হাদিস সংগ্রহে নবি পত্নীদের অবদানContribution of the Prophet's wives to the collection of hadithsমমিনুল ইসলাম মোল্লারাসুলে আকরাম (সা) এর পারিবারিক জীবন সম্পর্কে জানা উচিত। তিনি ২৫ বছর থেকে শুরু করে ৬৩ বছর পর্যন্ত তিনি সংসার করেছেন।এ সময় তিনি একাধিক স্ত্রী গ্রহণ করেছেন।রাসুলে আকরাম (সা) এর মুখের বাণী তারা সংরক্ষণ করেছেনবিশেষ করে পারিবারিক বিষয়ের হাদিসগুলো তাদের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়েছে।যা অন্য কারো থেকে সঠিকভাবে পাওয়া যায়না। রাসুলে আকরাম (সা) এর প্রথম স্ত্রী ছিলেন হযরত খাদিজা (রা)।বিয়ের সময় তার বয়স ছিল ৪০ বছর আর রাসুলে আকরাম (সা) এর বয়স ছিল ২৫ বছর।রাসুলে আকরাম (সা) এর সাথে ২৫ বছর তার পারিবারিক জীবন ছিল। নবুয়তের দশম বছরে ইন্তেকাল করেন। সাওদা বিনতে যামআ (রা)রাসুলে আকরাম (সা) এর সাথে ১৩ বছর সংসার করেন। তিনি ৫টি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বর্ণনা করেন। আয়েশা (রা) ৯ বছর রাসুলে আকরাম (সা) এর সাথে জীবন যাপন করেন।তিনি সর্বাধিক ২২১০ টি হাদিস বর্ননা করেন। উম্মে সালমা (রা) ৩৭৮ টি হাদিস বর্ণনা করেন।তিনি ৮ বছর সংসার করেন।১১টি হাদিস বর্ণনা করেন জয়নাব বিনতে জাহাশ (রা )।রাসুলের সাথে তার বিবাহিত জীবন ছিল ৭ বছর। ৭ টি হাদিস সংগৃহীত হয় রাসুলে আকরাম (সা) এর প্রিয়তম স্ত্রী জুয়াইরিয়া (রা) থেকে।উম্মে হাবিবা (রা) থেকে পাওয়া যায় ৬৫ টি হাদিস। এছাড়া ১০টি হাদিস বর্ণনা করেন সুফিয়া (রা) ।৫ বছরের সংসার জীবনে ৭৬ টি হাদিস বর্ননা করেন মায়মুনা (রা)। রাসুলে আকরাম (সা) এর স্ত্রীদের মধ্যে আয়েশা (রা) সবচেয়ে বেশি হাদিস কর্ণনা করেছেন। হাদিসগুলোর মধ্যে সহিহ বুখারিতে ৫৪ টি এবং সহিহ মুসলিমে ৬৮টি স্থান পেয়েছে। সাহাবী ও তাবেয়ী মিলে ২ শতাধিক রাবি তার নিকটথেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন।উল্লেখযোগ্য রাবীগণ হচ্ছেন মাসরুক, আসওয়াদ, ইবনুল মোসাইব, উরওয়াহ , কাশেম প্রমুখ। তার নিকট থেকে বর্ণিত হাদিসগুলোর মধ্যে পবিত্রতা বিষয়ক হাদিসগুলো বিশেষভাবে স্থান পেয়েছে।এগুলোর মধ্যে একটি হচ্ছে-আয়েশা (রা) বলেন, রাসুলে আকরাম (সা) অপবিত্র( জুনুবি) অবস্থায় নিদ্রা যেতে ইচ্ছা করলে তিনি তার যৌনাঙ্গ ধুয়ে নিয়েছেন এবং সালাতেরঅজুর মতো অজু করেছেন। অন্য একটি হাদিসে খুল্লাস আল হাজরী ও বলেন, আমি আয়েশা (রা) কে বলতে শুনেছি , তিনি বলেছেন, ঋতু¯্রাব অবস্থায় আমি ও রাসুলে আকরাম (সা) একই চাদরের নীচে ঘুমিয়েছি।রাসুলে আকরাম (সা) এর শরীওে বা কাপড়ে রক্ত লাগলে তিনি তা ধুয়ে সালাত পড়েছেন( আবু দাউদ) । ফরয গোসল সম্পর্কে একটি হাদিসে বলা হয়েছে, আয়েশা (রা) বলেন, যখন দুই লজ¦াস্থান মিলিত হয় তখন গোসল ফরয হয়ে যায়। আমার এবং রাসুলে আকরাম (সা) এর এমনটি হতো। এর পর আমরা গোসল করে নিয়েছি( ইবনে মাজাহ)। হাদিস শিক্ষা ও বর্ণনায় আয়েশা (রা) এর পরেই উম্মে সালমার স্থান। হাদিস শুনার প্রতি তার আগ্রহ বেশী ছিল। একদিন তিনি চুলের বেণী বাধাচ্ছিলেন। এমন সময়রাসুলে আকরাম (সা) ভাষণ দেয়ার জন্য মসজিদের মিম্বরে দাড়ালেন। তিনি কেবল “ওহে লোক সকল! বলেছেন আর অমনি উম্মে সালমা (রা) বলেন, তাড়াতাড়ি চুল বেধে দাও। চুল বিন্যস্তকারিনি বলেন, “ কেবলতা ওহে লোক সকল বলেছেন।উম্মে সালমা বলেন, আমরা কি লোক সকলের অন্তর্ভুক্ত নই? এর পর তিনি নিজেই চুল বেধে দ্রুত উঠে যান এবং দাড়ানো অবস্থায় রাসুল সা এর পূর্ণ ভাষণটি শুনেন। (মুসনাদে আহমদ) রাসুলে আকরাম (সা) এর প্রতি অগাধ ভালবাসা থাকার কারণেই নেটি সম্ভব হয়েছেু।
যয়নাব বিনতে জাহাশ মর্যাদা সম্পন্ন মহিলা সাহাবী ছিলেন। তিনি রাসুলে আকরাম (সা) থেকে ১১ টি হাদিস সংগ্রহ বর্ণনা করেছেন।ইবনে হাজার (র ) আল ইশরা গ্রন্থে উল্লেখ করেন হাদিস পুনরুক্তিসহ বুখারিতে ৫টি , মুসলিমে ৩টি ,তিরমিজিতে ৩টি আবু দাউদে ২টি নাসাইতে ২টি, ও ইবনে মাজায় ২টি সংকলিত হয়েছে। উম্মুল মুমেনিন জুয়াইরিয়া অত্যন্ত জ্ঞানী সাহাবী ছিলেন। তার নিকট থেকে হাদিস সংগ্রহ করেছেন, ইবনে আব্বাস, ইবনে ওমর, জাবের, আবু আইয়ুব মারাসী, তোফায়েল, মুজাহিদ, কুলছুম, ইবনে মুসতালিক, কুরাইব, এবং আব্দুল্লাহ ইবনে সাদ্দাদ তার থেকে হাদিস বর্ণনা করেছেন। তার বর্ণিত হাদিসগুলো বোখারি ও মুসলিম শরিফে সংকলন করা হয়েছে। জুয়াইরিয়া (রা) থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনরাসুলে আকরাম (সা) বলেছেন, যে ব্যক্তি রেশমী কাপড় পড়বে কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাকে আগুনের পোশাক পরাবেন।উম্মে হাবিবা (রা) একজন প্রিয়তম স্ত্রী ছিলেন। তার ভাই ইবনে আবু সুফিয়ান (রা) তাকে জিজ্ঞেস করেন , যে কাপড় পড়ে রাসুলে আকরাম (সা) স্ত্রী সহবাস করেন, সে কাপড় পরেই কি তিনি সালাত পড়তেন ? উম্মে হাবিবা রা) বলেন, হ্য, যখন সে কাপড়ে নাপাকীর কোন চিহ্ন দেখা না যেত।( আবু দাউদ)। রাসুলে আকরাম (সা) এর স্ত্রী মায়মুনা (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,আমি রাসুলে আকরাম (সা) এর জানাবতের গোসল কাছে থেকে লক্ষ করেছি। তিনি প্রথমে দুহাতের কব্জি দু/তিনবার ধুয়েছেন। এরপর হাত পাত্রে দিয়ে লজ্জাস্থানে পানি দেন এবং বাম হাত দিয়ে তা ভালভাবে পরিষ্কার করেন। এরপর সালাতের ন্যায় ওজু করেন। এরপর তিনি ৩ কোষ পানি মাথায় দেন,এর পর সমস্ত শরীর ধুয়ে নেন। এরপর সে স্থান থেকে সরে এসে পা ধুয়ে নেন। এরপর আমি রুমাল নিয়ে আসি কিন্তু ুতিনি তা গ্রহন করেননি(মুসলিম)। এভাবে রাসুলে আকরাম (সা) এর স্ত্রীগণ হাদিস সংগ্রহে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখেন।তাদের নিকট থেকে রাবিগণ সযতেœ হাদিসগুলো লিপিবদ্ধ করেছেন। পরবর্তীতে হাদিস সংকলকগণ সেগুলো তাদেও গ্রন্থে সংকলন করেছেন। লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের ক্যাম্পেনার, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক,সহকারী সম্পাদক,দৃষ্টান্ত ডট কম কুমিল্লা।
No comments