পরকালের সম্বল নেক আমল ০-০-০- মমিনুল ইসলাম মোল্লা

পরকালের সম্বল নেক আমল
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

বিন্দু বিন্দু  বালিকণা নিয়ে যেমন মহাদেশ গড়ে উঠে তেমনি একটি একটি করে নেক সংগ্রহ করে মুমিন ব্যক্তি নেকের পাহাড় গড়ে তুলতে পারেন। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি ভালবাবে অযু করে নামাজের জন্য রওয়ানা হয়। তখন সে তার ডান পা উঠানোর সাথে সাথেই তার আমলনামায় একটি নেকি লিখিত হয়। আর বাম পা ফেলার সাথে সাথেই একটি নেক মার্জিত হয়। আমরা প্রতিদিন কি কি পাপ অথবা পূণ্যের কাজ করছি তা সম্মানিত ফেরেস্তাগণ লিপিবদ্ধ করছেন। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতি বার জান্নাতের দরজা খোলা হয়। মা”মার বলেন, সুহাইল ব্যতীত অন্যরা বলেছেন- প্রত্যেক সোম ও বৃহস্পতিবার অমল পেশ করা হয়। সুরা যিলযাল এর ৭ও৮ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন, “ তারপর যে অতি অল্প পরিমান ভালো কাজ করবে তা দেখে নেবে এবং যে অতি অল্প পরিমান খারাপ কাজ করবে সে তা দেখে নেবে।” মুসনাদে আহমদ, নাসাই ও ইবনে মাজাতে বলা হয়েছে রাসুল (সাঃ) হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেন, হে আয়েশা ! যেসব গোনাহকে ছোট মনে করা হয় সেগুলো থেকে দূরে থাক। কারণ আল্লাহর দরবারে সেগুলো সম্পর্কেও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে।”
কারণ কেউ যদি মৃত্যুর সময় আজাবের ফেরেস্তার হাতে বন্ধি হয়ে যায় , কবরে সে যদি জাহান্নমের বিছানা পায় তাহলে সে সহজেই বুঝতে পারবে তার ভবিষ্যৎ কি? কিয়ামতের দিন যখন তাদেরকে তাদের আমলনামা বাম হাতে দেয়া হবে তখন তাদের অবস্থা হবে অত্যন্ত শোচনীয় ও দুঃখপূর্ণ । তারা ঐ সময় বলবে - হায়ঃ যদি আমাদেরকে আমাদের আমলনামা দেয়াই না হতো , তবে কতই না ভাল হতো ! যদি মৃত্যুই আমাদের সবকিছু শেষ করে দিতো তবে কতই না আনন্দের কথা হতো! যদি অমরা এই দ্বিতীয় জীবনই লাভ না করতাম। দুনিয়ায় যে মৃত্যুকে তারা ভয় করতো তখন তারা সে মৃত্যুকেই আহবান করবে।পাপী বান্দারা কেয়ামতের দিন তাদের কৃতকর্মকে স্বীকার করতে চাইবে না । বান্দা বলবে “হে আমার রব, তুমি কি আমাকে প্রতিশ্রæতি দাওনি যে, আমার প্রতি কোন জুলুম করা হবে না? আল্লাহ বলবেন, হ্যা। বান্দা বলবে তবে আমি আমার নিজের সাক্ষ্য ছাড়া অপর কারো সাক্ষ্য মানবনা। “ তখন আল্লাহ বলবেন, আমি নিজেও কি যথেষ্ট সাক্ষী নই ? অথবা মর্যাদাশীল লেখক ফেরেশতারাও কি সাক্ষী হিসাবে যথেষ্ট নয় ? বান্দা বহুবার তা নাকচ করে দেবে। তখন তার মুখে মোহর লাগান হবে এবং তার অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বলতে থাকবে , পৃথিবীতে সে কি করেছিল তখন বান্দা ( মনে মনে) বলবে , “ তোরা দূর হয়ে যা, তোরা ধ্বংস হ, তোদের জন্যই আমি সংগ্রাম করেছিলাম। বিচারের দিন পরিবারের লোকেরাও কারও কোন উপকার করতে পারবে না। আবু দাউদ শরিফে বর্ণিত হয়েছে  একদিন আয়েশা (রাঃ) জাহান্নামের ভয়ে কাঁদছিলেন। তিনি নবিজীকে জিজ্ঞেস করেন, সেদিন কি আপনি পরিবার পরিজনের কথা মনে রাখবেন ? তখন রাসুল (সাঃ) বলেন, তিনটি স্থান এমন আছে যেখানে কারো কথা স্মরণ করবে না। তার মধ্যে একটি হচ্ছে আমলনামা পাওয়ার সময় যখন বলা হবে দৌড়ে এসো এবং নিজে নিজ আমলনামা পঠ কর। যতক্ষণ কেউ জানতে পারবে না যে ,তা কোন দিক থেকে আসছে? ডান বাম না পেছনের দিক থেকে ? আমলনামা ডান হাতে দেয়ার আগে আল্লা তার প্রিয় বান্দাদের আমলনামা দেখবেন। তিনি তখন স্বীয় বান্দাদেরকে নিজের কাছে ডেকে নিবেন। তাকে তার গুনাহ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করবেন। তিনি বলবেন তুমি কি অমুক অমুক গুনাহ করেছিলে। সে স্বীকার করতে থাকবে , এমনকি সে ধারণা করবে যে, তার ধ্বংস অনিবার্য। ঐ সময় আল্লাহ তাকে বলবেন-হে আমার বান্দা! দুনিয়ায় আমি তোমার গুনাহগুলোর উপর পর্দা ফেলে দিয়েছিলাম। আজকেও আমি তোমাকে লজ্জিত করবো না। যাও তোমাকে আমি ক্ষমা করে দিলাম। “ অতপর তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে। যাতে শুধু পূণ্যই লিখিত থাকবে। 
প্রতিদিন যদি কোন লোক পাপ করতে তাকে তাহলে তার পাপের খাতা কতটুকু লম্বা বা কত ভারী হচ্ছে তা আমরা অনুমান করতে পারিনা।  তাই কেউ কেউ পাপকে তোয়াক্কা করে না। সুয়ায়দ ইবন নাসর রহঃ ---আব্দুল্লাহ ইবন আমর ইবনুল আস (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে , তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি ঃ আল্লাহ তায়ালা কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সমস্ত সৃষ্টির সমক্ষে আলাদা করে এনে হাযির করবেন। তার সামনে পাপের  নিরানব্বুইুটি নিবন্ধন খাতা খুলে দিবেন। এক একটি খাতা হবে যতদূর দৃষ্টি যায় ততদূর পর্যন্ত বিস্তৃত। প্রতিটি খাতা নিক্তিতে উঠানো হবে। তিরমিযি) আল্লাহ বলেন, যাকে তার আমলনামা ডান হাতে দেয়া হবে তার হিসাব নিকাশ সহজ হয়ে যাবে এবং সে তার পরিবার পরিজনের কাছে হৃষ্টচিত্তে ফিরে যাবে ( আল ইনশিকাক-৮৪) । কোন কোন কাজের জন্য আমাদের অতি কষ্টে উপার্জিত আমল নষ্ট হয়ে যেতে পারে। এর মধ্যে একটি হলো আসরের নামাজ ত্যাগ করা। নবি করিম (সাঃ) বলেছেন, যে ব্যক্তি আসরের নামাজ ত্যাগ করল তার আমল বাজেয়াপ্ত হয়ে গেল( বুখারি)। এছাড়া শখের বশে কেউ কুকুর পালন করলে তার আমল থেকে প্রতিদিন দু কিরাত পরিমান আমল বাদ যাবে। কেউ জেনে শুনে শিরক   বিদাত করলে তার আমল বাদ যাবে। তাই আমরা যদি জাহান্নাম থেকে মুক্তি পেতে চাই তাহলে আমাদের আমল অটুট রাখতে হবে। কেননা পরকালের একমাত্র সম্বল হচ্ছে নেক আমল। আমরা সর্বদা নেক আমলে সচেষ্ট থাকব। লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও  ধর্মীয় গবেষক,কুমিল্লা।  


No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.