নেয়ামতের জান্নাত ঃ সৎকর্মশীলদের জন্য
নেয়ামতের জান্নাত ঃ সৎকর্মশীলদের জন্য
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,যারা আল্লাহর প্রতি ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে তাদেরকে জান্নাতে স্থান দেয়া হবে।সুরা আল আনকাবুত এর ৫৮ আয়াতে অীল্লাহ তায়ালা বলেন, যারা ঈমান এনেছে এবং যারা সৎকাজ করেছে তাদেরকে আমি জান্নাতের উঁচু ও উন্নত ইমারতের মধ্যে রাখবো, যেগুলোর নিচে দিয়ে নদী বয়ে যেতে থাকবে৷ সেখানে তারা থাকবে চিরকাল৷ কতই না উত্তম প্রতিদান কর্মশীলদের জন্য , অর্থাৎ ধরে নেয়া যাক যদি ঈমান ও নেকীর পথে চলে তোমরা দুনিয়ার সমস্ত নিয়ামত থেকে বঞ্চিত ও হয়ে যাও এবং পার্থিব দৃষ্টিকোন থেকে পুরোপুরি ব্যর্থতার মুত্যু বরণও করে থাকো তাহলে বিশ্বাস করো অবশ্যই এ ক্ষতিপূরণ হবে এবং নিছক ক্ষতিপূরণই হবে না বরং সর্বোত্তম প্রতিদানও পাওয়া যাবে৷ আর যারা তাদের রবের অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকতো তাদেরকে দলে দলে জান্নাত অভিমুখে নিয়ে যাওয়া হবে৷ অবশেষে তারা যখন সেখানে পৌঁছবে তখন দেখবে জান্নাতের দরজাসমূহ পূর্বেই খুলে দেয়া হয়েছে৷ ব্যবস্থাপকরা তাদের বলবেঃ তোমাদের ওপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমরা অত্যন্ত ভাল ছিলে, চিরকালের জন্য এখানে প্রবেশ করো৷
জান্নাতের মধ্যে প্রয়োজনীয় সবকিছুই আছে। এর মধ্যে গাছ, পাখি, ঝর্ণা, নদী অন্যতম। সহিহ হাদিসের মাধ্যমে জানা যায়, প্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের চেহারা পূর্ণিমার চাঁদের মতো হবে। তারা হবে আলোকোজ্বল। কোন পরিবারের স্বামী- স্ত্রী দুজন জান্নাতি হলে তারা একত্রে বসবাস করতে পারবে। সূরা আয যুখরুফ এ বলা হয়েছে জান্নাতে প্রবেশ কর তোমরা এবং তোমাদের বিবিগণ সানন্দে।
এ দলটির চেহারা হবে আমাদের আদি পিতা আদম আঃ এর মতো ৬০ হাত। জান্নাতের ৮টি দরজা থাকবে। বিভিন্ন ঝর্নার বিবরণ দিতে গিয়ে পবিত্র কোরআন শরীফে বলা হয়েছে, এটা জান্নাতস্থিত সালসা বিল নামক একটি ঝর্না। আল্লাহ বলেন ,যারা মোত্তাকী তাদের জন্য রয়েছে কক্ষের উপর কক্ষ, বহুতল ভবন এবং ভবনের নীচে নির্ঝরনী প্রবাহিত। আবু বকর ইবনু শায়বা অন্য সনদে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে নুসায়রা আবু হুরায়ায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, সায়হান, হায়হান, ফুরাত ও নীল এসব জান্নাতের নহরসমূহের অন্তর্ভূক্ত। আল্লাহ বলেন, তারা প্রবেশ করবে বসবাসের জান্নাতে । তথায় তারা ¯¦র্ণনির্মিত মোতি খচিত কংকন দ্বারা অলংকৃত হবে। সেখানে তাদের পোশাক হবে রেশমের (সুরা ফাতির-৩৩)।
আল্লাহ বলেন, আমি জান্নাতী রমনীগণকে বিশেষরুপে সৃষ্টি করেছি ( আল ওয়াকিয়া-৩৫)। তারা পাতলা রেশমের সবুজ কাপড় পরিধান করবে। তাদেও চেহারা হবে ধবধবে সাদা। তাদের সম্মুখে রৌপ্য নির্মিত পাত্র ও কাচের পেয়ালা আবর্তিত করানো হবে। সে কাচ যা রৌপ্য জাতীয় হবে এবং সেগুলোকে পরিমান মতো ভরতি করে রাখা হবে। সুরা আদ দাহর১৫-১৬ অন্য যায়গায় রয়েছে, ¯¦র্ণ নির্মিত পাত্রের কথা। সূরা আর রহমান এ বলা হয়েছে- তারা সবুজ গালিচা ও সুন্দর সুরঞ্জিত শয্যায় হেলায়িত ভাবে অবস্থান করবে। এছাড়া রয়েছে সারিসারি বালিশ ও বিছানা। হুর ছাড়াও রয়েছে গিলমান। তারা হবে ঝিনুক লুকানো মুক্তার মতো সুন্দর বালক। তাদের বয়স কোনদিন বাড়বে না। । আল্লাহ বলেন ,“এবং তাদেরা সবরের প্রতিদানে তাদেরকে দিবেন জান্নাত ও রেশমী পোশাক ( আল ইনসান-১২)। এছাড়া অন্যত্র বলা হয়েছে , তাদেরকে অলংকৃত করা হবে স্বর্ণের কাকন ও মুক্তা দ্বারা। জান্নাত হবে শীততাপ নিয়ন্ত্রিত। ফুল –ফল- পাখী সবকিছুই থাকবে। জান্নাতের অধিবাসীরা পেশাব পায়খানা করবে না। তাদের চিরুনি হবে স্বর্ণের। তাদের শরীরের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রান আসবে এবং আংটি হবে অগুরুর কাষ্ঠের তৈরি। তাদের খাদ্য ঢেকুরের মাধ্যমে শেষ হয়ে যাবে। মুসলিম শরীফের একটি হাদিসে বর্নিত আছে জান্নাতে একটি তাবু থাকবে । যারা আল্লাহর প্রতি পূর্ণ বিশ্বাস রাখে সৎকর্ম করে তারা দলে দলে জান্নাতে প্রবেশ করব্ ে। তাদের ফেরেস্তারা অভিভাদন জানিয়ে বলবে তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর। জান্নাতীরা আল্লাহ প্রদত্ত বিভিন্ন নেয়ামত ভোগ করবে। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন নিশ্চয় খোদাভীরুরা থাকবে জান্নাতে ও নেয়ামতে (আততুর-১৭)। মুমিন ব্যক্তিরা জান্নাতে স্থায়ীভাবে বসবাস করবে। এ জান্নাতের তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। এ নহরগুলোর মধ্যে রয়েছে পানির নহর নির্মল দুধের নহর যার স্বাদ অপরিবর্তনীয়। এছাড়া রয়েছে শরাবের নহরএবং পরিশোধিত মধুর নহর। জান্নাতীদের খাট হবে স্বর্নের।
এছাড়া কচি কোমল শিশুরা জান্নাতীদের পছন্দসই ফল মূল ও রুচিসম্মত পাখীরগোশত নিয়ে আপ্যায়নের জন্য ঘোরাফেরা করবে( সুরা ওয়াকিআহঃ১৭-২১) কেউ কখনো কল্পনাও করেনি।লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক ও সাংবাদিক, ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।
No comments