অতি বৃদ্ধদের রোজার ফিদিয়া আদায়

অতি বৃদ্ধদের রোজার ফিদিয়া আদায়

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
মানব দেহে দুধরণের রোগ দেখা যায়। এক ধরণের রোগ যা থেকে সহজেই আরোগ্য লাভ করা যায়। এ ধরণের রোগে রোজা ভাঙ্গলেও পরবর্তীতে সুস্থ হওয়ার পর সমান সংখ্যক রোজা পালন করতে হয়। দ্বিতীয় প্রকার রোগ হল মৃত্যু রোগ, যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায় না। এছাড়া  খুবই বৃদ্ধ নর-নারী যারা শক্তি সামর্থ-হারিয়ে ফেলেছেন এবং দিন দিন অবস্থার অবনতি হচ্ছে তারা রোযা পালনের বাধ্যবাধকতা থেকে মুক্ত। অধিক বয়সের কারণে তারা রোযা রাখতে সক্ষম নন। তাই তারা “ফিদিয়া ” দিয়ে রোজার দায় থেকে মুক্ত হবে।জীবন বাজি রেখে অসহ্য কষ্ট ভোগ করে রোজা রাখার কথা বলা হয়নি।  আল্লাহ  রাব্বুল আমিন বলেন,“ তোমরা নিজেদের হত্যা করো না।” অতি বৃদ্ধ নয় এমন লোক রোগের কারণে সিয়াম পালনে কষ্ট হলে সুস্থ হলে রোজা রাখার সুযোগ আছে।আর নিজেকে হত্যা করো না। আল্লাহ অবশ্যই তোমাদের প্রতি দয়াশীল ( নিসা ২৯)। এছাড়া  আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারা এর ১৮৫ নং আয়াতে বলেন, “ আল্লাহ তোমাদের জন্য যা সহজ তা চান , যা কষ্টকর তা চান না।” তাই মুসলিম ডাক্তার রোজা রাখতে বারণ করলে অসুস্থ ব্যক্তি পরবর্তীতে তা কাযা করে নিতে পারবে। আল্লাহ তায়ালা বলেন, আর তোমাদের মধ্যে যে অসুস্থ বা সফরে আছে, সে যাতে অন্য দিনগুলোতে তা আদায় করে নেয় । ( তোমাদের মধ্যে) যারা অপারগ তারা যেন (ফিদিয়াহ ) বেশি করে আদায় করে । আর তোমরা যদি সাওম রাখ তবে তা তোমাদের জন্য উত্তম।” কেউ কেউ মনে করেন পরবর্তীতে এ আয়াত মানসুখ হয়ে গেছে। কিন্তু বোখারি শরিফে এ আয়াতের সমর্থনে হাদিস রয়েছে। তাই  মানসুখ বলা যায় না। হাদিসটির ভাষ্য এরকম  আব্বাস (রাঃ) থেকে বর্ণিত হয়েছে “ এটি মানসুখ ( রহিত)  নয় বরং তা অতিবৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর ক্ষেত্রে প্রযোজ্য- যারা সাওম পালন করতে পারবে না। তারা প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়া দিবেন।” 
  ফিদিয়া হিসাবে কোন ধরণের খাবার মিসকিনকে দিতে হবে তা জানা প্রয়োজন। যাকাত প্রদানের ৮টি খাতের মধ্যে প্রথম দুটি খাত হচ্ছে ফকির ও মিসকিন। যেহেতু আলাদা খাত হিসেবে দুটি শ্রেণিতে তাদের স্থান দেয়া হয়েছে তাই ফকির ও মিসকিনকে একই শ্রেনিতে বিবেচনা করা যাবে না । প্রতিটি রোজার বদলে একজন মিসকিনকে আধা “স্বা” খাবার খাওয়াতে হবে যে দেশে যে ধরণের খাদ্য দ্রব্য প্রচলিত রয়েছে সে অনুযায়ী খাওয়াতে হবে। বাংলাদেশের মানুষের প্রধান খাদ্য ভাত। এছাড়া গম ও খেজুর জাতীয় খাবার দিয়েও ফিদিয়া আদায় করা যাবে। এখানে ১ “ছা”  ৩ কেজি ধরা হয়েছে। বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে- হযরত আনাস (রাঃ ) একদিন খাবার তৈরি করে রোযার সংখ্যা হিসাবে মিসকিন ডেকে খাইয়েছেন। তিনি এক অথবা দুই বছর রোজা রাখতে না পারলে প্রত্যহ মিসকিনকে গোশত রুটি খাইয়েছেন। তাই শুধু মাত্র আধা “স্বা” ( সোয়া কিলোগ্রাম) খাবার দিলেই চলবেনা সাথে তরকারীর ব্যবস্থাও করতে হবে। খাবার দেয়ার চেয়ে বাড়িতে এনে দাওয়াত দিয়ে খাওয়ানো ভাল। ধরা যাক ৩০ জন মিসকিনকে দাওয়াত দেয়া হলো। এদের মধ্যে ৫টি দুগ্ধপোষ্য শিশুও রয়েছে। এখন এই শিশুদেরকে কি ৩০ জনের মধ্যেই গণনা করা যাবে। এ নিয়ে মত পার্থক্য রয়েছে। মিসকিনদের পাশাপাশি ফকিরদেরও খাদ্য দেয়া যেতে পারে। 
বৃদ্ধ ও অক্ষমদের ফিদিয়া মাসের শেষেও দেয়া যেতে পারে। ইচ্ছে করলে মাসের মাঝেও দেয়া যায়। হানাফী, শাফিই ও হাম্বলী মাযহাবের আলেমগণ এ ব্যাপারে একমত পোষণ করেছেন যে, ফিদিয়া তখনই আদায় করা যাবে যখন বার্ধক্যের বা এমন রোগ যার সুস্থতার আশা করা যায় না। তারা “ফিদিয়া ” দিয়ে রোজার দায় থেকে মুক্ত থাকবেন। নবি (সাঃ) এর একদল সাহাবা বলেছেন, যাদের মধ্যে ইবনে আব্বাস ও রয়েছেন। যদি অতি বৃদ্ধ নারী অথবা পুরুষ যদি বেশি দরিদ্র হন অর্থাৎ খাওয়াতে সক্ষম না হন তবে তার উপর কিছু বর্তায় না।  
সাধারণ রোগী যারা সুস্থতার আশা করবে , এরপর সাওম পালন করবে।  যদি এমন হয় যে তার রোগ থেকেই গেল এবং সুস্থ হওয়ার আগেই সে মারা গেল , তবে সে দায়মুক্ত। কারণ আল্লাহ তায়ালা তার  উপর অন্য দিনগুলোতে কাযা আদায় ওয়াজিব করেছিলেন এবং তা আদায়ের আগেই সে মারা গেছে। ফাতওয়া আল লাজনাহ আদ-দাইমাহতে বলা হয়েছে, যদি কাউকে কোন মুসলিম বিশ্বস্ত ডাক্তার সিয়াম পালন না করার পরামর্শ দেয় তাহলে সে ব্যক্তি রোজা ভাঙ্গতে পারে। প্রতি রমজানের পরিবর্তে খাদ্য বাবদ টাকা দিলে চলবে না , মিসকিন খাওয়াতে হবে।  যে ব্যক্তি রোজার সময় অসুস্থ ছিল , অতঃপর সুস্থ হয়ে রোজার কাযা করার সুযোগ পেয়েও তা আদায় করেনি এবং সে মৃত্যুমুুখে পতিত হলো এক্ষেত্রে মৃত ব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদ থেকে  ভঙ্গ করা প্রতিটি রোজার “ফিদিয়া” প্রদান করতে হবে। তবে নিকটাত্মীয়দের কেউ তার পক্ষ থেকে রোজা রাখলেও  শুদ্ধ হবে ।  আল্লাহ তায়ালা সুরা বাকারাতে বলেন, “ আল্লাহ কারও উপর তার সাধ্যের অতিরিক্ত বোঝা চাপান না। ( আয়াত ২৮৬)।এ আয়াত প্রসঙ্গে ইবনু ক্বদামাহ “ আল মুগনিতে” বলেন, “অতি বৃদ্ধ পুরুষ ও নারীর জন্যে সাওম পালন যদি কঠিন ও অত্যন্ত কষ্টসাধ্য হয় তবে তারা ইফতার ( সাওম ভঙ্গ) করতে পারেন। আর সে ক্ষেত্রে প্রতিদিনের পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাওয়াবেন---তবে তিনি যদি ( মিসকিন) খাওয়াতে অক্ষম হন , তবে তার উপর কিছু ( দায়িত্ব) বর্তায় না।” লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।


No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.