এতমিদরে সাহায্যে এগয়িে আসুন
এতমিদরে সাহায্যে এগয়িে আসুন
এতিম আরবি শব্দ। যার অর্থ নিঃসঙ্গ। সাধারণভাবে একটি ঝিনুকের মধ্যে যদি একটি মাত্র মুক্তা জন্ম নেয় তখন একে দুররে এতিম বা নিসঃঙ্গ মুক্তা বলা হয়। লিসানুল আরব অভিধানে এতিম সম্পর্কে লিখা হয়েছে, এতিম এমন বাচ্চাকে বলা হয় যার পিতা মারা গিয়েছে। বালেগ হওয়ার পর এতিম নামটি তার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যাবে। আর মেয়ে বাচ্চা বিয়ের পূর্ব পর্যন্ত এতিম বলে হন্য হবে। বিয়ের পর তাকে আর এতিম বলা যাবে না। এতিমের প্রতি আমরা নির্দয় হবে না তাদের প্রতি নমনীয়তা অবলম্বন করতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, “ তিনি কি আপনাকে এতিমরুপে পাননি? অতঃপর আশ্রয় দিয়েছেন। তিনি আপনাকে পথ প্রদর্শন করেছেন। আপনাকে পেয়েছেন নিঃস্ব অতঃপর অভাবমুক্ত করেছেন। সুতরাং আপনি এতিমের প্রতি কঠোর হবেন না( দুহা ৬-৯)। একদিকে সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন এতিম। অন্যদিকে এতিমরা হচ্ছে সমাজের সবচেয়ে দুর্বল ও অসহায়। তাই তাদের প্রতি আল্লাহর করুনা ও রহমত রয়েছে, বিধায় পবিত্র কোরান ও হাদিসে এতিম পালনে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। এতিকে সাহায্য করতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য। আমাদের ভোগ বিলাসের পর অতিরিক্ত যা থাকে তা থেকেই নয় সচ্ছল ও অসচ্ছল উভয় অবস্থায় দান করতে হবে। আল্লাহ বলেন, আহার্যের প্রতি আসক্তি সত্বেও তারা অভাবগ্রস্ত , এতিম ও বন্দিকে আহার্য দান করে এবং ( তারা বলে) তোমাদেরকে আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনে খাদ্য প্রদান করি। অতএব তোমাদের থেকে কোন প্রতিদান ও ধন্যবাদ চাই না। ( ইনসান-৮)এতিমদের প্রতি কোমল আচরন করতে হবে। ধন-সম্পদের মোহে পড়ে কারুন বা ফিরাউনের মত হওয়া যাবে না। ধর্মীয় চিন্তাবিদগন বলেছেন, সাহায্যরে অধিকারী আত্মীয়- স্বজনের মধ্যে যারা মীরাসের অংশীদার নয় সম্পত্তি বন্টনের সময় এতিমদেরও কিছু দেয়া যেতে পারে। তাদের সাথে আবেগজড়িত কন্ঠে কথা বলতে হবে। এতিমদের পাশাপাশি বন্দী ও অমুসলিমদের প্রতিও সহানুভূতিশীল হতে হবে। শুধুমাত্র আল্লাহর মহব্বতে অভবাবীদেরকে খাদ্য দান করতে হবে। এছাড়া বন্দী যদি অমুসলিম হয় তারপরও তাদেও সাথে ভাল ব্যবহার করতে হবে। রাসুল সাঃ এর শেষ উপদেশ ছিল নামাজ ও ক্রীতদাস-দাসীদের প্রতি সদ্ব্যবহার করা।কৃপনতার কারণে অনেকে এতিমের সহায়তায় এগিয়ে আসেন না। তারা মূলত পরকাল দিবসেও সঠিকভাবে বিশ্বাস রাখেন না। সুতরাং এধরণের ব্যক্তিরা এতিমের সাথে সদ্ব্যবহার করতে পারেন না। এতিমদের সাথে তারাই সদ্ব্যবহার করতে পারে যার অন্তরে ধন সম্পদের পরিবর্তে আল্লাহর ভয় বিদ্যমান রয়েছে। নিজেদের সন্তানদের তুলনায় এতিমদের হেয় প্রতিপন্ন করা যাবে না। তাদের প্রাপ্য আদায় ও তাদের ব্যয়ভার বহন করলেই আমাদের মানবিক ও আল্লাহ প্রদত্ত ধন সম্পদের কৃতজ্ঞতা সম্পর্কিত দায়িত্ব পালন হয়ে যায় না বরং তাদেরকে সম্মান ও করতে হবে। এতিমদের প্রাপ্য না দেয়া ও প্রয়াজনীয় ব্যয় বহন না কাকফেরদের কাজ। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ বলেন- না, কক্ষনো না। বস্তুত তোমরা এতিমকে সম্মান করনা (সুরা আল ফজর-১৭)। যিনি এতিমের দায়িত্ব নিবেন তিনি তার মালামালের হিফাযত করবেন। তাদের মালামালের দায়িত্ব নেয়ার সময় সাক্ষী রাখতে হবে। তবে যারা এ গুরু দায়িত্ব পালনে সংশয় প্রকাশ করবেন। তারা এ দায়িত্ব না নেয়াই ভাল। নবিজি আবু যার (রাঃ) কে এতিমের মালের দায়িত্ব নিতে নিষেধ করেন। এতিমের মৃত পিতা ( অসিয়তের মাধ্যমে) দেশের সরকার কিংবা সমাজের মাধ্যমে এতিমের সম্পদের হেফাযত কারী নির্ধারণ করা হয়। তিনি এতিমের মাল থেকে এতিমের জন্য খরচ করবেন।তবে এ খরচ হতে হবে যুক্তিযুক্তভাবে। অবধৈভাবে এ মাল খরচ করা যাবে না। এতিম নিজে হিসেব নিতে পারে না। তাই এ আমানত সঠিকভাবে রক্ষা করতে হবে। কেননা যেখানে মানুষের পক্ষ থেকে হক দাবী করার কেউ থাকে না। সেখানে আল্লাহর পক্ষ থেকে দাবী কঠোরতর হয়ে যায়। এতে ত্রæটি হলে সাধারণ মানুষের হকের তুলনায় গুনাহ অধিক হয়। এতিমকে ভাল ভাল খাওয়ালে বা ভাল ভাল কাপড়- চোপড় পড়ালেই দায়িত্ব শেষ হয়ে যায় না।তাকে ইসলামী শিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে। ছোটকাল থেকেই এতিমদের অন্তরে আপন সন্তানের মত ঈমান ও সহীহ আকিদার বীঁজ বপন করে দিতে হবে। আমরা আমাদের সন্তানদেরকে যেভাবে ধর্মীয় শিক্ষা দেই তাদেরকেও সেভাবে দ্বীনী জ্ঞান দিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, -হে ঈমানদারগণ তোমরা তোমাদের নিজদিগকে ও তোমাদের পরিবার -পরিজনকে আগুন থেকে বাঁচাও --- ( তাহরীম-৬) । লোকমান স্বীয় সন্তানকে উপদেশ দিতে গিয়ে বলেন, হে বৎস ! আল্লাহর সাথে শরিক করো না। নিশ্চয় শিরক করা বড় জুলুম।
এতিমের সম্পদ অঅলাদা করে রাখতে হবে। তবে সৎ উদ্দেেেশ্য তা একত্রিত করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, - যদি তাদের ব্যায়ভার নিজের সাথে মিশিয়ে নাও তাহলে মনে করবে তারা তোমাদের ভাই। বস্তুত অমঙ্গলকারী ও মঙ্গলকামীদেরকে আল্লাহ জানেন। কেউ যদি নিজের খাওয়া- দাওয়া ও ব্যবসা –বাসস্থান থেকে এতিমের খাওয়া-দাওয়া ও বাসস্থান সম্পূর্ণ আলাদা করে এতে কোন দোষ নেই। তবে অভিভাবক এতিমের সম্পদ থেকে ঐ পরিমান উপকৃত হতে পারবে যে পরিমান তার এই কাজের মজুরি বা পারিশ্রমিক হতে পারে। তবে ব্যক্তি ধনী হলে পারিশ্রমিক নিবে না। আল্লাহ বলেন, যারা সচ্ছল তারা অবশ্যই এতিমের মাল খরচ করা থেকে বিরত থাকবে (নিসা -৬) । নবী সাঃ এর সময়ে কেউ অন্যায়ভাবে এতিমের ধন বা মাল ভক্ষণ করলে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তির ব্যাপারে আল্লাহ পবিত্র কোরানের মাধ্যমে হুকুম নাযিল করেন। তখন সাহাবায়ে কেরাম ভয় পেয়ে গেলেন। তাদের সাথে এতিমদের মাল ছিল তারা তা পৃথক করে দিলেন। এমনকি পানাহারের কোন কিছু অবশিষ্ট রয়ে গেলে তাও ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন। পিতৃহীন , অনাথ, বা এতিম যখন সাবালক হয়ে যাবে এবং ভাল-মন্দ বুঝতে শিখবে। তখন তাকে তার ধন- সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে।তবে বালেগ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কাছে সে সম্পদ দেয়া যাবে না। এক্ষেত্রে শুধু মাত্র বয়সের ব্যাপারে খেয়াল রাখলেই হবে না। বয়ঃপ্রাপ্ত হওয়ার পর দেখতে হবে তার মধ্যে নিজের সম্পদ রক্ষণাবেক্ষণ এবং শুদ্ধ খাতে ব্যয় করার জন্য উপযুক্ত জ্ঞান তার আছে কি না ? যদি যোগ্যতা না হয়ে থাকে তাহলে যখন যোগ্যতা অর্জন করে তখনই তাকে সে সম্পদ বুঝিয়ে দিতে হবে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন, আর তোমরা এতিমদেরকে তাদের সম্পদ দিয়ে দাও। এবং তোমরা অপবিত্র বস্তুকে পবিত্র বস্তু দ্বারা পরিবর্তন করো না। এবং তাদের ধন সম্পদকে তোমাদের ধন সম্পদের সাথে খেয়ো না। নিশ্চয় তা বড় পাপ ( নিসা-২)এতিমের মাল আত্মসাতকারীরা কেয়ামতের দিন শাস্তি ভোগ করবেন। ইবনে কাসির রহঃ তার তাফসিরে ইবনে জারির রহঃ এর বরাত দিয়ে উল্লেখ করেন- এতিমের মাল অণ্যায়বাবে ভক্ষণকারী কিয়ামতের দিন এমতাবস্থায় উত্থিত হবে যে, তার পেটের ভিতর থেকে আগুনের লেলিহান শিখা মুখ , দুই কান , নাক , দুই চক্ষু দিয়ে বের হতে থাকবে। যে তাকে দেখকে সে চিনতে পারেবে যে, এ হচ্ছে এতিমের মাল ভক্ষনকরাী। নিজেদের নিকৃষ্ট বস্তুর সাথে এতিমদের উৎকৃষ্ট সম্পদ মেশানো যাবে না। কেউ যদি এমনটি করে তিনি অপবিত্র হয়ে গেলেন তবে তাদেও উদ্দেশ্য যাদি ভাল হয় তাহলে মেশানো যাবে। তবে কার কী উদ্দেশ্য তা আল্লাহ ভাল করেই জানেন। জাহেলী যুগে মানুষেরা এতিমের ধন সম্পদদিয়ে উপকার হাসিলের মধ্যে সীমা লঙ্ঘন করত। বর্তমান যুগেও আমাদেও সমাজে এ ধরনের লোক দেখতে পাওয়া যায়। এমনকি সম্পদের লোভে কখনও বিয়ে করে অথবা সম্পদ যাতে হাতছাড়া হয়ে না যায় সেজন্য নিজের নাবালক ছেলেকে দিয়ে বিয়ে করিয়ে নেয়। এছাড়া আরো নতুন নতুন নিয়মে সম্পদ অঅত্মসাতের চেষ্টাকরে। এব্যাপারে আল্লাহ রাব্বুল আলামিন বলেন- নিশ্চয যারা এতিমদের ধন-সম্পদে অন্যায়ভাবে ভক্ষণ করে তারা তো তাদের পেটে আগুন খাচ্ছে। আর অচিরেই তারা প্রজ্জলিত আগুনে প্রবেশ করবে। ( নিসা ১০) সুতরাং এতিমের মাল ভক্ষণের ব্যাপারে আমাদেরকে সাবধান থাকতে হবে।
No comments