হালাল উপার্জন ইবাদত কবুলের শর্ত
 পবিত্র কুরআনে মানুষের জন্য দেয়া নেয়ামতসমূহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। এসকল নেয়ামতের যথাযথ ব্যবহার করে মানুষ পবিত্র জীবিকা উপার্জন করতে পারে। তাকওয়া অবলম্বনের মাধ্যমে মানুষ তার প্রবৃত্তিগুলো দমন করতে পারে। সুরা বনি ইসরাইলের ৭০ নং আয়াতে বলা হয়েছে-“ আমরা মানুষকে মর্যাদা দিয়েছি এ ভূভাগে ও সাগরে তাদের জন্য পরিবহনের ব্যবস্থা করেছি। এবং তাদেরকে পবিত্র জীবিকাসমূহ দিয়েছি ও তাদেরকে অনেক সৃষ্টির উপর শ্রেষ্ঠত্ব ও অনুগ্রহ দান করেছি। ” সুতরাং হালাল উপায়ে আল্লাহর দেয়া নেয়ামতের মাধ্যমে জীবিকা অর্জন করা প্রত্যেক মুমিন পুরুষের দায়িত্ব। কোন কোন কাজে পারিশ্রমিক নেয়ার ব্যাপারে কেউ কেউ না জেনেই আপত্তি করেন। ইমাম ত্বাবারি (রহঃ) বলেন, উমর (রাঃ) এর হাদিসের মধ্যে মুসলিমদের যে কোন কর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি তার ঐ কর্মের পারিশ্রমিক গ্রহণ করতে পারবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। এছাড়া রাসুল (সাঃ) উমর (রাঃ)কে তার কর্মের মজুরি প্রদান করেছিলেন বলে পমাণ পাওয়া যায়।  এছাড়া সেসময়  শাসক, বিচারক, কর বা ট্যাক্স আদায়কারী, ও যাকাত আদায়কারীরা সম্মানি গ্রহণ করেছেন।
 মানব জীবনে উপার্জনের কোন বিকল্প নেই। তবে তা হতে হবে হালাল পথে। যে ব্যক্তি দুনিয়ার হালাল জিনিস সমূহ অর্জন করতে চাইবে , স্বীয় আত্ম মর্যাদার রক্ষা , স্বীয় পরিবার বর্গের প্রয়োজন পূরণ ও নিজের প্রতিবেশির প্রতি দয়া পরবশ  হওয়ার উদ্দেশ্যে , সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এরূপ অবস্থায় যে , তার মুখমন্ডল পূর্ণিমা রাতের চাদের মতো অত্যুজ্জল ও আলোকমন্ডিত  হবে ( তাবরানী)। ইমাম তিরমিজি বর্ণনা করেছেন, - আবু বারযা নাদলা ইবনে উবায়েদ আসলামী (রাঃ )থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন, “কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে বান্দা তার স্থানেই দাঁড়িয়ে থাকবে যে পর্যন্ত তাকে জিজ্ঞেস করা হবে তার জীবনকাল কীরুপে অতিবাহিত করেছে , তার জ্ঞান কি কাজে লাগিয়েছে, তার সম্পদ কোথা থেকে অর্জন করেছে । ” কারও নিয়ন্ত্রণে থেকে কাজ করলে ভালভাবে তা সম্পন্ন করে তার সন্তুষ্টি অর্জন করতে হবে। হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন , গোলাম যখন তার মালিকের সুচারুরুপে খেদমত করে এবং আল্লাহর ইবাদত করে সুন্দরভাবে তখন তার জন্য রয়েছে দ্বিগুন সোয়াব ( বোখারি ও মুসলিম)। আপনি যদি কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মালিক হোন অর্থাৎ আপনার অধিনে যদি কর্মচারী থাকে তাহলে তাদের সুযোগ সুবিধার ব্যাপারে আপনাকে সচেতন হতে হবে। আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত ,তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ (সা:) বলেছেন ,কিয়ামতের দিন আমি তিন শ্রেণির লোকের বিরুদ্ধে বাদী হবো, তাদের বিরোদ্ধে জয়ী হব। যে ব্যাক্তি শ্রমিক নিয়োগ করে তার থেকে পূর্ণরূপে কাজ অদায় করে নেয় ,কিন্তু তার পূর্ণ মজুরী দেয় না। অন্য হাদিসে আছে, শ্রমিকের ঘাম শুকানোর পূর্বে তোমরা তার মজুরী দাও (ইবনে মাজা) । জীবিকা অর্জনের জন্য পুরুষদের চেষ্টা করতে হবে। তবে এ কাজ করতে গিয়ে সম্পদ সমৃদ্ধির গোলাম হওয়া যাবে না। বরং সম্পদকেই নিজের আয়ত্বে রাখতে হবে।
পবিত্র কুরআন ও সুন্নাহ দ্বারা নির্দেশিত বা অনুমোদিত পেশায় অর্থ উপার্জনই হালাল উপার্জন । এটি একজন মুসলমানের জীবনের অতি গুরুত্বপূর্ণ অংশ । হালাল উপায়ে জীবিকা অর্জন না করলে হাশরের ময়দানে জবাবদিহী করতে হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে মানুষের জন্য যা কল্যাণকর পবিত্র ও উত্তম তা আল্লাহ আমাদের জন্য হালাল করেছেন। আমাদেরকে আমাদের জীবিকার উপর পূর্ণ ভরসা রাখতে হবে। তিরমিজি শরিফে আছে,  যদি তোমরা আল্লাহ তাআলার উপর সঠিক ও যথাযথ ভরসা রাখ তাহলে তিনি তোমাদের পাখির মত জীবিকা দান করবেন । ক্ষুধার্ত অবস্থায় সবাই বের হয় আর পেট পূর্তি করে বিকালে বাসায় ফিরে। গরীব লোকদের দান সদকার উপর নির্ভর করা উচিত নয়। বোখারি শরিফে বর্ণিত সাইদ ইবনে ইয়াহইয়াহ (রঃ) ----আবু মাসউদ আনসারী (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে সাদকা করতে আদেশ করলেন তখন আমাদের কেউ বাজারে গিয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে বোঝা বহন করে মুদ পরিমান অর্জন করত (এবং তা থেকেই সাদকা করত) অথচ আজ তাদের কেউ  লাখপতি। আমাদের যতটুকু রিযিক প্রয়োজন আল্লাহ তার ব্যবস্থা করে রেখেছেন। তারপরও মানুষ অল্প সময়ে বেশি সম্পদ লাভে আগ্রহ্ ী। এই অদম্য আগ্রহ তাকে পাপের পথে পরিচালিত করে। তারা তখন হারাম হালালের তোযাক্কা না করে বিত্তবান হওয়ার চেষ্টা করে। একজন পুরুষের উপর ¯ত্রী- পুত্র পরিবার পরিজন ছাড়াও মা -বাবা, আত্বীয় -স্বজন ও পাড়া -প্রতিবেশীর হক রয়েছে। রাসুল (সা:) বলেছেন, দান খয়রাত গ্রহণ করা কোন ধনী লোকদের জন্য জায়েজ নয়। শক্তিমান ও সুস্থ ব্যাক্তির জন্য ও নয়। সুতরাং কোন মুসলমান উপার্জনহীন ও বেকার বসে থাকতে পারেনা। উপার্জনের জন্য আল্লাহ জমিনকে আমাদের উপযুক্ত করে তৈরি করেছেন। এটি আল্লাহর একটি নিয়ামত। ইবাদত বন্দেগীতে নিমগ্ন থাকার কারনে উপার্জন থেকে দূরে থাকতে পারেনা। ইমাম বুখারি রহঃ রিয়াত করেছেন,  মিকদাদ ইবনে মাদীকারির (রা:) থেকে নবী (সা:) বলেছেন -নিজ হাতে উপার্জন করে খাওয়ার চাইতে উত্তম খাদ্য কেউ কখনো খায়নি। আল্লাহর নবী দাউদ (আ:) নিজ হাতে উপার্জন করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। আমরা জীবিকার মাধ্যমে উপার্জিত অর্থ দিয়ে প্রথমত নিজেরা এবং পরিবারের সদস্যরা আহার করে থাকি। এছাড়া বস্ত্র, বাসস্থান শিক্ষা, চিকিৎসা করে থাকি। বৈধ টাকা দিয়ে এগুলো কিনতে হবে। রাসুল (সা:) উল্লেখ করেন কোন ব্যাক্তি দূর দূরান্তে সফর করেছে তার মাথার চুল এলোমেলো ,শরীরে ধূলাবালি লেগে আছে।  এমতাবস্থায় ঐ ব্যক্তি উভয় হাত আসমানের দিকে তুলে কাতর স্বরে হে প্রভু! বলে ডাকছে, অথচ তার খাদ্য হারাম, পানীয় হারাম, পরিধেয় বস্ত্র হারাম এবং সে হারামই খেয়ে থাকে। এই ব্যক্তির দোয়া কিভাবে কবুল হবে? ( মুসলিম)।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.