রাসুলকে ( সাঃ) স্বপ্নে দেখা ও সে অনুযায়ী আমল করা


রাসুলকে ( সাঃ) স্বপ্নে দেখা ও সে অনুযায়ী আমল করা

স্বপ্ন তিন (প্রকার), ভাল স্বপ্ন আল্লাহর পক্ষ থেকে সুসংবাদ (বাহক) । আর (এক প্রকার) স্বপ্ন শয়তানের থেকে দূর্ভাবনার সৃষ্টি করে ।
আর (এক প্রকার) স্বপ্ন যা মানুষ তার মনের সাথে কথা বলে (এবং ভাবনা-চিন্তা করে), তা থেকে (উদ্ভূত) । অতএব কেউ যদি এমন কিছু স্বপ্ন দেখে যা সে অপসন্দ করে, তা হলে সে যেন (ঘূম থেকে) উঠে দাঁড়ায় এবং স্বলাত আদায় করে আর মানুষের কাছে সে (সপ্নের) কথা প্রকাশ না করে । রাসুল সাঃ  (স্বপ্নে) হাতকড়া (দেখা) পসন্দ করেন এবং গলায় বেড়ী (দেখা) অপসন্দ করেন । কেননা হাতকড়া দীন-ধর্মে অবিচলতা (এর পরিচায়ক) যখন যামানা ও সময় (কিয়ামতের) নিকটবর্তী হয়ে যাবে, তখন প্রায়শ (খাটি) মুসলিমের স্বপ্ন মিথ্যা ও বেঠিক হবে না । তোমাদের (মাঝের) সর্বাধিক সত্যভাষী ব্যক্তি সর্বাধিক সত্য (ও বাস্তব) স্বপ্নদ্রষ্টা হবে । আর মুসলিমের স্বপ্ন নবুয়াতের পঁয়তাল্লিশ ভাগের এক ভাগ ।

Nobike dekha আবু তাহির ও হারমালা (র) ...... আবু হুরায়রা  থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ আমি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-কে বলতে শুনেছি, যে ব্যক্তি আমাকে স্বপ্নে দেখে, অচিরেই সে আমাকে জাগ্রত অবস্হায় দেখতে পাবে । কিংবা তিনি বলেছেন, সে যেন আমাকে জাগ্রত অবস্হায় দেখতে পেল । কেননা শয়তান আমার রুপ ধারণ করতে পারে না ।তাখরীজঃ ( ই.ফা- ৫৭২৩/ ই.সে- ৫৭৫৩)
Shoytan (সু স্বপ্ন) আল্লাহর পক্ষ থেকে আর । الْحُلْمُ (দুঃস্বপ্ন) ও বাজে স্বপ্ন শয়তানের পক্ষ থেকে । সুতরাং  কেঊ যখন এমন কোন বিষয় রুপে দেখে যা সে অপসন্দ-করে, তখন সে যেন তার বামদিকে তিনবার থু থু নিক্ষেপ করে এবং (আউযুবিল্লাহ বা সূরা আল-ফালাক ও সূরা আন-নাস পড়ে) স্বপ্নের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করে । কেননা (এভাবে করলে) তা তার কোন ক্ষতি করতে পারবে না । অন্য হাদিসে  পার্শ পরিবর্তন করে ঘুমানোর কথা বলা হয়েছে।  
Gorotto  মুহাম্মদ ইবনু বাশশার (র) ...... সামুরা ইবনু জুনদুব  থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ নবী (ﷺ) ফজরের স্বলাত আদায় শেষে লোকদের দিকে মুখ করে বসতেন এবং বলতেন, তোমাদের কেউ কি গত রাতে কোন স্বপ্ন দেখেছে? ই.ফা- ৫৭৩৮/ ই.সে- ৫৭৬৯)
Sopno onozai kazমুহাম্মদ ইবনু সাহল তামীমী (র) ...... ইবনু আব্বাস  থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ (ভণ্ড নবী) মুসায়লামা কাযযাব নবী (ﷺ)-এর আ‘মালে মদীনায় এল, সে তখন বলতে থাকল, মুহাম্মাদ যদি তার (মৃত্যুর) পরে নেতৃত্ব -আমাকে দেওয়ার অংগীকার করে, তা হলে আমি তার অনুসরণ করব । সে তার কাওমের অনেক লোকজন নিয়ে মদীনায় এল । নবী (ﷺ) তার দিকে এগিয়ে গেলেন । তাঁর সাথে ছিলেন সাবিত ইবনু কায়স ইবনু শামমাস  । আর তখন নবী (ﷺ)-এর হাতে ছিল খেজুর শাখার একটি টূকরা । অবশেষে তিনি সহচর বেষ্টিত মুসায়লামার সামনে গিয়ে থামলেন এবং কথাবার্তার এক পর্যায়ে বললেন (তুমি যদি আমার কাছে এ) নগণ্য খেজুর ডালের টূকরাটিও দাবি কর, তবু আমি তা তোমাকে দিব না এবং আমি কিছুতেই তোমার ব্যাপারে আল্লাহর বিধান লংঘন করব না । আর যদি তুমি (অবাধ্য হও) পাশ্চাতে ফিরে যাও, তা হলে অবশ্যই আল্লাহ তোমাকে ঘায়েল করবেন । আর আমি অবশ্যই মনে করি যে, যা আমাকে স্বপ্নে দেখানো হয়েছে, তা তোমার ব্যাপারেই দেখানো হয়েছে । আর (আমি তোমার সাথে অধিক বাক্য ব্যয় করতে চাই না), তবে এ সাবিত আমার পক্ষ থেকে তোমাকে জবাব দিবো এর পর তিনি তার কাছ থেকে ফিরে চললেন ।তাখরীজঃ ( ই.ফা- ৫৭৩৬/  Sahaba আবু আমির আব্দুল্লাহ ইবনু বাররাদ আশআরী ও আবু কুরায়র মুহাম্মদ ইবনু আলা (র) ...... আবু মুসা  সূত্রে নবী (ﷺ) - থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ আমি স্বপ্লে দেখলাম যে, আমি মক্কা থেকে এমন এক দেশে হিজরত করে যাচ্ছি যেখানে খেজুর গাছ রয়েছে । তাতে জামার কল্পনা এদিকে গেল যে, তা ইয়ামান কিংবা হাজর (এলাকা) হবে । পরে (বাস্তবে) দেখি যে, তা হল মাদীনা (যার পূর্ব নাম) ইয়াসরিব । আমি আমার এ স্বপ্নে আরও দেখলাম যে, আমি একটি তরবারি নাড়াচাড়া করলাম, ফলে তার মধ্যখানে ভেংগে গেল । তা ছিল উহুদের দিনে, যা মূমিনগণের উপর আপতিত হয়েছিল । পরে আমি আর একবার সেই তরবারি নাড়া দিলে তা আগের চাইতে উত্তম হয়ে গেল । পরে মুলত তা হল সে বিজয় ও ঈমানদারদের সম্মিলন, যা আল্লাহ সংঘটিত করলেন (মক্কা বিজয়) । আমি তাতে একটি গরুও দেখলাম । আর আল্লাহ তা’আলাই কল্যাণের অধিকারী । মূলত তা হল উহূদের যূদ্ধে (শাহাদাতপ্রাপ্ত) ঈমানদারগণের দলটি । আর কল্যাণ হল সে কল্যাণ, যা পরবর্তীতে আল্লাহ তাআলা দান করেছেন এবং সততা ও নিষ্ঠার সে সাওয়াব ও প্রতিদান যা আল্লাহ তা-আলা আমাদের বদর যুদ্ধের পরে দিয়েছেন । হাজিব ইবনু ওয়ালীদ  উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ (র) থেকে বর্ণিত যে, ইবনু আব্বাস  কিংবা আবু হুরায়রা  হাদীস বর্ণনা করতেন যে এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে এল ......। অন্য বর্ণনায় হারমালা ইবনু ইয়াহইয়া তূজীবী (র) উবায়দুল্লাহ ইবনু আব্দুল্লাহ ইবনু উতবা  ইবনু শিহাব (র)-কে খবর দিয়েছেন যে, ইবনু আব্বাস  এ হাদীস বর্ণনা করতেন যে, এক ব্যক্তি রাসুলুল্লাহ (ﷺ)-এর খিদমতে এসে বলল, ইয়া রাসুলল্লাহ! আমি আজরাতে স্বপ্ন দেখলাম যে, শামিয়ানা থেকে ঘি ও মধু ঝরে পড়ছে আর লোকদের দেখলাম তারা তা থেকে তাদের হাতের অঞ্জলি ভরে ভরে নিয়ে যাচ্ছে । কেউ অধিক পরিমাণ নিচ্ছে কেউ অল্প পবিমাণে । আর একটি রশি দেখলাম আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সংযোগকারী আর দেখলাম আপনি তা ধরলেন এবং উপর উঠে গেলেন তারপর একজন লোক তা ধরল এবং সে উপর উঠে গেল- তারপর আর একজন লোক তা ধরল এবং তা ছিঁড়ে পড়ে গেল । পরে তা তার জন্য জুড়ে দেয় হল এবং সেও উপরে উঠে গেল । স্বপ্ন বর্ণনার এ পর্যায় আবু বকর  বললেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার পিতা আপনার জন্য উৎসর্গিত! আল্লাহর কসম! অবশ্য আপনি আমাকে অবকাশ দিবেন তা হলে আমি এ স্বগ্নটির তাবীর করব । রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেন, আপনি তাবীর করুন । আবু বাকর  বললেন, শামিয়ানাটি হল ইসলামের (রুপক) শামিয়ানা, আর যে ঘি ও মধুর ফোঁটা ঝাড়ে পড়ছিল তা হচ্ছে আল-কুরআন এর মধুরতা ও কোমলতা, আর মামুষেরা যে তা থেকে অঞ্জলি ভরে ভরে নিয়ে-যাচ্ছিল, তা হলো কেউ অধিক পরিমাণে আর কেউ অল্প পরিমাণে আল-কুরআন থেকে আহরণ করয়ে আর আসমান থেকে যমীন পর্যন্ত সংযুক্ত রশিটি হল হক ও সত্য (পথ), যার উপরে আপনি রয়েছেন তা ধারণ করলেন, আর আল্লাহ তা দিয়ে আপনাকে উপরে তুলে নিলেন । এরপর আপনার পরে এক ব্যক্তি তা ধারণ করবে এবং তা দিয়ে সেও উপরে উঠে যাবে তারপর এক ব্যক্তি তা ধারণ করতে সেও উপরে উঠে যাবে । তার পর আর এক ব্যক্তি তা ধারণ করবে এবং তা ছিঁড়ে পড়ে যাবে পরে তা তার জন্য জুড়ে দেয়া হবে এবং তা দিয়ে সে উপরে উঠে যাবে । ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! এখন আমাকে বলে দিন আমার পিতা ও মাতা আপনার উদ্দেশ্যে উৎসর্গিত, আমি ঠিক বলেছি কিংবা ভূল বলেছি? রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বললেনঃ আপনি কতক ঠিক বলেছেন আর কতক ভুল করেছেন । তিনি বললেন, তা হলে আল্লাহর কসম ইয়া রাসুলুল্লাহ (ﷺ)! যা আমি ভূল করেছি, তা অবশ্যই আপনি আমাকে বর্ণনা করে দিবেন । বললেন এভাবে কসম করবেন না ।


আব্দুল্লাহ ইবনু মাসলামা (র) ইবনু কানাব (র) ...... আনাস ইবনু মালিক  থেকে বর্ণিত । তিনি বলেনঃ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেছেনঃ এক রাতে আমি দেখলাম যেভাবে ঘুমন্ত ব্যক্তি দেখে (অর্থাৎ স্বপ্ন), যেন আমরা উকবা ইবনু রাফি এর বাড়িতে রয়েছি । তখন আমাদের কাছে ইবনু তাব (নামক) খেজুর হতে কিছু তাজা খেজুর নিয়ে আসা হল । তখন আমি এর ব্যাখ্যা করলাম, দুনিয়ার বুকে আমাদের জন্য উন্নতি এবং আখিরাতে শুভ পরিণতি । আর আমাদের দীন অবশ্যই উত্তম
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, প্রভাষক, কলামিস্ট ও গবেষক








No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.