সাংবাদিক হাবিব জালাল স্মরণে মমিনুল ইসলাম মোল্লা

 




সাংবাদিক হাবিব জালাল স্মরণে মমিনুল ইসলাম মোল্লা

বাংলাদেশের সাংবাদিক সমাজের ইতিহাসে অনেক বরেণ্য ব্যক্তিত্ব আছেন, যারা শুধু সংবাদ পরিবেশনই করেননি; বরং নতুন প্রজন্মের লেখকদের দিকনির্দেশনা দিয়েছেন। এমনই একজন ছিলেন কুমিল্লার খ্যাতনামা সাংবাদিক হাবিব জালাল। তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে আমার নিজের সাংবাদিকতা জীবনের শুরুর দিকের কথা মনে পড়ে যায়।

১৯৯০ সাল থেকে আমি সংবাদপত্রের সাথে যুক্ত। ১৯৯১ সালে ভর্তি হই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি বিশ্ববিদ্যালয় কলেজে। তখন থেকেই দেবিদ্বার থেকে লিখতাম সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ–এ। বর্ষীয়ান সাংবাদিক ও সম্পাদক মোহাম্মদ উল্লাহ ছিলেন তখনকার প্রেরণা। রাশভারী মানুষ হলেও তরুণ লেখকদের সঙ্গে খুব আন্তরিকভাবে কথা বলতেন। তাঁর অকাল প্রয়াণ আমার মতো অনেকের জন্যই এক শূন্যতার সৃষ্টি করেছিল।

পরবর্তীতে পরিচয় হলো দৈনিক রূপসী বাংলার সম্পাদক ওহাব স্যারের সঙ্গে। সেখান থেকেই মূলত আমার ফিচার লেখার হাতে খড়ি। তিনি আমাকে বুঝিয়ে দিলেন নিউজ ও ফিচারের পার্থক্য। এর পাশাপাশি দেশের প্রাচীনতম সাপ্তাহিক আমেদ পত্রিকার সম্পাদক ফজলে রাব্বি ও তাঁর ছেলে ফটোগ্রাফার বাকিন ভাইয়ের কাছ থেকে শিখলাম সংবাদচিত্র তোলার কলা-কৌশল।

এভাবেই প্রায় তিন দশক সংবাদপত্রের অঙ্গনে পথ চলেছি। বড় কোনো সাফল্যের দাবি করতে পারি না, তবে সাংবাদিকতার প্রতি অনুরাগই আমাকে টেনে রেখেছে। হঠাৎ একদিন লক্ষ্য করলাম, আমার একটি লেখা ৪৫ লাখ পাঠকের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে। বিষয়টি শেয়ার করলাম মুরাদনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি হাবিব সাহেবের কাছে। তিনি বললেন, “মোল্লা ভাই, আপনার একটা ছবি দিন, আমি কুমিল্লার একটি পত্রিকায় পাঠিয়ে দেব।”

এরপর আমার লেখাটি প্রকাশিত হলো কুমিল্লার দৈনিক ডাক প্রতিদিন পত্রিকায়। পত্রিকার কপি সংগ্রহ করতে গিয়ে প্রথমবার দেখা হলো ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক হাবিব জালালের সঙ্গে। তিনি পুরোনো স্টক থেকে পত্রিকাটি বের করে আমার লেখাটি মনোযোগ দিয়ে পড়লেন। শিরোনাম ছিল— “৪৫ লাখ পাঠকের ভালোবাসায় মমিন মোল্লা”। তিনি অবাক হয়ে বললেন, “একটি লেখা এত মানুষের কাছে পৌঁছেছে—এটি সত্যিই বিস্ময়ের।” পরে অনলাইনে প্রবেশ করে দেখলেন পাঠক সংখ্যা ইতিমধ্যেই ৪৫ লাখ ছাড়িয়ে গেছে।

আসলে লেখাটির মূল শিরোনাম ছিল “হালাল উপায়ে ব্যবসা ও মুনাফা লাভ”, যা প্রথম প্রকাশিত হয়েছিল ঢাকা থেকে প্রকাশিত দৈনিক আলোকিত বাংলাদেশ–এর “ইসলাম ও অর্থনীতি” পাতায়। পরবর্তীতে একাধিক অনলাইন মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় এটি বিপুল পাঠকপ্রিয়তা পায়।

হাবিব জালাল ভাই শুধু সম্পাদকই ছিলেন না; তিনি ছিলেন লেখকদের প্রকৃত অভিভাবক। সাংবাদিকতা নিয়ে তিনি সযত্নে তরুণদের উৎসাহ দিতেন। সেই দিন আমায় চা খাইয়ে বিদায় জানালেও বেশিদিন পরে আর তাঁকে দেখতে পাইনি। তিনি চলে গেলেন না–ফেরার দেশে।

হাবিব জালালের মতো সাংবাদিকদের অবদান ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। তিনি প্রমাণ করেছেন, একজন সাংবাদিক কেবল কলম ধরেই নয়, নবীনদের অনুপ্রাণিত করেও সমাজে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ রাখতে পারেন।

আজ তাঁকে স্মরণ করতে গিয়ে আমি উপলব্ধি করি, সাংবাদিকতা কেবল পেশা নয়—এটি দায়িত্ব, নৈতিকতা ও সমাজের প্রতি অঙ্গীকার। আমাদের প্রিয় হাবিব ভাইকে আল্লাহ জান্নাতুল ফেরদৌস দান করুন।
আমিন, আমিন, ছুম্মা আমিন।

মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক,কলামিস্ট,কুমিল্লা।।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.