সহিহ আকিদায় সালাতে রুকু করার নিয়ম
সহিহ আকিদায় সালাতে রুকু করার নিয়ম
প্রত্যেক মুসলমানের উচিত স্বলাত খুশু ও একাগ্রতার সাথে আদায় করা। আল্ল্লাহ বলেন:—রাসূল (ﷺ) বলেন :—ما من مسلم تحضره صلاة مكتوبة فيحسن وضوءها وخشوعها وركوعها إلا كانت كفارة لما قبلها من الذنوب ما لم تؤت كبيرة وذالك الدهر كله. رواه مسلم :৩৩৫)‘যে কোন মুসলিমের জন্য যখন ফরজ স্বলাতের সময় উপস্থিত হয়, অত:পর সে সুন্দরভাবে ওজু করে এবং সুন্দরভাবে রুকু সেজদা করে, এতে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি সে কোন কবিরা গুনাহ না করে, আর এভাবে সর্বদা চলতে থাকে।’’ (মুসলিম:৩৩৫)আল্লাহ আরো বলেন:
)وَأَقِيمُواْ الصَّلاَةَ وَآتُواْ الزَّكَاةَ وَارْكَعُواْ مَعَ الرَّاكِعِينَ(অর্থ ‘‘আর তোমরা স্বলাত সুপ্রতিষ্ঠিত কর, যাকাত প্রদান কর এবং রুকুকারীদের সাথে রুকু কর।’’ (সূরা আল বাকারাহ, আয়াত: ৪৩)
Before সুরা ফাতেহা শেষ করার পর কুরআনের যে কোন অংশ থেকে সহজ কয়েকটি আয়াত তিলাওয়াত করবে।
Rafyadain তারপর দু’হাত তুলে আল্লাহ আকবর বলে রুকু করবে।
Hat রুকুতে দু’হাত হাঁটুর উপর রাখবে।
Angool আঙ্গুলগুলো খোলা থাকবে আর
matha/pith দুই বাহুকে দুই পার্শ্ব থেকে দূরে রাখবে। মাথা ও পিঠ সমান রাখবে, বাঁকা করবেনা। অতঃপর ‘আল্লাহু আকবর’ বলে মাথা উঁচু করবে এবং দু’হাত কাঁধ পর্যন্ত অথবা দু কানের লতী পর্যন্ত উঠাবে, ডান হাত বাম হাতের বাহুর উপর রাখবে এবং বলবে, ربنا ولك الحمد অথবা ربنا لك الحمد অথবা اللهم ربنا لك الحمد নামাজে প্রশান্তি ও নিষ্ঠা পরিত্যাগ এবং রুকু সিজদায় পিঠ সোজা না করা এবং রুকু থেকে উঠার পর সোজা হয়ে না দাড়ান এবং দুই সিজদার মধ্যে সোজা হয়ে না বসা, অধিকাংশ মুসল্লীর মাঝে এ সব ত্রুটি লক্ষ্য করা যায়। কোন মসজিদই এ ধরণের মুসল্লী থেকে মুক্ত নয়। স্বলাতে একাগ্রতা ও নিষ্ঠা থাকা নামাজের একটি রুকন, যা ব্যতিরেকে স্বলাত সঠিক হয় না। রাসূল (ﷺ) সতর্কবাণী উচ্চারণ করে বলেছেনঃ“কারো স্বলাত ততক্ষণ পর্যন্ত সঠিক হবে না যতক্ষণ না রুকু এবং সিজদায় তার পিঠ সোজা করবে।” (আবু দাউদ ১/৫৩৩; সহীহ আল-জামে ৭২২৪)
doa দ্বিতীয়ঃ রুকুর দো‘আ ও যিকর«سبحان ربي العظيم» (رواه مسلم)উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল ‘আযীম’’অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা বর্ণনা করছি। (মুসলিম)তিনবার বা তার চেয়ে বেশি বলবে।«سبحان ربي العظيم وبحمده»(رواه أحمد وأبو داود والدار قطني والطبراني والبيهقي)উচ্চারণ: ‘‘সুবহানা রব্বীয়াল আ‘যীম ওয়া বিহামদিহি’’অর্থ: আমার মহান রব্বের পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি। (আহমাদ, আবু দাউদ, দারাকুতুনী, ত্ববারানী এবং বায়হাকী)কেউ যদি বেশি বলতে চায় তো বলবেঃ«سبحانك اللهم ربنا وبحمدك اللهم اغفر لي» (متفق عليه)উচ্চারণ: ‘‘সুবহানাকা আল্লাহুম্মা রব্বানা ওয়াবিহামদিকা আল্লাহুম্মাগ ফিরলী।’’অর্থ: হে আল্লাহ! আমাদের রব্ব তোমার সকল প্রশংসা বর্ণনা করছি এবং সকল দোষ হতে পবিত্রতা ঘোষণা করছি, আমাকে তুমি ক্ষমা কর। (বুখারী-মুসলিম)এবং বলবেঃ«سبوح قدوس رب الملائكة والروح» (رواه مسلم)উচ্চারণ: ‘‘সুব্বূহুন কুদ্দূ-সুন রব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।’’অর্থ: ফেরেশতামণ্ডলী ও জিবরাঈলের রব্ব সকল দোষত্রুটি থেকে পবিত্র। (মুসলিম)
«اللهُمَّ لَكَ رَكَعْتُ، وَبِكَ آمَنْتُ، وَلَكَ أَسْلَمْتُ، خَشَعَ لَكَ سَمْعِي، وَبَصَرِي، وَمُخِّي، وَعَظْمِي، وَعَصَبِي»উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা রাকা‘তু, ওয়া বিকা আ-মান্তু ওয়া লাকা আসলামতু, খাশা‘য়া লাকা সাম‘ঈ ওয়া বাসারী ওয়া মুখখী ওয়া ‘আজমী ওয়া ‘আসাবী।অর্থ: হে আল্লাহ! আমি তোমার জন্যই রুকু করি, তোমার প্রতি ঈমান এনেছি এবং তোমার নিকটেই আত্মসমর্পণ করছি, আমার কান, দৃষ্টি, মস্তিষ্ক, হাড় ও মাংশপেশী সকল বস্তু তোমার ভয়ে অবনত হল। (মুসলিম)«سبحان ذي الجبروت، والملكوت، والكبرياء، والعظمة» (رواه أبو داود والنسائي)উচ্চারণ: সুবহানা জীল জাবারূতি ওয়াল মালাকূত ওয়াল কিবরিয়ায়ি ওয়াল ‘আজমাহ্।অর্থ: সকল দোষ হতে পবিত্র যিনি মহাপরাক্রমশালী, বিশাল সাম্রাজ্যের অধিকারী, অসীম গৌরব-গরিমা ও শ্রেষ্ঠত্বের অধিকারী। (আবু দাউদ ও নাসায়ী) উল্লেখিত দুআ গুলি এক এক সময় এক একটি করে পড়া উত্তম।
Ososto bakti অসুস্থ ব্যক্তি কিভাবে স্বলাত আদায় করবে? অসুস্থ ব্যক্তির উপর ওয়াজিব হল- ফরদ্ব স্বলাত দাঁড়িয়েই আদায় করা। যদিও কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়াক বা কোন দেয়ালে হেলান দিয়ে বা লাঠিতে ভর করে দাঁড়াক না কেন। যদিও কোন ভাবেই দণ্ডায়মান হতে সক্ষম না হয় তবে বসে স্বলাত আদায় করবে। উত্তম হল দাঁড়ানো ও রুকুর অবস্থার ক্ষেত্রে চার জানু হয়ে বসবে। রুগির উপর ওয়াজিব হল স্বলাতে রুকু ও সিজদা করা। যদি তা করতে সামর্থ্য না হয় তবে মাথা দিয়ে ইশারা করবে। এ সময় রুকুর চেয়ে সিজদার জন্য মাথাটা একটু বেশি নীচু করবে। যদি শুধু রুকু করতে সক্ষম হয় এবং সিজদা করতে না পারে তবে রুকু করবে এবং ইঙ্গিতের মাধ্যমে সিজদা করবে। আর যদি সিজদা করতে সক্ষম হয়, রুকু না করতে পারে তবে সিজদার সময় সিজদা করবে আর রুকুর জন্য মাথা দিয়ে ইশারা করবে। রুকু সিজদার সময় মাথা নীচু করে যদি ইশারা করতে সক্ষম না হয়, তবে চোখ দিয়ে ইশারা করবে।
Mosgid পুরুষদের জন্য মসজিদে গিয়ে ফরজ সালাতের রুকু মেজদা করা আবশ্যক। আল্লাহ তা’আলা তার স্বীয় বন্ধু ইব্রাহীম আলাইহিস সালামকে বলেন,﴿ أَن طَهِّرَا بَيۡتِيَ لِلطَّآئِفِينَ وَٱلۡعَٰكِفِينَ وَٱلرُّكَّعِ ٱلسُّجُودِ ١٢٥ ﴾ [البقرة: ١٢٥]
“তোমরা ইতেকাফ কারী, তাওয়াফকারী ও রুকু- সেজদাকারীদের জন্য আল্লাহর ঘরকে পবিত্র কর”। [সূরা বাকারা, আয়াত: ১২৫]
Troti সবচেয়ে বড় চুরি হলো নামাজে চুরি করা। রাসূল (ﷺ) বলেছেনঃ“সবচেয়ে জঘন্য চোর হল যে তার নামাজে চুরি করে। তারা বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! কিভাবে নামাজে চুরি করে? তিনি বললেন, রুকু ও সিজদা পূরা করে না” (আহমাদ ৫/৩১০; সহীহ আল-জামে ৯৯৭)আবু আব্দুল্লাহ আল-আশয়াবী হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,রাসূল (ﷺ) তাঁর সাথীদের নিয়ে স্বলাত পড়লেন, অতপর তাদের সাথে বসে পড়লেন। এরই মাঝে একজন লোক মসজিদে প্রবেশ করল এবং স্বলাত পড়তে শুরু করল। সে রুকু সিজদায় ঠোকর মারছিল। তখন রাসূল (ﷺ) বললেনঃ “তোমরা কি একে দেখছ না? নামাজে ঠোকর মারছে, যেমন কাক রক্তে ঠোকর মারে। যে ব্যক্তি রুকু সিজদায় ঠোকর মারে সে হল ঐ ক্ষুধার্ত ব্যক্তির মত যে শুধু একটি দু’টি মাত্র খেজুর খায়, এতে তার কি হবে?” (ইবনে খুজায়মা ১/৩৩২; দেখুন শায়খ আলবানী প্রণীত সিফাতু স্বলাতিন নবী, পৃ: ১৩১)হযরত যায়েদ ইবনে ওহাব হতে বর্ণিত। তিনি বলেন,হযরত হুজাইফা (রা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন সে রুকু সিজদা পূরা করছিল না। তিনি বললেন, তুমি নামাজই পড়নি। যদি তুমি এ অবস্থায় মারা যেতে তাহলে মুহাম্মাদ (ﷺ)-এর দ্বীনের আওতায় তোমার মৃত্যু হতো না।” (বুখারী, ফতহুল বারী ২/২৭৪)নামাজে একাগ্রতা ও নিষ্ঠাহীন ব্যক্তি যখন থেকেই এ বিধানের কথা জানতে পারবে তখন থেকেই তার উপর ফরজ হবে নামাজে এ অভ্যাস চালু করা এবং পূর্বে যা ঘটে গেছে তার জন্য আল্লাহর নিকট তওবা করা। তাকে পূর্বের সব স্বলাত পড়তে হবে না। নিম্নে বর্ণিত রাসূল (ﷺ) এর হাদীস তারা বেলায় প্রযোজ্য হবে না। “তুমি ফিরে গিয়ে আবার স্বলাত পড়, কেননা তুমি নামাজই পড়নি”। (বুখারী, দেখুন ফতহুল বারী ২/২৭৪)
Drot zawa ৩) দ্রুততার সাথে দৌড়িয়ে স্বলাতে শরীক হওয়াঃঅনেকে ইমামের সাথে তাকবীরে তাহরীমা পাওয়ার জন্য বা রুকু পাওয়ার জন্য দৌড়িয়ে বা দ্রুত হেঁটে স্বলাতে শামীল হয়। অথচ এটা নিষিদ্ধ।রাসূলুল্লাহ্ (ﷺ) বলেন, إِذَا أُقِيمَتِ الصَّلَاةُ فَلَا تَأْتُوهَا تَسْعَوْنَ وَأْتُوهَا تَمْشُونَ عَلَيْكُمُ السَّكِينَةُ فَمَا أَدْرَكْتُمْ فَصَلُّوا وَمَا فَاتَكُمْ فَأَتِمُّوا“যখন স্বলাতের ইকামত প্রদান করা হয় তখন তাড়াহুড়া করে স্বলাতের দিকে আসবে না। বরং ধীর-স্থীর এবং প্রশান্তির সাথে হেঁটে হেঁটে আগমণ করবে। অতঃপর স্বলাতের যতটুকু অংশ পাবে তা আদায় করবে। আর যা ছুটে যাবে তা (ইমামের সালামের পর) পূর্ণ করে নিবে।” (বুখারী ও মুসলিম)
লেখক-মমিনুল ইসলাম মোল্লা,সাংবাদিক, কলামিস্ট ও গবেষক

No comments