আশার আলো ঃ প্রসূতি মায়ের খাদ্য ঘাটতি রোধে সচেতনতা বাড়ছে
মমিনুল ইসলাম মোল্লা

বাচ্চা প্রসবের পর স্বাভাবিক ভাবেই মায়ের স্বাস্থহানী ঘটে। মাকে পূর্বাবস্থায় ফিরে যেতে হলে অতিরিক্ত  ক্যালরী গ্রহণ করতে হয়। যেসব মা নিয়মিত ভাবে বাচ্চাকে বুকের দুধ দেন তারা অতিরিক্ত ক্যান্সারী গ্রহন করতে পারেন। পরিবারের ও তাদের মর্যাদা বাড়ে। কেননা ৮০০ টাকা দিয়ে একটি দুধের কৌটা কিনে শিশুকে না খাইয়ে এই ৮০০ টাকা মায়ের পেছনে খরচ করলে যদি সন্তানের দুধের চাহিদা মেটে তাহলে শিশু- মা পরিবার সবাই খুশী। তাই ব্রেষ্ট ফিডিং এর গুরুত্ব অত্যধিক। এসময় তাকে প্রতিদিন খেতে হবেঃ প্রোটিন ৬৫ গ্রাম , কার্বোহাইট্রেট ৫৫০ গ্রাম, তেল বা চর্বি ৫০ গ্রাম, লোহা ০.০৩ গ্রাম, ভিটামিন এ ১১৫০ মাঃ গ্রামঃ ভিটামিন ডি ১০ মাঃ গ্রাঃ ,ভিটামিন বি-২ ২.৫ মিঃ গ্রাম , ফলিক অ্যাসিড ৩০০ মাঃ গ্রাম,  ভিটামিন সি ৫০ মিঃ গ্রাম সহ মোট ক্যালরী প্রয়োজন ২৬০০। একথা সত্য যে অধিকাংশ প্রসূতি উপযুক্ত খাদ্য পান না কোন কোন পরিবার দারিদ্রের কারণে কোন কোন পরিবার অজ্ঞতার কারণে আবার কেউ কেউ বঞ্চিত হচ্ছেন কুসংস্করজনিত কারণে। গর্ভবতী মায়ের মতো প্রসূতি মাকেও বেশি করে পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে। এছাড়া শিশুর জন্মের পরই তার খাবার অর্থাৎ মায়ের দুধ তৈরি হওয়ার জন্য মায়ের অতিরিক্ত পুষ্টির প্রয়োজন হয়। জন্মের পর থেকে পাঁচ মাস বয়স পর্যন্ত শিশুকে শুধু বুকের দুধ খেতে দেওয়া ছাড়া কোনো বিকল্প নেই। ।সাধারণত প্রসূতি মায়ের বুকে দৈনিক ২০-৩০ আউন্স দুধ তৈরি হয়। উলে­খ্য, ২ গ্রাম খাদ্য প্রোটিন থেকে ১ গ্রাম দুধের প্রোটিন তৈরি হয়। দেহে দুধের প্রোটিন তৈরী করার জন্যে প্রসূতি মায়ের প্রতিদিন ১০০ গ্রাম প্রোটিনের মধ্যে কমপক্ষে অর্ধেক বা দুই তৃতীয়াংশ প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাবার খাওয়া উচিত। উল্লেখ্য, এই প্রোটিনের মাধ্যমেই শিশুর শরীর বৃদ্ধি শিশুকালেই সবেচেয়ে বেশি হয়। প্রাণিজ প্রোটিন জাতীয় খাবারের মধ্যে মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, ডাল ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য ।

গর্ভাবস্থায় প্রসূতির ওজন ১০/১২ কেজি বৃদ্ধি পায়। এ অবস্থা ধীরে ধীরে আগের অবস্থায় ফিরে আসে। নারীর ফুলে ফেঁপে উঠা জরায়ু ধীরে ধীরে  আগের অবস্থায় ফিরে আসে। প্রসব পরবর্তী শারীরিক অবস্থায় এ পরিবর্তন ঘটতে কামপক্ষে ৩ মাস সময় লাগে । শিশুকে নিয়মিত দুধ খাওয়ালে মায়ের হরমোনাল ও মানসিক ও শারিরীক পরিবর্তনের জন্য ও এটি সহায়ক। নরমাল ডেলিভারী হলে ৩ মাস, সিজারিয়ান হলে ৬ মাস কোন ব্যায়াম বা ভারী কাজ করা যায় না। বর্তমানে বাংলাদেশে শিশুকে দুধ খাওয়ানোর ব্যাপারে সবাই সচেতন। গ্রাম পর্যায়ে সচেতনতা বাড়লেও অনেকেই মায়ের দুধের পাশাপাশি কৌটার দুধ খাওয়ান। তাদের ধারণা বিকল্প দুধ না খাওয়ালে সন্তানের পুষ্টির ঘাটতি পুরণ হবে না। এ ব্যাপারে ডাক্তারগন বিশেষ ভূমিকা পালন করতে পারেন। কিন্তু দুঃখজনক হলোও সত্য ডিবির দুধ বিক্রিয়কারী প্রতিষ্ঠান সমূহ ডাক্তারদের এমনভাবে প্রভাবিত করছেন তারা বিনা প্রয়োজনে ও কৌটার দুধ প্রেস্ত্রাইভ করে থাকেন । শিশুর দুধ নিশ্চিত করতে হলে মায়ের স্বাস্থ্যের দিকে অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে। 

আমাদের দেশে বিশেষ করে গ্রামাঞ্চলে গর্ভবর্তী মা ও প্রসূতিদের খাবারের ব্যাপারে কিছু কুসংস্কার চালু রয়েছে। ফলে তারা পুষ্টি থেকে বঞ্চিত হন। গ্রামের মায়েরা জানিয়েছেন তাদেরকে সে সময় ডিম, দুধ, কলা শাক সব্জি চাল কুমড়া, বাইন মাছ খেতে দেয়া হয়নি;  শুধু তাই নয় সন্তান বড় হয়ে গেলে প্রসবে সমস্যা হবে। তাই বেশিরি ভাগ সময় কাজ কর্ম ও হাঁটা চলার মধ্যে থাকতে হবে। শক্ত করে কাপড়ের গিট দিতে হবে। নইলে বাচ্চা উপরের দিকে উঠে যেতে পারে। প্রসবের সময় মাথা উপরের দিকে  থাকলে প্রসূতির মৃত্যুও হতে পারে। এভাবে   কুসংস্কারে আবদ্ধ  থাকায় মাও শিশু উভয়ই কষ্টের শিকার হয়। শিশুর স্বাস্থ্য নিশ্চিত করার আগে মায়ের স্বাস্থ্য নিশ্চিত করতে হবে। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় প্রতি বছর ১২০০০ মা প্রসব  জনিত জটিলতায় মারা যান। বর্তমানে মাতৃ মৃত্যুর হার প্রতি লাখে  (জীবিত জন্মে) ২৯০ জন নব জাতকের মৃত্যুর হার প্রতি  হাজারে ৩৭ জন সহ¯্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা মিলেনিয়াম ডেভলাপমেন্ট গোল অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে মাতৃ মৃত্যুর হার ৪ ভাগের ৩ ভাগ এবং নবজাতকের মৃত্যু হার ৩ ভাগের ২ ভাগ কমিয়ে আনতে হবে। এখনও ৮৫% প্রসব  অদক্ষ দাইয়ের হাতে হয় ৮০ ভাগ মেয়ের বিয়ে হয় ১৮ বছরের কম বয়সে। ২৩% নারী ২০ বছর বয়সের আগেই গর্ভধারণ করে। ১৪ শতাংশ নারী গর্ভাবস্থায় স্বামী ও শ্বশুর পক্ষের আত্মীয়ের হাতে নির্মম শারীরিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। এতে মা ও শিশুর ঝুঁকি বাড়ছে। আরেকটি গবেষনায় দেখা গেছে ২০০৯ সালে প্রতি ১ হাজার শিশু জন্মের বিপরীতে মৃত্যু ৫৭ থেকে  কমে ৩০ এ নেমেছে। অর্থাৎ প্রতি হাজার শিশু মৃত্যুও হার ২৭  । ২০১৫ এর মধ্যে তা ২১ এ নামিয়ে আনা হবে।
লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, ক্যাম্পেনার সিডিএলজি এবং সহকারী সম্পাদক , (দৃষ্টান্ত ডট কম), কুমিল্লা,