আল্লাহর ইবাদতেই কাটান জুম্মা বার (Jumma)


আল্লাহর ইবাদতেই কাটান জুম্মা বার (Jumma)

আরবি মাসের হিসাব অনুযায়ী বৃহস্পতিবার সূর্য ডোবার সাথে সাথে শুক্রবাররের দিন শুরু হয়। অন্তর্জাতিক হিসাবে ২৪ ঘন্টায়  ১ দিন। তাই শুক্রবার সন্ধার আগেই আমাদেরকে শুক্রবারের বিশেষ ফজিলতের আমলগুলো করতে হবে।
বৃহস্পতিবার রাতে সূরা মূলক পরবেন। আবু হুরায়রা রা থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুল সাঃ বলেছেন, পবিত্র কুরানের একটি সূরায় ত্রিশটি আয়াত রয়েছে। এক লোকের পক্ষে সূরাটি শাফায়াত ( আবেদন )করলো।ঐ লোকটিকে শেষ পর্যন্ত ( এর কারণে ক্ষমা করা হলো। সুরাটি হলো তাবারাকাল্লাজি বিইয়াদিহিল মূলক ) ( আবু দাউদ ১২৬৫, তিরমিযি ২৮৯১)। এছাড়া সুরা কাহাফের প্রথম ১০টি আয়াতের ফজিলত সম্পর্কে বলা হয়েছে, যে ব্যাক্তি জুমার দিনে সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার ঈমানের নূর এক জুম্মা হতে আরেক জুম্মা পর্যন্ত বিচ্ছুরিত হতে থাকবে (সহিহ তারগিব ৭৩৬)। রাতে ঘুমানোর সময় হাদিছে বর্ণিত দোয়া সমূহ পড়ে ঘুমাবেন।শেষ রাতে উঠে তাহাজ্জুদ নামাজ আদায় করবেন।রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম প্রত্যেক স্বলাতের শেষে সূরা ‘ফালাক্ব’ ও ‘নাস’ পড়ার নির্দেশ দিতেন। তিনি প্রতি রাতে শুতে যাওয়ার সময় সূরা ইখলাছ, ফালাক্ব ও নাস পড়ে দু’হাতে ফুঁক দিয়ে মাথা ও চেহারাসহ সাধ্যপক্ষে সমস্ত শরীরে হাত বুলাতেন। তিনি এটি তিনবার করতেন।
 FOZILOT  প্রত্যেক নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা, আকাশ, পৃথিবী, বাতাস, পর্বত সমুদ্র এই দিনটিকে ভয় করে [ইবনে মাজাহঃ১০৮৪, ১০৮৫; মুয়াত্তাঃ৩৬৪]।উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য জুমআর দিনের ফযীলত সমূহঃ ১) সূর্য উদিত হয় এমন দিনগুলোর মধ্যে জুমআর দিন হল সর্বোত্তম দিন। দিনে যা কিছু ঘটেছিল তা হলঃ() এই দিনে আদম (আঃ) কে সৃষ্টি করা হয়েছিল() এই দিনেই তাঁকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয়েছিল() একই দিনে তাঁকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়েছিল [মুসলিমঃ৮৫৪]() একই দিনে তাঁকে দুনিয়াতে পাঠানো হয়েছিল() এই দিনেই তাঁর তওবা কবুল করা হয়েছিল() এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছিল [আবু দাউদঃ১০৪৬]() এই দিনে শিঙ্গায় ফুঁক দেওয়া হবে() এই দিনেই কিয়ামত হবে() এই দিনেই সকলেই বেহুঁশ হয়ে যাবে [আবু দাউদঃ১০৪৭]
TAHAZZOD- বৃহস্পতিবার শেষ রাতে ঘুম থেকে উঠে ৮ রাকাত তাহাজ্জুদ নামাজ পড়বেন। নামাজ শেষে নিচের দোয়াগুলো পড়বেন। ১. লা ইলা-হা ইল্লাল্লা-হু ওয়াহ্দাহূ লা শারীকা লাহূ, লাহুল মুল্কু ওয়া লাহুল হাম্দু ওয়া হুয়া ‘আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর; লা হাওলা ওয়ালা কুউওয়াতা ইল্লা বিল্লা-হ ২. আল্লা-হুম্মা আ‘ইন্নী ‘আলা যিকরিকা ওয়া শুক্রিকা ওয়া হুসনে ‘ইবা-দাতিকা। আল্লা-হুম্মা লা মা-নে‘আ লেমা আ‘ত্বায়তা অলা মু‘ত্বিয়া লেমা মানা‘তা অলা ইয়ান্ফা‘উ যাল জাদ্দে মিন্কাল জাদ্দু।.৩. রাযীতু বিললা-হে রববাঁও ওয়া বিল ইসলা-মে দীনাঁও ওয়া বিমুহাম্মাদিন্ ৪. ইয়া মুক্বাল্লিবাল ক্বুলূবে ছাবিবত ক্বালবী ‘আলা দ্বীনিকা, আল্লা-হুম্মা মুছারিরফাল কবুলূবে ছাররিফ ক্বুলূবানা ‘আলা ত্বোয়া-‘আতিকা।৫. আল্লা-হুম্মা আদখিলনিল জান্নাতা ওয়া আজিরনী মিনান্ না-র (৩ বার)।৬. আল্লা-হুম্মা ইন্নী আসআলুকাল হুদা ওয়াত তুক্বা ওয়াল ‘আফা-ফা ওয়াল গিণা।
ZUMMAR NAMAZ মসজিদে আগে আগে যাওয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার প্রতি আগ্রহী থাকারাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম -এর প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছেন। তিনি বলেন যদি মানুষ জানতে পারত, আজান দেয়া এবং প্রথম কাতারে নামাজ পড়ার মাঝে কি আছে, আর লটারি ব্যতীত সেটি পাওয়া সম্ভব হত না, তাহলে অবশ্যই তার জন্য লটারির ব্যবস্থা করত। এবং যদি জানতে পারত মসজিদে আগে আসার মাঝে কি ফজিলত আছে, তাহলে তার জন্য হামাগুড়ি দিয়ে হলেও আসত।আর যিনি মসজিদে আগে আসবেন, কোন কারণ ছা্ড়া তার প্রথম কাতার বাদ দিয়ে পিছনে বসা উচিত নয়।  মসজিদে প্রবেশকারী দুই রাকাত তাহিয়্যাতুল মসজিদ আদায় ব্যতীত বসবে না। আবু কাতাদাহ আনসারী বলেন, রাসূল () এরশাদ করেন,তোমাদের কেউ মসজিদে প্রবেশ করলে দুই রাকাত না পড়া ব্যতীত কখনোই বসবে না। ইমাম সাহেব জুমার নামাজে খুতবা দানরত থাকা অবস্থায় প্রবেশ করলেও এ’দুই রাকাত আদায় করবে তবে একটু সংক্ষিপ্তাকারে আদায় করবে। জাবের রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেনইমামের খুতবা চলা অবস্থায় তোমাদের কেউ যখন মসজিদে প্রবেশ করবে, তখন সংক্ষেপে দুই রাকাত নামাজ আদায় করবে।
DAN এই দিনে দান খয়রাত করার সওয়াব অন্য দিনের চেয়ে বেশী হয়। ইবনুল কায়্যিম বলেছেন, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের দানের সওয়াব যেমন বেশী তেমনি শুক্রবারের দান খয়রাত অন্য দিনের তুলনায় বেশী। [যাদুল মাআদ]
KHOMA দরূদ শরীফ গুনাহ ক্ষমা হওয়া এবং সকল দুঃখ-কষ্ট ও বিষন্নতা থেকে মুক্তি অর্জনের উপায়:“উবাই ইবনু কা’ব রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি বললাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি আপনার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ করি। আমি কত সময় দরূদ পড়ব? তিনি বললেন: যত তোমার মন চায়। আমি বললাম, চতুর্থাংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, দুই তৃতীয়াংশ? তিনি বললেন: যত মন চায়। তবে আরও বাড়ালে তা তোমার জন্য কল্যাণকর হবে। আমি বললাম, আমি আপনার জন্য পুরো সময়েই দরূদ পড়ব। তিনি বললেন: তাহলে তোমার দুশ্চিন্তা দূর হবে এবং তোমার পাপ ক্ষমা হবে। [তিরমিযী, হাদিস: ১৯৯৯।(হাদিসটি হাসান)] ইবনুল কায়্যিম আরও বলেছেন যে, অন্য মাসের তুলনায় রমজান মাসের মর্যাদা যেমন, সপ্তাহের অন্যান্য দিনের তুলনায় জুম বারের মর্যাদা ঠিক তেমন। তাছাড়া রমজানের কদরের রাতে যেমন ভাবে দোয়া কবুল হয়, ঠিক তেমনি শুক্রবারের সূর্যাস্তের পূর্বক্ষণেও দোয়া কবুল হয়। [যাদুল মাআদঃ১/৩৯৮] ।দো‘আ করা আগে ও পরে দরূদ পাঠ করা দ্বারা দো‘আ কবুল হয়। আর যদি দরূদ পাঠ করা না হয়, তাহলে দো‘আ কবুল হয় না। “আব্দুল্লাহ ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, আমি স্বলাত আদায় করছিলাম। রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  এবং আবুবকর রাদিয়াল্লাহু আনহু ও উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু তাঁর সাথে ছিলেন। যখন আমি বসলাম তখন প্রথমে আল্লাহর প্রশংসা তারপর রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করলাম। অতঃপর নিজের জন্য দো‘আ করলাম। তখন রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  বললেন: তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর, তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। তুমি আল্লাহর কাছে প্রার্থনা কর তোমাকে অবশ্যই দেওয়া হবে। [তিরমিযী, হাদিস: ৪৮৬ (হাসান)]
DOROD“আউস ইবনু আউস রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, সর্বোত্তম দিন হল, জুমার দিন। এই দিনে আদম আলাইহিস সালাম কে সৃষ্টি করা হয়েছে। এই দিনেই তাঁর রূহ কবজ করা হয়েছে, এই দিনেই শিংগায় ফুঁক দেওয়া হবে এবং এই দিনেই লোকেরা বেহুশ হবে। অতএব তোমরা এই দিনে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পাঠ কর। কারণ তোমাদের দরূদ আমার কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। ছাহাবীগণ জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রসূলাল্লাহ! আপনার কাছে আমাদের দরূদ কিভাবে পৌঁছানো হবে? আপনি তো মাটিতে মিশে যাবেন। তখন তিনি বললেন, নিশ্চয় আল্লাহ তা‘আলা জমিনের উপর নবীদের শরীর খাওয়া করা হারাম করেছেন। [আবুদাউদ, হাদিস: ৯২৫। (সহীহ)] ) জুমআর রাতে বা দিনে যে ব্যক্তি মারা যায় আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের ফিতনা থেকে রক্ষা করবেন। [তিরমিযীঃ১০৭৮] বেশী বেশী দরূদ পাঠ করা কিয়ামতের দিন রাসূলুল্লাহ ()এর নৈকট্য লাভের কারণ:হবে ।  ইবনু মাসউদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ () বলেছেন, কিয়ামতের দিন সবচেয়ে বেশী আমার নিকটতম হবে সেই ব্যক্তি, যে আমার উপর বেশী বেশী দরূদ পড়ে। [তিরমিযী, হাদিস: ৯২৩.। সহীহ]তিন- রাসূলুল্লাহ ()এর উপর দরূদ পাঠ করা এবং তাঁর জন্য জান্নাতে উত্তম মর্যাদা প্রার্থনা করা কিয়ামতের দিন তাঁর সুপারিশে ধন্য হওয়ার বড় কারণ।আব্দুল্লাহ ইবন ‘আমর রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর দরূদ পড়বে অথবা আমার জন্য উসীলা (জান্নাতে উচ্চ মর্যাদা)-র দো‘আ করবে তার জন্য আমি কিয়ামতের দিন অবশ্যই সুপারিশ করব। [ইসমাঈল আল-কাযী, হাদিস: ৫০ (সহীহ)] (হাসান)]- একবার দরূদ পাঠ করলে আমল নামায় দশটি পূণ্য লেখা হয়।“আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেন, রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম  বলেছেন, যে ব্যক্তি আমার উপর একবার দরূদ পড়ে আল্লাহ তা‘আলা তার জন্য দশটি ছাওয়াব লিখে দেন।” [ইসমাঈল আলকাযী। (হাদিসটি সহীহ)]- যতক্ষণ রাসুলে আকরাম সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম এর উপর দরূদ পাঠ করা হয়, ততক্ষণ ফেরেশতারা তার জন্য রহমতের দো‘আ করতে থাকেন।
 উম্মতে মুহাম্মদীর জন্য এটি একটি মহান দিন। জুম'আর দিনটিকে সম্মান করার জন্য ইহুদী-নাসারাদের উপর ফরজ করা হয়েছিল; কিন্তু তারা মতবিরোধ করে এই দিনটিকে প্রত্যাখ্যান করেছিল। অতঃপর ইহুদীরা শনিবারকে আর খ্রিষ্টানরা রবিবারকে তাদের ইবাদতের দিন বানিয়েছিল। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা উম্মতের জন্য শুক্রবারকে মহান দিবস ফযীলতের দিন হিসেবে দান করেছেন। আর উম্মতে মুহাম্মদী তা গ্রহন করে নিল। [বুখারী ৮৭৬, ইফা ৮৩২, আধুনিক ৮২৫; মুসলিমঃ ৮৫৫]
লেখকঃমমিনুল ইসলাম মোল্লা, কলামিস্ট, সাংবাদিক ও গবেষক





No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.