দাজ্জাল যে দ্বীপে অবস্থান করছে সেটি কোথায় ?

দাজ্জাল যে দ্বীপে অবস্থান করছে সেটি কোথায় ?

কিয়ামতের কতগুলো আলামত রয়েছে, এর মধ্যে দাজ্জালের আবির্ভাব অন্যতম। সে নিজেকে প্রভূ দাবী করেবে, যারা তার প্রতি ঈমান না আনবে সে তাদের প্রতি ক্ষুব্দ হবে। সে সময় যেসমস্ত মুসলমান জীবিত থাকবেন তাদের ঈমান রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়বে। তবে তাকওয়াবান লোকেরা আল্লাহর রহমতে রক্ষা পাবেন। আবু বকর সিদ্দিক ( রাঃ) থেকে বর্ণিত ,  তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে বলেছেন- দাজ্জাল পূর্ব দিকের একটি স্থান থেকে প্রকাশ পাবে। এ স্থানটিকে বলা হবে খোরাসান ( ইবনে মাজাহ)। মিথ্যা প্রভূ দাবীদার দাজ্জাল কখন আসবে?  এ নিয়ে সকল যুগের মানুষই আশংকা প্রকাশ করেন। দাজ্জাল ঐ সময় আসবে যখন জনগণ তার বিষয়ে অন্যমনষ্ক হয়ে যাবে, এমনকি ইমামরাও মসজিদগুলোতে তার ব্যাপারে আলোচনা করার কথা ভুলে যাবে। হাদিসে আছে  তামিম দারী নামক এক খৃষ্টান লোক মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে একটি ঘটনা বলে। লাখম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশজন লোকের সাথে সে সাগরে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে তারা ৩০ দিন পর্যন্ত সাগরে অবস্থান করে অবশেষে একটি দ্বীপে আশ্রয় নেয়। তারা হঠাৎ একটি অ™ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকায় প্রাণীটির অগ্র -পশ্চাত নির্ধারণ করতে ব্যর্থ হল। তারা বল্ল অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বল্লঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। তারা বল্ল- কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী ? অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ঈঙ্গিত করে বল্লঃ হে লোক সকল। তোমরা এই্ ঘরের ভেতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও।তামিমদারী বল্লেন, এত বড় আকৃতির মানুষ সে কখনও দেখেনি। তার হাত দুটিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়েছে। দাজ্জাল যে দ্বীপে অবস্থান করছে সেটি কোথায় এ নিয়ে মত বিরোধ রয়েছে। মুসলিম শরিফে বর্নিত ফাতেমা বিনতে কাইস (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন- সতর্ক হও। দাজ্জাল সিরিয়া বা ইয়ামেনের সমুদ্রে অবস্থান করছে। নাওয়াস ইবনে সামআন (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুল (সাঃ) ইরশাদ করেছেন- দাজ্জাল ৪০ দিন অবস্থান করবে। যার প্রথম দিন হবে ১ বছরের সমান। দ্বিতীয় দিন ১ মাসের সমান তৃতীয় দিন ১ সপ্তাহের সমান এবং এর পর ৩৭ দিন হবে স্বাভাবিক দিন রাত্রির সমান। 
দাজ্জাল কিছু কিছু অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবে। এগুলো দেখে সাধারণ দুর্বল ঈমানদার মুসলমানরা বিভ্রান্ত হবে। সে নিজেকে প্রভূ দাবী করবে। মুমিন বান্দাগণ মিথ্যুক দাজ্জালকে চিনতে পারবে। মুমিনগণ তাকে বিশ্বাস করবে না। কারণ সে একজন অক্ষম , সে পানাহার করে, সে নিদ্রা যায়, পেশাব পায়খানা করে। দাজ্জালের এক চোখ ( কোন কোন বর্ণনাতে দুই চোখ) অন্ধ থাকবে। এব্যপারে আয়েশা (রাঃ) বলেন, - তিনি দাজ্জালের কথা শুনে ভয়ে কাঁদছিলেন। তখন নবি (সাঃ) বলেন, যদি আমার বর্তমানে দাজ্জাল আসে তাহলে তোমাদের সকলের পক্ষ থেকে তিনিই যথেষ্ট । আর যদি সে পরে আসে তাহলে তার সম্পর্কে নবিজি বলেন, “ তোমরা জেনে রাখ তোমাদের প্রতিপালক অন্ধ নন।”দাজ্জাল থেকে মুমিনদের দূরে থাকতে হবে। তার সংস্পর্শে এলে প্রকৃত ঈমানদাররাও বিভ্রান্ত হয়ে পড়বেন। অন্য এক হাদিসে এসেছে জনগণ দাজ্জালের ভয়ে পাহাড়ে গিয়ে আশ্রয় নিবে। এ সময় আরব মুসলমানদের সংখ্যা কমে যাবে। আনাস ইবনে মালেক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (রাঃ) ইরশাদ করেছেন, মক্কা ও মদীনা ছাড়া এমন কোন শহর নেই। যেখানে দাজ্জাল প্রবেশ করতে পারবে না। মক্কা ও মদীনার প্রবেশপথগুলোতে ফেরেশ্তারা কাতারবন্দী হয়ে তলোয়ার হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে।  এ সময় ৩ বার ভূমিকম্প হবে। এতে ভয় পেয়ে মুনাফিক ও কাফিরগণ দাজ্জালের নিকট চলে যাবে। নাওয়াস বিন সামওয়ান থেকে বর্ণিত নবি (সাঃ) কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ দ্রæত গামী বাতাস সৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সেরকম হবে। 
দাজ্জালের সাথে আগুনের নদী ও পানির নদী থাকবে। কিন্তু মানুষ যেটি আগুন ভাববে আসলে সেটি হচ্ছে পানি আর যেটি পানি হিসেবে দেখবে সেটি আসলে আগুন। তার প্রতি ঈমান না আনলে দাজ্জাল তাকে আগুনে ফেলে দেবে। এটি দেখে অন্যরা ভয় পাবে। ভয় পেয়ে তারা তার প্রতি ঈমান আনবে। দাজ্জাল মৃতকে জীবিত করে দেখাবে। শয়তান তখন তাকে তার কাজে সহযোগীতা করবে। এক সময় আল্লাহতায়ালা মাসিহ ইবনে মারিয়মকে দামেস্কের মসজিদের মিনারের নিকট ফেরেস্তাদের সহযোগীতায় পাঠাবেন। আকাশ থেকে আগমনের পর ঈসা (আঃ) দাজ্জালকে খুঁজবেন এবং লুদ নামক স্থানে তিনি তাকে হত্যা করবেন।  নবি করিম (সাঃ) দাজ্জালের ফিৎনায় আমাদের কি করনীয় তা আমাদেরকে শিখিয়ে দিয়ে গেছেন। সুরা কাহাফের প্রথম ১০ আয়াত পড়ার প্রতি তিনি গুরুত্ব দিয়েছেন। আয়েশা (রাঃ ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন- রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) বলেছেন, সালাতে ( দরুদ পাঠের পর) এ দোয়া পাঠ করতেন, “ হে আল্লাহ ! তুমি আমাকে কবরের আযাব , দাজ্জালের ফিৎনা জীবন ও মৃত্যুর ফেৎনা , পাপ ও ঋণ থেকে রক্ষা কর। ( মুত্তাফাকুন আলাইহি)। 
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,প্রভাষক, কলামিস্ট ও সাংবাদিক

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.