ব্যবসায় অতিরিক্ত মুনাফা কাম্য নয়

ব্যবসায় অতিরিক্ত মুনাফা  কাম্য নয়

মমিনুল ইসলাম মোল্লা 
 টাকা- পয়সা , ধন-দৌলত অর্জনের উপায় হিসাবে হালাল পথে ব্যবসা করা জায়েজ। মিথ্যার আশায় নিয়ে অবৈধ উপায়ে সম্পদ উপার্জন করে লাভবান হওয়া গেলেও তা অবধৈ। লাভ হচ্ছে প্রবৃদ্ধি, উদ্বৃত্তি, অবশিষ্টাংশ , বাড়তি অংশ ইত্যাদি। পারিভাষিক অর্থে লাভ হচ্ছে পূজির বর্ধিতাংশ আর এর বিপরীতে লোকসান হচ্ছে পূজির ক্ষয়প্রাপ্ত অংশ। সাধারণ অর্থনীতিবিদগণ এর মতে মুনাফা হচ্ছে উদ্বৃত্ত মূল্য। ইসলামী অর্থনীতিবিদদের মতে লাভ হচ্ছে পূজি প্রবৃদ্ধি বা বৃদ্ধি যা ব্যবসার মাধ্যমে হয়ে থাকে। মুনাফা কতটুকু করা যাবে ইসলাম তা নির্দিষ্ট করে দেয় নি। তাই ন্যায় সঙ্গত পরিমানে মুনাফা করা যাবে। সাধারণ অর্থনীতিতে মুনাফার অনেক কারণ বর্ণণা করা হয়েছে। কেউ বলেছেন, মুনাফা হচ্ছে উদ্যোগ ও ঝুঁকি গ্রহণের পারিতোষিক । কেউ বলেছেন লাভ হচ্ছে বিনিয়োগ ও পরিশ্রম করার পুরস্কার। একটি দেশে উৎপাদন যত বাড়বে সে দেশটি তত বেশি সম্পদশালী হবে। মুনাফা অর্জনের পথ সহজ না হলে ব্যবসায়ীরা ঝুঁকি নিতে চাইবে না। প্রকৃতপক্ষে মুনাফা আসে উৎপাদন থেকে। মানুষ উৎপাদন করে , উৎপাদিত সম্পদ বিক্রি করে লাভ পায়। উৎপাদন হচ্ছে সম্পদ বৃদ্ধি ও মুনাফা অর্জনের একমাত্র পথ। শিল্পপতি ও ব্যবসায়ীগন বিনিয়োগও বর্ধিত উৎপাদনের মাধ্যমে মুনাফা অর্জন করে থাকে। বিনিয়োগ হচ্ছে উৎপাদন করার উদ্দেশ্যে কোন পণ্য - সামগ্রী অর্থ বা সেবা ক্রয় করা অতঃপর উৎপাদিত সম্পদ বিক্রি করে লাভ করে। অন্য কথায় বিনিয়োগ মানে হচ্ছে অর্থ বা পুঁজিকে ভিন্নতর অর্থ বা পণ্য বা সেবায় রুপান্তর করে। ইসলাম অতিরিক্ত মুনাফা সমর্থন করেনা। ইসলামী অর্থনীতিতে মুনাফার সীমা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে মোফাস্সিরগন  বলেছেন যে, ইসলাম মুনাফার অনুমোদন দিয়েছে সীমাবদ্ধ অর্থে সুতরাং ইসলামে মুনাফা হবে স্বাভাবিক কখনোই অতিরিক্ত হবে না। 
ব্যবসা ক্ষেত্রে ক্রেতা-বিক্রেতার সম্মতি খুবই প্রয়োজন। সম্মতির মাধ্যমে বৈধ উপায়ে সীমিত পর্যায়ে লাভ করা যেতে পারে। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিনের সিফাত হচ্ছে তোমরা পারস্পরিক সম্মতির ভিত্তিতে ব্যবসা কর। ( ৪ঃ৯) এব্যাপারে রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন “ নিশ্চয় ক্রয়  –বিক্রয় পারস্পরিক সম্মতির উপর ভিত্তিশিীল ( ফাতহুল বারি)। ব্যবসাক্ষেত্রে ইনসাফের প্রয়োজনীয়তা অনেক বেশি। ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে ক্রেতা –বিক্রতা কেউ যেন না ঠকে। কেউ যেন অতিরিক্ত লাভবান ও না হয়। এতে ইনসাফ ও সুবিচার বহাল থাকা উচিত। সুষ্ঠুভাবে ক্রয়-বিক্রয় সম্পন্ন হলে ক্রেতা –বিক্রেতা কারও কোন আফসোস থাকে না। ইনসাফপূর্ণ ক্রয়-বিক্রয়ে মূল্যের সমতা থাকা চাই। সকল প্রকার ক্রয়-বিক্রয় দুটি পক্ষ থাকে , একটি ক্রেতা পক্ষ –অপরটি ব্রিক্রতা পক্ষ। বিক্রেতা সাধ্যমত কোন পন্য , সেবা অথবা মুদ্রা বিক্রি বা বিনিময় থাকে না। ক্রেতা এগুলো নগদ অর্থ, পন্য বা সেবার বিনিময়ে তা লাভ করে থাকেন। পন্য বা সেবা একই জাতের হতে পারে অথবা ভিন্ন জাতের হতে পারে। ইনসাফপূর্ণ ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন হতে পারে। ইনসাফপূর্ণ ভাবে ক্রয় বিক্রয় সম্পন্ন করতে হলে উভয়ে পক্ষের পন্য বা সেবমূল্যকে সমান করে নিতে হবে। এক্ষেত্রে একটি অন্যটির কাউন্টার ভ্যালু। ইনসাফ বা সুবিচার এটাঁই দাবী। কাউন্টার ভ্যালু মানে মূল্যের সমতা। ইসলাম ী অর্থনীতিতে ইসলামের কোন বিধি বিধান লংঘন না করে সর্বোচ্চ যে মুনাফা অর্জন  করা সম্ভব সেটাই হবে মুনাফার উর্ধ্বতন সীমা। অপরদিকে উৎপাদনকারীর জন্য ভালভাবে জীবন যাপন এবং অতীত লোকসান পূরনের জন্য যথেস্ট মুনাফাই হচ্ছে লাভের নি¤œসীমা। উর্ধতন ও নি¤œতম সীমার মধ্যবর্তী যে কোন পরিমান মুনাফাই হচ্ছে “ সন্তোষজনক মুনাফা । ব্যবসায়ীরা মুনাফা অর্জনের জন্য বন্ধুত্ব , ভ্রাতৃত্ব , মানবিক বিবেচনার দিকে খেয়াল না করলে ভুল হবে। মুসলমান ব্যবসায়ীগন শরীয়তের সীমার মধ্যে থেকে মুনাফা অর্জন করতে হবে। 


ইবাদা ইবনে সামিত বর্ণিত হাদিসে রাসুল (সাঃ) “তোমরা যে কোন দামে বিক্রি করতে পার” বলে ক্রেতা –বিক্রেতা কর্তৃক নির্ধারিত যে কোন দামকেই বৈধ করে দিয়েছেন। এ বানী দ্বারা তিনি বাজারে চাহিদা ও যোগানের দ্বারা নির্ধারিত দামের প্রতিই ঈঙ্গিতি করেছেন। আর এ পদ্ধতিতে নির্ধারিত দামে যখন যে পরিমান মুনাফা আসে সেটি গ্রহণ করা বৈধ। 
সম্পদের প্রতি অতিরিক্ত ভালবাসা রাখা উচিত নয়। লোভের কারণে ব্যবসায়ীরা অনেক সময় হালাল ব্যবসাকে হারাম করে নেয়। একারণেই অন্যায় যুলুম, ধোকাবাজি, প্রতারণা, মুনাফাখোরী , কালোবাজারী, মওজুদদারী, ইত্যাদি কওে অতিরিক্ত মুনাফা লাভ করা নিষেধ। অতিরিক্ত মুনাফা লাভের আশায় ব্যবসায়ীরা কখনো কখনো মিথ্যা বলে থাকেন। এটা ঠিক নয়। যে কোন ব্যাপারে মিথ্যা বলা মুনাফেকীর লক্ষণ। সুরা বাকারায় ( ১৬ নং আয়াত) মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামিন বলেন, এরাই সৎ পথের বিনিময়ে ভ্রান্ত পথ ক্রয় করেছে। সুতরাং তাদের ব্যবসা লাভজনক হয়নি, তারা সৎপথে পরিচালিত ও নয়। সম্পদের লোভ মানুষকে আখিরাত বিমুখী করে। তাই শুধু মাত্র সম্পদের লোভে বা মুনাফার আশায় ব্যবসা করা যাবে না। জাবির (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসুলে আকরাম (সাঃ) বলেছেন, কোন শহরবাসী যেন কোন গ্রামবাসীর পক্ষে কেনাবেচা না করে। লোকদের স্বাভাবিক অবস্থ্ায় ছেড়ে দাও। আল্লাহতায়ালা তাদের একের দ্বারা অপরের রিযিেিকর ব্যবস্থা করেন ( মুসলিম) । কুরবানির বকরী কিনতে গিয়ে এক সাহাবী ( হাকিম বিন হিযাম রাঃ ) শতকরা ১০০ ভাগ মুনাফা করেন। এরপরেও রাসুলুল্লাহ (সাঃ ) তার ব্যবসায় বরকত দেওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেছেন  ( জামে তিরমিজি)।  তবে মুনাফা আদায়ের ক্ষেত্রে জুলম করা যাবে না। কেননা ইসলাম সব ধরণের জুলুমকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে।   ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মূল ভিত্তি হবে পারস্পরিক সহযোগীতার, পারস্পরিক কল্যান, সমষ্টিক স্বার্থ এবং ন্যায়সঙ্গত লেনদেন ও ক্রয়-বিক্রয়। 
লেখকঃ মমিনুল ইসলাম মোল্লা,   প্রভাষক , সাংবাদিক ও  গবেষক, কুমিল্লা। ০১৭১১৭১৩২৫৭    সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স
আলোকিত বাংলাদেশ ২৯.০৫.১৭ 
ওহির আলোকে ঃ মুসলানদের দৈনন্দিন জীবনে কোরআন 
আল্লাহ বলেন, “ওহে যারা ইমান এনেছে । আল্লাহকে ভয়- ভক্তি করো। আর সরল সঠিক কথা বলো ( আহজাব-৩৩/৭০)।
এ ব্যাপারে আল্লাহ বলেন, “ যখন তোমরা এটি শুনেছিলে তখন কেন মুমিন পুরুষরা ও মুমিন নারীরা তাদের নিজেদের বিষয়ে সৎ ধারণা মনে আনে নি। এ এক ঢাহা মিথ্যা। ( নূর-২৪/১২)
আল্লাহতায়ালা বলেন, “ আর ধারে কাছেও যেওনা তার যা প্রকাশ পায় ও যা গোপন থাকে ( আন আম ৬/১৫১)
লজ্জা নিবারনের জন্য আল্লাহতায়ালা পোশাক পড়ার নির্দেশ দিয়েছেন।(নূর- ২৪/৩০)
কারো সাথে কোন বিষয়ে চুক্তিবদ্ধ হলে বা কাউকে কোন বিষয়ে প্রতিশ্রতি দিলে তা রক্ষা করা অবশ্যই প্রয়োজন ( বনি ইসরাইল-১৭/৩৪) । 
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.