দাইয়ুস জান্নাতে যাবে না, দাইয়ুস কারা ?

দাইয়ুস জান্নাতে যাবে না, দাইয়ুস কারা ?

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা
“ দাইয়ুস” বলা হয় সে ব্যক্তিকে , যে তার স্ত্রী ও পরিবারের অন্য সদস্যরা অশ্লীল কাজ করলে বা ব্যাভিচারে লিপ্ত হলে সে তা ভাল মনে করে,  সে নিরবে সহ্য করে অথবা সমর্থন দেয়। মেয়ে কলেজে পড়ে তার দু/চারটা অন্তরঙ্গ ক্লাসমেট থাকতেই পারে বা বয় ফ্রেন্ডরাও বাসায় আসতে পারে। বাবা যদি কিছু বলে মা বলেন,  এখন যুগ পাল্টেছে তুমি ওতে কিছু মনে করোনা। মা তখন মেয়ের বন্ধু –বান্ধবকে চা-নাস্তা খাইয়ে মেহমানদারী করে। এক্ষেত্রে তারা দাইয়ুস হতে পারেন। রাসুলে আকরাম (সাঃ ) বলেন-  যে ব্যক্তির  পরিবারে পাপ হয়, এবং পাপকে বিদ্যমান রাখে তার স্ত্রী গায়রে মাহরামের সাথে গল্প করছে, একই ডাইনিং টেবিলে বসে খাচ্ছে বা পরিবেশন করছে , বেপর্দা হয়ে বাইরে যাচ্ছে অথচ পুরুষ লোকটি কিছুই বলছে না সে হচ্ছে দাইয়ুস পুরুষ । ইসলামের বিধান অনুযায়ী পরিবারের কর্তা এবং নিয়ন্ত্রণ থাকবে পুরুষের হাতে। কেউ যদি নিয়ন্ত্রণ অন্য কাউকে দেন তাহলে তিনি কখনোই স্ত্রী কন্যাকে ইসলমী বিধানের দিকে আকৃষ্ট করতে পারবেন না। মেয়েরা সাধারণত মায়েদের অনুসরণ করেন। বাবার নিয়ন্ত্রনহীনতায় তারা বেপর্দা হয়ে চলাচল করতে পারে। অতিরিক্ত সাজ-গোজ করে বাইরে বেরুলে এতে আপনিও পাপের অধিকারী হবেন। একজন মুসলমান শুধু নিজেই যিনা-ব্যাভিচার থেকে বেঁচে থাকবেনা বরং এ পথের দিকে আকৃষ্টকারী উপাদান থেকের দূরে থাকবে। সমাজের ব্যাপারে বলা যায় সমাজ জীবনে যিনা, যিনার উদ্যোগ আকর্ষণ এবং তার কারণসমুহের পথ বন্ধ করে দেয়া সমাজের সক্ষম লোকদের দায়িত্ব । যিনামুক্ত সমাজ গড়তে আইন প্রণয়ন, শিক্ষা ও অনুশীলন দান, সামাজিক পরিবেশের সংস্কার সাধন করা যেতে পারে। 
বড় পাপগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে যিনা। তাই যিনা থেকে আমাদের দূরে থাকতে হবে।এব্যারে আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাঃ থেকে বর্ণিত একটি হাদিসের কথা বলা যায়।  এ হাদিসে বলা হয়েছে, একবার নবিজীকে জিজ্ঞেস করা হলো , সবচেয়ে বড় গুনাহ কি তিনি বল্লেন, তুমি যদি কাউকে আল্লাহর সমকক্ষ প্রতিদ্বন্ধী দাাঁড় করাও। অথচ আল্লাহই তোমাকে সৃষ্টি করেছেন।” তারপর বল্লেন, তুমি যদি সন্তানকে হত্যা কর এই ভয়ে যে তোমার সাথে অধহারে অংশ নিবে। জিজ্ঞেস করা হলো, তারপর বল্লেন, তুমি যদি তোমার প্রতিবেশীর স্ত্রীর সাথে যিনা কর ( বুখারী) । মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমরা ব্যভিচারের নিকটবর্তী হয়োনা এটা অশ্লীল কাজ এবং নিকৃষ্ট আচরণ। (সুরা বনি ইসরাইল-৩২ )। কোরানের এ হুকুম শুধুমাত্র ব্যক্তির জন্য নয় সমাজের জন্যও সমানভাবে প্রযোজ্য। 
ব্যভিচারের মধ্যে সবচেয়ে জঘন্যতম হচ্ছে মাহরাম মহিলার সাথে যিনা করা। মাহরামের মধ্যে সাধারণভাবে রয়েছেন মা, বোন, খালা, মেয়ে ইত্যাদি। কেউ কেউ বলেন, যার যার পাপে তাকে খাবে।তাই তারা তাদের মেয়ে কি করলো তারা কোন খোঁজ খবর রাখেন না। স্ত্রী নামাজ পরলো কিনা, বাইরে যাওয়ার সময় সঠিকভাবে পর্দা করলো কি না কোন খোঁজ-খবর রাখেন না।ইসলামের বিধান অনুযায়ী কোন মেয়ে পর্দা না করে সাজসজ্বা করে বাইরে গেলে তার জন্য বাবাকে জবাবদিহী করতে হবে। বর্তমানে দেশের অধিকাংশ পরিবারের যুবক-যুবতী  টেলিভিশন ও মোবাইলে আসক্ত। ডিসের বিভিন্ন চ্যানেল কিশোর কিশোরী  সমবয়সী ভাই-বোন, বন্ধু-বান্ধব এমনকি মা বাবার সামনে দেখে। এছাড়া স্মার্ট ফোনের মাধ্যমে স্কুল- কলেজের ছাত্র- ছাত্রীরা পর্ণোগ্রাফীতে গভীরভাবে আসক্ত। পরিবারের কর্তা যদি এ ব্যাপারগুলোকে ভাল মনে করেন বা সংসারের শান্তি রক্ষার্থে বাধা না দিয়ে চেপে যান বা নিরবে সহ্য করেন তাহলে তিনিই দাইয়ুস। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং দায়িত্বের ব্যপারে প্রত্যেকেই জবাবদিহী করতে হবে। একজন পুরুষ লোক তার পরিবারের ব্যাপারে দায়িত্বশীল। তাকে সংসার পরিচালনার ব্যাপারে জিঞাসাবাদ করা হবে। একজন মহিলা তার স্বামীর ঘরের ব্যাপারে দায়িত্বশীল এব্যাপারে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ইসলামী পরিবারের কর্তা হিসাবে আপনার দায়িত্ব অনেক। পরিবাওে আপনি যখন নিজের কাজ করেন তখন আপনি কর্মী। যখন পরিবারের স্ত্রী- পুত্র বা অন্যান্য সদস্যদেরকে নামাজের উদ্দেশ্যে সকালবেলা ঘুম থেকে উঠান তখন আপনি কর্তা হিসাবে দায়িত্ব পালন করলেন। আর এ দায়িত্বে অবহেলা করলে অপনাকে আমাকে আখিরাতে জবাব দিতে হবে। কিছিু কিছু পাপ রয়েছে যেগুলো করলে একজন মুসলমান ঈমান হারিয়ে ফেলে। তখন তাকে অবশ্যই তওবা করতে হবে। হযরত আবু হোরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত রাসুলে আকরাম (সাঃ ) বলেন-  “ কোন ব্যভিচারী ব্যভিচার করার সময় মুমিন অবস্থায় ব্যবিচার করে না। কোন চোর চুরি করার সময় মুমিন অবস্থায় চুরি করে না। কোন মদখোর মদ খাওয়ার সময় মুমিন অবস্থায় মদ পান করে না। কোন লুন্ঠনকারী লুন্ঠন করার সময় মুমিন অবস্থায় লুন্ঠন করেনা ( বুখারি, মুসলিম) । আপনার স্ত্রী , মেয়ে, বোন, এমনকি আপনার মায়ের দেখাশুনার দায়িত্ব আপনার নিয়ন্ত্রণে তাকতে পারে। তাই তাদের পর্দার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ঘরের ভেতর যাতে ছেলে মেয়েদের অবাধ কথা-বার্তা -কিংবা মেলা  মেশার সুযোগ সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। যে ব্যক্তি কোন বিবাহিত মহিলার সাথে ব্যভিচার করবে তাদের উভয়ের উপর মুসলিম উম্মার অর্ধেক আযাব নিপতি হবে। কিয়ামতের দিন আল্লাহ এ মহিলার স্বামীকে তার অসৎ কর্মের বিচারের দায়িত্ব অর্পন করে জিজ্ঞিস করবেন তার স্ত্রী যে অপকর্ম করেছে তা সে জানত কিনা যদি সে জেনে থাকে তাহলে কুকর্ম প্রতিহত করতে কোন পদক্ষেপ না নিয়ে থাকে তাহলে অল্লাহ তার উপর জান্নাত হারাম করে দিবেন। ইসলাম আপনাকে আপনার পরিবার নিয়ন্ত্রণ ও শাসনের অধিকার দিয়েছে। উত্তম পন্থায় তাদেরকে বুঝিয়ে ইসলামের অনুশাসন মানাতে হবে। যদি তাতে কাজ না হয় তাহলে ইসলামী বিধান অনুযায়ী কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। 
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক , সাংবাদিক ও  ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।     সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স  

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.