অলসতার পরিণতি ও ইসলামী শিক্ষা

 অলসতার পরিণতি ও ইসলামী শিক্ষা


মমিনুল ইসলাম মোল্লা


ইসলামে অলসতা বা গাফেলতি এমন এক মানসিক ও আত্মিক ব্যাধি, যা মানুষের ইবাদত, কর্মজীবন এবং নৈতিক দায়িত্ব পালনে বড় বাধা সৃষ্টি করে। তাবুক যুদ্ধের ঘটনা এ বিষয়ে একটি গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা দেয়। সাহাবী কা‘ব ইবনে মালিক ছিলেন ধনী ও শক্তিশালী; তার হাতে যুদ্ধের প্রস্তুতির সব সুযোগ-সুবিধা থাকা সত্ত্বেও তিনি অলসতার কারণে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করতে পারেননি। তিনি বারবার ভাবতেন যে সময় হলে যাবেন, কিন্তু বাস্তবে দেরি করতে করতে আর যেতে পারেননি। ফলে আল্লাহর পক্ষ থেকে কঠোর সামাজিক বয়কটের সম্মুখীন হতে হয়েছিল তাকে।


কোরআনে অলসতার জন্য দুইটি আরবি শব্দ ব্যবহৃত হয়েছে—“كَسَل” (কাসল) এবং “غفلة” (গাফলা)। “كَسَل” অর্থ অলসতা, কর্মবিমুখতা; আর “غفلة” মানে গাফেলতি বা অমনোযোগিতা। আল্লাহ তায়ালা সূরা আ‘রাফে বলেছেন, “আর তুমি গাফেলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না” (৭:২০৫)। আবার সূরা নিসার ৭১-৭২ আয়াতে মুনাফিকদের অলসতা ও দেরি করার জন্য কঠোর সমালোচনা করা হয়েছে।


রাসূলুল্লাহ (সা.) অলসতা থেকে বাঁচার জন্য নিয়মিত দোয়া করতেন। তিনি বলেছেন:

“اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنَ الْهَمِّ وَالْحَزَنِ، وَالْعَجْزِ وَالْكَسَلِ…”

অর্থাৎ, “হে আল্লাহ! আমি দুশ্চিন্তা, দুঃখ, অক্ষমতা এবং অলসতা থেকে আপনার কাছে আশ্রয় চাই।” (বুখারি)


হাদিসে এসেছে, যখন মানুষ ঘুমিয়ে পড়ে তখন শয়তান তার ঘাড়ে তিনটি গিঁট দেয় যাতে সে ইবাদতে অলস হয়। কিন্তু যদি সে জাগ্রত হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে এবং নামাজ পড়ে, তবে গিঁট খুলে যায় এবং তার মনে উদ্যম আসে।


অন্যদিকে বিজ্ঞান অলসতাকে মানসিক চাপ, হতাশা, উদ্দেশ্যহীনতা ও পরিবেশগত কারণে সৃষ্ট একটি মানসিক-শারীরিক অবস্থা বলে। যদিও এটি মস্তিষ্কের শক্তি সংরক্ষণের কৌশল হিসেবে দেখা হয়, তবুও দীর্ঘমেয়াদে এটি ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।


সুতরাং, ইসলামে অলসতা শুধু মানসিক সমস্যা নয়; এটি আত্মিক জীবনেরও বড় প্রতিবন্ধক। মুসলিমদের উচিত নিয়মিত ইবাদত, পরিশ্রম এবং আল্লাহর সাহায্য কামনার মাধ্যমে অলসতা থেকে মুক্তির চেষ্টা করা, যাতে দুনিয়া ও আখিরাতে সফল হওয়া যায়।




No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.