মুসলানদের দৈনন্দিন জীবনে কোরআন

মুসলানদের দৈনন্দিন জীবনে কোরআন

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,

আমরা প্রতিদিন নামাজে সুরা “ফাতিহা”তে বলি, “ আল্লাহ আমাদেরকে সহজ-সরল পথ দেখাও।”সহজ সরল পথে চলার জন্য  কথা বলার সময় ছল-চাতুরি পরিহার করে স্পষ্ট ভাষায় বলার জন্য অল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। আল্লাহ বলেন, “ওহে যারা ইমান এনেছে । আল্লাহকে ভয়- ভক্তি করো। আর সরল সঠিক কথা বলো ( আহজাব-৩৩/৭০)। একজন মুমিন-মুসলমান সব সময় নরম গলায় ন¤্রভাবে কথা বলবেন। তবে সব সময় নীচু স্বরে কথা বলতে হবে এমনটি নয়। প্রয়োজনে জোরেও বলা যেতে পারে,  তবে তাতে কোন উগ্রতা থাকবে না। যেমন কাছের লোকের সাথে কথা বল্লে আস্তে ও নীচু স্বরে বলা যায়। কিন্তু দূরের লোক বা কোন সমাবেশে কথা বলার সময় জোরে বলা স্বাভাবিক। একজন মুসলমান জেনে শুনে মিথ্যাকে সত্যের সাথে মিশ্রিত করতে পারেন না।  সেটি কথায় হোক , কাজে হোক, বিশ্বাসেই হোক কোন ক্ষেত্রেই তা করতে পারবেন না। শুধু মিথ্যা বলাই নয় মিথ্যুকের সঙ্গও পরিত্যাগ করতে হবে। হযরত ওমর (রাঃ) এর আদালতে এক ব্যক্তি মিথ্যা সাক্ষ্য দিলে তিনি তাকে জনসমক্ষে মিথ্যাবাদী হিসাবে পরিচিত করে দিলে সবাই তাকে এড়িয়ে চলেন।  
মুসলমানগণ নিছক খেল -তামাশা , তুচ্ছ ও অসার বিষয় থেকে দূরে থাকবেন। যারা মিথ্যা সাক্ষ্য দেয়, যারা মিথ্যাচার করে, মিথ্যা ও গিবত হয় এমন মজলিশে উপস্থিত থাকাও পাপের কাজ। বড় ধরণের পাপ থেকে বেঁচে থাকার জন্য একজন মুমিন মুসলমান সেগুলো এড়িয়ে চলবেন। কারো সম্পর্কে খারাপ কিছু শুনলে তা যাচাই না করে কারো কাছে প্রচার করা যাবে না। এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “ যখন তোমরা এটি শুনেছিলে তখন কেন মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা মনে আনে নি। এ এক ঢাহা মিথ্যা। ( নূর-২৪/১২) আল্লাহ আমাদেরকে খাওয়ার জন্য রিজিক দিয়েছেন। তবে যা খুশি তাই খাওয়া যাবেনা। এক্ষেত্রে যুক্তি সঙ্গতভাবেই কিছু কিছু বিধি নিষেধ আরোপ করা হয়েছে।  সুরা আনাম ও সুরা নাহলে এব্যাপারে ইঙ্গিত করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, মৃত, রক্ত, শুয়োরের মাংশ, এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে জবাই করা পশুর মাংস খাওয়া হারাম। আল্লাহ বলেন, আর মানুষের প্রতি তোমার চিবুক ঘুরিয়ে নিওনা। আর পৃথিবীতে  গর্ভ ভরে  চলাফেরা করো না। নিসন্দেহে আল্লাহ প্রত্যেকটি উদ্ধত অহংকারীকে ভালবাসেন না।   আল্লাহ আমাদেরকে দুটি কান দিয়েছেন শোনার জন্য। তাই বলে যা কানে আসে তাই মনযোগ দিয়ে শোনা যাবে তা কিন্তু নয়। আবু দাউদ শরিফে বলা হয়েছে -হে আল্লাহ আমি তোমার কাছে ,আমার কানের অপকারিতা , চোখের অপকারিতা, জিহবার অপকারিতা, মনের অপকারিতা, ও বীর্যের অপকারিতা থেকে মুক্তি চাই। তাই মন যা চায় তা-ই শোনা যাবে না। ইসলামে অশ্লীলতা ও বেহায়াপনার কোন স্থান নেই। আল্লাহতায়ালা বলেন, “ আর ধারে কাছেও যেওনা তার যা প্রকাশ পায় ও যা গোপন থাকে ( আন আম ৬/১৫১)অশ্লীল ও কুরুচীপূর্ণ কথা সম্বলিত কোন বই পুস্তক, অডিও ভিডিও দেখা যাবে না।  নারী পুরুষের চলাফেরা, মেলা-মেশার ক্ষেত্রে শরিয়তে যে বিধি বিধান দেয়া হয়েছে তা অবশ্যই মুসলিম নারী-পুরুষকে মানতে হবে। 
সঠিকভাবে ইসলামে দাখিল হতে হলে কিছু কিছু বিষয় পরিহার করে চলতে হবে। সুস্পষ্ট খারাপ কাজগুলোর কাছের যাওয়া যাবে না। এছাড়া সন্দেহজনক বিষয়গুলো থেকে দুরে থাকতে হবে। ইসলামে নিষিদ্ধ বিষয়গুলো হচ্ছে, ব্যভিচার, পুরুষকামিতা, উলংগতা, পিতা মাতার অবাধ্যতা, চুরি, মদ্যপান, হারাম, হারাম,ভিক্ষিবৃত্তি ইত্যাদি। গুনাহ থেকে বাঁচতে হলে আমাদেরকে চোখের হেফাজত করতে হবে। আল্লাহ বলেন, তুমি মুমিন পুরুষদের বলো, যে তারা তাদের দৃষ্টি অবনত করুক এবং তাদের আঙ্গিক কর্তব্যাবলী  হেফাজত করুক। এটি তাদের জন্য পবিত্রতর। তারা যা করে আল্লাহ সে বিষয়ে নিশ্চয়ই পূর্ণ ওয়াকিবহাল। (নূর- ২৪/৩০) লজ্জা নিবারনের জন্য আল্লাহতায়ালা পোশাক পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন। পোশাকের ক্ষেত্রে নারী-পুরুষের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করা হয়েছে। নারী কখনো পুরুষের পোষাক পড়তে পারবে না আবার পুরুষ নারীদের পোষাক পড়তে পারবে না। কুরআনে প্রত্যেককে  লজ্জা স্থানের হেফাজত করতে বলা হয়েছে। নিজের লজ্জা স্থানকে অন্যের সামনে উন্মুক্ত করা যাবে না। পুরুষের জন্য সতর এর সীমা হচ্ছে নাভী থেকে হাঁটু পর্যন্ত। ( বায়হাকী)

আল্লাহ বলেন, “আর তোমাদের সম্পত্তি পরস্পরের মধ্যে জালিয়াতি করে গ্রাস করো না। আর এগুলো বিচারকদের কাছে পেশ করো না। যার ফলে ইচ্ছাকৃতভাবে তোমরা অন্যের সম্পদের কিছু অংশ খাওয়ার সুযোগ পেয়ে যাও।” দাম্ভিকতা বা দীনতা চলফেরার সময় দুটিই পরিহার করা উচিত। তবে এক্ষত্রে মধ্যম পন্থা অবলম্বন করলে ভাল হয়। সাধারণত মানুষ বংশ, মর্যাদা, ধন, দৌলত, ক্ষমতা, রাষ্ট্রীয় পদবী, ইত্যাদি কারণে অহংকার করেন। পোশাক-আশাক, খাওয়া-দাওয়া, এবং চলাফেরায় তা প্রকাশিত হয়।  দাম্ভিকতা প্রকাশ করা ইসলাম বিরোধী কাজ। মুসলমানগন অবশই অন্য মুসলমানের সাথে সুসম্পর্ক বজায় রাখবেন। সমাজের সদস্যদের সাথে চলাফেরা করার সময় আমরা বিভিন্ন সময় বিভিন্ন বিষয়ে ওয়াদা বা প্রতিশ্রতিবদ্ধ হই। কারো সাথে কোন বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হলে বা কাউকে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রতি দিলে তা রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন ( বনি ইসরাইল-১৭/৩৪) । হারাম গান- বাজনা থেকে আমাদের বেঁচে থাকতে হবে। বিশেষ করে, নির্লজ্জতা, কুৎসিৎ, অশ্লীল ভাষা, কিংবা পাপ কাজে উৎসাহ ও  উত্তেজনা দানের সংমিশ্রনে গান-বাজনায় অংশগ্রহণ করা যাবে না। হাস্য-লাস্যময়ী , ও লজ্জাষ্কর অঙ্গভঙ্গী সহকারে হেলে-দুলে, নির্লজ্জভাবে, যৌন উদ্দীপক পূর্ণ গান গাওয়া ও শোনা যাবে না।  মোট কথা শুধুমাত্র ইসলামের আনুষ্ঠানিক ইবাদত নামাজ, রোজা, হজ্ব, যাকাত আদায় করলেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না। একজন মুসলমানের দৈনন্দিন জীবন পরিচালনার ক্ষেত্রে আল কোরানে যা বলা হয়েছে তা আমাদেরকে অবশ্যই মেনে চলতে হবে।
লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, কুমিল্লা। ০১৭১১-৭১৩২৫৭
যুগান্তর, ২৪.২.১৭
ওহির আলোকে ঃ মুসলানদের দৈনন্দিন জীবনে কোরআন 
আল্লাহ বলেন, “ওহে যারা ইমান এনেছে । আল্লাহকে ভয়- ভক্তি করো। আর সরল সঠিক কথা বলো ( আহজাব-৩৩/৭০)।
এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “ যখন তোমরা এটি শুনেছিলে তখন কেন মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা মনে আনে নি। এ এক ঢাহা মিথ্যা। ( নূর-২৪/১২)
আল্লাহতায়ালা বলেন, “ আর ধারে কাছেও যেওনা তার যা প্রকাশ পায় ও যা গোপন থাকে ( আন আম ৬/১৫১)
লজ্জা নিবারনের জন্য আল্লাহতায়ালা পোশাক পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(নূর- ২৪/৩০)
কারো সাথে কোন বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হলে বা কাউকে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রতি দিলে তা রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন ( বনি ইসরাইল-১৭/৩৪) । 
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,





No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.