দ্বীনের খেদমতে ঃ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

দ্বীনের খেদমতে ঃ বাংলাদেশ ইসলামিক ফাউন্ডেশন

বাংলাদেশে ইসলামের প্রচার ও প্রসারের লক্ষে ১৯৭৫ সালের ২২ মার্চ বাংলাদেশ ইসলামীক ফাউন্ডেশন প্রতিষ্ঠা করা হয়। “মসজিদভিত্তিক শিশু ও গণশিক্ষিা কার্যক্রম”প্রকল্প ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্প। ১৯৯৩ সালে এ কার্যক্রম শুরুহয়। প্রথম পর্যায় শেষ হয় ১৯৯৫ সালে । এ প্রকল্পের মাধ্যমে কয়েক লক্ষ শিশু, কিশোর ও বয়স্ক লোক উপকৃত হয়। একার্যক্রমে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষায় ৩০ জন , কুরআন শিক্ষা কেন্দ্র ৩৫ জন এবং বয়স্ক শিক্ষায় ২৫ জন ছাত্র-ছাত্রী নিয়েএকটি গ্রæপ গঠিত হয় লাগবে। সরকার মসজিদ ভিত্তিক শিশু শিক্ষার পাশাপাশি বয়স্কদের অক্ষর জ্ঞান দেয়ার কাজ ও করছে।১৯৯৩ সালে মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় প্রাক-প্রাথমিক এবং ঝড়ে পড়া ( ড্রপআউট) কিশোর কিশোরী জ্ঞানহীন বয়স্কদের জন্য মসজিদভিত্তিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করে। এ উদ্যোগ জনগণের প্রশংসা লাভ করে। আরবি মাস কোন কোন সময় ২৯ দিনে হয় আবার কোন কোন সময় তা আবার ৩০ দিনে হয়। তাই প্রতি মাসেই চাঁদ দেখা কমিটির সভা অনুষ্ঠিত হয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের উদ্যেগে চাঁদ দেখা কমিটির সভা করা হয় এবং দূরবীনের মাধ্যমে তা দেখে দেশবাসীকে জানানো হয়। বিশেষ করে ঈদের চাঁদ দেখার জন্য আমরা উদগ্রীব হয়ে থাকি। এসময় ইসলামিক ফাউন্ডেশন চাঁদ দেখে ঈদেরএবং রোজার ঘোষণা দেয়। ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, হাফেজ- কারীগনকে উচ্চতর দ্বীনি শিক্ষার পাশাপাশি আর্থ- সামাজিক ও উন্নয়নমূলক প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এগুলোর মধ্যে রয়েছে ইসলামিয়াত, প্রাথমিক চিকিৎসা, প্রাক প্রাথমিক, গনশিক্ষা. কৃষি ,প্রাণী সম্পদ ও মাছ চাষের উপর প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। এছাড়া বাল্য বিবাহ প্রতিরোধ, মদ জুয়া, ইত্যাদি প্রশিক্ষণ দান করা হয়। ২০-৫০ বছরের কম পক্ষে দাখিল পাশ লোকেরা প্রশিক্ষণ নিতে পারে। ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপন কল্পে ইমাম ও মুয়াজ্জিন কল্যাণ ট্রাস্ট আইন পাশ করা হয়। এ ট্রাস্টের অর্থের উৎস হবে-সরকারি অনুদান , বিত্তবানদের অনুদান ও মুসল্লীদের প্রদেয় উৎস। এ অর্থে ইমাম- মুয়াজ্জিননের কল্যাণে ব্যয় হয় করা হবে। 
ইসলামিক ফাউন্ডেশন ইসলামিক বই প্রকাশ করে থাকে। ইসলামী মূল্যবোধ ও কমর্ পদ্ধতিকে জনপ্রিয় করে তোলার লক্ষে ইসলামের ইতিহাস, দর্শন, সংস্কৃতি, ও বিচারব্যবস্থা সম্পর্কিত গবেষণার আয়োজন করা ও প্রসার ঘটানো এ ফাউন্ডেশনের নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ। প্রকাশিত বইগুলো সূলভ মূল্যে বিক্রি করা হয়। ২০১৫ সালে প্রকাশিত একটি পুস্তক তালিকায় দেখা যায়- এখান থেকে কুরআন ও তাফসীর বিষয়ক ৪৩ টি, হাদিসে রাসুল (সাঃ) বিষয়ক ৫৪টি, সীরাতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) শীর্ষক ২৭টি, ইসলামিক বিশ্বকোষ ২৯ টি, সীরাত কোষ ৪ টি , জীবনী গ্রন্থ ২১ টি, ইসলামী আদর্শ ও ধমতত্ত ৯৪ টি , ইতিহাস-ঔতিহ্য, শিল্প, সাহিত্য ও সংস্কৃতি ৮১ টি শিশু সাহিত্য ৯৫ টিপত্রিকা ও সাময়িকী ৪টি, প্রকাশিতব্য ১১৯ টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। পত্রিকা ও সাময়িকী ৪টি , প্রকাশিতব্য ১১৯টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করা হয়েছে।
২০০৮ সালে পরিচালিত ইসলামিক ফাউন্ডেশনের জরিপ অনুযায়ী বাংলাদেশে মসজিদ রয়েছে ২ লাখ ৫৩ হাজার ১৭৬ টি। বর্তমানে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা ও অনুমোদনের কারণে বাংলাদেশে মসজিদের সংখ্যাও বাড়ছে। অন্যান্য যায়গার চেয়ে ঢাকায়ই মসজিদের সংখ্যা বেশি। ১৮৩২ সালে ঢাকার তৎকালীন ম্যাজিস্ট্রেট জর্জ হেনরীওয়াল্টার এক রিপোর্টে উল্লেখ করেন তৎকালীন সময়ে ঢাকায় মসজিদের সংখ্যা ছিল ১৫৩ টি ।  ইসলামিক ফাউন্ডেশনের হিসাব অনুযায়ী বর্তমানে ঢাকায় মসজিদ রয়েছে ১০ হাজার। এ পর্যন্ত প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী বাংলাদেশের সবচেয়ে প্রাচীন ( হারিয়ে যাওয়া) মসজিদটি লালমনিরহাটে অবস্থিত। এ মসজিদের নাম ফলকটি বর্তমানে রংপুর যাদুঘরে সংরক্ষিত রয়েছে। এতে লিখা রয়েছে হিজরী ৬৯ সাল এবং আরবীতে কালিমা তাইয়েবা লিখা রয়েছে। বায়তুল মোকারমকে জাতীয় মসজিদের মর্যাদা দেয়া হয়েছে। ১৯৬০ সালে এ মসজিদ প্রতিষ্ঠিতহয়। এ মসজিদের নির্মাতা টি আব্দুল হুসেন খারিয়ানি। এখানে ৪০০০০ লোক (মহিলাসহ ) নামাজপড়তেপারে। পাকিস্তানের বিশিষ্ট শিল্পপতি লতিফ বাওয়ানি ও তার ভাতিজা ইয়াহিয়া বাওয়ানির উদ্যোগে এ মসজিদ নির্মানের উদ্যোগ নেয়াহয়। ১৯৭৫ সালের ২৮ মার্চ ইসলামিক ফাউন্ডেশন মসজিদের দায়িত্ব গ্রহণকরে। সরকারি উদ্যেগে এ মসজিদে নামাজ আদায়সহ বিভিন ধরণের ধর্মীয় প্রোগ্রাম অনুষ্ঠিত হয়। ধর্ম মন্ত্রনালয়ের উদ্যোগে বিভিন্ন ধর্মীয় দিবস পালন করা হয়। এ দিবসগুলোতে সরকারি/বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ ঘোষণাকরাহয়। বর্তমানে দেশের স্কুল কলেজগুলো ৩৩ দিন  ( ধর্মীয়) ছুটি ভোগ করছে। ফাউন্ডেশনের আওতায় বায়তুল মোকারমে নামাজ ছাড়াও ঈদেও দিনগুলোতে জাতীয় ঈদগাহে সরকারি ব্যবস্থাপনায় নামাজ পরিচালিতহয়।এছাড়া সরকারিভাবে পালন করা হয় ঈদে মিলাদুন্নবী, শবেবরাত, শবে ক্বদরসহ বিভিন্নধর্মীয় অনুষ্ঠান থাযথ ভাব গাম্ভির্জের সাথে উদযাপন করা হয়।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক,প্রভাষক ও ধর্মীয়গবেষক, কুমিল্লা। 
সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.