ওহির আলোকে ঃ দ্বীনী ইলম লাভে প্রতিবন্ধকতা

ওহির আলোকে ঃ দ্বীনী ইলম লাভে প্রতিবন্ধকতা 


মানুষ অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে পৃথিবীতে আসে। আল্লাহ বলেন. ‘আমি মানুষকে শিক্ষা দিয়েছি, যা সে জানত না’ (‘আলাক্ব ৯৬/৫)। 
। তিনি বলেন, ‘তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত দান করেন এবং যাকে হিকমত দান করা হয় তাকে প্রভূত কল্যাণ দান করা হয় এবং কেবল বোধশক্তিসম্পন্ন লোকেরাই শিক্ষা গ্রহণ করে’ (বাক্বারাহ )। ই 
তিনি অন্যত্র বলেন, ‘বলুন! অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান হতে পারে? আলো ও অন্ধকার কি এক হতে পারে?’ (রা‘দ ১৩/১৬)।
আল্লাহ বলেন, ‘আল্লাহ সাক্ষ্য প্রদান করেন যে, নিশ্চয়ই তিনি ব্যতীত কোন সত্য মা‘বুদ নেই এবং ফেরেশতাগণ ও ন্যায়নিষ্ঠ বিদ্বানগণ (সাক্ষ্য প্রদান করেন)। তিনি ব্যতীত অন্য কোন সত্য মা‘বুদ নেই। তিনি পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (আল ইমরান ৩/১৮)। 
তিনি আরো বলেন, ‘পক্ষান্তরে যারা জ্ঞান ও বিদ্যায় অভিজ্ঞ তারা বলে, আমরা উহার প্রতি ঈমান এনেছি, সবই আমাদের রবের তরফ থেকে এসেছে। সত্য কথা এই যে, কোন জিনিস হতে প্রকৃত শিক্ষা কেবল জ্ঞান-বুদ্ধি সম্পন্ন লোকেরাই গ্রহণ করে’ (আলে ইমরান ৩/৭)।
তবে এ শিক্ষা হতে হবে শুধুমাত্র আল্লাহর জন্য। আল্লাহ বলেন, বলুন আমার সালাত, আমার কুরবানী, আমার জীবন, ও মৃত্যু জগতসমুহের প্রতিপালক আল্লাহরই জন্য  ( আন আম-৬/১৬২)।  

আল্লাহ তা‘আলা সর্বোচ্চ জ্ঞানের অধিকারী। তিনি বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী ও প্রজ্ঞাময়’ (লুকমান ৩১/২৭)। 
আর তিনি মানুষকে অতি অল্পই জ্ঞান দান করেছেন। তিনি বলেন ‘তোমাদেরকে সামান্য জ্ঞানই দান করা হয়েছে’ (বনী ইসরাঈল ১৭/৮৫)। 
বোখারি শরিফে বর্ণিত, আবু ওয়াজেদ (রাঃ) বর্ণনা করেছেন, একদিন রাসুল (সাঃ) মসজিদে বসে সাহাবীগণের উদ্দেশ্যে দ্বীনী এলেম নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এমন সময় ৩ জন লোক এস একজন সম্মুখে যায়গা পেয়ে বসল। অন্যজন কাউকে বিরক্ত না করে পেছনে বসল। তৃতীয়জন স্থান সঙ্কটের জন্য চলে গেল। মজলিস শেষে রাসুল (সাঃ) মন্তব্য করলেন, প্রথমজন আল্লাহর নিকটবর্তী  হওয়ার জন্য তৎপর হওয়ায় আল্লাহ তাকে নিকটেই স্থান করে দিলেন। তৃতীয় ব্যক্তি ফিরে চলে যাওয়ায় আল্লাহও তাকে ( এই মজলিসের শিক্ষা ও বরকত .হতে) মাহরুম করে দিয়েছেন। যে ব্যক্তি ইলম অর্জনের চেষ্টা করে তার উপর আল্লাহর রহমত বর্ষিত হয়। আল্লাহ তার জন্য বেহেস্তের পথ সুগম করে দেন। রহমতের ফেরেস্তারা ইলম অর্জনকারীকে নিজের পাখা বিছিয়ে দেয়।
। মুআবিয়াহ (রাঃ) আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, “আল্লাহ যার মঙ্গল চান,তাকেই দ্বীনী জ্ঞান দান করেন।” (বুখারী) ।
ইলম অর্জনের নির্দেশনা স্বরূপ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, ‘প্রত্যেক মুসলিমের উপরে জ্ঞান অন্বেষণ করা ফরয (ইবনু মাজাহ  ) ।
ইবনে মাসঊদ (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, “কেবল দু’জন ব্যক্তি ঈর্ষার পাত্র। সেই ব্যক্তি যাকে আল্লাহ ধন-সম্পদ দান করেছেন এবং তাকে তা সৎপথে ব্যয় করার শক্তিও দিয়েছেন। আর সেই লোক যাকে আল্লাহ জ্ঞান-বুদ্ধি দান করেছেন, যার বদৌলতে সে বিচার-ফায়সালা করে থাকেও তা অপরকে শিক্ষা দেয়।” (বুখারী ও মুসলিম)  
আবু উমামা আল-বাহিলী (রাঃ) বলেন, রাসূল (ছাঃ)-এর সামনে দু’জন লোকের কথা উল্লেখ করা হল। যাদের একজন আলেম অপরজন আবেদ। তখন তিনি বলেন, আলেমের মর্যাদা আবেদের উপর। যেমন আমার মর্যাদা তোমাদের সাধারণের উপর। তারপর রাসূল (ছাঃ) বললেন, নিশ্চয়ই তার প্রতি আল্লাহ রহমত করেন এবং তার ফেরেশতামন্ডলী, আসমান-যমীনের অধিবাসী, পিপিলিকা তার গর্তে থেকে এবং এমনকি মাছও কল্যাণের শিক্ষা দানকারীর জন্য দো‘আ করেন ( তিরমিযী )।  
আয়েশা (রাঃ) বলেন, আমি রাসূল (ছাঃ)-কে বলতে শুনেছি, তিনি বলেন, আল্লাহ তা‘আলা আমার নিকট অহি প্রেরণ করেছেন এই মর্মে, যে ব্যক্তি ইলম হাছিলের লক্ষ্যে কোন পথ গ্রহণ করবে, তার জন্য আমি জান্নাতের পথ সহজ করে দেব এবং যার দু’চক্ষু আমি অন্ধ করেছি তার বদলে আমি জান্নাত দান করব। আর ইবাদত অধিক করার তুলনায় অধিক ইলম অর্জন করা উত্তম ( ছহীহুল জামে )।
আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামবলেছেন: যে লোক জ্ঞানার্জন করার জন্য বের হয় সে ফিরে না আসা পর্যন্ত আল্লাহররাস্তায় (জিহাদের মাঝে) আছে বলে গণ্য হয় ( তিরমিযী)।
‘আব্দুল্লাহ ইবনে ‘আমর ইবনে ‘আস রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “নিঃসন্দেহে আল্লাহ লোকদের নিকট থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ইলম তুলে নেবেন না; বরং উলাম াস¤প্রদায়কে তুলে নেওয়ার মাধ্যমে ইলম তুলে নেবেন (অর্থাৎ আলেম দুনিয়া থেকেশেষ হয়ে যাবে।) অবশেষে যখন কোন আলেম বাকি থাকবে না, তখন জনগণ মূর্খ অনভিজ্ঞ ব্যক্তিদেরকে নেতা বানিয়ে নেবে এবং তাদেরকে ফতোয়া জিজ্ঞাসা করা হবে, আর তারা না জেনে ফতোয়া দেবে, ফলে তারা নিজেরাও পথভ্রষ্ট হবে এবং অপরকেও পথভ্রষ্ট করবে।” (বুখারী ও মুসলিম)।
। আবূ হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম বলেছেন, “যাকে ধর্মীয় জ্ঞান বিষয়ক কোন কথা জিজ্ঞাসা করা হয়, আর সে (যদি উত্তর না দিয়ে) তা গোপন করে, কিয়ামতের দিন তাকে (জাহান্নামের) আগুনের লাগাম পরানো হবে  (আবূ দাউদ) ।  
একজন সাহাবী বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিওয়াসাল্লাম-কে বলতে শুনেছি, “ইহজগৎ অভিশপ্ত, এর মধ্যে যা কিছু আছে সব অভিশপ্ত।তবে মহান আল্লাহর যিকির ও তার সংশ্লিষ্ট ক্রিয়া (তাঁর আনুগত্য) এবং আলেম অথবা তালিবে ইলমের কথা স্বতন্ত্র” (তিরমিযী ) ।  
রাসূল (সাঃ) বলেছেন ‘আলেমরাই নবীগণের উত্তরাধিকারী। নবীগণ দীনার বা দিরহামের উত্তরধিকারী করেন না। বরং তারা ইলমের উত্তরাধিকারী করেন। ফলে যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করল সে বৃহদাংশ গ্রহণ করল (ইবনু মাজাহ ) ।  
আল্লাহর জ্ঞান সর্ম্পকে হাদীছে বর্ণিত হয়েছে, আল্লাহর জ্ঞানের পরিসীমা সম্পের্কে খিজির (আঃ) মূসা (আঃ)-কে বলেছিলেন ‘হে মূসা! আমার ও তোমার জ্ঞানের স্বল্পতা আল্লাহর জ্ঞানের নিকট সমুদ্রের মধ্যে এই চড়ুইয়ের ঠোঁটের এক ফোটা পানির সমান  (বুখারী) ।  
ইমাম বোখারি (রঃ) বলেছেন, মানুষের কথা  ও কাজের পূর্বে এলম-জ্ঞান ও শিক্ষা আবশ্যক। মানুষ যে বিষয়ে বলবে , যে কাজ করবে, সে বিষয় প্রথম এলম. জ্ঞান ও শিক্ষা থাকতে হবে। অধ্যয়নলব্দ জ্ঞানই নির্ভরযোগ্য। রাসুল (সাঃ ) যে দ্বীন শিক্ষা দিয়ে গেছেন তা পরবর্তীতে লিখিত আকারে সংরক্ষণ করা হয়েছে ।
মমিনুল ইসলাম মোল্লা,

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.