ভাগ্যে বিশ্বাস ঈমানের অংশ
ভাগ্যে বিশ্বাস ঈমানের অংশ
মমিনুল ইসলাম মোল্লাজয় পরাজয়, অথবা সফলতা- ব্যর্থতার মধ্য দিয়ে আমরা আমাদের জীবন অতিবাহিত করছি। শুধুমাত্র মুলমানই নয় সকল মানুষের জন্য এ নিয়ম সমভাবে প্রযোজ্য। জীবনের কোন ক্ষেত্রে সফল হলে আমরা যেমন খুশিতে আত্মহারা হয়ে যাই,ঠিক তেমনি বিফল হলে বেদনায় নীল হয়ে যাই। কিন্তু আল্লাহতায়ালার প্রতি যদি আমাদের পূরোপুরি বিশ্বাস থাকতো তাহলে জীবনের কঠিন মুহুর্তেও আমরা অবিচল থাকতে পারতাম। আসলে ভাল-মন্দ বই আল্লাহপাকের নিকট থেকে আসে। এ বিষয়টি আমাদের মেনে নেয়া একান্ত কর্তব্য। সুরা আত্ব ত্বালাকে (আয়াত- ৩ )আল্লাহ বলেছেন যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর ভরসা করে তার জন্যে তিনিই যথেষ্ট। ”তাকদির শব্দটি কাদারু থেকে এসেছে। এর অর্থ নির্ধারন করা . পরিমান , পরিমিত, ও ব্যবস্থাপনা। সাধারণ অর্থে তাকদির মানে নিয়তি, ভাগ্য, ললাট, ইত্যাদি। যাবতীয় বিষয় ভালো- মন্দ, উপকার, অপকার ইত্যাদি আগে থেকে নির্ধারিত হওয়াকে তাকদির বলে। হযরত ইবনে উমর রাঃ বর্ণনা করে-রাসুলুল্লøাহ সাঃ বলেছেন- সব কিছুই আল্লাহ নির্ধারিত কদর অনুযায়ী ঘটে। এমনকি বুদ্ধির দুর্বলতা এবং প্রবলতাও (মুসলিম)। তাকদির লিখা হয়েছে আসমান-জমিন সৃ্িষ্টর ৫০হাজার বছর আগে (মুসলিম)। ক্বদরের চারটি স্তর রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমেই রয়েছে জ্ঞান। প্রতিটি মুসলমান বিশ্বাস করে আল্লাহর জ্ঞান অপরিসীম। পৃথিবীর শুরু থেকে কেয়ামত পর্যন্ত কি হবে, কি হবে না, তা লাওহে মাহফুজে লিখে রেখেছেন।আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই হয়। তার ইচ্ছের বাইরেও কিছু হয় না আবার বিরুদ্ধেও কিছু হয় না। আল্লাহ আমাদের যেমন সৃষ্টি করেছেন আমাদের সব কথা, কাজ ও কথা তিনিই সৃষ্টি করেছেন। কেউ কেউ মনে করেন কোন কাজের জন্য চেষ্ট করা, রোগ হলে ডাক্তারের স্মরণাপন্ন হওয়া তাকদিরের সাথে সাংঘর্ষিক। প্রকৃতপক্ষে তদবির ও তাকদিরের অংশ। হাদিসে বর্র্ণিত আছে, একবার এক সাহাবি প্রশ্ন করলেন, হে আল্লাহর রাসুল আমরা যে ঝারফুঁক করিয়ে থাকি, চিকিৎসায় ঔষধ দিয়ে থাকি অথবা আত্ম রক্ষার জন্য যে উপায় অবলম্বন করে থাকি তা কি তাকদিরের কোন কিছুকে রদ করতে পারে? উত্তরে রুসুল বলেন, তোমাদের এসব চেষ্টাও তাকদিরের অন্তর্গত ( তিরমিজি) ।
আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করার জন্য আমাদেরকে বলা হয়েছে। সুরা মুযযামিল আয়াত- (১০)এ বলা হয়েছে নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু। তিনি জানেন- কে অসুস্থ হবে, কে আল্লাহর অনুগ্রহ অনুসন্ধানে দেশে-বিদেশে যাবে। কে আল্লাহর পথে জিহাদে লিপ্ত হবে। আমরা দুনিয়া ও আখেরাত দু যায়গায়ই ভলো থাকতে চাই। রাসুল (স াঃ ) বলেছেন আদম সন্তানের সুখ নির্ভর করে তার প্রাপ্তি নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার উপরে। মানুষকে মেনে চলতে হবে যা তার ভাগ্যে আছে, তার ভাগ্যে আল্লাহ যা লিখে রেখেছেন। তাই বান্দাকে অবশ্যই তার ভাগ্যের উপর সন্তুষ্ট থাকতে হবে।
বিপদে পড়লে একমাত্র আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে। কোন বান্দা বা কোন ধর্মীয় গুরুর কাছে নয়। তিরমিযি শরিফে আছে, বিপদে পড়লে আমাদের উচিত পাপ স্বীকার করে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু আমাদেও কেউ মারা গেলে আমরা বলি, হে আল্লাহ, তুমি এটা কি করলা? আমি কি এত বেশি পাপ করে ফেলেছি যে আমাকে এমন শাস্তি দিলা? অনেকে তো এর চেয়ে ও বেশি পাপ করে থাকে , কই তাদেরতো কিছু হয় না? এ ধরণের কথা বলা নিষেধ। আল্লাহর কোন কাজের সমালোচনা করা যাবে না। তবে আল্লাহ আমাদের বিপদ থেকে উদ্ধার করেন। সে জন্য আমাদেও উচিত আল্লাহর কাছে দুয়া করা, কারণ একমাত্র দুয়াতে আল্লাহ ভাগ্য পরিবর্তন করেন। আল্লাহ আমাদেরকে যে বিপদ- আপদ দিয়ে থাকেন। তাতেও কল্যাণ রয়েছে। বিপদগ্রস্ত লোকটি যদি খারাপ কাজ করেতে থাকে সে যেন তা থেকে বিরত হয় এবং আল্লাহর পথে ফিওে আসে। মানুষটি যে অন্যায় করছে , পাপ কাজ করছে, তার প্রতিফল হিেেব বিপদও দুঃখ কষ্ট দিয়ে পৃথিবীতেই তার অপরাধের শাস্তি দিয়ে দেয়া ও এসময় মানুষটি ধৈর্য ধরে কিনা তার পরীক্ষাও বিপদ-আপদের মাধ্যমে হয়ে থাকে। হযরত আলী (রা )থেকে বর্র্ণিত সাহাবীরা জিজ্ঞেস করলেন আমরা কি ভাগ্যলিপির উপর নির্ভর করে আমল ছেড়ে দেব? তখন নবিজি বলেন-তোমরা আমল করতে থাকবে।কেননা প্রত্যোকের জন্য সহজ করে দেয়া হবে যে উদ্দেশ্যে তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে (বোখারি , মুসলিম) । তাই ভাগ্যকে বিশ্বাস করেই আল্লাহ ও তার রাসুলের নির্দেশিত পথে আমাদেরকে চলতে হবে। লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক ও ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।
No comments