মুমিনের আল্লাহর কাছে চাওয়া ঃ কখন ও কিভাবে

মুমিনের আল্লাহর কাছে চাওয়া ঃ কখন ও কিভাবে

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,
আল্লাহর অনুগত বান্দা হিসেবে আখিরাতের এবং দুনিয়ার বিপদে আল্লাহর কাছে আমরা দোয়ার মাধ্যমে সাহায্য চাই।    দুআ আবার দুপ্রকার। এর মধ্যে দুআউল ইবাদাহ হচ্ছে উপাসনামূলক দুআ । এ অর্থে সকল প্রকার ইবাদতই দোআ। অন্যদিকে বান্দা আখিরাতের এবং দুনিয়ার কল্যানের জন্য ব্যক্তিগতভাবে যে দুআ করে তা দুআউল মাছালা নামে পরিচিত। তবে এ ধরণের দুআ সাধারণত পার্থিব কল্যাণেই করা হয়। সালাতের মধ্যেও পার্থিব কল্যাণে দোয়া করা যায়। তাকবিরে তাহরমিার পর, রুকুতে, রুকু থেকে উঠার পর, সেজদায়, দু সেজদার মাঝে, এবং শেষ ত্শাহুদে নিজের জন্য সুন্নত অনুযায়ী দুআ করা যায়। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে মারফু সূত্রে রাসুল (সাঃ) বলেছেন,দোয়া থেকে আল্লাহর কাছে আর কোন বস্তু (ইবাদত) অধিক মর্যাদা সম্পন্ন নয় (তিরমিজি)। সহিহ মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “ যদি তোমার উপর কোন মুসিবত পতিত হয় তবে তুমি এরূপ কথা বলবে না যে , আমি এরূপ করলে আমার এরূপ হতোনা বরং তুমি বলবে , আল্লাহর পক্ষ থেকে এটাই নির্ধারণ ছিল, আল্লাহ যা চেয়েছেন তা করেছেন। কেননা “ যদি” শব্দ শযতানের কাজের পথ খুলে দেয়। বান্দা যখন সিজদায় যায় তখন সে আল্লাহর সবচেয়ে কাছাকাছি অবস্থান করে। তাই এসময় বান্দা তার মনের কথা শরিয়ত অনুযায়ী ব্যক্ত করতে পারে। তাই দু সিজদার মাঝখানে আমরা দোয়া করি - হে আল্লাহ আমাকে মাফ কর, আমার উপর রহম কর, আমাকে হেদায়েত দান কর, আমাকে রোগ মুক্ত কর এবং আমাকে রিজিক দান কর। ” রোগ মুক্তির ব্যাপারে একজন অন্যজনের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করতে পারবেন। সাদ ইবনে আবি আক্কাস (রাঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ ) আমার অসুস্থ অবস্থায় আমাকে দেখতে এসে  বল্লেন, হে আল্লাহ সাদকে রোগমুক্ত কর, হে আল্লাহ সাদকে রোগমুক্ত কর! হে আল্লাহ সাদকে রোগমুক্ত কর ( মুসলিম)।  ঋণের বোঝা কমানোর জন্য আল্লআর কাছে দোয়া করা যায়। এধরণের দোয়া নামাজের মধ্যেও করা যেতে পারে। নামাজের মধ্যে সালামের পূর্বে পড়ার জন্য একটি দোয়ার কথা বোখারি ও মুসলিম বর্ণিত হয়েছে। সেটি হচ্ছে- হে আল্লাহ আমি আপনার নিকটে আশ্রয় প্রার্থনা করছি দুশ্চিন্তা ও দুঃখ -বেদনা হতে অক্ষমতা ও অলসতা হতে, ভীরুতা ও কৃপনতা হতে এবং ঋণের বোঝা ও মানুষের যবরদস্তি হতে।”
বান্দা একাকী হাত তুলে আল্লাহর কাছে দোয়া চাইতে পারে। সালমান (রাঃ) থেকে বর্ণিত – রাসুল (সাঃ ) বলেছেন- তোমাদের প্রভূ রজ্জাশীল ও দানশীল। তার বান্দা তার নিকটে দুহাত তুলে প্রার্থনা জানালে আল্লাহ তায়ালা এ দুহাতকে খালি ফিরিয়ে দিতে লজ্বাবোধ করেন ( আবু দাউদ)। মানুষ মারা গেলেও যে ৩টি কাজের সওয়াব বলবৎ থাকে এর মধ্যে একটি হচ্ছে নেক সন্তান। তাই নেক সন্তান লাভের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করা যাবে। দুঃখ-কষ্ট দূর করার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইব, আল্লাহ বলেন, আর স্মরণ কর আইয়ুবের কথা, যখন সে তার রবকে আহবান করে বলেছিল -আমি দুঃখ –কষ্টে পতিত হয়েছি। আর আপনিতো সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু তখন আমি তার ডাকে সাড়া দিলাম ( আম্বিয়া-৮৩)।  আমরা ফরজ নামাজ শেষে রাব্বানা আতিনা ফিদ্দুনইয়া ---আযাবান্নার”  ( বাকারা২১৬) পড়ে থাকি। এটি আল্লাহর কাছে চাওয়ার একটি উত্তম দোয়া। কোরানের এ আয়াতের মাধ্যমে আমরা দুনিয়া ও আখিরাতে কল্যাণ কামনা করি। অতিরিক্ত সম্পদ বিপদের কারণ হতে পারে। তাই সম্পদের ব্যাপারে সচেতন থাকতে হবে। বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে, রাসুল (সাঃ) বলেন, মানুষের নিকট এমন এক সময় আগত হবে, যখন তারা শুধু সম্পদ সঞ্চয়ের চিন্তায় বিভোর থাকবে। আর তা কি হালাল উপায়ে আসছে না হারাম এব্যাপারে চিন্তা করবে না। যে কোন সময় বান্দা আল্লাহর কাছে চাইতে পারে। তারপরও কিছু কিছু সময় দোয়া কবুলের জন্য বিশেষভাবে তাকিদ দেয়া হয়েছে। রাতের শেষ তৃতীযাংশের দোয়া- এসময় আল্লাহ নিচের আকাশে নেমে এসে বান্দাদের আবেদন গ্রহণ করেন। আজান ও ইকামতের মধ্যবর্তী সময়ের দোয়া ফেরত দেয়া হয় না। জুম্মার দিনের দোয়া, সেজদার সময়ের দোয়া, ঘুম থেকে জেগে উঠার পরের দোয়া এবং ফরজ নামাজ শেষের ব্যক্তিগত দোয়া। 
দোয়ার মধ্যে কাউকে শরিক করা যাবে না। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় আল্লাহ তার সাথে শরীক করা ক্ষমা করেন না। তা ব্যাতীত অন্যান্য অপরাধ যাকে খুশি ক্ষমা করেন ( সুরা আন নিসা)। আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো কিছু চাওয়া যাবে না। পবত্রি কুরআনে আছে   আর তাকে ছেড়ে এমন অন্য কাউকে ডেক না, যে না তোমার উপকার করতে পারে, আর না কোন ক্ষতি করতে পারে। আর যদি তা কর তবে অবশ্যই তুমি জালেমদের ( মুশরিকদের) অর্ন্তভুক্ত হয়ে যাবে (সুরা ইউনুস ১০৬) সুরা ফাতিহার মধ্যে আমরা প্রতিদিন বলি, আমরা শুধু তোমারই ইবাদত করি এবং শুধু তোমারই সাহায্য চাই। ইমাম আবু জাফর তাবেরী ( রহঃ)  বলেন, হে আমাদের প্রতিপালক তুমি ব্যাতীত অন্য কারো জন্য নয়, বরং তোমার প্রভুত্বের স্বিকৃতি দেয়ার জন্যই আমরা কেবল তোমারই কাছে বিনীত হই এবং তোমারই কাছে আমাদের দীনতা, হীনতা, আর অভাব-অভিযোগ প্রকাশ করি। দোয়া কবুল হওয়ার ক্ষেত্রে আল্লাহর নৈকট্য লাভের ব্যাপারটি অতি গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি মা-বাবা, আত্মীয়- স্বজন ও পাড়া-প্রতিবেশীর হক আদায় করে না সে আল্লাাহ থেকে দূরে থাকে। এছাড়া যারা সৎকাজের আদেশ ও অন্যায় থেকে মানুষকে বিরত রাখার ব্যাপারে উদাসীন তাদের দোয়া সব সময় কবুল হয় না। দুয়ার সুফল অনেক সময় সরাসরি পাওয়া যায় না। তবে মুমিনের কোন দুয়াই বৃথা যায় না। কোন কোন সময় সরাসরি প্রতিদান আল্লাহ দিয়ে থাকেন, কোন কোন সময় দোয়ার কারণে তার উপর আগত অন্য কোন বিপদ আল্লাহ দূর করে দেন। এছাড়া কিছু কিছু দোয়ার প্রতিদান আল্লাহ অখিরাতের জন্য সংরক্ষণ করেন। লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা। 




No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.