জাহান্নমের শাস্তির ব্যাপারে আমরা বড়ই উদাসীন!

জাহান্নমের শাস্তির ব্যাপারে আমরা বড়ই উদাসীন!

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
হাশরের ময়দানে অপরাধীরা অন্ধ. মুক ও বধির অবস্থায় উঠবে। তারা চলাফেরা করবে মুখের উপর ভর দিয়ে।  হাশরের দিনে চুড়ান্ত ফায়সালা হয়ে যাওয়ার পর পাপীদেরকে  জাহান্নামের দিকে নিয়ে যাওয়া হবে। তাদেরকে উপুড় করে  জাহান্নমে ফেলা হবে। পাপীরা এতে প্রবেশ করবে। তারা দীর্ঘকাল জাহান্নমের আজাব ভেগে করবে। পৃথিবীর অগুন আমরা ভয় পাই। কোন কারণে একটু গরম পানি হাতে পড়লে অথবা অগ্নি শিখা গায়ে লাগলে আৎকে উঠি। এছাড়া কেউ যদি আগুনের তীব্রতা অনুভব করতে চান তিনি মোমবাতির শিখায়   তার কনিষ্ঠ আঙ্গুলটি কিছুক্ষণ ধরে দেখতে পারেন। এধরণের ১০০ ডিগ্রি  তাপমাত্রায় চাল সিদ্ধ হয়ে ভাত হয়। জান্নামের মধ্যে যাকে সর্বনিম্ন শাস্তি দেয়া হবে তার মাথার মগজ এমনভাবে ফুটতে থাকবে। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে- আবু হোরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত , নবি করিম সাঃ বলেছেন- তোমাদের পৃথিবীর অগ্নি তাপের দিক দিয়ে জাহান্নামের আগুনের সত্তর ভাগের এক ভাগ। তারপরও আগুনের তাপ আরো বৃদ্ধি করা হবে। হাশরের মযদানে জাহান্নামকে নিয়ে আসা হবে। জাহান্নামের আয়তন এমন বিশাল যে তার ৭০ হাজার লাগাম থাকবে এবং প্রতি লাগামে ধরে ৭০ হাজার ফেরেস্তা জাহান্নমেকে টেনে নিয়ে আাসবে। তবে প্রতিটি জাহান্নামীর জন্য স্থান সংকীর্ণ হবে। সেখানে গলায় হাত পেচিয়ে তাদেরকে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে।  জাহান্নামীরা আগুনের গর্জন শুনতে পাবে। দূর থেকে জাহান্নামীরা এ হুংকার দেখে ধ্বংসকে ডাকবে। তখন তাদেরকে বলা হবে , একবার ধ্বংসকে ডাকোনা বহুবার ডাকো। 
জাহান্নামীরা স্বেচ্ছায় সেখানে  যেতে চাইবে না। তাই তাদেরকে কঠিন শাস্তি দেয়ার জন্য মুখমন্ডল মাটিতে রেখে এবং পা উপর দিকে উঠিয়ে তাদের গলায় বেড়ি ও শৃংকলিত করে টেনে হেঁচড়ে সেখানে নিক্ষেপ করা হবে। সুরা তুর ( ৫২/১৩-১৪) এ বলা হয়েছে, “ সেদিন তাদেরকে জাহান্নামের আগুনের দিকে ধাক্কা মেরে মেরে নিয়ে যাওয়া হবে। আর বলা হবে , এই সেই অগ্নি যাকে তোমরা মিথ্যা বলতে।” বর্তমানে ৬ফুটের চেয়ে বেশি লম্বা লোক তেমন একটা দেখা যায় না। ধরি ৬ ফুট লম্বা কোন লোক আজাবের ফেরেস্তাদের হাতে ধরা খেয়ে জাহান্নমে নিপতিত হলো। তার দেহটি পুড়তে যে সময় লাগবে অথবা তিনি যে কস্ট পাবেন তার দেহ যদি ৬০ হাত লম্বা হয় তাহলে তিনি এর চেয়ে বহুগূন  বেশি কষ্ট পাবেন। আল্লাহ জাহান্নামীদের অধিক কষ্ট দেয়ার জন্য সেদিন অপরাধীদের দেহের আকার পরিবর্তন করে দিবেন। তাদের এক কাঁধ থেকে অন্য কাঁধের দূরত্ব হবে দ্রæতগামী ঘোড়ার ৩ দিনের পথ। তাদের চামড়ার পুরত্ব হবে ৪২ গজ মোটা। প্রতিটি দাঁত হবে উহুদ পাহাড়ের সমান। 
জাহান্নামীদের চেহারা হবে কালো এবং কুৎসিত। মানুষের চেহারার মধ্যে সবচেয়ে মর্যাদাবান হচ্ছে মুখমন্ডল। এ মুখমন্ডল ও মাথা দ্বারা যারা আল্লাকে বাদ দিয়ে অন্য কাউকে সেজদা করেছে বা আহবান করেছে তাদের মুখমন্ডল দগ্ধ হয়ে বিভৎস চেহারায় পরিণত হবে। জাহান্নামের আগুন উপর-নীচ চারদিক থেকে তাদেরকে আচ্ছাদন করবে। আগুন তাদের হৃদপিন্ড পর্যন্ত পৌঁছে যাবে। এসময় আগুনে, চামড়া, গোশত, হাড্ডি সবই পুড়ে যাবে। তখন তারা মৃত্যুকে কামনা করবে কিন্তু মরবে না। সুরা গাশিয়াতে (৮৮/৬,৭) আল্লাহ বলেন, তাদের জন্য খাদ্য থাকবে না, কাটাযুক্ত ফল ব্যাতীত, যা তাদেরকে পুষ্টও করবে না এবং তাদের ক্ষুধা নিবারণ করবে না। যাক্কুম নামক ফল খাওয়ার সময় তা গলায় আটকে যাবে। ফলে তা নীচেও যাবে না আবার উপরেও আসবে না। এভাবে তারা কষ্ট পেতে থাকবে। এ বৃক্ষ উদগত হয় জাহান্নামের তলদেশ হতে, এর মোচা দেখতে শয়তানের মাথার মতো। তাদেরকে দেয়া খাদ্য গলিত তামার মতো তাদের উদরে ফুটতে থাকবে। তাছাড়া জাহান্নামীদের শরীর হতে গড়িয়ে পড়া রক্ত পুঁজ তাদেরকে খেতে দেয়া হবে।  তারা যখন পানির পিপাশায় অতিষ্ট হবে তখন তাদেরকে দেয়া হবে গরম পানি। যা তাদের পেট হতে নাড়িরভূড়ি বের করে নিয়ে আসবে এবং সেগুলো ফুটতে থাকবে গরম তেলের মতো। তাদেরকে আলকাতরার পোশাক পড়ানো হবে এবং মাথার উপর ফেলা হবে ফুটন্ত পানি। তাদের বিছানা হবে আগুনের এবং তার উপর থাকবে  আগুনের আচ্ছাদন।  জাহান্নামীরা এমনভাবে কাঁদবে যে তাদের চোখের পানিতে নৌকা চালালেও চলবে। কাঁদতে কাঁদতে যখন চোখের পানি শেষ হয়ে যাবে তখন চোখ দিয়ে রক্ত কান্না বের হবে। জাহান্নামীরা দাড়োয়ানকে বলবে, “ তোমাদের রবকে একটু ডাকোনা! তিনি যেন একটি দিন আমাদের আযাব লাাঘব করে দেন। দারোয়ান বলবে তোমরাই দোয়া করো। কিন্তু সেদিন কারো দোয়া কবুল করা হবে না। তাদেরকে বলা হবে ধৈর্য ধারণ করো বা না করো উভয়ই তোমাদের জন্য সমান তোমাদেরকেতো কেবল তোমাদের আমলের প্রতিফল দেয়া হচ্ছে ( সুরা তুর ৬২/১৬)। জাহান্নামীদের দগ্ধ করার কাজে ১৯ জন ফেরেস্তা নিয়োজিত থাকবেন। ফেরেস্তাগণকে বলা হবে , ধরো তাকে,  গলায় বেড়ি পড়িয়ে দাও।  অতঃপর নিক্ষেপ করো জাহান্নামে। পুনরায় তাকে শৃংখলিত করা হবে ৭০ গজ দীর্ঘ এক শিকলে। ফলে তারা পালাতে পারবে না। কেউ পালাতে চাইলে ফেরেস্তারা লোহার ডান্ডা দিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে বলবে আস্বাদন কর যন্ত্রণা। জাহান্নমের আগুন থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমাদেরকে আল্লাহ ও আল্লাহর রাসুলের পথ অনুযায়ী নেক আমল করতে হবে। নবিজি বলেছেন, জাহান্নামের মতো ভয়াবহ আর কিছুই আমি দেখিনি। অথচ তা থেকে যারা বাঁচতে চায় তারা ঘুমাচ্ছে। আল্লাহ আমাদেরকে জাহান্নামের কঠিন আজাব থেকে রক্ষা করুন। লেখকঃ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা। 
















No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.