দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলাম

দুর্নীতি প্রতিরোধে ইসলাম

 মমিনুল ইসলাম মোল্লা
 দুর্নীতি শব্দটি আমাদের সমাজে বহুলভাবে প্রচলিত। এটি নীতির বিপরীত একটি শব্দ।  দুর্নীতি শব্দের আভিধানিক অর্থ রীতি-বা নীতি বিরুদ্ধ আচরণ, কুনীতি, অসদাচারণ ও নীতিহীনতা ইত্যাদি। দুর্নীতির আরবি প্রতিশব্দ আল-ফাসাদ বা আল ইফসাদ ( ইবন মানযুর লিসানুল অধরব ১ম খন্ড)। ভারতীয় সমাজ বিজ্ঞানী রামনাথ শর্মা বলেন , “ অবৈধ সুযোগ-সুবিধা লাভের জন্য কোন ব্যক্তির নির্দিষ্ট দায়িত্ব পালনে ইচ্ছাকৃত /অবহেলাই হলো  দুর্নীতি । ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা বলেন, ( সুরা আল মায়েদা-৫/৬৪) “তারা পৃথিবীতে ফাসাদ  সৃষ্টি করার ব্যাপাওে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অথচ অধল্লাহতায়ালা ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের কখনোই পছন্দ করেন না।”   ক্ষমতাবান ব্যক্তি বর্গ অনেক সময় জনসাধারণের অর্থ আত্মসাৎ করেন। ইসলাম সকল প্রকার আত্মসাৎ নিষিদ্ধ ঘোষণা ররেছে। এ ব্যাপারে আল্লাহতায়ালা পবিত্র কুরআন মজিদে বলেছেন,“ হে ঈমানদারগণ! তোমরা একে অপরের সম্পদ অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করো না ( নিসা ২৯) ।  তিরমিযি শরিফে বর্ণিত হয়েছে,  আবু উমামাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসুল (সাঃ) বলেন, যে ব্যক্তি কোন মুসলিমের সম্পদ আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে মিথ্যা শপথ করে আল্লাহ তার জন্য জাহান্নাম ওয়াজিব ও জান্নাত হারাম করেছেন। এক ব্যক্তি তাকে জিজ্ঞেস করলো হে আল্লাহর রাসুল যদিও তা ক্ষুদ্র জিনিস হয় ? তিনি বল্লেনঃ যদি তা বাবলা বা দাতন গাছের একটি শাখাও ( ডাল) হয় তবুও।”যে ব্যক্তি অন্যায়ভাবে অন্যের জমির কিয়দাংশ আত্মসাৎ করবে, কেয়ামতের দিন তাকে সপ্ত জমির নীচে ঢুকিয়ে দেয়া হবে, একথা বোখারি শরিফে বর্ণিত হয়েছে।
   সরকারি ও বেসরকারি চাকুরি, টেন্ডার ও অন্যান্য বিষয়ঃ সততা, মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে না দিয়ে বরং নিজের আত্মীয় স্বজন কিংবা অতি পরিচিতদের প্রদান করা ইসলামের দৃষ্টিতে বৈধ নয়। একটি দীর্ঘ হাদিসের একাংশে বলা হয়েছে ,  জনেক বেদুইনের প্রশ্নের জবাবে কবিরা গুনাহ সম্পর্কে নবীজি বলেন, মিথ্যা কসম যা দ্বারা কেউ কোন মুসলিমকে তার সম্পত্তি থেকে ( অন্যায়ভাবে) বঞ্চিত করে” ( আব্দুল্লাহ ইবনে আমর, নাসায়ী)।হালাল-হারাম মেনে চল্লে কেউ  দুর্নীতি করতে পারে না। ইসলাম সব সময় হারাম থেকে বেঁচে থাকার নির্দেশ দেয়। এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন, আল্লাহ তোমাদের হালাল এবং পবিত্র যা দিয়েছেন তা হতে তোমরা আহার কর এবং আল্লাহর অনুগ্রহের জন্য কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর। ( আন নাহল - ১৪)  ইসলাম সব সময় দুর্নীতি প্রতিরোধের শিক্ষা দেয়। মহানবী (সাঃ) বলেন, যার খাদ্য হারাম, পোশাক হারাম, পানীয় হারাম, হারাম উপার্জনের মাধ্যমে তার রক্ত মাংস গড়ে উঠেছে, তার দুআ কিভাবে কবুল হবে? ( মুসলিম) কেউ কোন সরকারি পদে প্রতিষ্ঠিত হলে, তার যে “ক্ষমতা ”তা হচ্ছে জনগণের পক্ষ থেকে আমানত। এ আমানতের খিয়ানত করা যাবে না। হযরত আদী ইবনে উমায়ের (রাঃ ) বর্ণনা করেন, আমি রাসুলে আকরাম (সাঃ) কে বলতে শুনেছি আমরা তোমাদের কাউকে কোন সরকারি পদে নিয়োগ করলাম। এর পর সে একটা সুঁচ পরিমান অথবা তার চেয়ে বেশি কিছু যদি আমাদের থেকে গোপন করে, তবে সে খেয়ানতকারীরুপে গন্য হবে। সে কিয়ামতের দিন তা নিয়ে হাযির হবে। ( মুসলিম)। মিথ্যা কসমের মাধ্যমে মাল অর্জন বৈধ নয়। উসমাইন ইবন আবু শায়খ (রঃ) বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ ইবনে আবু শায়বা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, আব্দুল্লাহ ( ইবন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণিত,  তিনি বলেন, যে এমন ( মিথ্যা ) কসম করে, যা দ্বারা মাল প্রাপ্ত হয়। রাসুলুল্লাহ (সাঃ)  অন্যত্র বলেছেন, কোন ব্যক্তি যদি কোন মুসলমানের সম্পদ ছিনিয়ে নেয়ার মানসে মিথ্যা কসম করে তবে এ দু শেণির ব্যক্তি  আল্লাহ তায়ালার সঙ্গে তার মুলাকাত হবে এমতাবস্থায় যে, আল্লাহ তার  উপর রাগান্বিত থাকবেন। সহিহ বুখারিতে বলা হয়েছে ইয়াকুব ইবন ইব্রাহীম (রাঃ) ----শাবি (রহঃ) থেকে বর্ণিত যে, মুগীরা ইনে শুবা (রহঃ) এর কাতিব ( একান্ত সচিব ) বলেছেন, মুআবিয়া (রাঃ) মুগিরা ইবন শু”বা (রাঃ) এর কাছে লিখে পাঠালেন। যে, রাসুল (সাঃ) এর কাছ থেকে আপনি যা শুনেছেন তার কিছু আমাকে লিখে জানান। তিনি তার কাছে লিখলেন, আমি রাসুলুল্লাহ  (সাঃ)কে বলতে শুনেছি আল্লাহ তোমাদের তিনটি কাজ অপছন্দ করেন।১. অনর্থক কথাবার্তা ২. সম্পদ নষ্ট করা ৩. অত্যধিক সওয়াল করা। দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদ আহরণ করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়। মুসলিম শরিফে বর্ণিত হয়েছে- হারমালা ইবনে ইয়াহইয়াহ ইবনে আব্দুল্লাহ ইবনে ইমরান আত তুর্জীবি ----আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন ব্যভিচারী ব্যক্তি ব্যভিচারে লিপ্ত থাকা অবস্থায় মুমিন থাকে না,  চুরি করার সময় চোর ঈমানদার থাকে না। মদ্যপায়ী ও মদ্যপান করার সময় মুমিন থাকেনা, অন্য এক হাদিসে এসেছে জনসমক্ষে মূল্যবান সামগ্রী লুটেরা যখন লুট করতে থাকে তখন সে মুমিন থাকে না। ”
আমাদের দেশ থেকে  দুর্নীতি উচ্ছেদ করতে প্রয়োজন সৎ, যোগ্য ও তাকওয়াবান ব্যক্তি। যারা উর্ধতন কর্মকর্তার ভয়ে নয় একমাত্র আল্লাহর ভয় ও ভালবাসায় দুর্নীতি থেকে বেঁচে থাকবে। আল্লাহতায়ালা মুসলমানদের জন্য নামাজ, রোজা, হজ্জ ও যাকাত ফরজ করেছেন। এগুলো তাকওয়ার সাথে পালন করলে অতি সহজেই দুর্নীতি থেকে সহজেই বেঁচে থাকা যায়। সুরা আনকাবুত (আয়াত-৪৫) এ আল্লাহ বলেন, “ নিশ্চয় সালাত বা নামাজ ( মানুষকে) যাবতীয় অন্যায় ও অশ্লীল কাজ হতে ফিরিয়ে রাখে। ” মুসলমান মাত্রই জানেন দুনিয়ার জীবন সংক্ষিপ্ত , একদিন তাদেরকে মহান আল্লাহর কাছে ফিরে যেতে হবে। আখিরাতের জীবন সম্পর্কে ধারণা এবং হিসাব নিকাশ সম্পর্কে ধারণা থাকলে কোন মুসলমান অপরাধ ও  দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়তে পারে না।
লেখকঃ  রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক ধর্মীয় গবেষক  ও সাংবাদিক, কুমিল্লা।


No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.