মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামস্টি ও সাহিত্যিক,কুমিল্লা ।।
প্রচন্ড আগ্রহ , মেধা  ও পরিশ্রমের মাধ্যমে একজন নারী যে কোন পেশায় সফল হতে পারেন। এটি প্রমাণ করেছেন কুমিল্লার মুরাদনগরের বাখরনগরের রাজিয়া বেগম। বাংলার স্বাধীন সুলতান ইলতুৎমিশের কন্যা সুলতানা রাজিয়া একজন নারী হয়েও ক্ষমতায় আরোহণ করে তৎকালীন সময়ে আলোড়ণ সৃষ্টি করেছিলেন। আর নার্সারিতে জোয়ার তুলেছেন কুমিল্লার রাজিয়া। তিনি এখন নার্সারি ব্যবসার মডেল। তার কাছে বহু দূর থেকে লোকজন আসেন পরামর্শ  নেয়ার জন্য । কিভাবে  গাছের চারা উৎপাদন করলে ভাল লাভ পাওয়া যাবে তারা জানতে চান। রাজিয়া কাউকে বিমুখ করেন না।  সাধ্য মতো সহযোগিতা করেন। একটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা (গ্রামীণ ব্যাংক,  নবীপুর , মুরাদনগর শাখা ) থেকে ৫০,০০০ হাজার টাকা নিয়ে তিনি নার্সারিতে খাটিয়েছেন। বর্তমানে চারা বিক্রি করেই তিনি প্রতি সপ্তাহের কিস্তি পরিশোধ করছেন।
রাজিয়া তার নার্সারির নাম দিয়েছেন বনফুল নার্সারি। চারার গুণগত মান ভাল হওয়ায় চাহিদা বেশি। এ নার্সারির সুনাম মুরাদনগর ছাড়িয়ে পাশ্ববর্তী উপজেলা দেবিদ্বার , হোমনা  নবীনগরে ছড়িয়ে পড়েছে। প্রতিদিন সকাল -বিকাল পাইকার ও খুচরা ক্রেতারা এ নার্সারিতে ভীর জমায়। কথা হয় পাইকারি বিক্রেতা আঃ কাদেরের সাথে-তিনি বলেন ,  আমি প্রায় ১০ বছর ধওে এখান থেকে চারা নিয়ে বিক্রি করি। এ পর্যন্ত কোন ক্রেতা চারা নিয়ে কোন অভিযোগ করেননি। তাই এখান থেকে নিযমিত চারা নিয়ে নিশ্চিন্তে বিক্রি করছি। চারা তৈরি , পরিচর্যা ও বিক্রির কাজে সারা বছর ২ জন শ্রমিক নিয়োজিত রয়েছেন। গোলাম মোস্তফা ও মোর্শেদ মিয়াকে  রাজিয়া প্রতি মাসে ৩ হাজার টাকা বেতন দেন। এছাড়া রাজিয়াকে তার কাজে সহযোগিতা করেন তার স্বামী আঃ মালেক । তিনি ছোটকাল থেকেই কৃষি কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। তিনি এখন ও ৫ বিঘা জমিতে চাষাবাদ করেন। কৃষিকাজের  পাশাপাশি রাজিয়ার কাজে সহযোগিতা করেন। আব্দুল মালেক বলেন তার   ভায়রা  ভাই ফরেস্টে চাকুরি করতেন । তার পরামর্শে ১৯৭৩ সালে মাত্র ২৮ টাকা দিয়ে ঢাকার চক মার্কেট থেকে মেহগনি ,  জলপাই ,  আর রেন্ট্রি গাছের বীজ কিনে আনেন। সেই থেকে শুরু আর পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ধীরে ধীরে নার্সারির পরিধি বাড়িয়েছেন। ১৯৭৭ সালে ৫০০০ চারা উৎপাদন করেন। এক বছর পর তা বৃদ্ধি করে ১০০০০ এ উন্নিত করেন। বর্তমানে ১১০ শতক জমিতে লক্ষাধিক গাছের চার রয়েছে বলে তিনি জানান। এখন তার নার্সারিতে বারমাসি আম, আ¤্রপালি , লংড়া , ফজলী , হিমসাগর , সফেদা , লিচু , কাঁঠাল , জলপাই , আঙ্গুর , কামরাঙ্গা , ডালিম , কাগজী লেবু , মেহগনি , রেন্ট্রি , শিলকড়ই , একাশি বেলজিয়াম , অজৃুন , নিম , হরতকি , বয়রাসহ মোট ৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে।
তিনি জানান, নার্সারি ব্যবসায় ২৫ % লাভ হয়। তবে এপর্যন্ত ২ বার তিনি লোকসানের সম্মুখীন হয়েছেন। ১৯৮৮ সালের বন্যায় নষ্ট হয় ৮ লাখ টাকার চারা। ১৯৯৮ সালের বন্যায় ৫ লাখ টাকার চারা। তবুও তিনি হাল ছাড়েননি। জনগণের ভালবাসা নিয়ে এগিয়ে গেছেন। বিটিভির ” মাটি ও মানুষ ” প্রোগ্রামে তার নার্সারি ব্যবসার সাফল্যচিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। তিনি বলেন বর্তমানে অনেক নার্সারি কম দামে নকল বীজের চারা বিক্রি করছে। বন বিভাগ প্রতিটি নার্সারিকে নিবন্ধনের আওতায় এনে প্রতারক নার্সারি মালিকদের শাস্তির ব্যবস্থা করলে নার্সারি মালিকদের পাশাপাশি জনসাধারণ ও উপকৃত হবে। রাজিয়া বেগমের নেতৃত্বে ২০ জন মিলে একটি গ্রামীণ সমিতিি গঠিত হয়েছে। ঋণ নেয়ার আগে সমিতির স্যারেরা সবাইকে জিজ্ঞেস করেন –ঋণ নিয়ে কী করেেবন? কেউ রিক্সা , কেউ ব্যাবসা , কেউ কৃষি , আবার কেউবা সেলাই মেশিন কেনার কথা বরেন। রাজিয়ার কাছে কেউ পরামর্শ চাইলে তিনি সবাইকে নার্সারি করার কথা বলেন। তিনি মনে করেন এতে পরিবেশ বাঁচবে , দেশ ও বাচবে। এছাড়া নিজেও উপকৃত হবেন , দেশের মানুষও ফলমূল খেয়ে শান্তিতে থাকবে। রাজিয়ার পরামর্শে কাউছারের স্ত্রী ৫ শতক , মতিন মিয়া ১৫ শতক  ও অরুণা ৩০ শতক জমিতে নার্সারি করেছেন। রাজিয়া এখন মুরাদনগরের নার্সারি ব্যবসায় আলোর দিশারী হিসেবে কাজ করছেন।