সাংবাদিক মমিন মোল্লার- অন্যরকম সেঞ্চুরি


 

সাংবাদিক মমিন মোল্লার- অন্যরকম সেঞ্চুরি

স্টাফ রিপোর্টার:
মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে বর্তমানে অনলাইন পত্রিকার সংখ্যা ১৫৩টি। এর মধ্যে ১০১টি পত্রিকার সাথে জড়িত রয়েছেন চারণ সাংবাদিক, প্রভাষক, ফিচার লেখক ও কলামিস্ট কুমিল্লার দেবিদ্বার (এলাহাবাদ)-এর কৃতি সন্তান মমিনুল ইসলাম মোল্লা।

তিনি মনে করেন, একই ধরণের একটি পত্রিকা সব শ্রেণির পাঠককে আকৃষ্ট করতে পারে না। ধর্ম, রাজনীতি ও আদর্শের কারণে পাঠকদের রুচিতে ভিন্নতা দেখা যায়। তাই এক পত্রিকার সাথে সীমাবদ্ধ না থেকে তিনি স্থানীয়, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন বাংলা অনলাইন পত্রিকায় নিয়মিত লিখছেন। লিখতে লিখতে একদিন খেয়াল করলেন—এখন পর্যন্ত ১০০টিরও বেশি পত্রিকায় তিনি লিখেছেন। সাংবাদিকতায় এটি যেন এক অন্যরকম “সেঞ্চুরি”! এই সেঞ্চুরিয়ান ফ্রিল্যান্সারের সাথে আমাদের অন্তরঙ্গ আলাপের দ্বিতীয় পর্ব আজ প্রকাশিত হলো—


কুমিল্লার বার্তা: রেডিওর সাথে আপনার যোগাযোগ আছে কি?

মমিন মোল্লা: যোগাযোগ বলতে কী বোঝাচ্ছেন? ডি-এক্সিং?

কুমিল্লার বার্তা: ডি-এক্সিং মানে কী?

মমিন মোল্লা: ডি-এক্সিং হচ্ছে অ্যাক্টিভ লিসেনার হওয়া। মনোযোগ দিয়ে রেডিও শোনা এবং রেডিও অফিসের সাথে অনুষ্ঠান নিয়ে মতবিনিময় করাই ডি-এক্সিং।

কুমিল্লার বার্তা: শুনেছি ডি-এক্সিং করলে অনেক কিছু পাওয়া যায়?

মমিন মোল্লা: দেশীয় রেডিওর সাথে যোগাযোগ রাখা গেলেও ডি-এক্সাররা সাধারণত ব্রিটেন, আমেরিকা, চীন, জাপান, রাশিয়া, ফিলিপাইন, ইরান ও সৌদি আরব থেকে প্রচারিত বাংলা অনুষ্ঠান শোনেন এবং সেগুলোর সাথে যোগাযোগ করেন। এসব দেশ থেকে কলম, ঘড়ি, চাবির রিং, ডিজিটাল রেডিও, স্মার্টফোন, আইপড ইত্যাদি উপহার বা পুরস্কার দেওয়া হয়। এমনকি চীন থেকে প্রচারিত জ্ঞান যাচাই প্রতিযোগিতায় প্রথম হলে ডি-এক্সারদের জন্য ১০ দিনের বিনামূল্যে চীন ভ্রমণের সুযোগও রয়েছে।

কুমিল্লার বার্তা: বাংলাদেশের কয়েকজন বিখ্যাত ডি-এক্সারের নাম বলুন।

মমিন মোল্লা: ঢাকার মঞ্জুরুল আলম রিপন, গোপালগঞ্জের ফয়সাল আহমদ শিপন, খুলনার ডা. বিকাশ রঞ্জন ঘোষ, কুষ্টিয়ার ওবায়দুল্লাহ মাস্টার, কুড়িগ্রামের কুদ্দুস মাস্টার, রাজশাহীর আশিক ইকবাল টোকন, চট্টগ্রামের দিদরুল আলম শিকদার এবং ঝিনাইদহের সাজ্জাদ হোসেন রিজু—তাদের নাম ডি-এক্সারদের কাছে বিশেষভাবে পরিচিত।

কুমিল্লার বার্তা: রেডিও ফ্যান ক্লাব মানে কী?

মমিন মোল্লা: বর্তমানে ফেসবুক যেমন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, তেমনি ফ্যানক্লাব হচ্ছে রেডিও শ্রোতাদের সংগঠন।

কুমিল্লার বার্তা: কোন কোন রেডিওর সাথে কাজ করেছেন?

মমিন মোল্লা: লিসেনার হিসেবে বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে প্রচারিত বাংলা রেডিওর সাথে যুক্ত রয়েছি। দেবিদ্বারের এলাহাবাদে অবস্থিত “ইন্টারন্যাশনাল রেডিও ফ্যান ক্লাব”-এর উপদেষ্টা মণ্ডলীর সভাপতি এবং “কনফিডেন্ট লিসেনার্স ক্লাব”-এর সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করছি। এসব সংগঠনের সাথে ডিডব্লিউ, ভোয়া, বিবিসি, এনএইচকে, চীন, ফিলিপাইনসহ ২০টি দেশের বাংলা বেতার সংযুক্ত।

কুমিল্লার বার্তা: রেডিওতে কথিকা লেখেন কি না?

মমিন মোল্লা: হ্যাঁ, নিয়মিত লিখি। ফিলিপাইন থেকে প্রচারিত রেডিও ভেরিতাস এশিয়ার সোমবারের সাপ্তাহিক অনুষ্ঠান “কিছুক্ষণে” আমি নিয়মিত লিখি। এ অনুষ্ঠান থেকে সম্মাননা ও সার্টিফিকেটও পেয়েছি। এছাড়া অনলাইন রেডিও উইনার-এ প্রচারিত “ধানের যৌক্তিক মূল্য নির্ধারণ প্রসঙ্গ” কথিকাটি শ্রোতাদের মাঝে বিশেষ জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।


সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত একটি বিশেষ ঘটনা

মমিন মোল্লা বলেন—
আমি এলাহাবাদ উচ্চ বিদ্যালয়ে পড়াকালীন সময় থেকেই সাংবাদিকতার সাথে যুক্ত। ১৯৮৯ সালে এসএসসি পাস করার পর কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছিলাম। লোকাল বাসে চড়ে যাচ্ছিলাম, তখন ভিড়ে চেপে যাচ্ছিলাম প্রায়। হঠাৎ একজন লোক আমাকে রক্ষা করলেন। আমার হাতে কোর্ট ফাইল দেখে তিনি জিজ্ঞেস করলেন কোথাও ভর্তি হতে যাচ্ছি কি না। আমি বললাম, কলেজে ভর্তি হতে যাচ্ছি। তিনি ভ্রূ কুঁচকে বললেন, “কিছু মনে করো না বাবা, আমি ভেবেছিলাম তুমি দেবিদ্বার রেয়াজ উদ্দিন পাইলট স্কুলে ভর্তি হতে যাচ্ছ।”

আসলে আমি এতটাই ছোট সাইজের ছিলাম যে কেউ বিশ্বাসই করত না আমি এসএসসি পাস করেছি। আব্বা প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ছিলেন। তার সাথে স্কুলে যাওয়া আসার সুবাদে প্রধান শিক্ষক একদিন বললেন, “ওকে স্কুলে ভর্তি করে দেন না কেন?” সেভাবেই অল্প বয়সে স্কুলে ভর্তি হয়ে গেলাম।

যাক, সেই গল্প বাদ দিয়ে বলি সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা। আমি দেবিদ্বার এসএ সরকারি কলেজে ভর্তি হওয়ার পর নতুন ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে থানায় যাই। মনে মনে ভয় ছিল, জানি না তিনি কেমন ব্যবহার করবেন। তখনো কোনো সিনিয়র সাংবাদিককে চিনতাম না যে সাথে যেতে পারতাম।

যাই হোক, থানায় গিয়ে বললাম—আমি সাপ্তাহিক “পেন্সিল” পত্রিকার সাংবাদিক, ওসি সাহেবের সাথে দেখা করতে এসেছি। তিনি ভদ্র ব্যবহার করলেন, কিছু প্রশ্নও করলেন। হঠাৎ করেই থানার সবাইকে তার কক্ষে ডাকলেন। পরিবেশটা একেবারে গম্ভীর হয়ে গেল। সবাই চুপ। তখন ওসি সাহেব নীরবতা ভেঙে বললেন—

“আপনারা কি এই ছেলেটার বয়সে নিয়মিত পত্রিকা পড়তেন? না। কিন্তু এ ছেলে এত অল্প বয়সেই পত্রিকায় কাজ করছে। দেশে এরকম ছেলে দরকার।”

তিনি যোগ করলেন— “আজ সে পেন্সিল পত্রিকা নিয়ে এসেছে, একদিন সে কলম নিয়ে আসবে। আপনারা তাকে সহযোগিতা করবেন।”

এভাবেই আমার সাংবাদিকতার যাত্রা শুরু হয়, আর পেছনে তাকাতে হয়নি।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.