আত্মীয়- স্বজনের অধিকার আদায় করা


 আত্মীয়- স্বজনের অধিকার আদায় করা 

আত্মার সাথে সম্পর্কিত ব্যক্তিকে আত্মীয় বলা হয়। আত্মীয়তা সাধারণত রক্ত, বংশ, কিংবা বৈবাহিক সূত্রে সৃষ্ট হয়। ইসলামী আদর্শের উপর ভিত্তি করে গড়ে উঠা সম্পর্কে নিবিড় সম্পর্কের দাবীদার । মদীনার আনসার ও মুজাহিরদের মধ্যে একটি মধুর সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আত্মীয় -স্বজনের অধিকার আদায় করা ফরজ। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন- “ তোমরা তোমাদের আত্মীয়- স্বজনের অধিকার আদায় করা। আর কিছুতেই অপব্যয় করো না ” সুরা ইসরাইল (১৭/২৬) । আত্মীয়-স্বজনকে শুধুমাত্র দাওয়াত দিয়ে মুরগী-পোলাউ খাওয়ালেই হক আদায় হয় না। তাদেরকে হেদায়াতের দাওয়াত দিতে হবে। তাদেরকে পাপের পথ থেকে ফিরিয়ে আনাও দায়িত্বের মধ্যে পড়ে। কোরানুল কারিমে বলা হয়েছে, হে নাবি তুমি (সর্ব প্রথম) তোমার নিকটাত্মীয়দের ভয় প্রদর্শন কর এবং তোমার অনুসারী মুমিনদের প্রতি নম্্র  ব্যবহার করো ”  সুরা শুআরা (২৬/২১৪) ।  নিজের মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি ও ভাই বোনদের প্রয়োজন পূর্ণ না করে বাইরে দান করা উচিত নয়। আমাদের নিজস্ব আত্মীয়- স্বজন যদি বাইরে গিয়ে কারো কাছে হাত পাতে সেজন্য আল্লাহর নিকট আমাদেরকে জবাবদিহী করতে হবে। যাকাত প্রদানের সময় প্রথম দিকে নিজস্ব আত্মীয়-স্বজনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। তারপর অন্যান্য হকদারকে দিতে হবে। মৃত্যুর পূর্বে প্রয়োজন মোতাবেক শরিয়ত অনুযায়ী অসিয়ত করা যেতে পারে। মীরাস অপরিহার্যভাবে তারাই লাভ করবে যারা হবে মৃত ব্যক্তির নিকটাত্মীয়। অন্যদেরকে সে চাইলে (জীবিতাবস্থায়) হেবা, ওয়াক্ফ বা অসিয়তের মাধ্যমে নিজের সম্পদ দান করতে পারে। ওয়ারিশদের বঞ্চিত করে  অন্যদেরকে দেয়া যাবে না। কোন ব্যক্তি   চাইলে হাদিয়া, তোহফা উপঢৌকন বা অসিয়তের মাধ্যমে নিজের কোন দ্বীনী ভাইকে সাহায্য করতে পারেন। মৃত্যুর পূর্বে কেউ কেউ ছোট মেয়েকে বা  বড় ছেলেকে অতিরিক্ত সম্পত্তি দানের কথা বলেন। ঐ ব্যক্তি মারা যাওয়ার পর সম্পত্তি বন্টনের সময় সমস্যা হয়। তাই অসিয়ত শরিয়ত মোতাবেক না হলে এ অসিয়ত পূরণ করা বাধ্যতামূলক নয়। অসিয়তের মাধ্যমে উত্তরাধিকার সম্পত্তি কম-বেশি করা যাবে না। আত্মীয়-স্বজনকে দাওয়াত করে এনে ভাল ভাল খাওয়ালেই হক আদায় হয় না। আত্মীয়-স্বজনকে হকের দাওয়াত দিতে হবে। আল্লাহর এ পবিত্র দ্বীনের মধ্যে যেমন নাবিকে কোন বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়নি ঠিক তেমনি নাবির পরিবার, নিকটাত্মীয় ও বন্ধু-বান্ধবকে কোন অবকাশ দেয়া হয় নি। রাসুলে আকরাম (সাঃ) তার আত্মীয়-স্বজনের কাছে আগে হকের দাওয়াত পৌঁছান। তিনি বলেন, হে বনী আব্দুল  মুত্তালিব , হে আব্বাস, হে আল্লাহর রাসুলের ফুফী সফীয়াহ, হে মুহাম্মদের কন্যা ফাতিমা, তোমরা আগুনের আযাব থেকে নিজেদেরকে রক্ষা করার চিন্তা করো। আমি আল্লাহর আযাব থেকে তোমাদের বাঁচাতে পারবোনা। তবে হ্যাঁ আমার ধন-সম্পত্তি থেকে তোমরা যা চাও চাইতে পারো।” আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, আর হে নাবি! আত্মীয়- স্বজনকে তাদের প্রাপ্য হক দিয়ে দাও এবং মিসকিন ও মুসাফিরদেরও। এটা তাদের জন্যে উত্তম, যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি কামনা করে। আর তারাই সফলকাম ” সুরা রুম (৩০/৩৮)।  আত্মীয়দের কেউ অসৎকর্মে লিপ্ত থাকলে তাদেরকে সে পথ থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। পথভ্রষ্টতা ও অসৎকর্মের জন্য আল্লাহর আজাবের ভয় সবার জন্য সমান। নাবি, আলেম, ও উলামাসহ সকলের জন্যই আজাবের ভয় রয়েছে। 
আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষার মাধ্যমে রুজি-রোজগার বৃদ্ধি পায়। এতে বরকত লাভ হয়। মৃত্যুর পর তার সুনাম অটুট থাকে। সম্ভব হলে আত্মীয়কে দেখতে যেতে হবে। দূরবর্তী আত্মীয়দেরকে টেলিফোনের মাধ্যমে খোঁজ খবর নেয়া যেতে পারে। আত্মীয়ের অধিকারের ব্যাপারে বিশেষ করে রক্ত সম্পর্কিত আত্মীয়দের প্রতি বিশেষভাবে খেয়াল রাখতে হবে। ইবন মাখলাদ রাঃ ...আবু হোরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত । নবি সাঃ বলেছেন, যে তোমার সাথে সুসম্পর্ক রাখবে, আমিও তার সাথে সুসম্পর্ক রাখবো। । আর যে তোমার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবে , আমি তার থেকে সম্পর্ক ছিন্ন করবো। ” ব্যস্ততার অজুহাতে অনেকে বর্তমানে দূরবর্তী আত্মীয়দের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করেন না। তাছাড়া মা মারা গেলে মামার বাড়ির সাথে, বোন মারা গেলে বোন জামাই এর সাথে অথবা অন্যান্য কোন মূল আত্মীয় মারা গেলে তাদের ছেলে- মেয়ের সাথে সম্পর্ক রক্ষা করেন না। এছাড়া কেউ কেউ বলেন, আমার আত্মীয়রা আমার কোন খোঁজ-খবর নেয়না তাই আমিও তাদেও কোন খবর নেইনা, যারা আমার খবর নেয় আমি তাদের সাথে সুসম্পর্ক রাখি। এমনটি হলে বিনিময় হলো, অঅল।লঅহকে খুশি করতে হলে যারা আপনার সাথে সুসম্পর্ক রক্ষা করেনা তাদের সাথেও সুসম্পর্ক রক্ষা করতে হবে। পরকালে তার জন্য যে শাস্তি সঞ্চিত রাখা হবে, তা তো আছেই। আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন করার কারণে তাদের দ্রæত শাস্তি হবে। আল আদাবুল মুফরাদে বলা হয়েছে, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্ন এবং বিদ্রোহের সত দুনিয়াতেই ত্বরিত শাস্তির উপযুক্ত আর কোন পাপ নেই। মহান আল্লাহ বলেন, ...আর সেই অঅল।লঅহকে ভয় কর , যার দোহাই দিয়ে তোমরা পরস্পরের নিকট ( স্বীয় হক) দাবি করে থাক এবং আত্মীয়তার ( হক বিনষ্ট করা) হতে ভয় কর; নিশ্চয় আল্লাহ তোমাদের সকলের খবরাখবর রাখেন ( নিসা-৪/১)। আবু মুহাম্মদ জুবাইর ইবনে মুত্বইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল সাঃ বলেছেন, আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারী জান্নাতে প্রবেশ করবে না ( মুসলিম)।  ক্ষমতা বা মর্যাদার অধিকারী হলে কেউ কেউ আত্মীয়তার সম্পর্ক শিথিল করেন। আত্মীয় গরীব হলে তার যথাযথ খোঁজ -খবর কেউ নেয়না। আল্লাহ বলেন, ক্ষমতা লাভ করলে সম্ববতঃ তোমরা পৃথিবীতে অনর্থ সৃষ্টি করবে এবং আত্মীয়তার বন্ধন ছিন্ন করবে। এদের প্রতিই আল্লাহ অভিসম্পাত করেন অতঃপর তাদেরকে বধির ও দৃষ্টি শক্তিহীন করেন ( মুহাম্মদ ৪৭/২২-২৩)। সহিহ হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাাহ তায়ালা বলেছেন, আমিই রহমান ( দয়ালু) আমি আমার নাম ( রহমান) থেকেই “রাহেম” ( আত্মীয়তার বন্ধন) এর নাম নির্গত করেছি। সুতরাং যে আত্মীয়তার সম্পর্ক বজায় রাখবে সুতরাং আমি তার সাথে সম্পর্ক বজায় রাখবো এবং যে তাকে ছিন্ন করবে, আমি তাকে আমা হতে ছিন্ন করবো। তাই আত্মীয় বন্ধন শক্ত রাখার চেষ্টা সকল মুমিন -মুসলমানকে করতে হবে।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.