সামজিক অনুষ্ঠানে হাদিয়া প্রদান
সামজিক অনুষ্ঠানে হাদিয়া প্রদান
বর্তমানে ধনী-গরীব , শিক্ষিত অশিক্ষিতি অধিকাংশ পরিবারে বিয়েতে যৌতুক গ্রহণ একটি সাধারণ নিয়মে পরিনত হয়েছে। বিয়ে ঠিক করার আগেই কনের বাবাকে বলা হয় বিয়েতে উপহার হিসাবে আপনি আপনার মেয়েকে কত ভরি স্বর্ণ দেবেন, কি কি ফার্নিচার দেবেন, কতজন বরযাত্রী খাওয়াবেন তা আগেই ফায়সালা করে নিন। আমাদের সমাজে বিয়ের পর মেয়ে নিয়ে আসার আগে বর শ্বশুর বাড়ির লোকদের কদমবুসি করে। কোন কোন সমাজে দেখা যায় রুমাল পেতে কদমবুসি করা হয়। মুরুব্বীরা কদমবুসি গ্রহণ করে হাদিয়া হিসাবে টাকা পয়সা স্বর্ণ-অলংকার প্রদান করে। তবে সময় স্বল্পতার কারণে হয়তো সবাইকে কদমবুসি করা সম্ভব হয় না। এমন ও শোনা যায় জামাই আমাকে কদমবুসি করলে যথেষ্ট সেলামী দিতাম। কে কত টাকা দিল এ নিয়ে আবার কানা -ঘুষাও করা হয়। নিজের মান-সম্মান রক্ষা করার জন্য কিংবা পরোক্ষভাবে বাধ্য হয়ে উপহার দিলে তা গ্যহণ করা বৈধ নয়। নতুন বউ বরের বাড়িতে যাওয়ার পর পায়ে ধরে কদমবুসি করার সিস্টেম এবং হাদিয়া দেয়া -নেয়ার একটি অপব্যবস্থাও আমাদের সমাজে প্রচলিত। এগুলো বর্জন করা উচিত। কাছে থাকলেও আপনিও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে প্রভাবিত হতে পারেন। রাসুলে আকরাম সাঃ বলেন, “ সুসঙ্গী ও কুসঙ্গীর উপমাতো আতরওয়ালার মতো। ( এর পাশে বসলে) হয় সে তোমার দেহে ( বিনামূল্যে ) আতর লাগিয়ে দেবে, না হয় তুমি তার নিকট থেকে তা ক্রয় করবে। তা না হলেও ( অন্ততপক্ষে) তার নিকট থেকে এমনি সুভাস পেতে থাকবে। পক্ষান্তরে কামার এর পাশে বসলে হয় সে ( তার অঅগুনেরফুলকি দ্বারা) তোমার কাপড় পুড়িয়ে ফেলবে, না হয় তার নিকট থেকে বিকট দুর্গন্ধ পাবে” (সহিহ বুখারি)।বিয়ের পর বরের বাড়িতে অলিমা করা সুন্নত। কিন্তু অলিমার অনুষ্টানে উপহারের যে প্রতিযোগিতা বর্তমানে চলছে তা বৈধ নয়। এ প্রতিযোগীতার কারণে গরীব আত্মীয় -স্বজন লজ্জায় পড়েন। কোন কোন সময় দেখা যায় গরীবদেরকে দাওয়াত দেয়া হয় না। রাসুলে আকরাম সাঃ বলেন, নিকৃষ্ট খানা হল ওয়ালীমার ঐ খানা যাতে কেবল ধনীদের দাওয়াত দেয়া হয় এবং গরীবদের বাদ দেয়া হয়। ( বোখারি)। বিয়ে করার পর বর মুরব্বীদের কদমবুছি করার একটি প্রথা অঅমাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে। কদমবুছির ব্যাপারে ধর্মীয় চিন্তাবিদদের মধ্যে মতবিরোধ বিদ্যমান রয়েছে। কদমবুছি করলে নতুন বরকে অর্থ-সম্পদ দিয়ে সম্মান করা হয়। এর মধ্যে স্বর্ণের আংটিও থাকে। এ ধরণের উপহার নেয়া পুরুষদের জন্য সম্পূর্ণভাবে নিষিদ্ধ। এ ধরণের লেনদেনের ইসলামে কোন ভিত্তি নেই। যারা হাদিয়া দিচ্ছেন তারা কজন খুশিমনে দিচ্ছেন? ভেবে দেখার বিষয়। সম্মান রক্ষার্থে এবং রেওয়াজ টিকিয়ে রাখার জন্য এটি দেয়া হয়। অসন্তুষ্টির ভিত্তিতে কোন কিছু গ্রহণ করা হারাম। কুতায়বা ইবনু সাইদ ও মুহাম্মদ ইবনু রুমহ (র) ---নবি এর সহধর্মী
নি জুওয়ারিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ তার গৃহে প্রবেশ করে বল্লেন, কিছু খাবার অঅছে কি ? তিনি বল্লেন না। অঅল্লাহর কসম হে অঅল্লাহর রসুল ! অঅমার নিকট কোন খাবার নেই। তবে বকরীর কিছু হাড় গোড় অঅছে যা অঅমার অঅযাদকৃত দাসীকে সাদাকা হিসাবে দেয়া হয়েছিল । এ কথা শুনে তিনি বল্লেন তা অঅমার নিকট আন। বস্তুত সাদাকা তার অঅপন স্থানে পৌছে গিয়েছে। ( মুসলিম)। সামর্থবান ব্যক্তির জন্য সাদাকা নেয়া বৈধ নয়। তবে সাদাকা গ্রহণকারী হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা যাবে। যুহায়র ইবনু হারব( র) ---উম্মে অঅতিয়া রাঃ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ আমার নিকট সাদাকার একটি বকরী পাঠালেন। আমি এ থেকে কিছু অংশ আয়িশা রাঃ এর নিকট পাঠিয়ে দিলাম। এরপর রাসূলে অঅকরাম সাঃ যখন অঅয়েশা রাঃ এর নিকট অঅসলেন তখন জিজ্ঞাসা করলেন তোমার নিকট কোন কিছু অঅছে কি ? তিনি বল্লেন, না কোন কিছুই নেই। তবে নুসায়রা অঅমাদের জন্য বকরীর যে গোশত পাঠিয়েছেন যা অঅপনি তাকে দিয়েিেছলেন তা অঅছে, তখন তিনি বল্লেন, বস্তুত সাদাকা তার স্থানে পৌছে গেছে ( মুসলিম)। সহিহ মুসলিমের যাকাত অধ্যায়ে উল্লেখ করা হয়েছে অঅব্দুর রহমান ইবনু সাল্লাম জুমাহী ( র) অঅবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত যে, নবি সাঃ এর নিকট কোন খাদ্য দ্রব্য অঅসলে তিনি সে সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করতেনযদি বলা হত হাদিয়া , তবে তা খেতেন। অঅর যদি বলা হত সাদকা তবে তা খেতেন না। হাদিয়া শব্দটি শুধুমাত্র ভোগ- বিলাসের সামগ্রী হিসাবেই ব্যবহার করা হয় না। কোন কিছু শিক্ষা দেয়াও হাদিয়া হতে পারে। অঅব্দুর রহমান ইবনু অঅবি লায়লা রাহিমাহুল্লাহ বলেন,- অঅমার সাথে কা”ব ইবনু উজরার সাক্ষাৎ হল, তিনি বল্লেন, অঅমি কি সেই হাদিয়াটুকু তোমার কাছে পৌছাব নাযা অঅমি নবি সাঃ থেকে শুনেছি ? অঅমি বল্লাম, অবশ্যই অঅপনি আমাকে সেই হাদিয়া দেন। তার পর বল্লেন- অঅমরা রাসুল সাঃ কে জিজ্ঞেস করলাম আপনি এবং অঅহলে বাই?য়াতের উপর কিভাবে স্বলাত তথা দরুদ পাঠ করব। কেননা অঅল্লাহ তায়ালা অঅমাদেরকে অঅপনাকে কিবাবে সালাম জানাব তা বলে দিয়েছেন। তখন তিনি দরুদে ইব্রাহিম শিক্ষা দেন। ( বোখারি)। হালাল হাদিয়া অল্প হলেও তা গ্রহণ করা যাবে না। উপহার প্রদান, তার ফজিলত ও এর প্রতি উৎসাহ দান অধ্যায়ে সহীহুল বোখারিতে বলা হয়েছে- মুহাম্মদ ইবনু বাশমার র) ---অঅবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত, নবি সাঃ বলেছেন, যদি অঅমাকে হালাল পশুর পায়া হাতা খেতে অঅহবান করা হয়, তবু তা অঅমি গ্রহণ করব অঅর যদি অঅমাকে পায়া বা হাতা কেতে অঅহবান করা হয় তবু তা আমি গ্রহণ করব অঅর যদি অঅমাকে পায়া বা হাতা হাদিয়া দেওয়া হয় তবে আমি তা গ্রহণ করব। অঅল্লাহ বলেন, হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পত্তি অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। তবে তোমাদের পরস্পর সম্মতিক্রমে ব্যবসার মাধ্যমে ( গ্রহণ করলে তা বৈধ)
যুক্তিসঙ্গত কারণ ব্যাতীত কেউ হাদিয়া ফেরৎ দেয়া যাবে না। ইহরাম অবস্থায় থাকাকালে তা ফেরৎ দেয়া যাবে । ইসমাইল রঃ ---সা”অব ইবনু জাস্সামা রাঃ থেকে বর্ণিত যে, তিনি( সাআব ইবনু জাস্সামা) রাসুলুল্লা সাঃ এর জন্য একটি বন্য গাধা হাদিয়া পাঠালেন। রাসুলে অঅকরাম সাঃ তখন আবাওয়া কিংবা ওয়াদ্দান নামক স্থানে ছিলেন। তিনি হাদিয়া তাকে ফেরৎ পাঠালেন। পওে তার মুখমন্ডলের বিষন্নতা লক্ষ্য কওে বল্লেন, শুন ! অঅমরা ইহরাম অবস্থায় অঅছি। । তা না হলে তোমার হাদিয়া ফেরৎ দিতাম না। ( বোখারি)। শুক্রবাওে সুগন্ধী ব্যবহার করা বালো। কেউ যদি ব্যবহারের জন্য সুগন্ধী দেন তাহলে তা ফিরিয়ে দেয়া যাবে না। অঅনাস রাঃ এর মতে নবী সাঃ সুগন্ধী ফিরিয়ে দিতেন না। কেউ হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ এবং উত্তম প্রতিদান দেয়া যেতে পারে। মুসাদ্দা রঃ ---অঅয়িশা রাঃ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ সাঃ হাদিয়া কবুল করতেন এবং তার প্রতিদান ও দিতেন। রাসুল সাঃ কে কেউ কিছু দিলে তিনি জিজ্ঞেস করতেন এাঁ কি বিক্রির জন্য, না দান হিসাবে অথবা বলতেন “ হেবা” হিসাবে? কোন অপছন্দ হাদিয়া দিলেও তা গ্রহণ করা যায়। তবে তা ব্যবহাওে বিধি নিষেধ থাকলেও তা অন্য কাউকে দিয়ে দেয়া যায়। অঅব্দুল্লাহ ইবনু ইমার রাঃ হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, উমার রাঃ মসজিদেও দ্বার প্রান্তে একজোড়া রেশমী বস্ত্র দেখে বল্লেন, হে অঅল্লাহর রাসুল! এাঁ যদি অঅপনি ক্রয় কওে নেন এবং তা জুমআর দিনে ও প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় পরিধান করতেন। তখন তিনি বল্লেন, এ তো সেই পরিধান কওে অঅখেরাতে যার কোন অংশ নেই। পওে কিছু রেশমী জোড়া অঅসলে রাসুলুল্লাহ সাঃ সেখান থেকে উমার রাঃ কে এক জোড়া দান করলেন। তখন উমর রাঃ বল্লেন,-অঅপনি এাঁ অঅমাকে পরিধান করতে দিলেন অথচ ( অঅগে) রেশমী কাপড় সম্পর্কে অঅপনি যা বলার বলেছিলেন। রাসুলুল্লাহ সাঃ বল্লেন, আমি তো এাঁ তোমাকে পরিধানের জন্য দেইনি। তখন উমার রাঃ তা মক্কার তার এক মুশরিক ভাইকে দিয়ে দিলেন ( বুখারি)। প্রয়োজনে মুশরিক থেকে হাদিয়া নেয়া যাবে। তাবুকের যুদ্ধে অঅয়লা নগরীর শাসনকর্তা মুশরিক শাসক নবিজীকে একটি সাদা খচ্চর উপহার দেন। নবিজী এর বিনিময়ে একটি চাদও হাদিয়া হিসাবে দান করেন। বিত্তবান লোককে ও হাদিয়া দেয়া যায়। কেননা হাদিয়া সাধারণ দানের মত নয়। মুসনাদে অঅহমদে অঅব্দুল্লাহ ইবনে সাদ থেকে বর্ণিত । তিনি বলেন, “ ওমর রাঃ অঅমাকে রাষ্ট্যীয় দায়িত্ব পালনের পরও হাদিয়া না নেয়ায় বলেন, তুমি যেরুপ কর অঅমিও সেরুপ করতাম। রাসুল সাঃ অঅমাকে হাদিয়া তোহফা দিতেন। আমি বলতাম অঅমার চেয়ে যে বেশি বেশি গরিব তাকে দান করুন। তখন রাসুল সাঃ বলেছেন- তুমি এাঁ গ্রহণ কর। এবার তোমার ইচ্ছে তা বিনিয়োগ কওে এর দ্বারা সম্পদ বৃদ্ধি করতে পার। অঅল্লাহ যেসব সম্পদ তোমাকে দান করেন। তোমার প্রার্থনা কিংবা অনুগ্রহ ছাড়াইতা তুমি গ্রহণ কর। অঅর যা থেকে তা তিনি তোমাকে বিরত রাখেন। তার পিছনে তুমি নিজেকে ব্যপৃত করো না। আসিম ইবনু অঅলি রাঃ ---অঅবু হুরায়রা রাঃ থেকে বর্ণিত। নবি সাঃ বলেছেন , হে মুসলিম মহিলাগণ! কোন মহিলা প্রতিবেশী নী যেন অপর মহিলা প্রতিবেশীনী ( প্রদত্ত হাদিয়া) তুচ্ছ মনে না কওে, এমন কি স্বল্প গোশত বিশিষ্ট বকরীর হাড় হলেও ( বোখারি)। কেউ উদ্দেশ্য সাধনের জন্য হাদিয়া দিলে তা গ্রহণ করা যাবে না। অঅব্দুল্লাহ ইবনু মুহাম্মদ র) ---অঅবু হুমায়দ সাইদী রাঃ তেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, নবী সাঃ আসাদ গোত্রের ইবনু উতবিয়ানামক এক ব্যক্তিকে সাদকা ( যাকাত) সংগ্রহের কাজে নিয়োগ করেছিলেন। তিনি ফিওে এসে বল্লেন, এগুলো অঅপনাদেও ( অর্থাৎ সাদকার মাল) অঅর এগুলো অঅমাকে হাদিয়া হিসাবে দেয়া হয়েছে। রাসুল সাঃ একথা শুনে খুবই রাগান্বিত হন। ন উপসংহারঃ অঅল্লাহকে ভয় করে প্রতিটি পদক্ষেপ এমনবাবে সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে যাতে শির্ক ও বিদাত অঅমাদেরকে স্পর্শ করতে না পারে। হাদিয়া সংক্রান্ত অপসংস্কৃতি দূর করার জন্য লেখা বক্তৃতা, সেমিনার ও সিম্পোজিয়ামের ব্যবস্থা করতে হবে।
No comments