জিনের আছর ও বদনজরের সুন্নতী চিকিৎসা
জিনের আছর ও বদনজরের সুন্নতী চিকিৎসা
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,রাসুলে আকরাম (সাঃ) যে কোন মুসলমান জিনের মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন । যারা মুত্তাকী বা আল্লাহু ভীরু তাদেরকেও জিন বা শয়তান স্পর্শ করতে পারে । আবু সাঈদ খুদুরী (রাঃ) থেকে বর্নিত , রাসুলে আকরাম (সাঃ) জিনের নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতেন এবং এরপর মানুষের বদনজর থেকেও পানাহ চাইতেন, সুতরাং যখন সুরা ফালাক, নাস ও ইখলাস পড়তেন । অনেকে দাবী করেন তাদের অনুগত জিন রয়েছে। তারা গায়েবী বিষয় জানেন বলে দাবী করেন এবং এ বিষয়ে সাহায্য নেয়ার জন্য জিনদের হাজির করে থাকেন । আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, সে ও তার দলবল তোমাদেরকে দেখে, তোমরা তাদেরকে দেখনা ( সুরা আল আরাফ-২৭)। জিনদের আগুন দিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে । জিনদের মধ্যে একটি শ্রেণী শূণ্যে উড়ে বেড়ায়। অন্য একটি শ্রেনী সাপ ও কুকুরের বেশ ধারণ করে এবং অন্য শ্রেণিটি মানুষের কাছে আসে ও চলে যায়। শয়তানের আছর হলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইতে হবে । আল্লাহ বলেন, আর যদি শয়তানের পক্ষ হতে কোন প্ররোচনা তোমাকে প্ররোচিত করে, তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় চাও । নিশ্চয় তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ ( সুরা আল আরাফ -২০০)। হাদিসে বর্ণিত হয়েছে- রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেন, গত রাতে একটি শক্তিশালী জিন আমার উপর চড়াও হতে চেয়েছিল, তার উদ্দেশ্যে ছিল আমার নামাজ নষ্ট করা । আল্লাহ তার বিরুদ্ধে আমাকে শক্তি দিলেন ( বুখারি- সালাত অধ্যায় )। অনেকে জিনে ধরা রোগীকে মানসিক রোগী বলে ভুল করেন । জিনে ধরা রোগীর কিছু লক্ষণ থাকে এগুলো হচ্ছে- জিনে ধরা রোগী কিছুক্ষণের জন্য বেহুশ হয়ে যায়। কখনো কখনো এ ধরণের রোগীর মুখ থেকে ফেনা বের হয় । জিনে ধরা রোগী প্রায় সময় স্বপ্নে সাপ , কুকুর, বিচ্ছু, বানর শেয়াল দেখে, কখনো কখনো স্বপ্ন দেখে সে উঁ^চু স্থান থেকে পড়ে যায়, জিনে ধরা রোগী সবসময় ভয়ে তটস্থ থাকে । এরা নামাজ পড়া , কোরান তিলাওয়াত, আল্লাহর জিকির ইত্যাদি অপছন্দ করে । সে অল্প সময়ে অনেক দূরে চলে যেতে পারে । সে গাছের অতি সরু ডালে বসে থাকতে পারে । স্ত্রী সন্তানদের সহ্য করতে পারে না। জিন সওয়ার অবস্থায় ঐব্যক্তির ছবি উঠালে ছবি স্পষ্ট হয় না।
কোন কাজে জিনদের সাহায্য নেয়া যাবে না। এতে জিনদের ঔদ্বত্য বেড়ে যায় । তারা এতে উৎসাহ পেয়ে মানুষের উপর আরো বেশি চড়াও হয় । আল্লাপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, আর নিশ্চয় কতিপয় মানুষ কতিপয় জিনের আশ্রয় নিত।ফলে তারা তাদের অহংকার বাড়িয়ে দিয়েছিল ( সুরা জিন -৬)। বোখারী শরীফের একটি হাদিসের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, রাসুলে আকরাম (সাঃ) একটি বাচ্চাকে জিন মুক্ত করেছেন । আমি আল্লাহর রাসুল একথা শুনে জিনটি চলে গেছে । বাচ্চাটির মা রাসুল (সাঃ ) কে হাদিয়া দিয়েছিল , এত বুঝা যায় জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসায় হাদিয়া নেয়া যাবে । তবে রাসুল (সাঃ) হাদিয়ার কিছু অংশ ফেরৎ দিয়েছিলেন । জিনে ধরা রোগীর নিকট কোরানের কিছু অংশ পাঠ করলে উপকার পাওয়া যায়। ঈমাম মুহাম্মদ ইবনে শিরিন (রহঃ) কর্তৃক আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে ৩৩ টি আয়াতের কথা বলা হয়েছে । এ আয়াতগুলো নেয়া হয়েছে সুরা বাকারা, সুরা আরাফ ও অন্যান্য সুরা থেকে । জিনে ধরা রোগীর চিকিৎসার জন্য তাবিজ, কবজ ব্যবহার , লোহা পড়া,ঘর বন্ধক করা, ইত্যাদি তদবির করা ঠিক নয় । তবে কোরান- হাদিসে বর্ণিত দোয়া জিকিরের মাধ্যমে ঝাড় -ফুঁক , তেল পড়া, পানি পড়া দেয়ার অনুমতি রয়েছে।
বদনজরের মাধ্যমে সাধারণ মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বদনজর মূলত হিংসুটে লোকদের হিংসা । হিংসার প্রথম প্রকাশ পায় চোখে দেখার মাধ্যমে । কোন জ্ঞানী ব্যক্তির শরীর ও অঙ্গ প্রতঙ্গ আত্মার প্রতিক্রিয়ার কথা অস্বীকার করতে পারে না। কেননা এটি এমন একটি বিষয় যা দৈনন্দিন জীবনে পরিলক্ষিত হয় এবং আমরা অনুভব করতে পারি । যেমন মানুষের চেহারার লাল রং ধারণ করে যখন তার দিকে কোন লজ্জাকারী ব্যক্তির দৃষ্টি পড়ে । তেমনিভাবে ভয়ের কিছু দেখলে হলদে রং ধারণ করে । আর লোকজন বাস্তবে দেখতে পেয়েছে যে, বদনজরের জন্য মানুষ অসুস্থ হয়ে পড়ে, আর এসব আত্মার প্রভাবে হয়ে থাকে ।
আর যেহেতু আত্মার সম্পর্ক চোখের সাথে খুবই গভীর এজন্য এটাকে চোখে লাগা বলা হয । কিন্তু চোখের নিজস্ব এমন কোন প্রভাব নেই বরং প্রতিক্রিয়া কেবল আত্মার মাধ্যমেই হয়ে থাকে । হিংসুক থেকে হিংসাকৃতের উপর এর নেতীবাচক প্রভাব পড়ে । বদনজর সবসময়ই খারাপ । পবিত্র কুরানুল কারিমে সুরা ইউসুফ ( ৬৭-৬৮) এ ইয়াকুব (আঃ) বলেন, হে আমার প্রিয় সন্তানগন তোমরা সবাই ( শহরে ) কোন এক প্রবেশ পথ দিয়ে প্রবেশ কর । তিনি তাদেরকে জানিয়ে দেন তিনি আল্লাহর পক্ষ থেকে আসা কোন বিপদ থেকে সন্তানদের রক্ষা করতে পারবেন না। এ আয়াতের ব্যাখ্যায় তাফসীরে ইবনে কাসির এ লিখা হয়েছে -তিনি এটি বদনজরের ভয়ে বলেছিলেন । বদনজরের ক্রিয়া বাস্তব কিন্তু এটি তাকদীরকে প্রতিহত করতে পারে না। আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত , তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ)Ñ বলেছেন, তোমরা বদনজরের ক্রিয়া ( খারাপ প্রভাব ) থেকে রক্ষার জন্য আল্লাহতায়ালার সাহায্য প্রার্থনা কর । কেননা তা সত্য ( ইবনে মাজাহ ৩৫০৮)। কোন ব্যক্তির উপর যখন নজর লাগে তখন সে এত বেশি প্রভাবিত হয় যে, সে যেন কোন উঁ^চু স্থানে চড়ল অতঃপর নজর দ্বারা হঠাৎ করে নীচে পড়ে গেল । বদনজরের কারণে মৃত্যু ও হতে পারে । বদনজর মানুষকে কবর পর্যন্ত ঁেপৗঁছে দেয় এবং উটকে পাতিলে ( সহিহ অঅল জামে ১২৪৯ )। বদনজর থেকে মুক্তি পাবার জন্য ঝাড়-ফঁ^ুকের প্রয়োজন রয়েছে। হাদিসের নিয়ম অনুযাযী তা করা যেতে পারে । আমা¥া বিনতে উসাইম (রাঃ) থেকে বর্ণিত যে তিনি রাসুলে আকরাম ( সাঃ )এর নিকট আবেদন করেন জাফরের সন্তানদের নজর লেগেছে আমি কি তাদের ঝাড়-ফঁ^ুক করব ? উত্তরে রাসুলে আকরাম ( সাঃ ) বলেন,- হ্যঁ^া , কোন বস্তু যদি তাকদীরকে অতিক্রম করত তবে বদ নজর তা অতিক্রম করত ( তিরমিজি ২০৫৯)। উম্মুল মুমেনিন সালমা (রাঃ) হতে বর্ণিত । রাসুলে আকরাম ( সাঃ )তার ঘরে একটি বালিকা দেখলেন, যার মুখমন্ডলে জিনের বদনজরের কালো দাগ । তা দেখে তিনি বলেন, তাকে ঝাঁড়-ফুক কর , কেননা তার উপর জিনের বদনজর লেগেছে ” ( বুখারি২০১০/১৭১)।
জিন ও মানুষের বদনজর থেকে ঁ^াচার জন্য আমরা আল্লাহর কাছে পানা চাইব । আবু সাঈদ খুদুরী থেকে বর্ণিত রাসুলে আকরাম (সাঃ) জিনের নজর থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রর্থনা করতেন এবং এরপর মানুষের বদনজর থেকেও পানা চাইতেন, সুতরাং যখন সুরা ফালাক ও নাস অবতীর্ণ হলো তখন অন্য দুআ ছেড়ে দিয়ে এই সুরাদ্বয় দিয়ে প্রার্থনা করতেন ( ইবনে মাজাহ ৩৫৩১)। কোন প্রকার মানসিক সমস্যা বা শারিরিক রোগের জন্য গনকের কাছে যাওয়া উচিত নয়। গনকের পেশা বৈধ নয়। ইমরান ইবনে হোসাইন (রাঃ) থেকে বর্ণিত , রাসুলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন-“যে ব্যক্তি নিদির্ষ্টি কিছুর ভিত্তিতে কোন কিছু অশুভ বলে ঘোষণা দেয় , যে ব্যক্তি গণনা করে, যে ব্যক্তি যাদু করে কিংবা যার জন্য ( তার চাওয়া অনুসারে ) জাদু করা হয় তাদের কেউই আমাদের অন্তর্ভুক্ত নয়। ”।লেখকঃ প্রাক্তন প্রভাষক, শাহতলী কামিল মাদ্রাসা, চাঁদপুর
No comments