কুমিল্লার মুরাদনগর: সেতুহীন সড়কে দুর্ভোগ
কুমিল্লার মুরাদনগর: সেতুহীন সড়কে দুর্ভোগ
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও জনদুর্ভোগ বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।
কুমিল্লার মুরাদনগর উপজেলার শ্রীকাইল-গাজীরহাট সড়কের সাহেদাগোপ এলাকায় সেতু না থাকায় নৌকায় পারাপার হয় তিন ইউনিয়নের প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। সেতুর অভাবে অ্যাম্বুলেন্স যেতে পারে না ওই সব এলাকায়। ফলে মুমূর্ষু রোগী ও গর্ভবতী নারীরা পড়ছেন চরম বিপদে। চার দশকের বেশি সময় ধরে গুরুত্বপূর্ণ এ সড়কে সেতু নির্মাণ না হওয়ায় স্থানীয়দের মাঝে ক্ষোভ ও অসন্তোষ বিরাজ করছে।
প্রকৌশলী অফিস সূত্রে জানা যায়, জেএসপি-৩ প্রকল্প থেকে ২০২০ সালে সড়কের দুই কিলোমিটার কাজ পায় ঠিকাদার কামাল উদ্দিন চেয়ারম্যান। ওই কাজের সাথেই একটি বক্সকালভার্টের প্যাকেজ ছিল। মেকাডামের কাজ শেষ হওয়ার পর ঠিকাদারের মৃত্যুতে সড়কের বাকি কাজ আটকে যায়। একপর্যায়ে জেএসপি-৩ প্রকল্পটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সেতুর কাজটি আর হয়নি।
স্থানীয়রা জানায়, শ্রীকাইল থেকে গাজীরহাট প্রায় ছয় কিলোমিটার সড়কের সবচেয়ে বড় দুর্ভোগ সাহেদাগোপের ভাঙা অংশ। এদিক দিয়ে বিলের পানি নেমে প্রায় ৪০ ফুট রাস্তা ভেঙে গেছে। দীর্ঘ চার দশক পার হলেও এখানে কোনো সেতু করা হয়নি। সড়ক ভাঙার কারণে বর্ষাকালে নৌকাই যাতায়াতের একমাত্র ভরসা। শুষ্ক মৌসুমে থাকে হাঁটু পানি। তখন পুরুষরা লুঙ্গি উঁচিয়ে ভাঙা পার হলেও নারীরা পড়েন বেকায়দায়।
সড়কের ভাঙা অংশে সেতু নির্মাণ হলে দূর হবে ওই এলাকার ৫০ হাজার মানুষের দুর্ভোগ। পাল্টে যাবে ব্যবসা-বাণিজ্য, কৃষি, শিক্ষা ও চিকিৎসা সেবার সামগ্রিক অবস্থা।
শাহেদাগোপ গ্রামের ইসলাম মেম্বার বলেন, “এই পথ দিয়ে বাঞ্ছারামপুর হয়ে শত শত মানুষ ঢাকায় যাতায়াত করেন। শুধু সেতুর অভাবে পরিবহন বিড়ম্বনায় পড়তে হয়। কেউ অসুস্থ হলে হাসপাতালে নিতে হলে ঘুরে যেতে হয় প্রায় ৭-৮ কিলোমিটার।”
ভূতাইল গ্রামের সমাজসেবক সুজন মুন্সি বলেন, “এই পথ দিয়ে শ্রীকাইল সরকারি কলেজ, সোনাকান্দা দারুল হুদা বহুমুখী কামিল মাদ্রাসা, বলিঘর হুজুরী শাহ উচ্চ বিদ্যালয় ও জাঙ্গাল উচ্চ বিদ্যালয়সহ বহু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা চলাচল করে। একটি সেতুর অভাবে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনায় বাধা সৃষ্টি হচ্ছে।”
স্থানীয় কৃষক আব্দুল করিম, মতিন ও সুজন মিয়া বলেন, “আমরা প্রচুর ফসল উৎপাদন করি। কিন্তু খেয়াঘাট দিয়ে মালামাল পার করতে গিয়ে সময়, শ্রম ও অর্থ সবই ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সেতুটি হলে জীবন অনেক সহজ হতো।”
খেয়া ঘাটের মাঝি মনির হোসেন বলেন, “এলাকাবাসীর প্রয়োজনে আমাকে দিনরাত খেয়া চালাতে হয়। যাত্রীরা যা দেন তাই নেই। দূর থেকে হঠাৎ কেউ গাড়ি বা বাইক নিয়ে আসলে বিপদে পড়েন। গন্তব্যে পৌঁছাতে তাঁদের অনেকটা পথ ঘুরতে হয়।”
বলীঘর গ্রামের সাবেক মেম্বার রফিকুল ইসলাম বলেন, “প্রায় ৪০ বছর যাবত এই জায়গা দিয়ে দুই ইউনিয়নের চকের পানি নামে। সারা বছরই এখানে পানি থাকে। ফলে যানবাহন চলাচলে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হয়। জনস্বার্থে সেতুটি খুব জরুরি।”
মুরাদনগর উপজেলা প্রকৌশলী কাজী ফয়সাল বারী বলেন, “আমি আসার পর খোঁজ নিয়ে জেনেছি ঠিকাদারের মৃত্যু ও পরবর্তীতে জেএসপি-৩ প্রকল্প বন্ধ হওয়ায় সেতুটি করা হয়নি। সিআইডিপি প্রকল্পে এই সড়ক ও সেতুর প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। আশা করি শীঘ্রই কাজটির অনুমোদন হয়ে আসবে।” মমিনুল ইসলাম মোল্লা
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও জনদুর্ভোগ বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা
No comments