বর্ষাকাল মানে আষাঢ় এলেই মৌরিবিলে প্রচুর মাছ পড়ে।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও ধর্মীয় লেখক, কুমিল্লা।।
১৫
বর্ষাকাল মানে আষাঢ় এলেই মৌরিবিলে প্রচুর মাছ পড়ে। বোয়াল, পাঙ্গাস থেকে শুরু করে ট্যাংরা, পুঁটি, পারশে, বেলে সবই পাওয়া যেত আবুর বড়ো ভাই সাজেদের মাছ ধরার নেশা খুব। অনেকবার সে বড়ো বড়ো মাছ হয়েছে। এবারও দুই বন্ধু বিপুল আর বায়েজিদকে নিয়ে সে মাছ ধরার প্ল্যান করেছিল। তারপর সব গোছগাছ করে বাড়ির নৌকাটা নিয়ে মৌরিবিলের পথে রওনা হলো। সঙ্গে নিল কয়েক রকম জাল, হারিকেন, মাছ আনার বড়ো বড়ো 'খালুই' আর নিল রাতের খাবার। নৌকা বাইবে কিষান তিনু। দরকার হলে এরাও হাত লাগাবে। অতিরিক্ত দুটো বৈঠাও সঙ্গে করে নিল তারা।
ওদিকে আবু ছটফট করছে কী করে সে ওদের সঙ্গে যাবে। বিপুল ও বায়েজিদকে নিয়ে সাজেদ যখন নৌকায় মৌরিবিলে যাবার পাকাপাকি প্ল্যান করছিল, তখন আবু শুনে মনে মনে ঠিক করে ফেলল যে সে ওদের সঙ্গে যাবে। তাতে যা হয় হবে আবুর এই গোপন প্ল্যান সাজেদরা কিছুই জানতে পারেনি। আকাশে মেঘ। তাই তারা সন্ধ্যার আগেই বেরিয়ে পড়ল। মাছ ধরা হবে রাতে। হারিকেনের আলো দেখলে মাছেরা কেমন যেন রাতকানা হয়ে যায়। তখন মাছশিকারিরা জাল দিয়ে ধরে ফেলে সেই গথভোলা মাছগুলোকে।
কিছুদূর যাবার পর ঝরঝর করে বৃষ্টি নামল। ওরা তিনজন ছাতা মাথায় দিল। মাথাল মাথায় তিনু নৌকার হালা ধরে বসে রইল। সন্ধ্যা হলো বৃষ্টি থামল। হারিকেন জ্বালাল ওরা। একটু পরেই হারিকেন নিবুনিবু হয়ে এল। সাজেদ হারিকেনটা নাড়িয়ে দেখে তেল নেই একটুও তাতে। নৌকার খোলের মধ্যে কেরোসিন তেলের বোতল। পাটাতনের তক্তা তুলে দেখে সেখানে ছোটো মতো কে যেন শুয়ে আছে। সাজেদ চেঁচিয়ে উঠল-
এই বিপুল। এই বায়েজিদ দ্যাখ এখানে কে যেন শুয়ে আছে।
কে আবার নৌকার খোলের মধ্যে শুতে যাবে। বোধহয় ধানের বস্তা। কিষানেরা নামাতে ভুলে গেছে। 'না, বন্ধা না। এই কে তুই? কে? কে?'- বলে সাজেদ শোয়া ব্যক্তিকে ঠেলা দিল।
আবু তখন হুড়মুড় করে উঠে বসে চোখ ডলতে ডলতে বলল, 'আমি আবু।' বলেই সে কেঁদে দিল। সাজেন বিস্মিত হয়ে বলল, 'আবু তুই এখানে কী করে এলি? আজ তোকে পিটিয়ে ঠান্ডা করব। কাউকে না-বলে চলে এসেছিস। বাড়িতে সবাই তো কান্নাকাটি শুরু করেছে। তাহলে তো মাছ ধরা যাবে না। বাড়ি ফিরে যেতে হলে আবু তখন কাঁদতে কাঁদতে বলল, 'দাদা মেরো না আমাকে। আমি লুকিয়ে লুকিয়ে তোমাদের সাথে এসেছি মায় ধরার জন্য। তবে কালুকে বলে এসেছি কেট খুঁজলে বলে দিতে।
ভালো কথা। বুদ্ধির কাজ করেছিস। তা পুঁচকে ছেলে তুই কী মাছ ধরবি?
বড়ো মাছ ধরব দাদা।
: বেশ থাক। বড়ো মাছ তোকেই ধরে না নিয়ে যায় দেখিস। দাদার আশ্বাস পেয়ে আবু মনের সুখে গান ধরল সাজেদ শুনে বলল, 'তুই বরং পাটাতনের নিচে তোর জায়গায় গিয়ে ঘুমিয়ে থাক। মাছ এসে তোকে ডেঙ তুলবে।'
না আমি ঘুমাব না। বড়ো মাছ ধরব। তোমরা মাছ ধরবে আর আমি ঘুমিয়ে থাকব, তা হবে না। তা হবে নায়
তা তুই মাছ কী দিয়ে ধরবি?
আমি বড়শি আর টোপ নিয়ে এসেছি।
No comments