উম্মুল মুমিনীন আয়েশা রাদিয়াল্লাহু আনহু এর জীবনী

 


মুহাম্মদ (সা.) এর সাথে বিবাহসম্পাদনা

মুহাম্মাদ (সা.) এর সঙ্গে আয়িশার বিয়ে হয় মূলত খাদিজা বিনতে খুয়ালিদ এর মৃত্যুর পরে। মুহাম্মদ (সা.) সওদাকে (যাম'আ ইবনে কাঈসের কন্যা) বিয়ে করার পর আয়িশাকে পরবর্তীতে তৃতীয় স্ত্রী হিসেবে গ্রহণ করেন। তার বিয়ে খাদিজার মৃত্যুর পরে হয়েছিল, এ পক্ষে বেশিরভাগ গবেষকই একই মত পোষণ করেন। যদিও, তার বিয়ে হিজরতের দুই না তিন বছর আগে হয়েছিল, এ নিয়ে ভিন্নমত প্রচলিত আছে। কিছু সুত্র থেকে পাওয়া যায় যে মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গে তার বিবাহ্ সওদার সঙ্গে বিয়ের পূর্বে হয়েছিল৷ যদিও বেশিরভাগ হাদীস মোতাবেক, মুহাম্মদ (সা.) সওদাকে আয়িশার পূর্বে বিয়ে করেছিলেন। এটি প্রচলিত যে, উসমান বিন মা'যুনের স্ত্রী খাওলা আবু বকরের নিকট দেখা করতে গিয়েছিলেন এবং এই বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। মুহাম্মদ (সা.) এর সঙ্গে ছয় বা সাত বছর বয়সে আয়িশার বিয়ে হয়। বয়সের দিক থেকে তিনি ছিলেন মুহাম্মাদ (সা.) এর স্ত্রীদের মাঝে কনিষ্ঠতম[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

বিয়ের সময় আয়িশার বয়সসম্পাদনা

বিয়ের সময় আয়িশার বয়স কত ছিল এই নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বিভিন্ন সুত্র অনুযায়ী মুহাম্মদ (সাঃ) এর সঙ্গে তার বিবাহ এবং এর সিদ্ধি মূলত সার্থক হয়েছিল যখন আয়িশার বয়স ছিল ৬-১৮ বছর। আহলুল সুন্নাহ্ বা সুন্নিদের হাদিসের বর্ননা অনুযায়ী প্রচলিত তথ্যমতে, ইসলামী নবী মুহাম্মদ(সা.) এর সাথে যখন আয়িশার বিয়ে হয়, তখন তার বয়স ছিল ৬-৭ বছর।[৯][১০] আর বদরের যুদ্ধের সময় ৬২৪ খ্রিস্টাব্দে নয় বছর বা মতান্তরে দশবছর বয়স থেকে তার বৈবাহিক জীবন শুরু হয়। এর পূর্বে তিনি তার বিবাহপরবর্তী সময় তার পিত্রালয়েই শিশুবৎসলভাবে অতিবাহিত করেন[তথ্যসূত্র প্রয়োজন]

শিয়া পণ্ডিত আল সাঈদ জাফর মুর্তাযা আল-আমিলী এ ব্যপার অস্বীকার করেন যে, আয়িশা ৬-৭ বছর বয়সে বিয়ে করেছেন। তার মতে বিয়ের সময় আয়িশা ১৩-১৭ বছর বয়সী ছিলেন। তিনি ইবনে ইসহাকের বিবৃত এক তথ্য ( যেখানে উল্লেখ আছে যে আয়িশা সে লোকদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন যারা নবুয়তের অল্প সময় পরে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন)  অনুসারে ঘোষণা করেন যে আয়িশা নিশ্চই বিয়ের সময় ১৭ বছর বয়সী ছিলেন, নবুয়তের সময় তিনি ৭ বছর বয়সী ছিলেন এবং হিজরতের সময় তিনি ২০ বছর বয়সী ছিলেন। অন্যথায় আইশা ইসলাম গ্রহণের সময় বয়সে ৭ বছরের নিচে ছিলেন।

ব্যভিচারের অপবাদ ও ওহি নাজিলের মাধ্যমে সতীত্বের প্রমাণসম্পাদনা

পবিত্র কুরআনের সুরা নুরে আয়িশার বিরুদ্ধে ব্যভিচারের অভিযোগের ঘটনাকে নির্দেশ করা হয়েছে। ঘটনাটি ছিল নিম্নরূপ, আয়িশা তার গলার হার খুঁজতে গিয়ে তার হাওদা (উটের পিঠে পালকির ন্যায় কক্ষযুক্ত বাহন) ছেড়ে গিয়েছিলেন। এর মধ্যে দাসগণ হাওদায় উঠে পড়েন এবং আয়িশার অনুপস্থিতিতে ওজনের তারতম্য না পেয়ে যাত্রা শুরু করে দেন। আয়িশা ফিরে এসে দেখেন কাফেলা তাকে ছাড়াই চলে গেছে। তখন তিনি সেখানেই অবস্থান করতে থাকেন। পরদিন সকালে সাফওয়ান বিন আল-মু'আত্তাল নাম্নী মুহাম্মদ (সা.) এর সেনাদলের এক বেদুঈন সদস্য আয়িশাকে খুঁজে পায় এবং তাকে তার কাফেলার পরবর্তী বিশ্রামস্থলে গিয়ে ফিরিয়ে দিয়ে আসে। এ ঘটনা দেখে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইহাসসান বিন সাবিতমিসতাহ ইবনে উসামাহাম্মানাহ বিনতে জাহাশ (নবীর (সা.) অপর স্ত্রী জয়নব বিনতু জাহাশ'র ছোট বোন), এসব সাহাবী গুজব ছড়াতে থাকে , আয়িশা ও সাফওয়ান ব্যভিচার করে এসেছে। উসামা ইবনে জায়িদ মুহাম্মদ (সা.) এর কাছে আয়িশার প্রশংসা করে অপপ্রচারের বিরোধিতা করেন। পাশাপাশি সুন্নি বর্ননামতে, এরপর আলি মুহাম্মদ (সা.) কে পরামর্শ দেন যে, তিনি যেন আয়িশা কে তালাক দেন। মুহাম্মদ(সা.) আয়িশার সাথে এ ব্যাপারে সরাসরি কথা বলতে আসলে তিনি আয়িশার ঘরে বসে থাকা অবস্থাতেই তার উপর ওহি নাজিল হয় এবং তিনি ঘোষণা করেন যে, আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকে তিনি আয়িশার সতীত্বের নিশ্চয়তার ওহি পেয়েছেন। সুরা নুরে ব্যভিচার ও অপবাদ বিষয়ে বিধান ও শাস্তির নিয়মের বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া হয়। আয়িশার অপবাদ রটনাকারীরা শাস্তি হিসেবে ৮০টি বেত্রাঘাত সাজাপ্রাপ্ত হন।[২৩]

মৃত্যুসম্পাদনা

আয়িশা রোগে আক্রান্ত হয়ে ৫৮ হিজরি সনের ১৭ই রমজান (১৬ই জুলাই, ৬৭৮ খ্রিষ্টাব্দ) মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স ছিল ৬৮ বছর। সাহাবী আবু হুরায়রা(রা.) তারাবিহ্'র নামাজের পর তার জানাজা পড়ান এবং বাকি কবরস্থানে তাকে কবরস্থ করা হয়।[৪০]

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.