তাকওয়া অর্জণের হজ্ব ঃ তত্ত ও বাস্তবতা0-0-0- মমিনুল ইসলাম মোল্লা

তাকওয়া অর্জণের  হজ্ব ঃ তত্ত ও বাস্তবতা
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

সম্প্রতি বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রনালয়ের বৈঠকে জানানো হয়-চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে সৌদি আরবে ৫৫হাজার হজ্ব যাত্রী যাচ্ছেন। ২০ অক্টোবর থেকে হজ্ব ফ্লাইট শুুরু হবে। হজ্ব যাত্রীদের সুবিধার্থে বাংলাদেশ বিমানের পাশপাশি ভাড়া করা হচ্ছে দুটি ৭৪৭ বোয়িং বিমান । হজ্ব সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক বলেন- হজ্ব কর, তাহলে চিন্তা একদিকে আসবে। হজ্বে শিক্ষা আছে। হজ্বে কি বলতে হয় ? আমি ব্যবসায়ী তখন আমার চিন্তাা সকল জায়গা থেকে সরিয়ে বলতে হয় যে, আমি নিয়ত করলাম হজ্বের। আমি আলেম, আমাকে সে কথাই বলতে হয়, সেভাবেই নিয়ত করতে হয়। আমি হুযুর হিসাবে বলতে পারিনা যে, আমি নিয়ত করলাম জুমআর নামাযের ইমামতীর। সবাই বলছে বায়তুল্লাহের নিয়ত করলাম। যে গোনাহে লিপ্ত থাকে সুদ ঘুষ খায়, সেও বলে আমি নিয়ত করলাম বায়তুল্লাহের হজ্বের। সকলের নিয়ত এক, কোন পার্থক্য নেই। এজন্যই হজ্ব করতে বলা হয়ছে। বৃত্তশালীদের চিন্তার মধ্যেই পার্থক্য থাকে। একেকজন একেক চিন্তা করে। তাদের চিšাÍয় একতা আনার জন্য তাদের প্রতি আল্লাহপাক হজ্ব ফরয করেছেন।। তাকওয়া বা আল্লাহ ভীতি অর্জণ করাই হলো হজ্বের প্রকৃত উদ্দেশ্য। যারা তাকওয়া অর্জণে সক্ষম না হন তাদের অর্থ ও পরিশ্রম সবকিছুই বিফলে যায়।পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছে -হজ্বের সফরে তোমরা পাথেয়ের ব্যবস্থা কর।বস্তুত তাকওয়াই উৎকৃষ্ট পাথেয়। হে জ্ঞানী লোকেরা, তোমরা আমাকে ভয় কর (সুরা বাকারা)।যে ব্যক্তি তার পালনকর্তার সামনে দন্ডায়মান হওয়াকে ভয় করছে এবং খেয়াল খুশি থেকে নিজেকে নির্বৃত্ত রেখেছে তার ঠিকানা হবে জান্নাত (সূরা-নাজিয়াতঃ ৪০,৪১)।এছাড়া আল্লাহ বলেছেন-প্রাচুর্য তোমাদেরকে মোহাচ্ছন্ন করে রাখে এমনকি তোমরা পৌঁছে যাও ---কিন্তু না তোমরা শীগ্রই জানতে পারবে বাস্তবতা--(সূরা আত তাকাসুর) । হাদিস শরীফে বলা হয়েছে-যে নফস বা আত্মাকে আল্লাহ তায়ালা পবিত্র করেছেন সে নফস বা আত্মা নিষ্কিৃতি লাভ করেছে।(তাফসিরে ইবনে কাসির)।

সরকারিভাবে হজ্ব করতে গেলে অনেক বেশি টাকা লাগছে।  হজ্ব যাত্রীরা জানান, তাদের  টাকায় ভাগ বসাচ্ছে প্রশাসনিক টিম, সহায়ক টিম , মেডিকেল টিম, হজ্ব গাইড, ও ডেলিগেশন টিম। এসব টিমে যতজন থাকা দরকার তার চেয়ে বেশি সংখ্যক লোক তদবিরের মাধ্যমে অন্তর্ভক্ত হচ্ছে বলে জান াযায়।এভাবে আলাদা নামে গত ১০ বছরে সরকারি টাকায় হজ্ব করতে গেছেন দেড় হাজার কর্মকর্তা-কর্মচারি। এব্যাপারে বায়তুল মোকারমের খতিব জানান,সরকারি টাকায় গেলে হজ্ব হবে ।তবে ছলচাতুরি, কাজে ফাঁকিসহ নানা বিষয় অবজ্ঞা করলে কবিরা গুনাহ হবে। আত্মশুদ্ধির মাধ্যমে আপনি নিজের ভুলগুলো শুধরে নিতে পারেন। রাগী লোক রাগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে, বিচারক সৎভাবে বিচার করতে পারেন, যুবকরা তাদের চরিত্র হেফাজত করতে পারে, একজন মেয়ে সমাজের ফেতনা থেকে বাঁচতে পারে, অত্যাচারী নিজেকে সংশোধন করতে পারেন, বেনামাজী নামাজ না ছাড়ার ওয়াদা করতে পারেন, এমনকি দাড়ি না রাখা লোকজন দাড়ি রাখতে সংকল্প করতে পারেন ।
বাংলাদেশের বহু লোক পবিত্র হজ্ব উদযাপন করতে গিয়ে যথাসময়ে ফিরেআসেন না।পরবর্তীতে সেখানকার পুলিশের হাতে ধরা খেয়ে দেশে ফিরে আসেন। ভূক্তভ‚গীরা জানান কিছু সংখ্যক প্রতারকের কারণে তাকওয়া অর্জণের উদ্দেশ্যে যাওয়া হজ্ব যাত্রীরাও হয়রানীর শিকার হন। নো ব্যাক হাজীদের কারণে সৌদি সরকার ১৫টি হজ্ব এজেন্সিকে নিষেধ করেছে। তারা ২০১০-২০১১ সালে যাদের হজ্বে নিয়েছিলেন তাদের অনেকেই ফেরৎ আসেনি বলে অভিযোগ রয়েছে। চট্টগ্রামের বাঁশখালির জাকির হোসেন বলেন শুধু হজ্ব সমাপন করেই যে বাঙ্গালিরা সেখানে থেকে যান এমনটি নয়, অনেকে আগে থেকেই ভেবে রাখেন এসুযোগে সে দেশে গিয়ে আতর, টুপি, জায়নামাজ বিক্রি করবেন । ফলে এসব লোকের কারণে তাদের হজ্বের প্রকৃত উদ্দেশ্য ব্যাহত হচ্ছে। পূণ্য কাজের সাথে জড়িত সবাই সোয়াবের অংশিদার হবেন এটিই স্বাভাবিক । কিন্তু এখানেও চলছে প্রতারণা। বেসরকারি হজ্ব এজেন্সিগুলো যেসব লোভনীয় সুযোগ সুবিধার কথা বলে থাকেন তার অর্ধেক সুবিধাও তারা পান না। ৫০০ মিটারের মধ্যে বাড়ি ভাড়া করে রেখেছেন বল্লেও বাস্তবে গিয়ে দেখা যায় হোটেল থেকে হারাম শরীফ ২ কিলোমিটার দূরে। সেখান থেকে নিজ দায়িত্বে বিভিন্ন যায়গায় যেতে হয়। যা বৃদ্ধ হজ্ব যাত্রীদের জন্য খুবই কষ্টকর। গত বছর হজ্ব করে এসেছেন কুমিল্লার তাজিম মোল্লা। তিনি জানান বেসরকারি হজ্বযাত্রীদের খাওয়া-দাওয়ার ক্ষেত্রেও সমস্যা হয়। এ নিয়ে কেউ প্রতিবাদ করতে গেলে বলা হয়- এখানে কেউ পেট ভরে ভাল-ভাল খাবার খেতে আসেন নি, এসেছেন আখেরাতের ফায়দা হাসিল করতে। তাই বেশি করে আল্লাহকে কাজ করুন খাওয়া-দাওয়া নিয়ে একদম ভাববেন না। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেছেন-যখন হজ্বের অনুষ্ঠান সম্পন্ন করবে , তখন আল্লাহকে এমনভাবে স্মরণ করবে যেমন তোমরা তোমাদের পিতৃপুরুষকে স্মরণ করতে। বরং আল্লাহকে আরো বেশি ও ভালভাবে স্মরণ কর। আমরা যেন সঠিক নিয়মে হজ্ব  আদায় করে পূর্ণ সোয়াবের অংশিদার হতে পারি সেজন্য সবাইকে চেষ্টা করতে হবে। সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স ০১৭১১-৭১৩২৫৭ 
৬০০ শব্দের অতিরিক্ত

হজের দিনগুলোতে আপনার করণীয়ঃ হজের মূল দিবসগুলো হচ্ছে ৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত।  ৮ জিলহজ তারিখে হজের নিযত করে এহরাম বেঁধে সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমুখে রওনা হবেন তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে। এদিন জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে জোহরের নামাজ পডবেন। অতঃপর আসর, মাগরিব ও এশা এবং ৯ জিলহজ ফজর নামাজ আদায় করবেন। মিনাতে অবস্থানকালে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করবেন। ৯ জিলহজ মিনা থেকে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের জন্য রওনা হবেন।হজ্বের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ শিখে নিবেন। বিশেষ করে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,লা শারীকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমতা লাকাওয়াল মূলক লা শারীকালাক দোয়াটি মুখস্ত করতে হবে।এর অর্থ হচ্ছে-“আমি হাজির,হে আল্লাহ।আমি ইপস্থিত আপনার ডাকেসাড়া দিতে আমি হাজির।আপনার কোন অংশিদার নেই।নিঃসন্দেহে সমস্তপ্রসংশাও সম্পদরাজি আপনারএবং একচ্ছত্র আধিপত্যআপনার।আপনার কোন অংশিদার নেই।” রাসূল সাঃ বলেছেন, ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ।’ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান অবশ্যই করবেন। জোহর ও আসরের নামাজ¬ জোহরের প্রথম ওয়াক্তে এক আজান ও দু’ইকামাতে কসর করে একত্রে পড়তে হয়। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় রাতযাপনের জন্য রওনা হবেন। সূর্যাস্তের পর আরাফা বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুজদালিফার উদ্দেশে চলতে থাকুন। মুজদালিফায় পৌঁছে এক আজানে ও দু’ইকামতে দু’ওয়াক্ত নামাজ কসর আদায় করবেন (কসর মাগরিবের হবে না, শুধু এশার হবে)। ১০ জিলহজ বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পূবর্ পর্যন্ত। কঙ্কর নিক্ষেপ করার  নিক্ষেপের সময় ‘তাকবির’ বলবেন।  ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে কোরবানি করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করে অথবা চুল ছেঁটে গোসল সেরে এহরাম কাপড খুলে স্বাভাবিক কাপড পরবেন। কঙ্কর মারা শেষে তাওয়াফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মিনা থেকে ‘খানায়ে কাবা’ যেতে হবে। ওই দিন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াাফে জিয়ারতের কাজ সারতে হবে। তা না হলে ১২ জিলহজ তারিখের পরে তাওয়াফ করে দম দিতে হবে। অবশ্য মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণে না করতে পারলে পবিত্র হওয়ার পর তা সমাধা করবেন।১১ জিলহজ দুপুরের পর (সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে) প্রথমে ছোট জামারায়, তারপর মধ্যম জামারায় এবং বড় জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।১২ জিলহজ আগের দিনের মতোই করবেন। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একই বিধান। তবে মহিলাদের রাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েজ। কিরান হজ ও তামাত্তো হজ পালনকারীদের ওপর কোরবানি করা ওাজিব। সর্বশেষে বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা শরিফ থেকে বিদায় নেবেন। যারা মদিনাতে যাননি, তারা মসজিদে নববী জিয়ারতের উদ্দেশ্য মদিনা যাবেন।মদিনায় গিয়ে নবিজির কবর জিয়ারত করুন। মিনায় থাকতে না চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে বা পরে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা ভালো। মক্কা শরিফ থেকে বিদায়র আগে বিদায়ী তাওয়াফ করুন।  হাদিসে আছে,“যে ব্যক্তি হজ্ব পালনকালে যৌন সম্ভোগ ও কোন পাপাচার কাজে লিপ্ত না হয় সে মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.