শয়তান: মানুষের প্রকাশ্য শত্রু

 

শয়তান: মানুষের প্রকাশ্য শত্রু

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক,কলামিস্ট,কুমিল্লা।।

মানুষকে আল্লাহ আশরাফুল মাখলুকাত হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। স্বাধীনভাবে চিন্তা-ভাবনার সুযোগ থাকার কারণে মানুষ ভালো-মন্দ উভয় পথই গ্রহণ করতে পারে। এই সুযোগকেই কাজে লাগায় শয়তান। কোরআনে বলা হয়েছে, শয়তান একবচন ও বহুবচনে ৮৮ বার উল্লেখ হয়েছে। আল্লাহর রহমত ছাড়া তার কুমন্ত্রণার হাত থেকে বাঁচার কোনো পথ নেই।

বুখারি শরিফে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন—শয়তান মানুষের শিরায় প্রবাহিত রক্তের মতো দেহে প্রবেশ করে। জন্মের মুহূর্ত থেকেই প্রতিটি মানুষের জন্য এক শয়তান নিয়োজিত হয়। সে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত সঙ্গী হয়ে নানা প্রলোভনে ফেলে। কোরআনে শয়তানকে “প্রকাশ্য শত্রু” আখ্যা দেওয়া হয়েছে।

শয়তানের কাজ মানুষকে কুফর, শিরক ও আল্লাহ-রাসূলের বিরোধিতায় লিপ্ত করা। তাতে ব্যর্থ হলে বিদআত, কবিরা গুনাহ কিংবা অপ্রয়োজনীয় কাজে ব্যস্ত করে তোলে। সূরা হিজরে শয়তানের ঘোষণা—আল্লাহর একনিষ্ঠ বান্দা ছাড়া সবাইকে সে পথভ্রষ্ট করবে। সূরা নাসে কুমন্ত্রণা দাতাকে কখনো অদৃশ্য জিন, কখনো মানুষরূপী শয়তান বলা হয়েছে।

রাসূল (সা.) হাদিসে বলেছেন, জিন তিন প্রকার—কেউ আকাশে উড়ে বেড়ায়, কেউ সাপ-কুকুরের রূপ নেয়, আবার কেউ মানুষের মতো পৃথিবীতে বসবাস করে। আরেক হাদিসে এসেছে, শয়তানের সিংহাসন পানির উপর, সেখান থেকে সে সৈনিক প্রেরণ করে মানুষকে ফেতনা-ফাসাদে লিপ্ত করে।

শয়তানের ফাঁদ সবচেয়ে বেশি কার্যকর হয় মানুষের দুর্বল মুহূর্তে—সালাতে, কোরআন তেলাওয়াতের সময়, রাগের মুহূর্তে, ঘরে প্রবেশ বা স্বামী-স্ত্রীর মিলনের সময়। বিশেষত সালাতে সে মনোযোগ নষ্ট করে। তাই মহানবী (সা.) বলেছেন—যে ঘরে সূরা বাকারা পাঠ করা হয়, সেখান থেকে শয়তান পালিয়ে যায়।

ইতিহাসে দেখা যায়, আদম (আ.) কে আল্লাহ নিষিদ্ধ বৃক্ষের ফল খাওয়াতে শয়তান প্রতারণা করেছিল। আবার আল্লাহর নির্দেশে সেজদা করতে অস্বীকার করে ইবলিশ তার অবাধ্যতা প্রকাশ করেছিল। এভাবেই মানুষের চিরশত্রু হিসেবে শয়তানের আগমন ঘটে।

শয়তান শুধু অদৃশ্য শক্তিই নয়, মানুষের ভেতর থেকেও কার্যকর হয়। যারা সত্য অস্বীকার করে, নেককারদের বিদ্রুপ করে কিংবা ইসলামের প্রচলন পছন্দ করে না—তাদের অন্তরে শয়তানের প্রভাব স্পষ্ট হয়ে ওঠে। কোরআনে সতর্ক করা হয়েছে, “শয়তানের চক্রান্ত দুর্বল, তোমরা তার বিরোধিতা কর।”

মুক্তির একমাত্র পথ হলো কোরআন ও সহিহ হাদিসের আলোকে জীবন গঠন। আল্লাহর কাছে সাহায্য চাওয়া, নিয়মিত কোরআন তেলাওয়াত ও সালাত আদায়, এবং নেক আমলের মাধ্যমে শয়তানের কবল থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। কারণ শয়তান মানুষকে দারিদ্র্য দিয়ে ভয় দেখায়, অপ্রয়োজনীয় স্বপ্ন দেখায় এবং নফসের দাস বানাতে চায়।

শয়তান আজন্ম শত্রু। তাকে বন্ধু বানানো মানেই ধ্বংসকে আলিঙ্গন করা। তাই মুমিনদের কর্তব্য হলো সর্বদা শয়তানের বিরোধিতা করা এবং আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করা। আল্লাহর নির্দেশ মতো জীবন গড়তে পারলেই কুমন্ত্রণাদাতার কবল থেকে মুক্তি মিলবে—এটাই আমাদের নিরাপত্তা ও সফলতার নিশ্চয়তা।

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক,কলামিস্ট,কুমিল্লা।।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.