আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি
আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য কুরবানি
মমিনুল ইসলাম মোল্লাপবিত্র ঈদুল আযহা সমাগত। এ দিন ঈদের নামাজের শেষে আমরা কুরবানি করি। কুরবানি এমন এক ধরণের আমল যার মাধ্যমে আমরা আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে পারি। কুরবানির মাধ্যমে শুধু পশু জবাই করলেই হবে না। আমাদের মধ্যে থাকা কাম, ক্রোধ, লোভ, মোহ, মদ,ও মাৎসর্য অর্থাৎ ষড়ঋপুকে কুরবানি করতে হবে। আমরা এ কাজে ব্যর্থ হলে ধনী লোকের কাছে তা বার্ষিক নিয়মরক্ষার উৎসব আর গরীব লোকের কাছে তা মাংশ খাওয়ার উৎসবে পরিগনিত হবে। তবে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে হলে শুধু মাত্র আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুরবানি করতে হবে। কেউ লোক দেখানো কুরবানি করলে এ কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে ”তোমার প্রতিপালকের উদ্দেশ্যে সালাত আদায় কর এবং পশু কুরবানি কর (সুরা কাউসার -২)। এটি হযরত ইব্রাহিম (আ:) এর সুন্নত। হিজরী দ্বিতীয় সালে হজরত মুহম্মদ (সা:) প্রথম কুরবানি করেন।
৬ প্রকারের পশু দ্বারা সারা বিশ্বের মানুষ কুরবানি করছে। এগুলো হচ্ছে-উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ছাগল ও ভেড়া। তবে একবারে ছোট পশু দ্বারা কুরবানি করা যাবে না। দুধ দাঁত পড়ে স্থায়ী দাত উঠা পশু কুরবানি দেয়া ভাল। হযরত মুহাম্মদ (সা:) বলেন- তোমরা মুসান্না (দুধ দাঁত পড়ে স্থায়ী দাঁত উঠলে) জন্তু ব্যাতীত কুরবানি করো না । যদি তা তোমাদের জন্য সহজসাধ্য না হয় তবে যাযা (৬ মাসের ভেড়া) কুরবানি করবে ” (মুসলিম,ইসলামি সেন্টার ৪৯২৬) । কেউ কেউ গরীব মিসকিনকে অল্প পরিমান দিয়ে বাকী মাংশ ফ্রিজে রেখে দিচ্ছেন। এ উপলক্ষে আমাদের দেশের ফ্রিজ কোম্পানীগুলো কুরবানির আগে বিশেষ মূল্য ছাড় দিয়ে থাকে। কোন কোন যায়গায় দেখা যায় ৭ শরীকে কুরবানি দিয়েও সমস্ত মাংশ ৩ ভাগ করে একভাগকে গরীব মিসকিনকে দিয়ে দিচ্ছেন এতে শরীকদের মধ্যে মনো মাালিন্য হচ্ছে। ফলে তাদের কুরবানি সহিহ হবে না। সমস্ত মাংশ ৩ ভাগ কারার নিয়ম ডকুমেন্ট দ্বারা সমর্থিত নয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে-অতপর তোমরা উহা হতে আহার কর এবং দুস্থ ও অভাবগ্রস্তদের আহার করাাও (আল হাজ্ব-২৮)।
কুমিল্লার আব্দুল মতিন বলেন, তাদের সমাজে প্রচলিত রয়েছে একই পরিবারের সদস্যরা যদি আলাদাভাবে স্বাবলম্বী হয় তারা আলাদাভাবে কুরবানি করছেন, অর্থাৎ একই পরিবারের লোক হওয়া সত্তেও কারও দুই ছেলে বিদেশে থাকলে ঔ দুই ভইি আলাদাভাবে কুরবানি করছেন। দেবিদ্বারের তাহমিনা ইয়াসমিন বলেন-অন্যান্য বছর তাদের পরিবারের পক্ষ থেকে একটি কুরবানি করতেন। এবছর মসজিদের ঈমাম সাহেব বলেছেন-তোমরা যেহেতু দুজন চাকুরি কর তোমাদের স্বামী-স্ত্রী আলাদা-আলাদাভাবে কুরবানি করতে হবে। আবুল খায়ের বলেন-তিনি এক বছর মায়ের নামে এক বছর বাবার নামে এক বছর নিজেদের নামে অথবা ছেলেমেয়েদের নামে কুরবানি দেন যাতে কুরবানির পুণ্য সবাই কিছু কিছু করে পেয়ে যান। আবার কেউ কেউ বলেন মায়ের নামে দিলে মায়ের গোষ্ঠী পাবে , বাবার নামে দিলে বাবার গোষ্ঠী সওয়াব পাবে, কেউ কেউ মৃত ব্যক্তির নামে কুরবানি দিচ্ছেন, সে কুরবানির মাংশ পরিাবারের সবাই মিলে খাচেছন, কোন কোন যায়গায় ১৫/২০ জন লোক একত্র হয়ে ৫/৬ জনের নামে কুরবানি করে মাংশ খাচ্ছেন। হজরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন “ আমরা হুদায়বিয়ার সন্ধির সময় নবী করিম (সা:) এর সাথে থেকে একটা উট সাত জনের পক্ষ থেকে ও একটা গরু সাত জনের পক্ষ থেকে কুরবানি করেছিলাম।”(মুসলিম-হা:১৩১৮) । আমাদেরকে মনে রাখতে হবে সমাজে যত মতই প্রচলিত থাকুক না কেন পবিত্র কুরআন এবং সহীহ হাদিসের সাথে সম্পৃক্ত নয় এমন মতামত গ্রহন করলে তা আল্লাহর দরবারে কবুল হবে না।কুরআনে বলা হয়েছে-আল্লাহর নিকট পৌছায়না তাদের গোশÍ, রক্ত, বরং পৌছায় তোমাদের তাকওয়া (সূরা হজ্ব-৩৭)।হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর আমলে কুরবানি দেয়ার পর যার কুরবানি কবুল হয়েছে সে বস্তুটি আল্লাহর রহমতে আকাশে চলে যেত আর যার কুরবানি কবুল না হতো সেগুলো মাটিতে পড়ে থাকতো। আমাদের কুরবানি আল্লাহর দরবারে কবুল হচ্ছে কিনা তা বুঝা না গেলেও আমরা কুরবানির মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করতে সক্ষম হচ্ছি কি-না তা সহজেই অনুমান করা যায়। সত্যিকার অর্থে আল্লাহকে খুশি করার জন্য কুরবানি করলে আল্লাহ বান্দাকে বিমুখ করবেন না। আমাদের কুরবানি যেন আল্লাহ কবুল করেন এবং আমরা যেন আমাদের অন্তরে থাকা পশুসলভ মনোভাব পরিহার করতে পারি , আল্লাহ আমাদেরকে সে তৌফিক দান করুন, আমিন।
লেখক: রাষ্ট্রবিজ্ঞানের প্রভাষক, সাংবাদিক ও গণতান্ত্রিক স্থানীয় সরকারের জন্য ক্যাম্পেনার, কুমিল্লা।
No comments