স্মৃতিতে-মমিন মোল্লার সাংবাদিকতার সাতকাহন

 

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

স্মৃতিতে-মমিন মোল্লার সাংবাদিকতার সাতকাহন

  সাংবাদিক , কলামিস্ট ও কবি মমিনুল ইসলাম মোল্লা।।  ভাই মনির মোল্লার নামে ডাক যোগে পত্রিকা আসতো। এলাহাবাদ গ্রামেই ছিল পোস্ট অফিস। যেদিন পত্রিকা আসবে সেদিন উন্মুখ হয়ে থাকতাম। পত্রিকা বিলি করবে সন্তোষ পিয়ন । কিন্ত পিয়নের হাতে আসার আগেই পোস্ট মাস্টার খোকা মিঞার বাড়ি থেকেই তা নিয়ে আসতাম। নতুন পত্রিকাটি কতগুলো ওয়াস্টেজ পত্রিকা দিয়ে গোল করে প্যাচানো থাকতো। নতুন পত্রিকার গন্ধই যেন আলাদা। ভাজ করা প্যাকেটের প্রতিটি ভাজ প্যার প্যার আওয়াজ করে খুলতাম আর ভাবতাম ভাইয়ের পাঠানো  দেবিদ্ধারের নতুন নতুন সংবাদ পাব। সাথে থাকবে দেশ –বিদেশের সুখ-দ:খের খবর।

    পত্রিকা পড়তে পড়তেই পত্রিকার প্রতি আকর্ষণ। সেই থেকে আমিও নিউজ লেখার স্বপ্ন দেখতে থাকি। ভাই বল্ল, এখন নয় সামনে তোর পরীক্ষা । পরীক্ষা মানে এসএসসি পরীক্ষা।বড় ভাইয়ের কথামত অপেক্ষা করলাম। 89 সালের মার্চ মাসে পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন পত্রিকায় ডাকযোগে আবেদন করতে থাকলাম। তখন এলাহাবাদ বাজারে একদিন পর দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যেত। প্রায় প্রতিটি সেলুনে পত্রিকা রাখতো। ইত্তেফাক পত্রিকায় খুলনা থেকে প্রকাশিত ” সাপ্তাহিক গ্রামাঞ্চ “ পত্রিকায় আবেদন পাঠালে আমাকে 6 মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে নিইজ পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। সেই থেকে শুরু। শুরুতে শুধুমাত্র চলতি সংবাদ লিখলেও পরবর্তীতে ফিচার ও বিষয়ভিত্তিক কলাম লেখায় মনোনিবেশ করি। আমার উল্লেখযোগ্য আর্টিকেলের মধ্যে ” সততার সাথে ব্যবসা ও মুনাফা লাভ “ অন্যতম। এ লিখাটি অনলাইনে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় । লিখাটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় “ 45 লাখ পাঠকের ভালবাসায় মমিন মোল্লা “ নামে বিভিন্ন পত্রিকায় আমার সাক্ষাৎকার ছাপা হয় । “ সাপ্তাহিক আমোদের “ 50 বছর পূর্তি থেকে দেবিদ্ধার সংবাদদাতা হিসাবে পরিচয়পত্র লাভ করি । তখন আমাদের গ্রামে সকাল বেলা দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যেত না ।চান্দিনা অথবা দেবিদ্ধার মালা-মাল  ব্যবসায়ীগণ আনতে গেলে সংবাদপত্র হাতে করে নিয়ে আসতেন।ব্যক্তিগতভাবে সাধারণত কেউ পত্রিকা নিয়মিত রাখতেন না। আমি নিজেও দেবিদ্ধার সুজাত অঅলী সরকারী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় ক্লাশশেষে বাড়ি ফেরার পথে পত্রিকা নিয়ে এসে শ্রী অনিল ঠাকুরের দোকানে দিতাম। অনিল চক্রবর্তী মূলত ইত্তেফাক অফিসে  কাজ করতেন ।লেটার প্রেস উঠে যাওার কারণে অনেকেই অফিস থেকে চলে আসেন। তিনিও তাদের মধ্যে একজন। তিনি একটি মুদি দোকান চালাতেন ।মাঝে মাঝে নিউজের ব্যাপারে পরামর্শ দিতেননিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন ।তিনি এত কষ্ট করে নিউজ পাঠিয়ে নিউজটি ছাপানোর পর যদি তা যথাসময়ে দেখা না তাহলে তা হবে খুবই দুঃখজনক । তাছাড়া তুমি দেবিদ্ধারের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ কর সে সংবাদ দেবিদ্ধারবাসী যদি দেখতে না পারে তাহলে তোমার নিউজের স্বার্থকতা কোথায় তখন বাকিন ভাই বল্লেন- তুমি যদি পত্রিকা নিতে চাও তাহলে উত্তম প্রস্তাব। আমি প্রয়োজনে অর্ধেক মূল্য তোমার জন্য ছেড়ে দেব । উল্লেখ্য আমি যেসব পত্রিকায় কাজ করেছি সেগুলোতে কোন প্রকার চাপ ছিল না। কারেন্ট  নিউজ সাধ্যমত পাঠাতাম কিন্ত বিজ্ঞাপনে কোন রকম টার্গেট ছিল না । তাই লেখাপড়ার পাশাপশি পত্রিকায় কাজ করতে পেরেছি । এক এক করে গ্রাহক বাড়তে বাড়তে তা একসময় এলাহাবাদ বাজারেই 47 এ পেীছে । তাছাড়া দেবিদ্ধার –মুরাদনগরে মিলিয়ে তা হয়ে যায় প্রাায় 200 জন । পত্রিকা বের হতো বৃহস্পতি বার। এখনও তাই হচ্ছে। শুক্রবার বন্ধ থাকায় পত্রিকা পেতে দেরী হয়ে যেত । তাই শুক্রবারের পরিবর্তে রোববারে পত্রিকা বের হলে আমার জন্য সুবিধা হয় –এ প্রস্তাব করলে তাতে  তিনি রাজী না হয়ে বল্লেনএকটা কাজ আমি তোমার জন্য করতে পারি ।তুমি বৃহস্পতি বারে পত্রিকা পেতে চাও তাহলে সার্কুলেশনের আলম যদি কষ্ট করে বুধবারে রাতে নৈশ বিভাগ থেকে পোস্ট করতে পারে তাহলে কুমিল্লার পাঠকরা যখন পত্রিকা পাবে তকন এলাহাবাদের পাঠকরাও একই সময়ে পত্রিকা পাবে ।তখন থেকে দুশো পত্রিকা আমার রেফারেন্সে পাঠানো হতো ।আমাকে কখনও বিজ্ঞাপনের জন্য বলা না হলেও আমি হারিয়েছিপুড়ে গেছে,স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সহ 50 তম বর্ষে দেবিদ্ধারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার থেকে মুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন কালেকশন করেছিলাম ।

  নিরাবেগভাবে দেখে ,নিজেকে মোহমুক্ত রেখে নিজস্ব মূল্যবোধ বজায় রাখার মধ্য দিয়ে কোন ইসুকে প্রতিবেদনে তুলে আনার নামই বস্তুনষ্ঠ সাংবাদিকতা।আমি সবসময় আমার পেশাগত কাজে এ বিষয়টি খেয়াল রেখেছি। তাই ভিন্ন কোন গতি বা রীতির সাথে কোন সম্পর্ক রাখিনি।আমি চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীনের আদর্শ লালন করি ।তার সম্পর্কে কবি শামসুর রহমান লিখেছেন, ”……দিনভর খাটুনি ধকল পোহানো কিশোরীর /খড়ের উপর ঘুম-ইত্যাদি দেখেছি মেনাজাত/তোমারই সৌজন্যে সেই ঋণস্বী কারে অকুণ্ঠ আমি । আমিও চলতি সংবাদের পাশাপাশি গ্রামের আর্থ-সমাজিক,রাজনৈতিক,ইতিহাস –ঐতিহ্যখেলাধুলা ও কৃষ্টি-কালচারকে লেখার বিষয়বস্তুতে পরিণত করি। আমোদ এ লেখাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পেছনের পৃষ্টায় স্থান দিত।

আমি কুমল্লার তিনজন সম্পাদককে সাংবাদিক গুরু হিসাবে পেয়েছি। তারা হলেন জনাব আব্দুল ওহাব-দৈনিক রুপসী বাংলামোহাম্মদ উল্লাহ-সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ এবং মোহাম্দ ফজলে রাব্বী ।ফজলে রাব্বীর একটি কথা এখনও মনে পড়ে –তিনি প্রায় সময় আমাকে বলতেন ”গো এহেড মাই চাইল্ড “ । ঢুলির কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয় । সে নিজের আনন্দের জন্য বাজায় না। অন্যকে আনন্দ দানের মাধ্যমে তার কাজের স্বার্থকতা ফুটে উঠে ।মূলত আমোদ ছিল সাংবাদিক তৈরির কাখানা অঅর ফজলে রাব্বী ছিলেন এর নিরলস কারিগর ।মিডিয়া এমন একটি যাযগা যেখানে শিক্ষার পাশাপাশি বিচক্ষনতাকেও কাজে লাগাতে হয়। যতটুকু সম্বভ চেষ্টা করেছি, জনগণের কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করেছি ।

  প্রথম  যখন লিখতাম তখন ছাপর অক্ষরে আমার নিজের নাম দেখে খুব ভাল লাগতো ।হঠাৎ করে নেশা জাগলো কতটি পত্রিকায় আার্টিকেল লিখে আমার নাম আনা সম্বব তা একটু চেষ্ট করে দেখা যাক ।প্রথম আলোর সোহাগ ভাই বল্লেন  “তুমি পাগল হয়েছো নাকি সবাই লিখে টাকার জন্য আর তুমি ....। ” তবে বাশারভাই উৎসাহ দিলেন। বল্লেন  “আমি এক সময় একাই হাতে লিখে 53 টি পত্রিকায় নিউজ পাঠাতাম।  ভাবনা থেকেই কাজের শুরু।অঅর পেছনে তাকাইনি, দুবছরের মাথায় দেখলাম প্রিন্ট এবং অনলাইন মিলে 100 টি পত্রিকা আমার হাতে চলে এসেছে। এ নিয়ে মিডিয়া সহযোগীগণ লিখলেন- ”মমিন মোল্লার অন্যরকম সেঞ্চুরি ।”

সাংবাদিকতা শেখার জন্য ডাকযোগে বই এনে পড়েছিবিসিডিজেসি-90, প্রথম আলো- 2010, পিআইবির বেসিক সাংবাদিকতা কোর্স-,বিসিডিজেসির ফিচার বিষয়ক কোর্সপিআইবির 2য় কোর্স,এবং রয়টারের ডিজিটাল সাংবাদিকতা কোর্স করেছি । তবে কাগজে –কলমে যে শিক্ষা আমোদ সম্পাদক বাকীন রাব্বী দিয়েছেন, তার কোন তুলনা হয় না। দেবিদ্ধারের চরববাকরের মুক্তিযুদ্ধ সহযোগী জব্বার আলী যুদ্ধের সময় রিক্সাযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যেতন । তখন তিনি ছিলেন তারণ্যেউদ্দীপ্ত যুবক। তাকে সবাই জব্বার একপ্রেস বলে ডাকতো । কিন্ত 90 এর দশকের শেষভাগে  তার বয়স যখন 70 তখন তার রিক্সায় কেউ উঠেনা । আমি তখন একটি বোঝাই রিক্সায় জব্বার আলীকে উঠিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় পাঠালে বাকিন ভাই বল্লেন,’ বর্তমানে দশ বছরের বাচ্চা ও ছবি ঊঠাতে পারে। টিপ দিলাম আর ছবি উঠলো এটাতো কোন পত্রিকার ছবি হতে পারে না। পত্রিকার একটি ছবি হাজার শব্দ থেকেও শক্তিশালী।”  তখন জানতে পারলাম বাকীন সাহেব ফটোগ্রাফির উপর বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেনকুমিল্লা এবং ঢাকায় একক চিত্র প্রদর্শনী করে সুনাম অর্জণ করেছেন।তখন থেকে ছবি তোলায় বিশেষ মনযোগী হলাম। পরিশেষে আমোদ প্রকাশনার সাথে জড়িত সবাইকে এবং সম্মানিত পাঠকদের আশির্বাদ কামনা করছি।

লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, কলামিস্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক,কুমিল্লা 01711-713257

  বড়  ভাই মনির মোল্লার নামে ডাক যোগে পত্রিকা আসতো। এলাহাবাদ গ্রামেই ছিল পোস্ট অফিস। যেদিন পত্রিকা আসবে সেদিন উন্মুখ হয়ে থাকতাম। পত্রিকা বিলি করবে সন্তোষ পিয়ন । কিন্ত পিয়নের হাতে আসার আগেই পোস্ট মাস্টার খোকা মিঞার বাড়ি থেকেই তা নিয়ে আসতাম। নতুন পত্রিকাটি কতগুলো ওয়াস্টেজ পত্রিকা দিয়ে গোল করে প্যাচানো থাকতো। নতুন পত্রিকার গন্ধই যেন আলাদা। ভাজ করা প্যাকেটের প্রতিটি ভাজ প্যার প্যার আওয়াজ করে খুলতাম আর ভাবতাম ভাইয়ের পাঠানো  দেবিদ্ধারের নতুন নতুন সংবাদ পাব। সাথে থাকবে দেশ –বিদেশের সুখ-দ:খের খবর।

    পত্রিকা পড়তে পড়তেই পত্রিকার প্রতি আকর্ষণ। সেই থেকে আমিও নিউজ লেখার স্বপ্ন দেখতে থাকি। ভাই বল্ল, এখন নয় সামনে তোর পরীক্ষা । পরীক্ষা মানে এসএসসি পরীক্ষা।বড় ভাইয়ের কথামত অপেক্ষা করলাম। 89 সালের মার্চ মাসে পরীক্ষা শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন পত্রিকায় ডাকযোগে আবেদন করতে থাকলাম। তখন এলাহাবাদ বাজারে একদিন পর দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যেত। প্রায় প্রতিটি সেলুনে পত্রিকা রাখতো। ইত্তেফাক পত্রিকায় খুলনা থেকে প্রকাশিত ” সাপ্তাহিক গ্রামাঞ্চ “ পত্রিকায় আবেদন পাঠালে আমাকে 6 মাসের জন্য অস্থায়ীভাবে নিইজ পাঠানোর অনুমতি দেয়া হয়। সেই থেকে শুরু। শুরুতে শুধুমাত্র চলতি সংবাদ লিখলেও পরবর্তীতে ফিচার ও বিষয়ভিত্তিক কলাম লেখায় মনোনিবেশ করি। আমার উল্লেখযোগ্য আর্টিকেলের মধ্যে ” সততার সাথে ব্যবসা ও মুনাফা লাভ “ অন্যতম। এ লিখাটি অনলাইনে ব্যাপকভাবে সমাদৃত হয় । লিখাটি জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকায় “ 45 লাখ পাঠকের ভালবাসায় মমিন মোল্লা “ নামে বিভিন্ন পত্রিকায় আমার সাক্ষাৎকার ছাপা হয় । “ সাপ্তাহিক আমোদের “ 50 বছর পূর্তি থেকে দেবিদ্ধার সংবাদদাতা হিসাবে পরিচয়পত্র লাভ করি । তখন আমাদের গ্রামে সকাল বেলা দৈনিক পত্রিকা পাওয়া যেত না ।চান্দিনা অথবা দেবিদ্ধার মালা-মাল  ব্যবসায়ীগণ আনতে গেলে সংবাদপত্র হাতে করে নিয়ে আসতেন।ব্যক্তিগতভাবে সাধারণত কেউ পত্রিকা নিয়মিত রাখতেন না। আমি নিজেও দেবিদ্ধার সুজাত অঅলী সরকারী কলেজে ইন্টারমিডিয়েটে পড়ার সময় ক্লাশশেষে বাড়ি ফেরার পথে পত্রিকা নিয়ে এসে শ্রী অনিল ঠাকুরের দোকানে দিতাম। অনিল চক্রবর্তী মূলত ইত্তেফাক অফিসে  কাজ করতেন ।লেটার প্রেস উঠে যাওার কারণে অনেকেই অফিস থেকে চলে আসেন। তিনিও তাদের মধ্যে একজন। তিনি একটি মুদি দোকান চালাতেন ।মাঝে মাঝে নিউজের ব্যাপারে পরামর্শ দিতেননিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করতেন ।তিনি এত কষ্ট করে নিউজ পাঠিয়ে নিউজটি ছাপানোর পর যদি তা যথাসময়ে দেখা না তাহলে তা হবে খুবই দুঃখজনক । তাছাড়া তুমি দেবিদ্ধারের সংবাদ পত্রিকায় প্রকাশ কর সে সংবাদ দেবিদ্ধারবাসী যদি দেখতে না পারে তাহলে তোমার নিউজের স্বার্থকতা কোথায় তখন বাকিন ভাই বল্লেন- তুমি যদি পত্রিকা নিতে চাও তাহলে উত্তম প্রস্তাব। আমি প্রয়োজনে অর্ধেক মূল্য তোমার জন্য ছেড়ে দেব । উল্লেখ্য আমি যেসব পত্রিকায় কাজ করেছি সেগুলোতে কোন প্রকার চাপ ছিল না। কারেন্ট  নিউজ সাধ্যমত পাঠাতাম কিন্ত বিজ্ঞাপনে কোন রকম টার্গেট ছিল না । তাই লেখাপড়ার পাশাপশি পত্রিকায় কাজ করতে পেরেছি । এক এক করে গ্রাহক বাড়তে বাড়তে তা একসময় এলাহাবাদ বাজারেই 47 এ পেীছে । তাছাড়া দেবিদ্ধার –মুরাদনগরে মিলিয়ে তা হয়ে যায় প্রাায় 200 জন । পত্রিকা বের হতো বৃহস্পতি বার। এখনও তাই হচ্ছে। শুক্রবার বন্ধ থাকায় পত্রিকা পেতে দেরী হয়ে যেত । তাই শুক্রবারের পরিবর্তে রোববারে পত্রিকা বের হলে আমার জন্য সুবিধা হয় –এ প্রস্তাব করলে তাতে  তিনি রাজী না হয়ে বল্লেনএকটা কাজ আমি তোমার জন্য করতে পারি ।তুমি বৃহস্পতি বারে পত্রিকা পেতে চাও তাহলে সার্কুলেশনের আলম যদি কষ্ট করে বুধবারে রাতে নৈশ বিভাগ থেকে পোস্ট করতে পারে তাহলে কুমিল্লার পাঠকরা যখন পত্রিকা পাবে তকন এলাহাবাদের পাঠকরাও একই সময়ে পত্রিকা পাবে ।তখন থেকে দুশো পত্রিকা আমার রেফারেন্সে পাঠানো হতো ।আমাকে কখনও বিজ্ঞাপনের জন্য বলা না হলেও আমি হারিয়েছিপুড়ে গেছে,স্কুল-কলেজে শিক্ষক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সহ 50 তম বর্ষে দেবিদ্ধারের উপজেলা নির্বাহী অফিসার থেকে মুভেচ্ছা বিজ্ঞাপন কালেকশন করেছিলাম ।

  নিরাবেগভাবে দেখে ,নিজেকে মোহমুক্ত রেখে নিজস্ব মূল্যবোধ বজায় রাখার মধ্য দিয়ে কোন ইসুকে প্রতিবেদনে তুলে আনার নামই বস্তুনষ্ঠ সাংবাদিকতা।আমি সবসময় আমার পেশাগত কাজে এ বিষয়টি খেয়াল রেখেছি। তাই ভিন্ন কোন গতি বা রীতির সাথে কোন সম্পর্ক রাখিনি।আমি চারণ সাংবাদিক মোনাজাত উদ্দীনের আদর্শ লালন করি ।তার সম্পর্কে কবি শামসুর রহমান লিখেছেন, ”……দিনভর খাটুনি ধকল পোহানো কিশোরীর /খড়ের উপর ঘুম-ইত্যাদি দেখেছি মেনাজাত/তোমারই সৌজন্যে সেই ঋণস্বী কারে অকুণ্ঠ আমি । আমিও চলতি সংবাদের পাশাপাশি গ্রামের আর্থ-সমাজিক,রাজনৈতিক,ইতিহাস –ঐতিহ্যখেলাধুলা ও কৃষ্টি-কালচারকে লেখার বিষয়বস্তুতে পরিণত করি। আমোদ এ লেখাগুলো অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে পেছনের পৃষ্টায় স্থান দিত।

আমি কুমল্লার তিনজন সম্পাদককে সাংবাদিক গুরু হিসাবে পেয়েছি। তারা হলেন জনাব আব্দুল ওহাব-দৈনিক রুপসী বাংলামোহাম্মদ উল্লাহ-সাপ্তাহিক নিরীক্ষণ এবং মোহাম্দ ফজলে রাব্বী ।ফজলে রাব্বীর একটি কথা এখনও মনে পড়ে –তিনি প্রায় সময় আমাকে বলতেন ”গো এহেড মাই চাইল্ড “ । ঢুলির কথা যদি বলি তাহলে বলতে হয় । সে নিজের আনন্দের জন্য বাজায় না। অন্যকে আনন্দ দানের মাধ্যমে তার কাজের স্বার্থকতা ফুটে উঠে ।মূলত আমোদ ছিল সাংবাদিক তৈরির কাখানা অঅর ফজলে রাব্বী ছিলেন এর নিরলস কারিগর ।মিডিয়া এমন একটি যাযগা যেখানে শিক্ষার পাশাপাশি বিচক্ষনতাকেও কাজে লাগাতে হয়। যতটুকু সম্বভ চেষ্টা করেছি, জনগণের কণ্ঠস্বর হিসাবে কাজ করেছি ।

  প্রথম  যখন লিখতাম তখন ছাপর অক্ষরে আমার নিজের নাম দেখে খুব ভাল লাগতো ।হঠাৎ করে নেশা জাগলো কতটি পত্রিকায় আার্টিকেল লিখে আমার নাম আনা সম্বব তা একটু চেষ্ট করে দেখা যাক ।প্রথম আলোর সোহাগ ভাই বল্লেন  “তুমি পাগল হয়েছো নাকি সবাই লিখে টাকার জন্য আর তুমি ....। ” তবে বাশারভাই উৎসাহ দিলেন। বল্লেন  “আমি এক সময় একাই হাতে লিখে 53 টি পত্রিকায় নিউজ পাঠাতাম।  ভাবনা থেকেই কাজের শুরু।অঅর পেছনে তাকাইনি, দুবছরের মাথায় দেখলাম প্রিন্ট এবং অনলাইন মিলে 100 টি পত্রিকা আমার হাতে চলে এসেছে। এ নিয়ে মিডিয়া সহযোগীগণ লিখলেন- ”মমিন মোল্লার অন্যরকম সেঞ্চুরি ।”

সাংবাদিকতা শেখার জন্য ডাকযোগে বই এনে পড়েছিবিসিডিজেসি-90, প্রথম আলো- 2010, পিআইবির বেসিক সাংবাদিকতা কোর্স-,বিসিডিজেসির ফিচার বিষয়ক কোর্সপিআইবির 2য় কোর্স,এবং রয়টারের ডিজিটাল সাংবাদিকতা কোর্স করেছি । তবে কাগজে –কলমে যে শিক্ষা আমোদ সম্পাদক বাকীন রাব্বী দিয়েছেন, তার কোন তুলনা হয় না। দেবিদ্ধারের চরববাকরের মুক্তিযুদ্ধ সহযোগী জব্বার আলী যুদ্ধের সময় রিক্সাযোগে মুক্তিযোদ্ধাদের বিভিন্ন যায়গায় নিয়ে যেতন । তখন তিনি ছিলেন তারণ্যেউদ্দীপ্ত যুবক। তাকে সবাই জব্বার একপ্রেস বলে ডাকতো । কিন্ত 90 এর দশকের শেষভাগে  তার বয়স যখন 70 তখন তার রিক্সায় কেউ উঠেনা । আমি তখন একটি বোঝাই রিক্সায় জব্বার আলীকে উঠিয়ে ছবি তুলে পত্রিকায় পাঠালে বাকিন ভাই বল্লেন,’ বর্তমানে দশ বছরের বাচ্চা ও ছবি ঊঠাতে পারে। টিপ দিলাম আর ছবি উঠলো এটাতো কোন পত্রিকার ছবি হতে পারে না। পত্রিকার একটি ছবি হাজার শব্দ থেকেও শক্তিশালী।”  তখন জানতে পারলাম বাকীন সাহেব ফটোগ্রাফির উপর বিদেশে প্রশিক্ষণ নিয়েছেনকুমিল্লা এবং ঢাকায় একক চিত্র প্রদর্শনী করে সুনাম অর্জণ করেছেন।তখন থেকে ছবি তোলায় বিশেষ মনযোগী হলাম। পরিশেষে আমোদ প্রকাশনার সাথে জড়িত সবাইকে এবং সম্মানিত পাঠকদের আশির্বাদ কামনা করছি।

লেখক: মমিনুল ইসলাম মোল্লা, কলামিস্ট, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক গবেষক ও সাংবাদিক,কুমিল্লা 01711-713257

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.