মুরাদনগরের নদীগুলো বিলীন হওয়ার পথে//
মুরাদনগরের নদীগুলো বিলীন হওয়ার পথে//
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক ও কলামিস্ট, কুমিল্লা।
মুরাদনগর উপজেলার প্রাণের নদী গোমতীসহ বেশ কয়েকটি নদী ও খাল দখল ও ভরাটের ফলে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। একসময় এসব নদী ছিল কৃষি, মৎস্য ও নৌ-যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম। আজ অবহেলা, খননের অভাব এবং অনিয়ন্ত্রিত দখল নদীগুলোর অস্তিত্ব হুমকির মুখে ফেলেছে।
গোমতী নদী:
বাংলাদেশ-ভারতের আন্তঃসীমান্ত নদী গোমতী কুমিল্লার বুক চিরে প্রবাহিত হয়ে মুরাদনগরে প্রবেশ করেছে। দৈর্ঘ্য ১৩০ কিলোমিটার, গড় প্রস্থ ৬৫ মিটার। একসময় এ নদীতে ছিল প্রবল স্রোত ও নৌ-চলাচল, এখন শুষ্ক মৌসুমে প্রায় মৃতপ্রায়।
আচনি নদী:
উপজেলার উত্তর-পূর্বে পান্ডুঘর থেকে দক্ষিণ-পশ্চিমে প্রবাহিত হয়ে তিতাসে মিশেছে। কৃষি ও নৌ-যাতায়াতে এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল।
বুড়ি নদী:
দৈর্ঘ্য ২৬ কিলোমিটার, প্রস্থ ৫৪ মিটার। একসময় জাহাজ ও বড় নৌকা চলতো। বর্তমানে অধিকাংশ অংশ ভরাট হয়ে গেছে। খাল, ডোবা ও কৃষিজমিতে রূপ নিয়েছে। উৎস সালদা নদী ভারতের ত্রিপুরা থেকে এসেছে।
মরিচা নদী:
গোমতী থেকে উৎপন্ন হয়ে মেঘনায় পতিত হয়েছে। আঞ্চলিক ভাষায় একে “গাং” বলা হয়।
তিতাস নদী:
আখাউড়া থেকে উৎপন্ন হয়ে ভৈরব-আশুগঞ্জ সীমান্ত ঘেঁষে মেঘনায় মিশেছে। একাংশে আচনি ও নলিয়া নামে পরিচিত, পরে তিতাস নাম ধারণ করেছে।
খির নদী:
ইতিহাসে দেখা যায়, প্রবাহপথ একাধিকবার পরিবর্তিত হয়েছে। শেষপর্যন্ত বিভিন্ন খাল হয়ে মেঘনায় মিলেছে।
কালাডুমুর নদী:
গোমতী থেকে উৎস। একসময় কৃষি ও ব্যবসার জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। নৌকা চলাচল ও মাঝিদের গান ছিল এর পরিচয়।
অদের খাল ও অন্যান্য খাল:
অদের খাল বুড়ি নদী থেকে উৎপন্ন হয়ে তিতাসে মিশেছে। পাশাপাশি রাজা চাপিতলা, নবীনগর খাল, বাইরা খাল, জিয়া খাল, আন্দিকুট খালসহ বহু খাল ছিল নৌযাতায়াতের পথ। বর্ষাকালে এগুলো প্রাণবন্ত থাকলেও এখন অধিকাংশ ভরাট।
সংকট ও করণীয়:
দীর্ঘদিন খনন না হওয়ায় নদী-খালগুলোর প্রবাহ বন্ধ। নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে মাছের প্রাকৃতিক উৎপাদন কমে গেছে। গ্রীষ্মকালে পানি শূন্য হয়ে যায়, পুকুরেও পানির অভাব দেখা দেয়। গোমতীসহ সব নদীর গতিপথ ফিরিয়ে আনার জন্য জরুরি ভিত্তিতে ড্রেজিং প্রয়োজন। গোমতীর উত্তর-দক্ষিণ প্রান্তে পরিকল্পিত ইরিগেশন প্রকল্প বাস্তবায়ন মুরাদনগরের কৃষি ও পরিবেশ রক্ষায় অপরিহার্য।
লেখক:
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক , কলামিস্ট ও পরিবেশ বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।।
No comments