​হোমনা-মুরাদনগর সড়ক: দুর্ভোগের ১৪ কি.মি.

 

​হোমনা-মুরাদনগর সড়ক: দুর্ভোগের ১৪ কি.মি.
​মমিনুল ইসলাম মোল্লা
সাংবাদিক, কলামিস্ট ও জনদুর্ভোগ বিষয়ক লেখক, কুমিল্লা।
​কুমিল্লা থেকে ফিরে:
​কুমিল্লা জেলার হোমনা ও মুরাদনগর উপজেলার মধ্য দিয়ে চলে গেছে ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ একটি গুরুত্বপূর্ণ সড়ক। কিন্তু বর্তমানে এই সড়কটি শুধু দুটি উপজেলার সংযোগস্থল নয়, এটি হয়ে উঠেছে সীমাহীন জনদুর্ভোগের এক প্রতীক। দীর্ঘকাল ধরে সংস্কারের অভাবে খানা-খন্দ আর ছোট-বড় গর্তে ভরে গেছে সড়কটির প্রতিটি ইঞ্চি, যা প্রতিদিন লাখো মানুষের যাতায়াতকে করে তুলছে এক দুঃস্বপ্নের অভিজ্ঞতা।
​সড়কটি শুরু হয়েছে হোমনার দুলালপুর থেকে এবং শেষ হয়েছে মুরাদনগরের জাহাপুর এলাকায়। এই পথ দিয়ে শুধু হোমনা ও মুরাদনগর নয়, পার্শ্ববর্তী আড়াইহাজার, নরসিংদী, বাঞ্ছারামপুর এবং আশুগঞ্জের মানুষও নিয়মিত যাতায়াত করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের স্কুল-কলেজে যাওয়া, ব্যবসায়ীদের পণ্য পরিবহন, মুমূর্ষু রোগীকে হাসপাতালে নেওয়া—সবকিছুতেই এই সড়কের ওপর নির্ভরশীলতা অপরিসীম। অথচ বহু বছর ধরে এই সড়কটির দিকে কর্তৃপক্ষের নজর নেই বললেই চলে।
​স্থানীয়রা জানান, ভাঙাচোরা সড়কের কারণে প্রায়ই ছোট-বড় দুর্ঘটনা ঘটছে। যানবাহনের গতি কমে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে সময় লাগছে দ্বিগুণেরও বেশি। বিশেষ করে বর্ষাকালে সড়কের গর্তগুলো পানিতে ভরে যায়, যা চালক ও যাত্রীদের জন্য আরও বড় বিপদ ডেকে আনে। যানবাহন উল্টে যাওয়ার ঘটনাও ঘটে প্রায়শই। এলাকার একজন শিক্ষক বলেন, "এই রাস্তা দিয়ে যেতে গেলে মনে হয় যেন আমরা কোনো যুদ্ধবিধ্বস্ত এলাকায় যাচ্ছি। সময়মতো পৌঁছানো তো দূরের কথা, নিরাপদে পৌঁছানোই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।"
​কৃষক ও ব্যবসায়ীদেরও একই দুর্দশা। তাদের উৎপাদিত পণ্য সময়মতো বাজারে নিতে না পারায় প্রায়ই ক্ষতির শিকার হতে হচ্ছে। স্থানীয় এক ব্যবসায়ী হতাশা প্রকাশ করে বলেন, "এই রাস্তার কারণে আমাদের ব্যবসায়ে বড় ক্ষতি হচ্ছে। মালপত্র পৌঁছাতে দেরি হওয়ায় অনেক ক্রেতা হারাচ্ছি আমরা।"
​এলাকাবাসীর অভিযোগ, বারবার আবেদন জানানো সত্ত্বেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কোনো কার্যকর পদক্ষেপ নিচ্ছে না। তাদের দীর্ঘদিনের দাবি, দ্রুত সড়কটি মেরামত করে চলাচলের উপযোগী করা হোক।
​এই বিষয়ে সড়ক ও জনপথ বিভাগের কুমিল্লার নির্বাহী প্রকৌশলী মোহাম্মদ আহাদ উল্লাহ আশার বাণী শুনিয়েছেন। তিনি বলেন, "এই সড়কটি মেরামতের জন্য টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছে। আমরা আশা করছি, দ্রুতই কাজ শুরু হবে এবং মানুষের দুর্ভোগের অবসান ঘটবে।"
​তবে স্থানীয় বাসিন্দারা এই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়নের অপেক্ষায় রয়েছেন। কারণ, সড়কের এই বেহাল দশা তাদের জীবনযাত্রাকে এতটাই দুর্বিষহ করে তুলেছে যে, শুধু প্রতিশ্রুতির উপর ভরসা করে থাকা তাদের জন্য যথেষ্ট নয়। তারা চান, দ্রুত সড়কের সংস্কার কাজ শুরু হোক এবং ১৪ কিলোমিটার দীর্ঘ এই দুর্ভোগের অবসান ঘটুক।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.