আদর্শ স্বামী মুমিন নারীর আশির্বাদ
আদর্শ স্বামী মুমিন নারীর আশির্বাদ
মমিনুল ইসলাম মোল্লাদ্বীনি পরিবারের কর্তা পুরুষ। মূলত পুরুষই পরিবার গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাই আদর্শ পুরুষ আদর্শ স্বামী হতে পারে। আদর্শ যুবক বিয়ে করে আদর্শ দ্বীনি পরিবার গঠন করতে পারে। এর জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন তাকওয়াবান মেয়ে নির্বাচন করে তাকে ঘরে তুলে আনা। আল্লাহর নবি (সাঃ) বলেন, “যার দ্বীন ও চরিত্র তোমাদেরকে মুগ্ধ করে, তার সাথে (তোমাদের ছেলে কিংবা মেয়ের) বিবাহ দাও। আদর্শ পুরুষ ও সতী নারী মিলে গঠন করতে পারে দ্বিনি পরিবার, মুসলিম সমাজ ও সুন্দর পরিবেশ। উৎকৃষ্ট ভূমিতে আল্লাহর রহমতে ফল-ফলাদি উৎপন্ন হয়। অন্যদিকে পতিত জমিতে আগাছা জঞ্জাল বাদে অন্য কিছু জন্মে না। আদর্র্শ স্বামী তার স্ত্রীকে দেনমোহর দিতে দেরি করে না। পবিত্র কুরআন মজিদে আল্লাহ বলেছেন- হে নবি! আপনার জন্য আপনার স্ত্রীগণকে হালাল করেছি। যাদেরকে আপনি মোহরানা প্রদান করেছেন ( আল আযহাব-৫০) । স্বামী তার স্ত্রীকে পর্দার সাথে রাখবে। বিনা প্রয়োজনে বাড়ির বাইরে যেতে দিবে না। পর-পুরুষের সাথে মিশতে দিবে না। এব্যাপারে সে শরিয়তের বিধি মোতাবেক শাসন করার অধিকার রাখে। স্ত্রীর জন্য সুস্থ বিনোদন এর ব্যবস্থা করা যেতে পারে। কারণ পারিবারিক গন্ডির বাইরে গিয়ে স্বামীকে নিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে স্ত্রীর মন চায়। তার এ চাওয়াকে প্রাধান্য দিতে হবে। আয়েশ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, একদা হাবশীরা তাদের বর্শা নিয়ে খেলা করছিল। তখন রাসুল (সাঃ) আমাকে নিয়ে পর্দা করে তার পিছনে দাড় করিয়ে দিলেন এবং আমি সেই খেলা দেখছিলাম যতক্ষণ আমার ভাল লাগছিল যতক্ষণ সেচ্ছায় আমি সে স্থান ত্যাগ না করতাম। (বোখারি) রাসুল (সাঃ) স্ত্রীদের প্রতি কতটা সদয় ছিলেন তা এ হাদিসের মাধ্যমে প্রমাণিত হয়। স্বামী- স্ত্রীর মধ্যে নির্দিষ্ট নিয়মে যৌনকর্ম করতে নিষেধ নেই। এক্ষেত্রে পুরষের যেমন যৌন চাহিদা মেটানোর অনুমতি আছে তেমনি নারীও স্বামীর নিকট তা চাইতে পারে। আর এ হক আদায় করা পুরুষের একান্ত কর্তব্য। আনাস বিন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত নবি (সাঃ) বলেছেন, যখন পুরুষ তার স্ত্রীর সাথে সহবাস করে তখন সে যেন পরিপূর্ণভাবে ( সহবাস) করে। আর তার যখন চাহিদা পূরণ হয়ে যায় ( শুক্রস্খলন হয়) অথচ স্ত্রীর চাহিদা অপূর্ণ থাকে তখন সে যেন তাড়াহুড়া না করে ( মুসান্নাফে আব্দুর রাজ্জাক)। স্ত্রীর ভরণ পোষণ তথা তার খাবার , বস্ত্র, চিকিৎসা ও বাসস্থানের ব্যবস্থা স্বামীকেই করতে হবে। স্ত্রী আর্থিক ব্যাপারে দায়মুক্ত থাকবেন। বুখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে- “ তোমরা মহিলাদের বিষয়ে আল্লাহকে ভয় করে। কারণ তােমরা তাদেরকে আল্লাহর আমানত হিসাবে গ্রহণ করেছ। তোমরা আল্লাহর বাণীর মাধ্যমে তাদের মাধ্যমে যৌনাঙ্গকে হালাল করে নিয়েছ। কাজেই তাদেরকে ভালভাবে ভরণ পোষণ ও পোশাকাদি দেয়া তোমাদেরকে কর্তব্য এবং এটা তাদের হক । মহিলাদের ভরণ পোষণের ব্যাপারে সুরা বাকারাতে আল্লাহ উল্লেখ করেন“ আর মায়েরা তাদের সন্তানদেরকে পূর্ণ দুবছর দুধ খাওয়াবে যদি দুধ কাওয়াবার পূর্ণ মেয়াদ সম্পন্ন করতে চায়। আর সন্তানের অধিকারী অর্থাৎ পিতার উপর মহিলার যাবতীয় ভরণপোষণ দেয়া ফরজ, প্রচলিত সুন্দর নিয়ম অনুযায়ী। ” আদর্শ স্বামী তার দৃষ্টির হেফাজত করে। সে সকল প্রকার জেনা থেকে বেঁচে থাকে। আবু হুরায়রা (রাঃ ) থেকে বর্ণিত-নবি করিম সাঃ ইরশাদ করেন, আল্লাহ তায়ালা আদম সন্তানের উপর ব্যভিচারের একটি বিধান নির্ধারণ করে দিয়েছেন, অবশ্যই সে অপরাধে দন্ডিত হবে। তা হচ্ছে চক্ষুদ্বয়ের যিনা ( ব্যাভিচার) কামনাপূর্ণ দৃষ্টি, মুখের যিনা অশ্লীল কথাবার্তা, মনের যিনা অবৈধ কামনা-বাসনা। পরে লজ্ঝাস্থান সে বাসনানুযায়ী তা ( ব্যাভিচার) বাস্তবায়ন করে অথবা তা থেকে বিরত থাকে। (আবু দাউদ)। পরিবারের সবাই একসাথে খাওয়া-দাওয়া করা উত্তম। সন্তানদের খাবার-দাবারের পাশাপাশি স্ত্রী কি খেল -না খেল সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। প্রয়োজনে স্ত্রীর মুখে খাদ্য তুলে দিতে হবে। এর বিনিময়ে আল্লাহ তাকে সেয়াব দিবেন। এতে পারস্পরিক ভালবাসাও বৃদ্ধি পাবে।
আপনি বাইরের কাজ শেষ করে এসে দেখলেন আপনার স্ত্রীর রান্না বা অন্যান্য কাজ শেষ হয়নি। আপনি তখন রাগারাগি না করে কাজে হাত দিন। তাহলে সে খুশি হবে। রাসুল (সাঃ) স্ত্রীদেরকে ঘরের কাজে সহযোগীতা করতেন। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাঃ) স্ত্রীদের কাজে সহযোগীতা করতেন। অনেক পুরুষ আছেন যারা দ্বীনি বৈঠকে গিয়ে অথবা মসজিদের খুৎবার মাধ্যমে মোটামোটি ভাল ধর্মীয় জ্ঞান আহরন করেন। কিন্তু পরিবারে এর কোন প্রভাব ফেলেন না। এভাবে ইসলামী পরিবার গড়ে তোলা সম্ভব নয়। ইসলামী পরিবার গড়ে তুলতে হলে ধর্মীয় ম্যাগাজিন বই-পত্র ও ক্যাসেট, সিডি, ভিসিডি এনে পরিবারের সদস্যদের ধর্মীয় জ্ঞান দেয়ার চেষ্টা করতে হবে। আবু দাউদ শরিফের একটি হাদিসে স্ত্রীর ৫টি হকের কথা বলা হয়েছে। একজন আদর্শ স্বামী সে অনুযায়ী সংসার পরিচালনা করবেন। স্বামীর সামর্থ অনুযায়ী অনুযায়ী স্ত্রীর জন্য খাওয়া দাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। তার জন্য প্রয়োজনীয় সাজ-সজ্জার ব্যবস্থা করতে হবে। সাজ সজ্জার মধ্যে তার পছন্দের পোশাক -আশাক, প্রসাধনী সবই অন্তর্ভুক্ত । তবে এ সাজ-সজ্জার মাধ্যমে সে শুধুমাত্র স্বামীকেই সন্তুষ্ট করার চেষ্টা করবে। স্ত্রীর সাথে সদাচারন করতে হবে। তবে ধর্মীয় বিধি বিধান মেনে না চল্লে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে। কেননা স্বামী হচ্ছে স্ত্রীর জিম্মাদার। আল্লাহ সংসারে মর্যাদার ক্ষেত্রে যেমন স্বামীকে প্রাধান্য দিয়েছেন তেমনি তাকে দায়িত্ব ও দিয়ে দিয়েছেন। সে ভালবাবে তার দায়িত্ব পালন করলেই স্ত্রীর মন পাবে। তিরমিজি শরিফে বর্ণিত হয়েছে- “পূর্ণাঙ্গ ঈমানদার হলো সে ব্যক্তি যার চরিত্র সর্বাধিক সুন্দর। তোমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ব্যক্তি সে যে স্ত্রীদের নিকট উত্তম।”
লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক , সাংবাদিক ও ধর্মীয় গবেষক,
কুমিল্লা।

No comments