কাবার হজ্ব মনকে পুতঃপবিত্র করে

কাবার হজ্ব মনকে পুতঃপবিত্র করে

মমিনুল ইসলাম মোল্লা
হজ্জের আভিধানিক অর্থ হচ্ছে কোন কিছুকে পরিদর্শন করা। ইসলামি পরিভাষায় কাবা শরীফ জিয়ারতের উদ্দেশ্যে সংকল্প করা। এটি ইসলামের ৫ম স্তম্ভ। বিত্তশালী লোকদের জন্য এটি একটি উত্তম ইবাদত। পবিত্র কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ বলেন,“মানুষের মধ্যে যার কাবা ঘরে যাবার সামর্থ্য আছে তার জন্যে আল্লার উদ্দেশ্যে ঐ গৃহের হজ্জ করা অবশ্য কর্তব্য। এতদসত্তেও যে তা অমান্য করবে সে কাফের। আল্লাহ তার সৃষ্টি জগতের কারো মুখাপেক্ষী নন। ”সাধারণভাবে জিলহজ্ব মাসের ৮ তারিখ থেকে ১৩ তারিখের মধ্যে নির্ধারিত নিয়মে সুনির্দিষ্ট স্থানে তাওয়াফ, জিয়ারত, সাফি মারওয়ায় দৌড়াদৌড়ি ও কংকর নিক্ষেপসহ শরিয়ত নির্ধারিত কতিপয় অনুষ্ঠান পালন করাকে হজ্ব বলে। যারা এবছর পবিত্র হজ্ব পালন করবেন বলে মনোস্থির করেছেন তাদের হজ্ব ফ্লাইটের আরো কিছুদন বাকি রয়েছে। তাই যারা শারিরীক অসুস্থ তারা অতি সত্তর চিকিৎসা করিয়ে নিন।হজ্ব ফ্লাইট শুরু হওয়ার আগে মেনিনজাইটিস টিকা গ্রহণ বা মেডিকেল চেকআপের বিষয়ে এখন থেকেই ভেবে রাখুন।যাওয়ার সময় ব্যাগ গুছানোর ক্ষেত্রে এগুলো নিতে ভুলবেন নাঃ পাসপোর্ট, টিকেট, ডলার, ভিসা এবং টাকা রাখার গলায় ঝোলানো ব্যাগ, দুই জোড়া ইহরামের কাপড়, কোমড়ে বাঁধার বেল্ট, স্পন্সের সেন্ডেল, মাথা মুন্ডনের জন্য বেøড/রেজার, মেছওয়াক, ব্রাশ, টুথপেস্ট, টিসু,আয়না, চিরুনি, তেল, সাবান, বিছানার চাদর, পাম্পিং বালিশ, প্লেট, গøাস, গায়ের চাদর ,ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশন, ঔষধ, লুঙ্গি, গামছা, গেঞ্জি, লুঙ্গি, গামছা, টুপি, জুতা ইত্যাদি নিতে ভুলবেন না।

হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন তার জৈষ্ঠ্য ছেলে ইসমাইলকে নিয়ে যখন কাবা ঘরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত কররেন তখন মহান আল্লাহ তাকে বল্লেন-লোকদেরকে হজ্ব করার জন্য প্রকাশ্যে আহবান জানাও তারা যেন পায়ে হেঁটে কিংবা দূরবর্তী স্থান হতে উটে আরোহন করে তোমার নিকট চলে আসে।(সুরা হজ্ব-২৭) এছাড়া তিরমিজি শরিফে বলা হয়েছে, আল্লাহর ঘর পর্যন্ত পৌঁছার জন্য যাদের পাথেয় ও বাহন আছে সে যদি হজ্ব আদায় না করে আর এ অবস্থায় মৃত্যুবরণ করে, তবে তার মৃত্যু ইহুদি নাসারার মতো।হজ্ব ফরজ হওয়ার শর্তসমুহ হচ্ছেঃ১.মুসলমান হওয়া ২.বালেগ হওয়া, ৩. সুস্থ মস্তিষ্কের অধিকারী হওয়া ৪. হজ্ব করার মতো দৈহিক ও আর্থিক সামর্থ্য থাকা এবং যাতায়াতের পথ নিরাপদ হওয়া।
অনেকে দারিদ্রের ভয়ে হজ্ব করতে চান না।অথচ নবিজি বলেছেন-তোমরা হজ্ব- ওমরাহ সাথে সাথে আদায় কর,কেননা এই দুই কাজ দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে যেমন হাপর লোহা ও সোনা রুপার ময়লা দূর করিয়ে দেয় (তিরমিজি)।যারা হজ্ব করতে যাবেন তারা হজ্বে যাওয়ার আগেই হজ্ব সম্পরর্ক জেনে নিবেন।এক্ষেত্রে শুধু মাত্র মেয়াল্লিমের উপর ভরসা  রাখা উচিত হবেনা। সৎ লোকদের সাথে হজ্ব করতে পারলে ভাল। এসময় কাউকে অযথা কষ্ট দেয়া যাবে না। কোন প্রকার বিদআতের সাথে যুক্ত হওয়া যাবে না ।হজ্ব জাহান্নামের আগুন থেকে পরিত্রাণ দেয়।হজ্বের আরকানগুলো হচ্ছে ১. ইহরাম বাঁধা ২.আরাফায় অবস্থান ৩. তাওয়াফুল ইফাদা/যিয়ারাহ বা ফরয তাওয়াফ ৪.ছাফাও মারওয়ার মধ্যে দৌড়ানো।যে ব্যক্তি এই রুকনগুলোর কোন একটি ছেড়ে দেবে /বাদ পড়বে তার হজ্ব হবে না।তাকে পরবর্তীতে পুনঃরায় হজ্ব করতে হবে।হজ্বের ওয়াজিবগুলোর দিকে বিশেষভাবে দৃষ্টি দিতে হবে।এগুলো হচ্ছেঃ সাফা ও মরওয়া পাহাড়দ্বয়ের মাঝে ৭ বার সায়ী করা, অকুফে মুযদালিফায় (৯জিলহজ্ব)অর্থাৎ সুবহে সাদিক থেকে সুর্যোদয় পর্যন্ত এক মুহুর্তের জন্যও হলেও অবস্থান করা।মিনায় শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা, এহরাম খোলার পূর্বে মাথার চুল মুন্ডানো বা ছাটা ,মক্কার বাইরের লোকদের জন্য তাওয়াফে বিদা অর্থাৎ বিদায়কালীন তাওয়াফ করাও তামাত্তু এবং কেরান হজ্বকারীদের কোরবানী করা।হজ্জের সুন্নত কাজগুলো হচ্ছেঃ ১.ইহরাম বাঁধার সময় গোসল করা ২.পুরুষের সেলাইবিহীন সাদা কাপড় দ্বারা ইহরাম বাঁধা ৩. পুরুষ ও মহিলার তালবিয়া পাঠ ৪. আরাফার রাতে (৯ তারিখ হতে) মিনায় াবস্থান, রাত যাপন ৫.কেরান এবং ইফরাদ হজ্বকারীদ্বয়ের তাওয়াফে কুমুম করা।
হজের দিনগুলোতে আপনার করণীয়ঃ হজের মূল দিবসগুলো হচ্ছে ৮ জিলহজ থেকে ১৩ জিলহজ পর্যন্ত।  ৮ জিলহজ তারিখে হজের নিযত করে এহরাম বেঁধে সূর্যোদয়ের পর মিনা অভিমুখে রওনা হবেন তালবিয়াহ পাঠ করতে করতে। এদিন জোহরের আগে মিনায় পৌঁছে জোহরের নামাজ পডবেন। অতঃপর আসর, মাগরিব ও এশা এবং ৯ জিলহজ ফজর নামাজ আদায় করবেন। মিনাতে অবস্থানকালে বেশি বেশি কুরআন তিলাওয়াত, জিকির-আজকার এবং মুসলিম উম্মাহর জন্য আল্লাহর কাছে রহমত কামনা করবেন। ৯ জিলহজ মিনা থেকে ফজরের নামাজ আদায় করে সূর্যোদয়ের পর তালবিয়া পাঠ করতে করতে আরাফাতের ময়দানে অবস্থানের জন্য রওনা হবেন।হজ্বের প্রয়োজনীয় দোয়াসমূহ শিখে নিবেন। বিশেষ করে লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক,লা শারীকা লাব্বাইক,ইন্নাল হামদা ওয়ান নিমতা লাকাওয়াল মূলক লা শারীকালাক দোয়াটি মুখস্ত করতে হবে।এর অর্থ হচ্ছে-“আমি হাজির,হে আল্লাহ।আমি ইপস্থিত আপনার ডাকেসাড়া দিতে আমি হাজির।আপনার কোন অংশিদার নেই।নিঃসন্দেহে সমস্তপ্রসংশাও সম্পদরাজি আপনারএবং একচ্ছত্র আধিপত্যআপনার।আপনার কোন অংশিদার নেই।” রাসূল সাঃ বলেছেন, ‘আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করাই হচ্ছে হজ।’ আরাফাতের ময়দানে সূর্যাস্ত পর্যন্ত অবস্থান অবশ্যই করবেন। জোহর ও আসরের নামাজ¬ জোহরের প্রথম ওয়াক্তে এক আজান ও দু’ইকামাতে কসর করে একত্রে পড়তে হয়। সূর্যাস্তের পর মুজদালিফায় রাতযাপনের জন্য রওনা হবেন। সূর্যাস্তের পর আরাফা বা রাস্তায় কোথাও মাগরিবের নামাজ না পড়ে সোজা মুজদালিফার উদ্দেশে চলতে থাকুন। মুজদালিফায় পৌঁছে এক আজানে ও দু’ইকামতে দু’ওয়াক্ত নামাজ কসর আদায় করবেন (কসর মাগরিবের হবে না, শুধু এশার হবে)। ১০ জিলহজ বড় জামারাতে ৭টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়ার পূবর্ পর্যন্ত। কঙ্কর নিক্ষেপ করার  নিক্ষেপের সময় ‘তাকবির’ বলবেন।  ১০ জিলহজ কঙ্কর নিক্ষেপ শেষে কোরবানি করবেন। অতঃপর মাথা মুন্ডন করে অথবা চুল ছেঁটে গোসল সেরে এহরাম কাপড খুলে স্বাভাবিক কাপড পরবেন। কঙ্কর মারা শেষে তাওয়াফে জিয়ারতের উদ্দেশ্যে মিনা থেকে ‘খানায়ে কাবা’ যেতে হবে। ওই দিন সূর্যাস্তের আগেই তাওয়াাফে জিয়ারতের কাজ সারতে হবে। তা না হলে ১২ জিলহজ তারিখের পরে তাওয়াফ করে দম দিতে হবে। অবশ্য মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রাকৃতিক কারণে না করতে পারলে পবিত্র হওয়ার পর তা সমাধা করবেন।১১ জিলহজ দুপুরের পর (সূর্য পশ্চিম দিকে ঢলে পড়লে) প্রথমে ছোট জামারায়, তারপর মধ্যম জামারায় এবং বড় জামারায় ৭টি করে মোট ২১টি কঙ্কর নিক্ষেপ করবেন।১২ জিলহজ আগের দিনের মতোই করবেন। জামারাতে কঙ্কর নিক্ষেপের ক্ষেত্রে পুরুষ ও মহিলাদের জন্য একই বিধান। তবে মহিলাদের রাতে কঙ্কর নিক্ষেপ করা জায়েজ। কিরান হজ ও তামাত্তো হজ পালনকারীদের ওপর কোরবানি করা ওাজিব। সর্বশেষে বিদায়ী তাওয়াফ করে মক্কা শরিফ থেকে বিদায় নেবেন। যারা মদিনাতে যাননি, তারা মসজিদে নববী জিয়ারতের উদ্দেশ্য মদিনা যাবেন।মদিনায় গিয়ে নবিজির কবর জিয়ারত করুন। মিনায় থাকতে না চাইলে ১২ জিলহজ সন্ধ্যার আগে বা পরে মিনা ত্যাগ করুন। সূর্যাস্তের আগে মিনা ত্যাগ করা ভালো। মক্কা শরিফ থেকে বিদায়র আগে বিদায়ী তাওয়াফ করুন।  হাদিসে আছে,“যে ব্যক্তি হজ্ব পালনকালে যৌন সম্ভোগ ও কোন পাপাচার কাজে লিপ্ত না হয় সে মাতৃগর্ভ থেকে ভুমিষ্ট শিশুর মত নিষ্পাপ হয়ে বাড়ি ফিরে যায়।”এখন দেশে ফেরার পালা। প্রত্যোকের মনে একটিই চিন্তা ভবিষ্যতে পাপাচার মুক্ত থাকতে পারবতো।তাই যেভাবে হজ্ব সফরে বেশি বেশি করে দুআ, যিকির, ইস্তিগফার, ক্সমা প্রার্থনা ও নিজের অপারগতা তুলে ধরে কাকুতি মিনতি করেছেন সে ধারা অব্যাহত রাখতে হবে।আল্লাহর হক আদায়ের পাশাপশি বান্দার হক যাতে নষ্ট না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।তাহলেই দুনিয়া ও আখিরাতে শান্তি পাওয়া যাবে। লেখক:  প্রভাষক, সাংবাদিক ও ধর্মীয় গবেষক ,কুমিল্লা। ০১৭১১৭১৩২৫৭    সধসরহসড়ষষধয@ুধযড়ড়.পড়স

ওহির আলোকে-কাবার হজ্ব 
হযরত ইব্রাহিম (আঃ) যখন তার জৈষ্ঠ্য ছেলে ইসমাইলকে নিয়ে যখন কাবা ঘরের নির্মাণ কাজ সমাপ্ত কররেন তখন মহান আল্লাহ তাকে বল্লেন-লোকদেরকে হজ্ব করার জন্য প্রকাশ্যে আহবান জানাও তারা যেন পায়ে হেঁটে কিংবা দূরবর্তী স্থান হতে উটে আরোহন করে তোমার নিকট চলে আসে।(সুরা হজ্ব-২৭) 
অথচ নবিজি বলেছেন-তোমরা হজ্ব- ওমরাহ সাথে সাথে আদায় কর,কেননা এই দুই কাজ দারিদ্র ও গুনাহ এমনভাবে দূর করে যেমন হাপর লোহা ও সোনা রুপার ময়লা দূর করিয়ে দেয় (তিরমিজি)। 
মমিনুল ইসলাম মোল্লা 

No comments

Theme images by mammuth. Powered by Blogger.