মিলিতভাবে সাদকাতুল ফিতর আদায়

মিলিতভাবে সাদকাতুল ফিতর আদায়

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
ফিতর মানে খাওয়ার মাধ্যমে রোজা ভঙ্গকরা। সাদকাতুল ফিতর দেয়ার সময় হচ্ছে রমজানের শেষ দিনের সূর্যাস্তের পরবর্তী সময়। কেননা এ সময় খাওয়ার মাধ্যমে রমজানের সিয়াম সমাপ্ত হয়। তাই ফিতর তথা সিয়াম শেষ হওয়ার সময়টাই সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব সময়। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের হুকুমের পাশাপাশি রাসুলে আকরাম (সাঃ)এর নির্দেশ মানতে হয়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেছেন, “ যে রাসুলুল্লাহ (সাঃ)এর হুকুম মান্য করল সে আল্লাহর হুকুমই মান্য করল। আর যে পৃষ্ঠ প্রদর্শন করল , আমি আপনাকে তাদের জন্য পর্যবেক্ষণকারী নিযুক্ত করে পাঠাইনি। ( সুরানিসা ৮০) আব্দুল্লাহ ইবনে ওমর  (রাঃ) বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) রমজান মাসে আজাদ, গোলাম, নারী-পুরুষ, ছোট-বড়, সকল মুসলিমের উপর “এক সা” খেজুর বা এক সা সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব করেছেন। ওসমান (রাঃ) পেটের বাচ্চার পক্ষ থেকে সাদকায়ে ফিতর আদায় করেন। যদি কোন শিশু সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পর ভূমিষ্ট হয়, তার উপরও আবশ্যক হবে না। তবে আদায় করা যেতে পারে। আর সূর্যাস্তের কয়েক মিনিট পূর্বে  ভূমিষ্ট হলে তার পক্ষ থেকে আদায় করতে হবে। সাদকাতুল ফিতর গরীবদেও জন্য এক মহা নেয়ামত। দরিদ্র ব্যক্তির প্রতি সহানুর্ভূতি প্রদর্শন করা হয়। ঈদের দিনগুলোতে দরিদ্র ব্যক্তিরা কিছুটা সচ্ছলতা বোধ করে। ফলে ঈদেও আনন্দ ধ¦নী-গরীব সকালে সমানভাবে ভাগ করে নিতে পারে। সাদকাতুল ফিতরএর মাধ্যমে সিয়াম পালনকারী দান করার উৎসাহ পায়। কেউ যদি ইচ্ছে করে নির্দিষ্ট পরিমান সাদকার পরিবর্তে আরো বেশি পরিমান দিবে তাহলে সে দিতে পারবে। সাদকার মাধ্যমে রোজার ত্রæটি গুলো দূর হয় । আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিতএকটি হাদিসে এর সমর্থন পাওয়া যায়। কারণ সাহাবায়ে কেরাম পোশাক , বিছানা, পান পাত্র ইত্যাদি কোন গরীব লোককে ফিতরা হিসাবে দেন নি। তারা খাদ্য মূল্য দিয়েও তা আদায় করেন নি। রাসুল (সাঃ)এর সুন্নতকে আমরা আন্তরিকতার সাথে পালন করব। রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন, “ তোমরা আমার সুন্নতএবং আমার পরবর্তীতে সঠিক পথে পরিচালিত খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নত আকড়ে ধর।”
সাদকাতুল ফিতর প্রদানে কোন প্রকার অবহেলা করা যাবে না। রাসূল (সাঃ) যেভাবে দিয়েছেন, সাহাবাগনই যেভাবে দিয়েছেন, সেভাবেই আমাদেরকে সকল ইবাদত করতে হবে। রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন, আমি যখন তোমাদের কোন বিষয়ে আদেশ করি , তোমরা তা সাধ্য অনুযায়ী পালন কর। ( বোখারি ও মুসলিম)। অনেকেই মূল্য প্রদানের মাধ্যমে ফিতরা প্রদানের কথা বলেন। এতে কিছুটা সমস্যা রয়েছে। এতে ইবাদতের ধারা পাল্টে যায়। এটি করা উচিত নয়। খাদ্য দ্রব্যকে মূল্যে রুপান্তর করা কঠিন। বর্তমান যুগে খেজুর, পনির, গম, যব ইত্যাদির মূল্য এক নয় এবং কখনও এক হবেনা। তাই ফিতরার মূল্যের পরিমান এক রকম হবেনা। রাসুল (সাঃ) ১ সা পরিমান ফিতরা দিতে বলেছেন। এই এক সা হচ্ছে চারশত আশি মিসকাল। ইংরেজী ওজনে যা দুই কেজি ৪০ গ্রাম। যেহেতু এক মিসকাল সমান চার গ্রাম ও এক চতুর্থাংশহয়। সুতরাং ৪৮০ মিসকাল সমান ২০৪০ গ্রাম হয়। ইমাম আবুহানিফা (রহঃ)এর মতে, আট রতলে এক সা ( ইরাক) যা আমাদের দেশীয় ওজনে প্রায় ৪ সের। ইমাম মালেক, শাফেয়ী ও হাম্বলের মতে ৫.৩৪ রতলে এক সা ( হিজাজ) আমাদের দেশীয় ওজনে প্রায় পৌনে ৩ সের। ইমাম আবু হানিফা (রহঃ) মূল্য দিয়ে ফিতরা আদায় বৈধ বলেছেন। নিসাবের ব্যাপারে  তিনি বলেন, ঐ ব্যক্তির উপর সাদকাতুল ফিতর ওয়াজিব যে ঈদের দিন ভোরে প্রয়োজনের অতিরিক্ত সম্পদ হিসাবে সাড়ে সাত তোলা স্বর্ণ বাসাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য বা সম পরিমান সম্পদের মালিক, পরিবারের কর্তা সকলের পক্ষ থেকে তা আদায় করবেন। হানাফি মাযহাবের লোকেরা অর্ধ সা ফিতরাদিয়ে থাকে। এক সা কত কেজি হয় এ নিয়ে বিতর্ক রয়েছে। তৎকালীন সময়ে মক্কা, মদীনা ও কুফাতে পৃথক পৃথক সা প্রচলিত ছিল। এখন আমরা কোনটি ধরব? এব্যাপারেও রাসুল (সাঃ) নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। ইবনু ওমর  (রাঃ) হতে বর্ণিত- তিনি বলেন- “ ওজন করার সময় মক্কার ওজন ব্যবহৃত হবে। পরিমাপযন্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে মদীনাবাসীর পরিমাপ যন্ত্র ব্যবহৃত হবে ( আবু দাউদ)। বোখারির হাদিসে খাদ্যদ্রব্য হিসাবে যব, খেজুর, কিসমিশের কথাএসেছে। ফিকহীবিদগন খাদ্যদ্রব্য বলতে দেশের প্রধান খাদ্য দ্রব্যের প্রতি ঈঙ্গিত করেছেন। হাদিসের পরিপূর্ণ অনুসরণ করলে আমরা চাউল কিংবা টাকা দিয়ে ফিতরা দিতে পারিনা। একদল বিশেষজ্ঞ আলেম বলেন, যেহেতু হাদিসে উল্লেখিত পাঁচ প্রকার বস্তুু, গম, খেজুর, যব, কিসমিশ, এবংপনির এগুলো যদি তাকে তবে বিকল্প কোন কিছু দিয়ে আদায় করা জায়েজ হবেনা। 
এতিম ফিতরা পাওয়ার উপযুক্ত। এতিম হচ্ছে আশ্রয়হীন শিশু। মিসকিন ফিতরার হকদার। মিসকিন সেসব অভাবগ্রস্ত , সম্ভ্রান্ত দরিদ্রদেও বুঝায়, যারা আত্মমর্যাদা ও সম্মান বোধের কারনে কারওকাছে স্বীয় অভাব ও দােিদ্রর কথা প্র্রকাশ করতে পারেনা। তাদেরকে খুঁজে বের কওে ফিতরা দিতে হবে। যাদিও কাছে পরিবার-পরিজন ও সন্তান-সন্ততির প্রয়োজন পূরনের মত পাথেয় নেই তারাই ফকির। তারাও ফিতরা গ্রহণ করতে পারবেন। যারা রোজা রাখতে পারেননি তারাও ফিতরা দেয়ার সওয়াব থেকে বঞ্চিত হবেন না। কোরানুল কারিমে বলা হয়েছে, “ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)) তোমাদের যা আদেশ করেন তা গ্রহণ কর এবং যা নিষেধ করেন তা থেকে বিরত থাক ( হাশর-৭)।ঈদেও সালাতের আগেই ফিতরা আদায় করতে হবে। পরে দিলে তা সাধারণ দান হিসাবে গণ্য হবে। । 
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সহ -সভাপতি,হিউম্যান রাইটস এন্ড প্রেস সোসাইটি,( দেবিদ্ধার),  সাংবাদিক ও  ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।   সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.