হাশরের ময়দানঃ মুমিনগণ আরশের ছায়ায় থাকবেন

হাশরের ময়দানঃ মুমিনগণ আরশের ছায়ায় থাকবেন

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
 সাধারণভাবে আরশ হলো সিংহাসন। শরিয়ত অনুযায়ী আরশ হলো আল্লাহর আসন। এটি মহান আল্লাহর সেরা সৃষ্টি। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ৬দিনে। অতঃপর আরশের উপর  তিনি সমাসিন হয়েছেন। ( আর হাদিদ -৬) মহানবি (সাঃ) বলেন, কুরসির তুলনায় সাত আসমান হলো ময়দানে পড়ে থাকা একটি বালার মতো। আর আরশের তুলনায় কুরসি হলো ঐরূপ বালার মতো। ( সিলসিলাহ সহীহাহ -১০৯) ইবনে আব্বাস ( রাঃ) বলেন, কুরসি হলো মহান আল্লাহর পা রাখার যায়গা। ( মুখতাসারুল উলুম ১/৭৫)। কঠিন হাশরের দিনেও আল্লাহর রহমত পূন্যবানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে। মুহাম্মদ ইবনে আবু গালিব (র) ....আবু হুরায়রা  (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লেখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো “ আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত আগ্রগামী হয়েছে”। এটি তারই নিকটে আরশের উপর লিপিবদ্ধ আছে।( বুখারি)   আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নবী (সাঃ) বলেছেন, সাত শ্রেণির লোক আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তারা হচ্ছে-১. ন্যায়পরায়ন শাসক ২. যে যুবক আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল। ৩. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদেন সাথে যুক্ত থাকে। ৪. যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসে। ঐ লোক যাকে অভিজাত বংশীয় কোন সুন্দরী রমনী আহবান করে (খারাপ কাজের জন্য ) কিন্তু সে বলে, আল্লাহকে ভয় করি ৬. ঐ লোক যে গোপনে দান করে , এমনকি তার ডান কি দান করেছে তা বাম হাত জানেনা এবং যে লোক একাকী আল্লাহর ভয়ে অশ্রæ ঝড়ায়। (বোখারি) এছাড়া কেয়ামতের দিন ছাদকার ছায়া হবে। সে ছায়ায় ছাদকাকারী আরাম লাভ করবে। আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, হাশরেরর মাঠে সমস্ত লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যকে মানুষ নিজ নিজ ছাদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে। (আহমদ) ছাদকাকারীরা কেয়ামতের পাশাপাশি কবরেও শান্তি লাভ করবেন। ছাদকার বদৌলতে দোজখের  শাস্তি কম হবে। রাসুল (সাঃ) বলেন, আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে কতটুকু দূরত্ব তা কি জান?  তিনি বল্লেন- এ দু এর মাঝে দূরত্ব হল একাত্তর, বাহাত্তর, বা তিয়াত্তর বছরের পথ এর উপরে আসমানের দূরত্ব অনুরূপ । এভাবে তিনি সাত আসমানের উল্লেখ করলেন। পরে বল্লেনঃ সপ্তম আকাশের উপর আছে সাগর। এর ওপরও নীচের দূরত্ব হলো আসমান ও যমীনের দূরত্বের অনুরূপ। এর উপর হলো আটটি মেষ  (আকৃতির  ফিরিস্তা)। এগুলোর খুর থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত হল আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্বের সমান। এগুলোর পীঠের উপর হলো আরশ। এর নিচ থেকে উপরের ব্যবধান হলো দুই আকাশের মাঝের ব্যবধানের অনুরূপ। এর উর্ধ্বে হলেন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। ( তিরমিঝি-হাদিসটি গারিব)।
ইয়াহইয়া ইবনে সালিহ (রহঃ) ....আবু হুরায়রা ( রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। হাদিসে অরো বলা হয়েছে জান্নতের ১০০টি স্তর রয়েছে আর তার উপর রয়েছে আল্লাহর আরশ। আরশ থেকে জান্নাতের নহরসমূহ প্রবাহিত হয়েছে। যারা আরশ ধারণ করে যারা এর চারপাশ ঘিরে আছে তারা তাদের প্রতিপালকের পবিত্রতা ও মহিমা প্রশংসার সাথে ঘোষণা করে। ফেরেশ্তারা আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং বিশ্বাসীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে। যারা তওবা করে এবং আল্লাহর পথ অবলম্বন করে তাদের জন্য ফেরেস্তারা জাহান্নামের আজাব থেকে রক্ষা করার জন্য দোয়া করে। সূর্যের ব্যাপারে সবসময়ই মানুষের কৌতুহল ছিল। হাদিসে এসেছে , নবিজি বলেন- তোমরাকি জান, এ সূর্য কোথায় যায় ? সাহাবীগণ বল্লেন, আল্লাহ ও তার রাসুল ভাল জানেন। তখন তিনি বল্লেন,- এ সূর্য চলতে থাকে এবং ( আল্লাহতায়ালার) আরশের নীচে অবস্থিত তার অবস্থানালয়ে যায়। সেখানে সে সিজদারত হয়ে পড়ে। সেখান থেকে আল্লাহর নির্দেশে উদয়ের স্থলে ফিরে যায়।  বর্তমানে সূর্য পৃথিবী থেকে অনেক দূরে অবস্থান করছে। এতদূরে থাকার পরও আমরা চৈত্র-বৈশাখ মাসে রোদ্রের তাপ সহ্য করতে পারিনা। গরমে হাপিয়ে যাই। আর সে সূর্য যদি অতি নিকটে চলে আসে তাহলে এর তাপ কত ডিগ্রি হতে পারে তা  অঅল্লাহ রাব্বুল আলামিন বাদে কেউ বলতে পারবেন না। সেদিনকার কঠিন অবস্থা থেকে আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করুন। মিকদাদ থেকে বর্ণনাকারী সুলাইম বিন আমের বলেন, আল্লাহর কসম! আমি জানিনা যে, নবি (সাঃ) মীল শব্দের অর্থ কি নিয়েছেন? জমিনের দূরত্ব ( মাইল) নাকি ( সুরমাদানীর শলাকা) যার দ্বারা চোখে সুরমা লাগানো হয়। কঠিন হাশরের ময়দানে গাছ-পালা ,  লতা-পাতা কিছুই থাকবে না। সুতরাং সূর্য তাপ থেকে রক্ষা করার মতো কিছুই থাকবে না। সেখানে শুধুমাত্র আরশের ছা’য়া থাকবে। হাশরের ময়দানে পাপীরা  প্রচন্ড তাপের কারণে ঘামতে থাকবে। এ ঘাম সকলের জন্য সমান হবে না। পাপের মাত্র অনুযায়ী এর পার্থক্য হবে। কারো পায়ের ঘাট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত , আবার কারো বা নাক পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে। ( বোখারি ও মুসলিম)
আল্লাহর আরশ কেমন তার বিবরণ সহিহ হাদিসে পাওয়া যায়। মহানবী (সাঃ ) বলেন, নবীদের মধ্যে একে অপরের উপর প্রাধান্য দিয়ো না। কেয়ামতের দিন সবাই মুর্ছিত হওয়ার পর আমি সকলের আগে কবর থেকে উঠে দেখব মুসা (আঃ) আরশের একটা পায়া ( প্রান্ত) ধরে আছেন ( বুখারি)। যারা আল্লাহর আরশ বহন করে এবং যারা তার চারপাশে আছে তারা তাদের পালনকর্তার প্রসংসা- পবিত্রতা বর্ণনা করে তার প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে এবং মুমিনদের ক্ষমা প্রার্থনা করে বলে , হে আামাদের পালনকর্তা , আপনার রহমত ও জ্ঞান সবকিছুতে পরিব্যাপ্ত। অতএব যারা তওবা করে এবং আল্লাহর পথে চলে তাদেরকে ক্ষমা করুন এবং জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করুন। সুতরাং আল্লাহর প্রিয় বান্দা হতে হলে আমাদেরকে হযরত মুহাম্মদ সাঃ) এর দেখানো পথ অনুযায়ী এবং আল্লাহর নির্দেশনা অনুযায়ী চলতে হবে।  
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা। ০১৭১১৭১৩২৫৭    
সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স
ওহির অলোকে ঃ  আরশের ছায়া
পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, তিনি নভোমন্ডল ও ভূমন্ডল সৃষ্টি করেছেন ৬দিনে। অতঃপর আরশের উপর  তিনি সমাসিন হয়েছেন। ( আর হাদিদ -৬) 
মহানবি (সাঃ) বলেন, কুরসির তুলনায় সাত আসমান হলো ময়দানে পড়ে থাকা একটি বালার মতো। আর আরশের তুলনায় কুরসি হলো ঐরূপ বালার মতো। ( সিলসিলাহ সহীহাহ -১০৯)
মুহাম্মদ ইবনে আবু গালিব (র) ....আবু হুরায়রা  (রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে বলতে শুনেছি আল্লাহ তায়ালা সমস্ত সৃষ্টিকে সৃষ্টি করার পূর্বে একটি লেখা লিপিবদ্ধ করে রেখেছেন। তা হলো “ আমার ক্রোধের উপর আমার রহমত আগ্রগামী হয়েছে”।  এটি তারই নিকটে আরশের উপর লিপিবদ্ধ আছে।( বুখারি)   
আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , নবী (সাঃ) বলেছেন, সাত শ্রেণির লোক আল্লাহর আরশের ছায়ায় স্থান পাবে। তারা হচ্ছে-১. ন্যায়পরায়ন শাসক ২. যে যুবক আল্লাহ তায়ালার ইবাদতে মশগুল। ৩. যে ব্যক্তির অন্তর মসজিদেন সাথে যুক্ত থাকে। ৪. যে দুই ব্যক্তি আল্লাহর জন্য পরস্পরকে ভালবাসে। ঐ লোক যাকে অভিজাত বংশীয় কোন সুন্দরী রমনী আহবান করে (খারাপ কাজের জন্য ) কিন্তু সে বলে, আল্লাহকে ভয় করি ৬. ঐ লোক যে গোপনে দান করে , এমনকি তার ডান কি দান করেছে তা বাম হাত জানেনা এবং যে লোক একাকী আল্লাহর ভয়ে অশ্রæ ঝড়ায়। (বোখারি)
আল্লাহর রাসুল (সাঃ) বলেন, হাশরেরর মাঠে সমস্ত লোকদের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত প্রত্যকে মানুষ নিজ নিজ ছাদকার ছায়াতলে অবস্থান করবে। (আহমদ)
রাসুল (সাঃ) বলেন, আকাশ ও পৃথিবীর মাঝে কতটুকু দূরত্ব তা কি জান?  তিনি বল্লেন- এ দু এর মাঝে দূরত্ব হল একাত্তর, বাহাত্তর, বা তিয়াত্তর বছরের পথ এর উপরে আসমানের দূরত্ব অনুরূপ । এভাবে তিনি সাত আসমানের উল্লেখ করলেন। পরে বল্লেনঃ সপ্তম আকাশের উপর আছে সাগর। এর ওপরও নীচের দূরত্ব হলো আসমান ও যমীনের দূরত্বের অনুরূপ। এর উপর হলো আটটি মেষ  (আকৃতির  ফিরিস্তা)। এগুলোর খুর থেকে নিয়ে হাঁটু পর্যন্ত হল আকাশ থেকে আরেক আকাশের দূরত্বের সমান। এগুলোর পীঠের উপর হলো আরশ। এর নিচ থেকে উপরের ব্যবধান হলো দুই আকাশের মাঝের ব্যবধানের অনুরূপ। এর উর্ধ্বে হলেন আল্লাহ রাব্বুল ইজ্জত। ( তিরমিঝি-হাদিসটি গারিব)।
ইয়াহইয়া ইবনে সালিহ (রহঃ) ....আবু হুরায়রা ( রাঃ) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, নবি (সাঃ) বলেছেন, আল্লাহ ও তার রাসূলের প্রতি যে ঈমান আনল, সালাত আদায় করল ও রমযানের সিয়াম পালন করল সে আল্লাহর পথে জিহাদ করুক কিংবা স্বীয় জন্মভূমিতে বসে থাকুক তাকে জান্নাতে প্রবেশ করিয়ে দেওয়া আল্লাহর দায়িত্ব হয়ে যায়। হাদিসে অরো বলা হয়েছে জান্নতের ১০০টি স্তর রয়েছে আর তার উপর রয়েছে আল্লাহর আরশ।
। সেখানে শুধুমাত্র আরশের ছা’য়া থাকবে। হাশরের ময়দানে পাপীরা  প্রচন্ড তাপের কারণে ঘামতে থাকবে। এ ঘাম সকলের জন্য সমান হবে না। পাপের মাত্র অনুযায়ী এর পার্থক্য হবে। কারো পায়ের ঘাট পর্যন্ত, কারো হাঁটু পর্যন্ত , আবার কারো বা নাক পর্যন্ত ঘামে ডুবে যাবে। ( বোখারি ও মুসলিম)
মহানবী (সাঃ ) বলেন, নবীদের মধ্যে একে অপরের উপর প্রাধান্য দিয়ো না। কেয়ামতের দিন সবাই মুর্ছিত হওয়ার পর আমি সকলের আগে কবর থেকে উঠে দেখব মুসা (আঃ) আরশের একটা পায়া ( প্রান্ত) ধরে আছেন ( বুখারি)।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা







No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.