জান্নাতি দলে কারা আছেন ?

উপসম্পাদকীয় বিভাগ/ধর্ম

জান্নাতি দলে কারা আছেন ?

মমিনুল ইসলাম মোল্লা

ইহুদীরা একাত্তর ফিরকায় বিভক্ত হয়েছে এবং খৃষ্টানেরা হয়েছে বাহাত্তর ফিরকায় । আমার  উম্মাহ বিভক্ত হবে তিয়াত্তর ফিরকায়, আর এদের প্রত্যেকটি হবে জাহান্নামী , একটি ব্যাতীত । জানতে চাওয়া হলো !“ তারা করা , হে আল্লাহর রাসুল , তিনি বলেন, আমার একটি দল সত্যের অনুসরণ করতে থাকবে এবং বিজয়ী হবে এবং তাদের যারা অভিশাপ দেয় কিংবা বিরোধিতা করে তারা সেই দলটির কোন ক্ষতি করতে পারবে না ।অর্থাৎ আল্লাহ এবং আল্লাহর রাসুলকে অনুসরণকারী দলই হচ্ছে জান্নাতী দল ।হাদিসে মিল্লাত শব্দটি ব্যবহার করা হয়েছে।  মিল্লাত অর্থ তরীকা বা পথ-পন্থা । কিন্তু প্রয়োগিক অর্থে  “ আহলে মিল্লাত” বা তরীককার অনুসারী একটি দল । অর্থাৎ হক হোক বা বাতিল হোক , মিল্লাত বলা হয় । ঐসব কাজ ও কথাকে যার উপর একদল লোক একত্রিত হয় । মক্কার মুশরিকরা বিভিন্ন দলে বিভক্ত ছিল ।তারা গোত্রীয় স্বার্থকে দীনের ব্যাপারে প্রাধান্য দিত । আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, নিশ্চয় যারা তাদের দীনকে বিচ্ছিন্ন করেছে এবং বিভিন্ন দলে বিভক্ত হয়েছে তাদের কোন দায়িত্ব আপনার নয় । মুসলমানদের মধ্যে বিভক্তির কারণে মুসলিম সমাজ ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে । দলাদলির শিকার হয়ে জীবন দিতে হচ্ছে। দলাদলির শিকার হয়ে জীবন দিতে হয়েছে হযরত আলী (রাঃ) কে , তার পুত্র হোসাইন, আশারায়ে মুবাশ্বারার সদস্য হযরত শোয়ায়েব, হযরত তালহা এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন যোবায়েরকে । আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন আমাদেরকে বিভক্ত হতে নিষেধ করেছেন । পবিত্র কুরআন মজিদে বলা হয়েছে !“ আর তোমরা তাদের মতো হয়ো না ( অর্থাৎ ইহুদী নাছাড়াদের মত হয়োনা) যারা তাদের নিকটে ( আল্লাহর) স্পষ্ট প্রমানাদি এসে যাওয়ার পরেও নিজেরা ফেরকায় বিভক্ত হয়ে গেছে এবং পরস্পরে মত বিরোধ করেছে। বস্তুত তাদের জন্য রয়েছে ভয়ংকর আযাব ( আল ইমরান ৩/১০৩)। বিভক্তির মাধ্যমে সংঘাতের সৃষ্টি হয় । তাই আকিদাগত বিভক্তি খুবই মারাত্বক। পবিত্র কুরআনে আল্লাহ বলেন, হে নবী ) আপনি বলে দিন যে, তিনি এব্যাপারে ক্ষমতাবান যে, তিনি তোমাদের উপরে কোন আযাব উপর থেকে বা তোমাদের পায়ের নীচ থেকে অথবা তোমাদেরকে বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত করে সবাইকে মুখামুখি করে দেবেনএবং পরস্পরকে আক্রমণের স্বাদ আস্বাদন করাবেন (সুরা আনআম৬/৬৫)। অন্য আয়াতে আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, “ নিশ্চয় যারা স্বীয় ধর্মকে খন্ড- বিখন্ড করেছে এবং অনেক দল হয়ে গিয়েছে, তাদের সাথে আপনার কোন সম্পর্ক নেই । তাদের বিষয়টি আল্লাহর উপর ন্যস্ত। অতঃপর তিনি জানিয়ে দিবেন যা কিছু তারা করে থাকে ( আনআম ৬/১৫৯) । যারা কুরআন ও সহিহ হাদিস পেয়েও বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ইচ্ছে করে তর্কে -বিতর্কে লিপ্ত হয তারা বাতিল দলের আওতাভ’’ক্ত, আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন- তোমরা তাদের মত হয়োনা, যারা ফের্কাবন্দী করেছে এবং পরস্পরে বিরোধ করেছে স্পষ্ট বিধানসমূহ এসে যাওয়ার পরও তাদের জন্য ভংকর আযাব (আল ইমরান ৩/১০৫)। 
আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন-হে কিতাবীরা তোমরা তোমাদের দ্বীনে অন্যায় বাড়াবাড়ি করো না। আর যে সম্প্রদায় ইতিপূর্বে পথভ্রষ্ট হয়েছে ও অনেকে পথভ্রষ্ট করেছে এবং সরল পথ থেকে বিচ্যুত হয়েছে, তাদের প্রবৃত্তির অনুসরণ করো না( মায়িদা-৭৭)। মুসনাদে আহমদ ও আবু দাউদ শরীফে বর্ণিত হয়েছে, ৭২ দল জাহান্নামী হবে, একটি দল জান্নাতী হবে। আর তারা হলো আল জামাত। আর আমার উম্মতের মধ্যে সত্বর এমন একদল লোক বের হবে, যাদের মধ্যে প্রবৃত্তি পরায়নতা এমনভাবে প্রবহমান হবে, যেভাবে কুকুরের বিষ আক্রান্ত ব্যক্তির সারাদেহে সঞ্চারিত হয়। কোন একটি শিরা বা জোড়া বাকী থাকে না। যেখানে উক্ত বিষ প্রবেশ করে না। ( তিরমিজি )। বাহাত্তর দল সম্পর্কে বিসতারিত বিবরণ পাওয়া যায় ইবনুল হাযমের আল ফিছাল, শাহারস্তানীর আল মিলাল,আব্দুল ক্বাদের জ্বিলানীর কিতাবুল গুনিয়াহ, শ্বাতেবীর আলইতিছাম গ্রন্থ অন্যতম। মুফস্সিরে কেরামের বর্ণনানুযায়ী বাতিল আকিদার দলসমূহ হচ্ছে- খারেজী, শিয়া,মুর্জিয়া, কাদেরিয়া, প্রত্যেকটি দল আবার ১৮টি দলে বিভক্ত। সবগুলো মিলে৭২টি দল হয়। আবার কেউ কেউ মুতাযিলা, মুশাবিয়া, জাবারিয়া, নাজ্জারিয়া, হারুনিয়া, ( খারেজী ) কাদরিয়া, জাহামিয়া, মুর্জিয়া, রাফেয়াহ, জাবারিয়ার কথা বলেছেন। যারা ধর্মের নামে মুসলমানদের আল্লাহ বিমুখী করে তাদের সাথে কোন প্রকার সম্পর্ক রাখা যাবে না । আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন  বলেন, হে ঈমানদারগণ পন্ডিত এবং সংসার বিরাগীদের মধ্যে অনেকেই তো জনসাধারণের ধন সম্পদ অন্যায়ভাবে খায় এবং মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে নিবৃত করে। ( তওবা ৩৪)
রাসুলে আকরাম (সাঃ)  বলেছেন- মানবজাতির শ্রেষ্ঠতম প্রজন্ম হল আমার  প্রজন্ম, এরপরে আছে যারা তাদের পরে আসবে, এরপর তাদের পরবর্তী যারা আসবে...( বুখারি ২৬৫২) । তাই সালফে সালেহীন যে পথ অনুসরণ করেছেন আমরা তাদেরকেই অনুসরণ করব।  মুসলমানরা সরল পথে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করবেন । অন্য তরীকায় বা ভিন্ন পথে গেলে সাফল্য লাভ করা যাবে না । “সরল পথ আল্লাহ পর্যন্ত পৌছে এবং পথগুলোর মধ্যে কিছু বক্র পথও রয়েছে। তিনি ইচ্ছে করলে তোমাদের সবাইকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন (সুরা নাহল ১৬/৯)। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন  আমাদের উপর তিনটি ব্যাপারে খুশী হন । প্রথমতঃ আমরা কেবলমাত্র তারই ইবাদত করব এবং তার সঙ্গে কাউকে শিরক করবনা। দ্বিতীয়তঃ আমরা সকলে মিলে আল্লাহর রজ্জুকে মজভুতভাবে আঁকড়ে ধরব এবং পরস্পর বিচ্ছিন্ন হব না।  আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন  যাদেরকে আমাদের উপর শাসন ক্ষমতা দান করেন তাদেরকে সৎ পরামর্শ দেব ( মুসনাদে অহমদ৮৭০৩)। কেউ যদি নবিজীর জন্মের ১৪০০ বছর পর বলে আমাদের দলটি হক দল হিসাবে ইজমা হয়ে গেছে তাহলে সেটি বিশ্বাসযোগ্য নয় । কেননা ইজমা বলতে সাহাবায়ে কেরামের ইজমাকে বুঝায়। কেননা ঈমাম আহম্মদ বিন হাম্বল (রহঃ) বলেন, ( ছাহাবীগণের পরে) যে ব্যক্তি ( উম্মতের) ইজমা এর দাবী করে সে মিথ্যাবাদী ”। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন কে বাদ দিয়ে অন্যকে ডাকা যাবে না। আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, তোমাদের রবের কাছ থেকে যা কিছু পাঠানো হয়েছে, তোমরা কেবল তারই অনুসরণ করো। তাকে ছেড়ে অন্য কোন আউলিয়া বা বন্ধুদের অনুসরণ করোনা । তোমরা খুব কমই উপদেশ গ্রহণ করে থাক ( আল আরাফ৭/৩)। মক্কার মুশরেকরাও আল্লাহকে পাওয়ার চেষ্টা করত। তারা মনে করত আল্লাহতায়ালা যে কাজটি ভালবাসেন আর নেককার জনগণও সেটা ভালবাসেন। মহান আল্লাহপাক রাব্বুল আলামিন বলেন, ওরা আল্লাহকে ছেড়ে এমন কিছুর ইবাদত করে যারা তাদের না কোন ক্ষতি করতে পারে, না কোন উপকার করতে পারে এবং এরা বলে এরাই আল্লাহর কাছে শাফায়াতকারী (ইউনুস১০/১৮)। অন্য যায়গায় আল্লাহ বলেন, যারা আল্লাহ ছাড়া অন্যকে অলী হিসাবে গ্রহণ করে, তারা বলে আমরা ওদের ইবাদত করি কেবল মাত্র এইজন্য যে,ওরা আমাদেরকে আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন এর একান্ত সান্নিধ্যে পৌঁছে দেবে ( যুমার ৩৯) । কুরআন হাদিস বাদে বাপ-দাদাদের অনুসরণ করা জাহেলীয়াতের অন্তভর্’ক্ত । আল্লাহ বলেন, এমনিভাবে আপনার পূর্বে যখনই কোন জনপদে ভয় প্রদর্শনকারী পাঠিয়েছি সেখানকার বড়লোক বা মাতব্বর শ্রেণির লোকেরা বলেছে আমরা আমাদেও  বাপ- দাদাদেরকে একটি জীবনাদর্শে পেয়েছি। অতএব আমরা তাদেরই পথ পন্থা অনুসরণ - অনুকরণ করবো ( সুরা আযযুখরফ৪৩/২৩) অন্য আয়াতে বলা হয়েছে আর তাদেরকে যখন বলা হয় , আল্লাহ যা নাযিল করেছেন তোমরা তা অনুসরণ কর। তারা বলে বরং আমরা আমাদের পিতৃপুরুষদেরকে যাতে পেয়েছি তারই অনুসরণ করব। শয়তান যদি তাদেরকে জ্বলন্ত আগুনের দিকে ডাকে, তবুও কি ? তারা পিতৃপুরুষদের অনুসরণ করবে ?” (লোকমান ২১)। বাতিলপন্থীরা তাদের অনুসারীদের সংখ্যা দিয়ে হক/বাতিল নির্ধারণ করে। কেউ কেউ বলেন এত বড় আলেম কথাটি বলেছেন এটি কি মিথ্যা হতে পারে ? ওমুক পীর সাহেবের লক্ষ লক্ষ ভক্ত তারা কি ভুল পথে আছে ? আরবের জাহেলরাও এভাবে হক-বাতিলের পার্থক্য করত। কোরান-হাদিস বাদে কোন প্রবৃত্তির অনুসরণ করা যাবে না।
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা, রাষ্ট্রবিজ্ঞানের  প্রভাষক , সাংবাদিক ও  ধর্মীয় গবেষক, কুমিল্লা।


No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.