শব্দের কারিগর: মমিনুল ইসলাম মোল্লার লেখনীতে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সন্ধান
শব্দের কারিগর: মমিনুল ইসলাম মোল্লার লেখনীতে ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সন্ধান
স্টাফ রিপোর্ট :
সাংবাদিকতা কেবল সংবাদ পরিবেশন নয়, এটি সমাজ, ইতিহাস আর মানুষের গল্প বলার এক শিল্পমাধ্যম। শিক্ষক, সাংবাদিক ও কলামিস্ট মমিনুল ইসলাম মোল্লা তার লেখনীর মাধ্যমে এই শিল্পকেই ধারণ করেছেন। তার কাজ নিছক সাংবাদিকতার গতানুগতিক ধারার মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেনি; বরং তিনি হয়ে উঠেছেন তার অঞ্চলের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং অনুভূতির এক নিপুণ ভাষ্যকার। তার নির্বাচিত কয়েকটি লেখা বিশ্লেষণ করলে এই সাধনার গভীরতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে।
মমিনুল ইসলাম মোল্লার কাজের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক হলো গবেষকের নিষ্ঠা নিয়ে স্থানীয় ইতিহাস ও অনালোচিত অধ্যায়কে জনসমক্ষে তুলে আনা। "মুক্তিযুদ্ধে মুরাদনগর উপজেলা (কুমিল্লা)" শীর্ষক লেখায় তিনি যখন শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকা প্রণয়ন করেন, তখন তিনি কেবল একজন সাংবাদিকের ভূমিকা পালন করেন না, বরং একজন দায়বদ্ধ ঐতিহাসিকের কাজ করেন। এই প্রচেষ্টা ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য নিজ ভূমির বীর সন্তানদের আত্মত্যাগের স্মৃতি সংরক্ষণের এক অমূল্য দলিল। একইভাবে, "কবি নজরুলের প্রথম স্ত্রী নার্গিসের জীবন কথা" প্রবন্ধে তিনি জাতীয় কবির জীবনের এক বিস্মৃত অধ্যায়কে তথ্য ও সংবেদনশীলতার সঙ্গে উপস্থাপন করেছেন। এটি প্রমাণ করে, তার সাধনা খবরের পেছনের খবরের গভীরে গিয়ে সত্যকে উন্মোচন করা।
তার লেখনীর আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো আঞ্চলিক সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের প্রতি গভীর মমতা। "ইফতারে মুরাদনগরের মাশকলাইয়ের আমিত্তি" লেখাটি আপাতদৃষ্টিতে একটি সাধারণ খাদ্য সংস্কৃতি বিষয়ক প্রতিবেদন মনে হলেও এর গভীরে লুকিয়ে আছে লোকসংস্কৃতির প্রতি তার দায়বদ্ধতা। বিশ্বায়নের যুগে হারিয়ে যেতে বসা একটি স্থানীয় ঐতিহ্যকে তিনি শব্দের মাধ্যমে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করেছেন। এই লেখায় তার সাংবাদিক সত্তার সঙ্গে মিশে গেছে একজন সংস্কৃতিপ্রেমী মানুষের আবেগ।
তবে মমিনুল ইসলাম মোল্লা কেবল ইতিহাস আর ঐতিহ্যের অতীতেই থেমে থাকেননি। তিনি বর্তমানের সামাজিক ও আধ্যাত্মিক জীবনেরও একজন নিপুণ পর্যবেক্ষক। "পুণ্যের মাস রমজানুল মোবারক" কলামে তিনি রমজানের অন্তর্নিহিত তাৎপর্য—সংযম ও আত্মশুদ্ধি—তুলে ধরেছেন, যা একজন সমাজমনস্ক কলামিস্ট হিসেবে তার গভীর চিন্তার পরিচায়ক।
তার লেখার সবচেয়ে হৃদয়গ্রাহী অংশ সম্ভবত তার স্মৃতিকাতরতার নিপুণ বুনন। "শৈশবে ফিরে যাওয়া" প্রবন্ধে তিনি কোরবানির ঈদের স্মৃতিচারণের মাধ্যমে কেবল নিজের শৈশবকেই তুলে ধরেননি, বরং একটি সময়ের সরল ও আন্তরিক সামাজিক চিত্র এঁকেছেন। এই লেখা পাঠকদের সহজেই তাদের নিজ নিজ অতীতে ফিরিয়ে নিয়ে যায় এবং প্রমাণ করে যে, সবচেয়ে ব্যক্তিগত অনুভূতিও হয়ে উঠতে পারে সর্বজনীন।
সর্বোপরি, মমিনুল ইসলাম মোল্লার কাজ হলো সাংবাদিকতা, গবেষণা ও storytelling-এর এক অনন্য মেলবন্ধন। তিনি দেখিয়েছেন, একজন সাংবাদিকের কলম কতটা শক্তিশালী হতে পারে, যদি তার সঙ্গে যুক্ত হয় সততা, নিষ্ঠা এবং নিজের মাটি ও মানুষের প্রতি গভীর ভালোবাসা। তার কর্ম ও সাধনা নিছক পেশা নয়, বরং আগামী প্রজন্মের জন্য নিজ অঞ্চলের পরিচয়কে শব্দে গেঁথে রাখার এক মহৎ প্রচেষ্টা।
.jpg)
No comments