সফর মাস : আসুন কুসংস্কারকে ‘না’ বলি

এখানে আমি ইসলামি ও আরবি সনের দ্বিতীয় মাস পবিত্র সফরকে স্বাগত জানিয়ে এ মাসটি সম্পর্কে শরিয়তের আলোকে কিছু কথা তুলে ধরতে চাই।

আমরা একটি অতি আধুনিক যুগে বাস করলেও এ অঞ্চলের আবহমান অনেক প্রচলিত রীতি, চেতনা ও ধারণা থেকে পুরোপুরি মুক্ত নই। গ্রামীণ সমাজে এমনকি শহরের শিক্ষিত লোকেরাও জীবনের নানা বাঁকে নানা ধরনের কতিপয় নিতান্তই অমূলক ও কল্পনাপ্রসূত ধ্যান-ধারণা পোষণ করে থাকেন। এসব প্রচলিত অভ্যাস ও কল্পনাপ্রসূত ধ্যান-ধারণা কুসংস্কারের আওতাভুক্ত। এর একটি হল, শিষ্ট-অনিষ্ট ও সৎ-অসৎ এবং আঞ্চলিক ভাষায় ছাৎ-কুছাৎ এ যাবতীয় একটি ধারণা।

ইসলামে এ অসৎ বা অনিষ্টের ধারণাকে সম্পূর্ণরূপে অস্বীকার করা হয়েছে এবং ঈমানের সাথে সাংঘর্ষিক ও শিরকের সাথে সাদৃশ্যশীল বলে তাকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। ইসলাম শুভকে সমর্থন করলেও অশুভ-অনিষ্টকে চরমভাবে প্রত্যাখ্যান করেছে।
অনিষ্টের এ ধারণা সময়, স্থান এবং কাজ সবকিছুর সাথেই সংশ্লিষ্ট। কতিপয় সময়কে কতিপয় জায়গাকে এবং অনুরূপভাবে কতিপয় কাজকে খুবই অমঙ্গলজনক মনে করা হয়। গ্রামের মুরুব্বিরা হলেন এসবের প্রবক্তা ও প্রশিক্ষক। এ সম্পর্কে আপনারা ভালোভাবেই অবগত আছেন। তাই এসবের ফিরিস্তি এখানে দেওয়ার প্রয়োজন নেই।

ইসলামপূর্ব আইয়ামে জাহিলিয়াতে সেই অনিষ্ট ও অমঙ্গলের প্রতীক ছিল সফর মাস। এ সময় তারা বিয়ে-শাদীসহ যাবতীয় কাজ, অনুষ্ঠান ও সফরকে চরম অমঙ্গলজনক মনে করতো। ইসলাম গ্রহণের পরেও অনেক মুসলিমের অন্তরে এ কুসংস্কারের পূর্ব ধ্যান-ধারণার প্রভাব বিদ্যমান ছিল। হযরত মহানবী (সা.) এসব বিশ্বাসের ওপর কুঠারাঘাত করে যাবতীয় কুসংস্কারের বেড়াজাল থেকে মুক্ত করে মানুষকে মুক্তির সন্ধান দেন। স্রষ্টার বাস্তবতাকে মানুষের কাছে তুলে ধরে সকলকে তাঁর প্রতি আস্থাশীল করে তোলেন। যে ইসলাম কুসংস্কারের অনুকরণ থেকে মানবতাকে আলোর পথ দেখিয়েছিল। আজ প্রগতির মুখোশধারীরা সংকীর্ণ হৃদয়ের কতিপয় তথাকথিত আধুনিক লোক ইসলামি চেতনা ও বিশ্বাসকেই কুসংস্কার হিসেবে চিত্রায়িত করার নিকৃষ্টতম প্রয়াসে লিপ্ত। মহানবী (সা.) সফর মাসসহ তৎকালীন সময়কালে প্রচলিত সকল প্রকার অনিষ্টের বদ্ধমূল ধারণাকে বাতিল, মিথ্যা ও অবাস্তব বলে ঘোষণা দিয়ে বলেন, সফর মাসে (মাসের অনিষ্ট) রোগ সংক্রমণ, অমঙ্গল বলতে কিছু নেই। হযরত জাবের (রা.) মহানবী (সা.) থেকে বর্ণনা করেন, সফর মাসে রোগ, অনিষ্ট এবং ভূতপ্রেত ইত্যাদি বলতে কিছু নেই।

অনিষ্ট-অমঙ্গলের ধারণার মধ্যে শিরকের দুর্গন্ধ রয়েছে। তাই এটি পরিত্যাজ্য। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, হুজুর (সা.) ইরশাদ করেন, অনিষ্ট-অমঙ্গল বলতে কিছুই নেই। তবে শুভ কামনা বা শুভ লক্ষণকে গ্রহণ করা উত্তম। জিজ্ঞাসা করা হল, শুভের ব্যাখ্যা কী? হুজুর (সা.) বলেন, যেমনÑ কোনো ভালো শব্দ বা কথা যদি তোমাদের কেউ শুনে।

হযরত মুআবিয়া বিন হাকিম বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর নিকট জিজ্ঞাসা করলাম, জাহিলিয়াতের যুগে আমরা কিছু কাজ করতাম যেমন- গণক এবং জ্যোতিষীর নিকট যেতাম। হুজুর বললেন, তোমরা তাদের কাছে যেও না। তারপর আমি বললাম, আমরা অশুভ বিশ্বাস করতাম। হুজুর (সা.) বললেন, অশুভ কল্পনাপ্রসূত ধারণামাত্র। এটা যেন তোমাদেরকে স্বীয় কাজ থেকে বিরত না রাখে।

আসুন আমরা কোরআন-সুন্নাহর আলোকিত মশালকে হাতে ধারণ করে যাবতীয় কুসংস্কারকে না বলি। বিশেষত বর্তমান বিজ্ঞানের যুগে নিষ্ট-অনিষ্টের মতবাদের অসারতা প্রমাণ করা আরও সহজ, যার দরুন যাবতীয় কুসংস্কারকে এখন `না` বলাটা আশা করি কঠিন হবে না।

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.