হে আমার রব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন
হে আমার রব আমাকে উত্তম সন্তান দান করুন
সন্তান তার জীবনের শুরুতেই মায়ের স্পর্শ পায়। মায়ের গন্ধ শুঁকে , মায়ের ছোয়ায় সে বেড়ে উঠে। ধীরে ধীরে প্রবেশ করে কোলাহলময় পৃথিবীতে। ইমাম গাজ্জালী বলেছেন- সন্তান মাতা-পিতার কাছে আমানত।আর এ সন্তান কাদামাটির মতো, ছোটবেলায় তাকে যে নকশায় রুপ দেয়া হয় সে পরবর্তী জীবনে সে রুপ ধারণ করে। বিপথে পরিচালিত হলে মা-বাবাকে তাঁর খেসারত দিতে হয়। নবদম্পতি আল্লাহর কাছে কি দোয়া করবে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তা আমাদেরকে পবিত্র কোরান শরিফের মাধ্যমে শিক্ষা দিয়েছেন। সুরা আল ফোরকানে তিনি বলেন, আল্লাহর নেক বান্দা তারাই যারা বলে হে, অমাদের রব, আমাদেরকে এমন স্ত্রী ও সন্তানাদি দান করুন যারা আমাদেও চক্ষু শীতল করবে। আর আপনি আমাদেরকে মুত্তাকীদের নেতা বানিয়ে দিন। যাকারিয়া আলাইহিস সালাম আল্লাহর নিকট দোয়া করেছিলেন- হে আমার রব আমাকে আপনার পক্ষ থেকে উত্তম সন্তান দান করুন। নিশ্চয় আপনি প্রার্থনা শ্রবনকারী। শিশু ভুমিষ্ট হওয়ার পর থেকে আমরা তার যতœ নিতে শুরু করি। এটি ঠিক নয়। গর্ভধারণের সময় থেকেই যতœ নেয়া শুরু করতে হবে। এসময় গর্ভবতী মাকে প্রতিদিন ২০০ থেকে ৩০০ ক্যালরী বেশি শক্তি প্রয়োজন। বিজ্ঞানীরা বলেন এসময় গর্ভবতী মাকে ২৪০০ ক্যালরী খাদ্য গ্রহণ করতে হবে। সন্তান জন্মগ্রহণের পর থেকে শিশুকে দুধ খাওয়াতে হবে।আল্লাহতায়ালা শিশুর শরিরের চাহিদা অনুযায়ী মায়ের স্তনে সুপরিমিত উপাদান সহকারে দুধ সৃষ্টি করতে থাকেন ।এমনকি শিশু যে বয়সে যে পরিমান তাপমাত্রা সহ্য করতে পারে আল্লাহর ইচ্ছায় সে পরিমান তাপমাত্রায় দুধ তৈরি থাকে। নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত দুধ খাওযালে সন্তানের মা পূন্যের অধিকারী হবেন। সুরা লোকমানে ( ১৪ নং আয়াত ) আল্লাহ বলেছেন, আমি মানুষকে তার পিতামাতার সাথে সদ্ব্যবহার করার নির্দেশ দিয়েছি তার পিতা মাতা তাকে কষ্টের পর কষ্ট করে গর্ভে ধারণ করেছিলেন। আর তার দুধ ছাড়ানো দু বছরে হয়। ইমাম অবু হানিফা ও ঈমাম যুফারের মতে ৩০ মাস বা আড়াই বছর। ( আহমদ মুল্লা জিওন, পৃঃ ১৩৯ )। স্বামী- স্ত্রী উভয়েই পারস্পরিক পরামর্শ ও আলাচনার ভিত্তিতে দুধ ছাড়িয়ে নিতে চায়, তাহলে সে ক্ষেত্রে তাদের কোন গুনাহ হবে না (আল কুরআন ২ঃ২৩৩ )।বিবাহের মাধ্যমে মানব জীবনের পূর্ণতা আসে। একসময় যুবক যুবতিটি পিতা মাতায় পরিণত হয়। সন্তানকে কেন্দ্র করে তাদের জীবন আবর্তিত হয়। আমরা সবাই তার ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তা করি। তাকে ভাল ডাক্তার বানাতে হবে, অথবা ভাল ইঞ্জিনিয়ার বানাতে যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করবো। পিতা মাতা এ ধরণের শপথ নেন। কিন্তু এ সন্তান যে আমাদের আখিরাতেও আশির্বাদ হতে পারে তা আমরা ভুলে যাই। তাই তাকে ধর্মীয় শিক্ষায় ধাবিত করি না।আমরা যদি আমাদের আদরের সোনামনিটিকে ধর্মীয় শিক্ষায় শিক্ষিত করে তুলি তাহলে সে আপনার কবরের পাশে গিয়ে আপনার জন্য দোয়া করবে।আল্লাহ বলেছেন- হে মুমিনগন তোমরা নিজেদেরকে ও তোমাদের পরিবার পরিজনকে জাহান্নমের আগুন থেকে বাঁচাও, যার জ্বালানি হবে মানুষ ও পাথর। ( সুরা আত তাহরিম )। হযরত আলী ( রাঃ ) এ আয়াতের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে পরিবারের সবাইকে উত্তম শিক্ষাদানের উপর গুরুত্বারোপ করেছেন। মাতাপিতার সকল কথা সন্তানকে মানতে হবে। তবে আল্লাহ বিরোধী কোন কথা মান্য করা যাবে না। আল্লাহ বলেন- মাতা পিতা যদি তোমাকে আল্লাহর সাথে এমন বিষয়কে শরিক করতে পীড়া-পিড়ি করে যার জ্ঞান তোমার নেই, তবে তুমি তাদের কথা পালন করবে না। তবে পৃথিবীতে তাদের সাথে সদ্ব্যবহার করে চলবে। ( সুরা লোকমান-১৫ )। মুফাস্সির ইবনে কাসির এ আয়াতের তাফসিরে বলেন, ইসলাম ব্যাতীত অন্য কোন ধর্মের ব্যাপারে আদেশ করলে মেনে নেবে না। কেননা আল্লাহর অবাধ্যতায় কোন আনুগত্য নেই। আনুগত্য কেবল সৎকর্মে ( বোখারি ও মুসলিম )। সন্তান ছোট থাকতেই তাকে দ্বীনের সঠিক শিক্ষা দিতে হবে। কেউ কেউ মনে করেন ছোট ছেলে মেয়েরা সত্য- মিথ্যার প্রভেদ না করলেও চলে। প্রকৃতপক্ষে এ ধারণা সঠিক নয়। ধর্মীয় জ্ঞানের পাশাপাশি আপনার সন্তানকে আপনি সামাজিকতা শিক্ষা দেবেন। যেগুলো করতে পারেন সেগুলো হচ্ছেঃ সবার সামনে থুথু না ফেলা, বড় করে হাই না তোলা, অন্যদের দিকে পিঠ না দিয়ে বসা, কারো পায়ের সাথে পা না লাগানো, থুতুনির নিচে হাত দিয়ে না বসা, সভাস্থলে বেশি কথা না বলা, খাওয়ার সময় ভদ্রতা রক্ষা করা, মিথ্যা কথা না বলা। এর পাশাপাশি পিতা -মাতা, আত্মীয় ও গুরুজনদের শ্রদ্ধা করার জন্য নছিয়ত করতে হবে।
আল্লাহতায়ালা বলেন- ধন সম্পদ ও সন্তান -সন্ততি হচ্ছে পার্থিব জীবনের সৌন্দর্য বিশেষ। ( সুরা কাহাফ )। রাসুল ( সাঃ ) শিশুদেরকে আদর করতেন। আবু হোরায়রা রাঃ ) বলেন- নবিজি হাসান বিন আলীকে চুম্বন দিলেন এবং আদর করলেন। সেসময় আকরা ইবনে হাবিস (রাঃ ) উপস্থিত ছিলেন। তিনি বলতে লাগলেন, আমার তো দশটি সন্তান কিন্তু অমিতো কখনো আমার সন্তানদের আদও করিনি। রাসুল ( সাঃ ) তার দিকে তাকালেন। এবং বল্লেন, যে অন্যের প্রতি রহম করে না আল্লাহ তার প্রতি রহম করেনা। ( সহিহ বুখারি ৫৯৯৭ )। ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, কয়েকজন আহলে ইলম বলেন, বিচার দিবসে প্রথমে পিতাকে তার সন্তান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হবে।সন্তানের জন্য মা বাবার দোয়া একটি নেয়ামত। নবি দাউদ আঃ একদা আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন,হে আল্লাহ ! আপনি আমার জন্য যেমন ছিলেন তেমনি আমার ছেরের ক্ষেত্রেও হবেন। জবাবে আল্লাহ তায়ালা বলেন, হে দাউদ , তুমি তোমার ছেলেকে বলো, সে জন্য আমার জন্য তোমার মতো হয় ,তাহলে আমি তোমার প্রতি যেরুপ ছিলাম তার প্রতিও সেরুপ হব। ( ইমাম নববী ( রহঃ ) বুস্তানুল আরেফিন পৃঃ ৪৫ )। ইব্রাহিম আঃ তার ছেলেদেরকে অদ্বিতীয় আল্লাহর ইবাদত করার জন্য উপদেশ দেন।রাসুল ( সাঃ ) বলেছেন- প্রতিটি শিশু ফেতরাতের উপর জন্মগ্রহণ করে। আর তার পিতা-মাতা তাকে ইহুদি , মজুসি ( অগ্নিপূজক) অথবা খৃষ্টান বানায়। (বোখারি ও মুসলিম ) কারো স্ত্রী মারা গেলে ইসলাম ধর্মের নিয়ম অনুযায়ী তিনি আবার বিয়ে করেন। নতুন করে আসা স্ত্রীটি পুর্বের সংসারের ছেলে মেয়েদের লালন- পালন করে থাকে। এর মধ্যে আবার তার নিজের কোলেও আসে ফুটফুটে বাচ্চা। তখন আগের সন্তানের প্রতি আনেকেই বৈষম্য করে থাকেন। এটি মোটেও ঠিক নয়। আগের সংসারে ছেলে মেয়েকে নিজের ছেলে-মেয়ের মত মনে করতে হবে।বুখারি শরিফে বর্ণিত আছে (হাদিস নং ২৫৮৭) “ তোমরা আল্লাহকে ভয় করো এবং তোমাদের সন্তানের মাঝে ইনসাফ করো।” সন্তানের দৈহিক গঠনে মা সবসময় সচেতন থাকেন। কথায় বলে- উকুনের ভয়ে মাথায় রাখতে চাননা আবার পিঁপিঁলিকার ভয়ে মাটিতে রাখতে পারেন না। প্রতিটি মায়ের অভিযোগ তার সন্তান ঠিকমতো খায়না, সে কিভাবে বড় হবে? কিভাবে ভবিষ্যৎ চেলেন্জ মোকাবেলা করবে ? এ নিয়ে চিন্তিত। কিন্তু ছেলেটির বয়স ১০ পেরিয়ে গেল এখনও সে ঠিকমত নামাজ পড়ে না কেন ? এ নিয়ে মুসলিম মাতারা কতটুকু ভাবেন? জীবনের শুরুতেই যদি সন্তানকে আল্লাহর প্রতি গভীর বিশ্বাস, আখেরাতের প্রতি দৃঢ় ঈমান ও ইসলামের মৌলিক আকিদায় বিশ্বস্ত করে তুলতে হবে।তাহলেই কেবল এ সন্তান আপনার জন্য আশির্বাদ হয়ে উঠবে।লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।
No comments