভিন্ন পরিবর্তনের মাধ্যমে এসেছে। আবুল ফজল ‘আইন-ই-আকবরী’ গ্রন্থে উল্লেখ করেছে ΄বঙ্গ΄শব্দের সাথে ΄আল΄ বা ΄বাঁধ΄ ( তখন ঝড়, বৃষ্টি ও বন্যার হাত থেকে বাচাঁর জন্য সুবধাজনক স্থানে বাঁধ দেয়া হতো ) যুক্ত হয়ে বাঙ্গাল হয়েছে। যা পরে বাঙ্গাল, বাঙ্গালো, বাঙলা তথা বাংলার রুপলাভ করে। ৬০০ সালে বঙ্গে প্রথম স্বাধীন রাজ্য স্থাপিত হয়। তখন সরকারি ভাষা ছিল সংস্কৃত।
কৃষকদের সুবিধার্থে হিজরী সালের সাথে সৌরবর্ষের সমন্বয় করেন স¤্রাট আকবরের সভাসদ বিশিষ্ট পন্ডিত আমরি ফাজুল্লাহ সিরাজী। ২৮ রবিউল আওয়াল ৯৬৩ হিজরী মোতাবেক ১১ এপ্রিল ১৫৫৩ খৃষ্টাব্দে মূল ফসল হিসেবে ধরে বর্ষ গণনা শুরু হয়। হবে হিজরী ও ইংরেজি ৬২২ থেকে এর যাত্রা শুরু হয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।
বাংলা ভাষার বিকাশে বাংলা একাডেমীর আবদার অপরিসীম। বাংলা সন সংস্কারে এ প্রতিষ্ঠানটি এগিয়ে আসে। ১৯৮৮ সালে বাংলাদেশ সরকার বাংলা পঞ্জিকা সংশোধনে ভূমিকা রাখে। আগে বাংলা সালের বিভিন্ন মাসের তারিখ নিয়ে সমস্যা হতো। মাসের এলোমেলো হিসাব ইংরেজি তারিখের সাথে সঠিকভাবে মিলতো না।
তাই বাংলা একাডেমী ১৪ এপ্রিলকে বাংলা নববর্ষ হিসাবে নিদিষ্ট করা হয়। ২১ ফেব্রুয়ারি ৯ ফাল্গুন, ২৬ মার্চ ১২ চৈত্র এবং ১৬ ডিসেম্বর নির্দিষ্ট করা হয়। পৌষ মাসের ২ তারিখ। বৈশাখ থেকে ভাদ্র মাস পযর্ন্ত এই পাঁচ মাস ৩১ দিন এবং আশি^ন থেকে চৈত্র পযর্ন্ত এই ৭ মাস ৩০ দিন হিসেবে গণনা শুরু হয়। তবে বর্তমান হিসেবে ১৪ এপ্রিল সারাদেশে নববর্ষ পালন করা হলেও বংলাদেশের হিন্দু সম্প্রদায় পঞ্জিকা অনুযায়ী (লোকনাথ) নববর্ষ পালন করে। এতে একদিন পার্থক্য ঘট্ েযায়।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা
লেখক, কুমিল্লা।
একটি প্রশিকা ফিচার।
ই-মেইলঃ ঢ়পঢ়ফ@ঢ়ৎড়ংযরশধ.নফড়হষরহব.পড়স
No comments