শবে মেরাজ পালনের শরঈ বিধান কি ?
শবে মেরাজ পালনের শরঈ বিধান কি ?
মমিনুল ইসলাম মোল্লা, সাংবাদিক কলামিস্ট ও ফিচার লেখক, কুমিল্লা।।
রজব মাসের সাতাইশ তারিখকে শবে মেরাজ পালনের জন্য নির্ধারণ করে
নিয়েছে।
## এ দিন কি কি করা হয় ?
শবে মেরাজ উপলক্ষে মসজিদ মসজিদে একত্রিত হওয়া। মসজিদে কিংবা মসজিদের মিনারে মোমবাতি-আগরবাতি জ্বালানো বা আলোকসজ্জা
করা। এ উপলক্ষে অর্থ অপচয় করা। কুরআন তিলাওয়াত বা জিকিরের জন্য একত্রিত হওয়া।মেরাজ দিবস’ উপলক্ষে মসজিদে বা বাইরে সভা-সেমিনার আয়োজন করে তাতে মিরাজের
ঘটনা বয়ান করা ইত্যাদি।
## মেরাজের ঘটনা কি আলোচনা করা যাবে ?
এভাবে দিবস পালন না
করে যে কোন সময় মিরাজের ঘটনা বা শিক্ষা নিয়ে আলোচনা করা দোষণীয় নয়।
## কোন রাতে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ইসরা ও মেরাজ
সংঘটিত হয়েছিল?
ইবনে হাজার
আসকালানী রহ. বলেন: মিরাজের সময় নিয়ে মতবিরোধ রয়েছে। কেউ বলেছেন: হিজরতের এক বছর আগে। ইবনে
সা’দ প্রমুখ
এ মতের পক্ষে। ইমাম নওবী রহ. এই মতটির পক্ষে জোর দিয়ে বলেছেন। তবে ইবনে হাজাম এর পক্ষে
আরও শক্ত অবস্থান নিয়ে বলেন: এটাই সর্ব সম্মত মত। এই মতের আলোকে বলতে হয় মেরাজ হয়েছিল
রবিউল আওয়াল মাসে।কিন্তু তার কথা অগ্রহণ যোগ্য। কারণ, এটা সর্ব সম্মত মত নয়। বরং এক্ষেত্রে প্রচুর মতবিরোধ রয়েছে।
এ প্রসঙ্গে বিশটির অধিক মত পাওয়া যায়।
-ইবনুল জাওযী বলেন, হিজরতের আট
মাস আগে মেরাজ হয়েছিল। এ মতানুসারে সেটা ছিল রজব মাসে।-কেউ বলেন: হিজরতের ছয় মাস
আগে। এ মত অনুযায়ী সেটা ছিল রামাযানে। এ পক্ষে মত দেন আবুর রাবী বিন সালেম।
## ইবনে তাইমিয়া রহঃ কি বলেন ?
শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন:“ রজব মাসে
বড় বড় ঘটনা ঘটেছে মর্মে বিভিন্ন বর্ণনা পাওয়া যায় কিন্তু কোনটির পক্ষেই সহীহ দলীল
নাই। বর্ণিত হয়েছে, নবী সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম রজবের প্রথম রাতে ভূমিষ্ঠ হয়েছেন, সাতাইশ বা পঁচিশ তারিখে নবুওয়ত প্রাপ্ত হয়েছেন অথচ এ সব ব্যাপারে
কোন সহীহ দলীল পাওয়া যায় না।” (লাতাইফুল
মায়ারেফ, ১৬৮ পৃষ্ঠা)
## শবে মিরাজ পালন করার বিধান কি ?
সালফে সালেহীনগণ এ মর্মে একমত যে, ইসলামী শরীয়তে অনুমোদিত দিন ছাড়া অন্য কোন দিবস উদযাপন করা
বা আনন্দ-উৎসব পালন করা বিদআত। কারণ, রসূল সাল্লাল্লাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন:(( من أحدث في ديننا ما ليس منه فهو رد))“যে ব্যক্তি দ্বীনের অর্ন্তভুক্ত নয় এমন নতুন জিনিষ চালু করল
তা পরিত্যাজ্য। (বুখারী, অধ্যায়:
সন্ধি-চুক্তি।)আর সহীহ মুসলিমের বর্ণনায় রয়েছে:((
من عمل عملاً ليس
عليه أمرنا فهو رد ))“যে ব্যক্তি
এমন আমল করল যার ব্যাপারে আমার নির্দেশ নাই তা প্রত্যাখ্যাত। (মুসলিম, অধ্যায়: বিচার-ফয়সালা)সুতরাং মিরাজ দিবস অথবা শবে মেরাজ পালন
করা দ্বীনের মধ্যে সৃষ্ট বিদআতের অর্ন্তভূক্ত।
## ইবনুল কাইয়েম জাওযিয়া রহ. বলেন:
ইবনে তাইমিয়া রহ. বলেন: পূর্ববর্তী যুগে এমন কোন মুসলমান পাওয়া
যাবে না যে শবে মেরাজকে অন্য কোন রাতের উপর মর্যাদা দিয়েছে। বিশেষ করে শবে কদরের চেয়ে
উত্তম মনে করেছে এমন কেউ ছিল না। সাহাবায়ে কেরাম এবং তাদের একনিষ্ঠ অনুগামী তাবেঈনগণ
এ রাতকে কেন্দ্র করে বিশেষ কোন কিছু করতেন না এমনকি তা আলাদাভাবে স্মরণও করতেন না।
যার কারণে জানাও যায় না যে, সে রাতটি
কোনটি।
## রজব মাসের শ্রেষ্ঠ বিদআত কোনটি ?
ইবনুল হাজ্জ বলেন:“রজব মাসে যে সকল বিদআত আবিষ্কৃত হয়েছে সগুলোর মধ্যে সাতাইশ তারিখের লাইলাতুল মিরাজের
রাত অন্যতম।”(আল
মাদখাল, ১ম খণ্ড, ২৯৪পৃষ্ঠা)
## তাহলে কি শবে মেরাজ রাতের বিমেষ ইবাদত ছেড়ে দেব ?
যেহেতু রজব মাসে নফল নামায, রোযা করা,
মসজিদ, ঘর-বাড়ি, রাস্তা-ঘাট দোকান-পাট
ইত্যাদি সাজানো, সেগুলোকে
আলোক সজ্জা করা কিংবা ছাব্বিশ তারিখের দিবাগত রাত তথা সাতাইশে রজবকে শবে মিরাজ নির্ধারণ
করে তাতে রাত জেগে ইবাদত করার ব্যাপারে কোন গ্রহনযোগ্য প্রমাণ নাই। তাই আমাদের কর্তব্য
হবে সেগুলো থেকে দূরে থাকা।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম
মোল্লা,ইসলামী গ্রন্থ প্রণেতা, প্রাক্তন প্রভাষক শাহতলী কামিল
মাদ্রাসা,চাঁদপুর।maminmollah.xyz 01711-713257
No comments